শুল্কমুক্ত পণ্য নিয়ে অবৈধ কারবার by ফারজানা লাবনী
কেবল শতভাগ রপ্তানিমুখী কারখানায় ব্যবহার করতে হবে- এমন শর্তে বন্ডেড ওয়্যারহাউসের মাধ্যমে শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানির সুযোগ পান গার্মেন্ট ও প্লাস্টিক খাতের অনেক ব্যবসায়ী। কিন্তু সরকারি নিয়ম না মেনে অতিরিক্ত লাভের আশায় এসব পণ্য বাজারে বিক্রি করছেন অনেকে।
এর জন্য মিথ্যা হিসাব দেখিয়ে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করা হয়। এই অসাধুতার কারণে বড় অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
বিষয়টি স্বীকার করে গার্মেন্ট ও প্লাস্টিক খাতের একাধিক ব্যবসায়ী বলেছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী হিসাব ছাড়া বন্ডেড ওয়্যারহাউসের মাধ্যমে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা পণ্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পাইকারি ও খুচরা বাজারে বিক্রি করছেন। এতে সৎ ব্যবসায়ীরা নিয়ম মেনে ব্যবসা করতে গিয়ে অসম প্রতিযোগিতায় পড়ছেন। এ বিষয়ে সরকারের কঠোর নজরদারির দাবি জানান তাঁরা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বন্ড কমিশনারেট থেকে জানা যায়, গার্মেন্ট খাতকে উৎসাহিত করতে বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধায় মোট চাহিদার ৯০ ভাগ ওভেন সামগ্রী, ৪৫ ভাগ গার্মেন্ট একসেসরিজ এবং ৩৫ ভাগ নিট পণ্য আমদানি করা হয়। বাকি চাহিদা স্থানীয়ভাবে পূরণ হয়। দেশের দুই হাজারের বেশি গার্মেন্ট কারখানা শুল্কমুক্ত সুবিধায় বন্ডেড ওয়্যারহাউসের মাধ্যমে পণ্য আমদানির সুবিধা পায়। একই সুবিধা পায় প্লাস্টিক খাতের প্রায় ১৫০ প্রতিষ্ঠান। এ ক্ষেত্রে প্লাস্টিক শিল্পের কাঁচামাল পলি প্রোপাইল, পলিয়েস্টার, নানা রকম রংসহ অন্যান্য কাঁচামাল আমদানির অনুমোদন রয়েছে। এনবিআর থেকে শর্ত রয়েছে, প্রচ্ছন্ন ও শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্পে শুল্কমুক্ত সুবিধায় বন্ডেড ওয়্যারহাউসের মাধ্যমে আমদানি করা কাঁচামাল কারখানার উৎপাদনকাজে ব্যবহার করতে হবে। কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এ শর্ত না মেনে ওই পণ্য বাজারে বিক্রি করলে শাস্তি হিসেবে আমদানি মূল্যের ওপর সর্বোচ্চ ২০০ ভাগ রাজস্ব ধার্য করা হবে। প্রয়োজনে ওই প্রতিষ্ঠানের লাইন্সেসও বাতিল করা হতে পারে।
এমন সব আইন থাকলেও তা মেনে চলছে না অনেকে। রাজধানীর পুরান ঢাকার ইসলামপুর ও উর্দু রোড, গাউছিয়া, নিউ মার্কেট, গুলিস্তান এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকার বিভিন্ন দোকানে বন্ডেড ওয়্যারহাউসের সুবিধা পাওয়া কিছু গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠান প্রতিনিধি পাঠিয়ে পাইকারি বা খুচরা পর্যায়ে পণ্য সরবরাহের অর্ডার নিয়ে থাকে। এরপর ওই সব গার্মেন্ট সংশ্লিষ্ট বন্ডেড ওয়্যারহাউসের মাধ্যমে শুল্কমুক্ত সুবিধায় পাওয়া পণ্য বুকিং অনুযায়ী সরবরাহ করে। তবে প্লাস্টিক পণ্যের ক্ষেত্রে ছোট কারখানাগুলোতে মূলত বড় কারখানার নামে শুল্কমুক্ত সুবিধায় বন্ডেড ওয়্যারহাউসের মাধ্যমে আমদানি করা পণ্য বিক্রি করা হয়।
যেসব ব্যবসায়ী শুল্ক দিয়ে একই জাতীয় পণ্য আমদানি করে খুচরা বা পাইকারি পর্যায়ে সরবরাহ করছেন, তাঁদের থেকে কম দামে বন্ডেড ওয়্যারহাউস থেকে পাওয়া পণ্য বিক্রি হয়। আমদানির জটিলতায় না গিয়ে এভাবে সহজে পণ্য পাওয়ায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আগ্রহী হয়ে তা কিনে নেয়। বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধায় পাওয়া পণ্য অবাধে বেচাকেনার কারণে ব্যবসায়ীদের মধ্যে অসম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হচ্ছে জানিয়ে ইসলামপুর এলাকার কাপড়ের ব্যবসায়ী সাহাদাত হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে অগ্রিম বুকিং দিয়ে অতি সহজেই জিন্স, গেঞ্জিসহ নানা রকম কাপড় কেনা যায়। এ ক্ষেত্রে শুল্ক দিয়ে আমদানি করা পণ্যের চেয়ে দাম কম পড়ে।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি জাহাঙ্গীর আল আমীন কালের কণ্ঠকে বলেন, একই জাতীয় ব্যবসা করেও গার্মেন্ট ব্যবসায়ীদের মতো সুবিধা টেক্সটাইল ব্যবসায়ীদের নেই। আবার বন্ডেড ওয়্যারহাউসের মাধ্যমে আনা পণ্য আইন ভঙ্গ করে অনেক গার্মেন্টস ব্যবসায়ী বাজারে বিক্রি করেন। এতে গার্মেন্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে টেক্সটাইল ব্যবসায়ীরা অসম প্রতিযোগিতায় পড়ছেন। বাজারে তৈরি হচ্ছে অস্থিরতা। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী।
তৈরি পোশাক শিল্পের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এবং বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী এ বিষয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা গার্মেন্ট খাতের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয়। শুল্কমুক্ত সুবিধায় সাত থেকে আট হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়। সৎ-অসৎ উভয় ধরনের ব্যবসায়ীই রয়েছেন। কোনো কোনো অসাধু ব্যবসায়ী বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধার অপব্যবহার করছেন। এতে যাঁরা নিয়ম মেনে ব্যবসা করছেন, তাঁরা ভোগান্তিতে পড়ছেন। এ বিষয়ে সরকারের কঠোর নজরদারির সুপারিশ জানিয়ে তিনি বলেন, সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে আমদানি মূল্যের ওপর ২০০ ভাগ রাজস্ব আদায়ের দৃষ্টান্ত স্থাপন করা সম্ভব হলে এ অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধ হবে।
একই মত প্রকাশ করে প্লাষ্টিক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস চেয়ারম্যান এবং এফবিসিসিআইয়ের প্রথম সহসভাপতি জসিম উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রচ্ছন্ন ও সরাসরি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের জন্য বন্ডেড ওয়্যারহাউসের সুবিধার প্রয়োজন রয়েছে। তবে কিছু প্লাস্টিক ব্যবসায়ী এই সুবিধায় আনা পণ্য ছোট কারখানায় বা বিভিন্ন বড় বড় দোকানে বিক্রি করেন। এতে সৎ ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, এক বছরে কী পরিমাণ পণ্য একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ব্যবহার করেছে, তার ভিত্তিতে পরের বছর ওই প্রতিষ্ঠানের আমদানির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত পরের বছর আগের বছরের তুলনায় বেশি হিসাব দাখিল করে থাকে বিভিন্ন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান।
বন্ডেড ওয়্যারহাউসের বিভিন্ন শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গার্মেন্ট বা প্লাস্টিক কারখানায় কাঁচামাল হিসেবে কী পরিমাণ পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানির প্রয়োজন হয় তা বন্ডেড ওয়্যারহাউসের কর্মকর্তাদের অডিটের মাধ্যমে নির্ধারিত হওয়া উচিত। কিন্তু বাস্তবে ওই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নিজেরাই নির্ধারণ করে দেয় আমদানির পরিমাণ। এ ক্ষেত্রে নামমাত্র অডিট বা যাচাই-বাছাই করা হয় এনবিআর থেকে। বন্ড কমিশনারেটের ও সংশ্লিষ্ট বন্ডেড ওয়্যারহাউসের এক বা দুজন কর্মকর্তা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে হিসাব নিয়ে আমদানির অনুমোদন দিয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতির অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ সুবিধা পায় বন্ডেড ওয়্যারহাউসের সঙ্গে জড়িতরা।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান এবং অর্থনীতিবিদ আবুল মজিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, বন্ডেড ওয়্যারহাউসের কাজে স্বচ্ছতা আনা সম্ভব হলে এ খাত থেকে বড় অঙ্কের রাজস্ব আদায় হবে। দুই-চারজন ব্যবসায়ী আইনের ফাঁক গলে বন্ডেড ওয়্যারহাউসের সুবিধার অপব্যবহার করছেন। তাঁরা শাস্তি না পাওয়ায় অন্যরাও উৎসাহিত হচ্ছেন। কঠোর শাস্তির বিধান করা হলে কেউ আর এ রকম অন্যায় কাজ করতে উৎসাহিত হবে না।
এনবিআরের বন্ড, শুল্ক ও নীতি শাখার সদস্য নাসির উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, বন্ডেড ওয়্যারহাউসের কাজের পদ্ধতিতে আরো স্বচ্ছতা আনা হবে। এ বিষয়ে এনবিআর থেকে উদ্যোগ নিয়ে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে।
বিষয়টি স্বীকার করে গার্মেন্ট ও প্লাস্টিক খাতের একাধিক ব্যবসায়ী বলেছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী হিসাব ছাড়া বন্ডেড ওয়্যারহাউসের মাধ্যমে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা পণ্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পাইকারি ও খুচরা বাজারে বিক্রি করছেন। এতে সৎ ব্যবসায়ীরা নিয়ম মেনে ব্যবসা করতে গিয়ে অসম প্রতিযোগিতায় পড়ছেন। এ বিষয়ে সরকারের কঠোর নজরদারির দাবি জানান তাঁরা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বন্ড কমিশনারেট থেকে জানা যায়, গার্মেন্ট খাতকে উৎসাহিত করতে বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধায় মোট চাহিদার ৯০ ভাগ ওভেন সামগ্রী, ৪৫ ভাগ গার্মেন্ট একসেসরিজ এবং ৩৫ ভাগ নিট পণ্য আমদানি করা হয়। বাকি চাহিদা স্থানীয়ভাবে পূরণ হয়। দেশের দুই হাজারের বেশি গার্মেন্ট কারখানা শুল্কমুক্ত সুবিধায় বন্ডেড ওয়্যারহাউসের মাধ্যমে পণ্য আমদানির সুবিধা পায়। একই সুবিধা পায় প্লাস্টিক খাতের প্রায় ১৫০ প্রতিষ্ঠান। এ ক্ষেত্রে প্লাস্টিক শিল্পের কাঁচামাল পলি প্রোপাইল, পলিয়েস্টার, নানা রকম রংসহ অন্যান্য কাঁচামাল আমদানির অনুমোদন রয়েছে। এনবিআর থেকে শর্ত রয়েছে, প্রচ্ছন্ন ও শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্পে শুল্কমুক্ত সুবিধায় বন্ডেড ওয়্যারহাউসের মাধ্যমে আমদানি করা কাঁচামাল কারখানার উৎপাদনকাজে ব্যবহার করতে হবে। কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এ শর্ত না মেনে ওই পণ্য বাজারে বিক্রি করলে শাস্তি হিসেবে আমদানি মূল্যের ওপর সর্বোচ্চ ২০০ ভাগ রাজস্ব ধার্য করা হবে। প্রয়োজনে ওই প্রতিষ্ঠানের লাইন্সেসও বাতিল করা হতে পারে।
এমন সব আইন থাকলেও তা মেনে চলছে না অনেকে। রাজধানীর পুরান ঢাকার ইসলামপুর ও উর্দু রোড, গাউছিয়া, নিউ মার্কেট, গুলিস্তান এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকার বিভিন্ন দোকানে বন্ডেড ওয়্যারহাউসের সুবিধা পাওয়া কিছু গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠান প্রতিনিধি পাঠিয়ে পাইকারি বা খুচরা পর্যায়ে পণ্য সরবরাহের অর্ডার নিয়ে থাকে। এরপর ওই সব গার্মেন্ট সংশ্লিষ্ট বন্ডেড ওয়্যারহাউসের মাধ্যমে শুল্কমুক্ত সুবিধায় পাওয়া পণ্য বুকিং অনুযায়ী সরবরাহ করে। তবে প্লাস্টিক পণ্যের ক্ষেত্রে ছোট কারখানাগুলোতে মূলত বড় কারখানার নামে শুল্কমুক্ত সুবিধায় বন্ডেড ওয়্যারহাউসের মাধ্যমে আমদানি করা পণ্য বিক্রি করা হয়।
যেসব ব্যবসায়ী শুল্ক দিয়ে একই জাতীয় পণ্য আমদানি করে খুচরা বা পাইকারি পর্যায়ে সরবরাহ করছেন, তাঁদের থেকে কম দামে বন্ডেড ওয়্যারহাউস থেকে পাওয়া পণ্য বিক্রি হয়। আমদানির জটিলতায় না গিয়ে এভাবে সহজে পণ্য পাওয়ায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আগ্রহী হয়ে তা কিনে নেয়। বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধায় পাওয়া পণ্য অবাধে বেচাকেনার কারণে ব্যবসায়ীদের মধ্যে অসম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হচ্ছে জানিয়ে ইসলামপুর এলাকার কাপড়ের ব্যবসায়ী সাহাদাত হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে অগ্রিম বুকিং দিয়ে অতি সহজেই জিন্স, গেঞ্জিসহ নানা রকম কাপড় কেনা যায়। এ ক্ষেত্রে শুল্ক দিয়ে আমদানি করা পণ্যের চেয়ে দাম কম পড়ে।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি জাহাঙ্গীর আল আমীন কালের কণ্ঠকে বলেন, একই জাতীয় ব্যবসা করেও গার্মেন্ট ব্যবসায়ীদের মতো সুবিধা টেক্সটাইল ব্যবসায়ীদের নেই। আবার বন্ডেড ওয়্যারহাউসের মাধ্যমে আনা পণ্য আইন ভঙ্গ করে অনেক গার্মেন্টস ব্যবসায়ী বাজারে বিক্রি করেন। এতে গার্মেন্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে টেক্সটাইল ব্যবসায়ীরা অসম প্রতিযোগিতায় পড়ছেন। বাজারে তৈরি হচ্ছে অস্থিরতা। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী।
তৈরি পোশাক শিল্পের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এবং বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী এ বিষয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা গার্মেন্ট খাতের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয়। শুল্কমুক্ত সুবিধায় সাত থেকে আট হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়। সৎ-অসৎ উভয় ধরনের ব্যবসায়ীই রয়েছেন। কোনো কোনো অসাধু ব্যবসায়ী বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধার অপব্যবহার করছেন। এতে যাঁরা নিয়ম মেনে ব্যবসা করছেন, তাঁরা ভোগান্তিতে পড়ছেন। এ বিষয়ে সরকারের কঠোর নজরদারির সুপারিশ জানিয়ে তিনি বলেন, সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে আমদানি মূল্যের ওপর ২০০ ভাগ রাজস্ব আদায়ের দৃষ্টান্ত স্থাপন করা সম্ভব হলে এ অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধ হবে।
একই মত প্রকাশ করে প্লাষ্টিক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস চেয়ারম্যান এবং এফবিসিসিআইয়ের প্রথম সহসভাপতি জসিম উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রচ্ছন্ন ও সরাসরি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের জন্য বন্ডেড ওয়্যারহাউসের সুবিধার প্রয়োজন রয়েছে। তবে কিছু প্লাস্টিক ব্যবসায়ী এই সুবিধায় আনা পণ্য ছোট কারখানায় বা বিভিন্ন বড় বড় দোকানে বিক্রি করেন। এতে সৎ ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, এক বছরে কী পরিমাণ পণ্য একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ব্যবহার করেছে, তার ভিত্তিতে পরের বছর ওই প্রতিষ্ঠানের আমদানির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত পরের বছর আগের বছরের তুলনায় বেশি হিসাব দাখিল করে থাকে বিভিন্ন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান।
বন্ডেড ওয়্যারহাউসের বিভিন্ন শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গার্মেন্ট বা প্লাস্টিক কারখানায় কাঁচামাল হিসেবে কী পরিমাণ পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানির প্রয়োজন হয় তা বন্ডেড ওয়্যারহাউসের কর্মকর্তাদের অডিটের মাধ্যমে নির্ধারিত হওয়া উচিত। কিন্তু বাস্তবে ওই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নিজেরাই নির্ধারণ করে দেয় আমদানির পরিমাণ। এ ক্ষেত্রে নামমাত্র অডিট বা যাচাই-বাছাই করা হয় এনবিআর থেকে। বন্ড কমিশনারেটের ও সংশ্লিষ্ট বন্ডেড ওয়্যারহাউসের এক বা দুজন কর্মকর্তা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে হিসাব নিয়ে আমদানির অনুমোদন দিয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতির অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ সুবিধা পায় বন্ডেড ওয়্যারহাউসের সঙ্গে জড়িতরা।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান এবং অর্থনীতিবিদ আবুল মজিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, বন্ডেড ওয়্যারহাউসের কাজে স্বচ্ছতা আনা সম্ভব হলে এ খাত থেকে বড় অঙ্কের রাজস্ব আদায় হবে। দুই-চারজন ব্যবসায়ী আইনের ফাঁক গলে বন্ডেড ওয়্যারহাউসের সুবিধার অপব্যবহার করছেন। তাঁরা শাস্তি না পাওয়ায় অন্যরাও উৎসাহিত হচ্ছেন। কঠোর শাস্তির বিধান করা হলে কেউ আর এ রকম অন্যায় কাজ করতে উৎসাহিত হবে না।
এনবিআরের বন্ড, শুল্ক ও নীতি শাখার সদস্য নাসির উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, বন্ডেড ওয়্যারহাউসের কাজের পদ্ধতিতে আরো স্বচ্ছতা আনা হবে। এ বিষয়ে এনবিআর থেকে উদ্যোগ নিয়ে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে।
No comments