পহেলা বৈশাখের প্রস্তুতি-পান্তা আছে, কিন্তু ইলিশ...?
বাঙালির নববর্ষ সমাগত। আর ক'টি দিন গেলেই চির নতুনের ডাকে পহেলা বৈশাখের ভোরে জেগে উঠবে নগর-গ্রাম-মফস্বল। রমনায় গান, চারুকলায় আনন্দ মিছিল, রাজপথে নাগরিকদের জটলা পহেলা বৈশাখের বাইরের আয়োজন। কিন্তু চৈত্রসংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখে বাঙালির ঘরে ঘরেও থাকে নানা আয়োজন।
রীতি অনুসারে নানা স্বাদের খাবার থাকে যেমন, তেমনি থাকে অতিথি অভ্যাগতদের নিয়ে নানা আয়োজনও। শহর-গ্রাম নির্বিশেষে এখন পান্তা-ইলিশ সে তালিকায় এখন সর্বশীর্ষে। পহেলা বৈশাখের ভোরের আহারে পান্তা ইলিশ থাকবে না, তা কী করে হয়? এ চিন্তা এখন অনেককেই চিন্তিত, বেদনাতুর করে তোলে। বৈশাখের আহার তালিকায় আবশ্যিক পদ হিসেবে ইলিশের অনুপ্রবেশ কীভাবে ঘটল তা বিশেষ গবেষণার বিষয়। সবাই জানেন বৈশাখ ইলিশের মৌসুম নয়। বর্ষায় চাইলে যে কেউ ইলিশ পেতে পারে। কমবেশি বাজারে বিকোয় সুস্বাদু ও সুন্দর মাছটি। কিন্তু বৈশাখে যখন চারদিকে হা-ইলিশ রব, তখন কে আমাদের শেখাল যে, পহেলা বৈশাখে ইলিশ খেতেই হবে? সব জিনিস তো সবসময় মেলে না। ইলিশও মৌসুমের বাইরে মিলবে না, তা-ই নিয়ম। ফলে এখন নববর্ষের প্রাক্কালে যখন ইলিশের খোঁজ পড়েছে তখন চারদিকে চড় চড় করে ইলিশের দাম বেড়ে চলেছে। সমকাল পত্রিকায় দামের যে ফিরিস্তি জানা গেল, তাতে বৈশাখে ইলিশ খেতে গিয়ে অনেকে যে ফতুর হতে পারেন তা নিশ্চিত করে বলা যায়। যে ব্যবসায়ীরা ইলিশের মজুদ করেছেন তাদের যে বিশেষ পসার হবে তা বোঝাই যাচ্ছে। অমৌসুমে কষ্ট করে যারা বাজারে ইলিশ এনেছেন তাদের কৃতিত্ব তো এই যে, বৈশাখে ইলিশ-বিলাস তাদের কারণেই সম্ভব হয়ে উঠেছে। এখন বেশি দামের জন্য তাদের দোষ দেওয়া কি খুব কাজের কথা হবে? বরং বৈশাখ গড়িয়ে বর্ষা পড়লেই ইলিশের দাম পড়ে আসবে। তখন ঘরে ঘরে ইলিশ-উৎসব হবে, এমন প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি। এখন বরং পান্তার কথা ভাবা যাক। চালের ক্রমবর্ধমান মূল্য পান্তাকেও হয়তো দুর্মূল্যের বস্তু করে তুলতে পারে একদিন। তবে সে সময় এখনও আসেনি। নববৈশাখে পান্তাভাবে ইলিশ না হোক সামান্য লবণের ব্যবস্থা হলেই অনেকে খুশি হবেন।
No comments