রবারব্যান্ড ইলেকট্রনিক্স প্রসারিত হবে দশ গুণ

যাদের হৃদরোগ বা এমন কিছু রোগব্যাধি আছে যার জন্য মনিটরিং প্রয়োজন তাদের অহরহ হাসপাতালে আসা যাওয়া এবং সময় ও পয়সা খরচ করে নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে গিয়ে জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে উঠতে পারে, কিন্তু এ জাতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার বেশিরভাগই যদি হাসপাতালে না করে রোগীর বাসায় অফিসে কি গাড়িতে বসে করা যায়


তাহলে কেমন হয়? বলাবাহুল্য, এমন সম্ভাবনা হালে সৃষ্টি হয়েছে। বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত রবারব্যান্ড ইলেকট্রনিক্স আগামীতে তেমন একটা সময় আগমনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
শরীরের ভিতরে থেকেই শরীরকে মনিটর করার জন্য শরীরের ভিতরে স্থাপনযোগ্য ইলেকট্রনিক যন্ত্র উদ্ভাবনের পথে মস্ত বাধা ছিল যন্ত্রটির নমনীয়তা ও প্রসারণযোগ্যতা। ইতোপূর্বে হৃৎপি-ের বৈদ্যুতিক উৎপাদন পরিমাপের জন্য এলইডি এ্যাবির মতো প্রসারণযোগ্য যন্ত্রসহ বিভিন্ন ধরনের সাজসরঞ্জাম উদ্ভাবিত হয়েছে। এখন বিজ্ঞানীরা এমন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন যার সাহায্যে রন্ধ্রযুক্ত পলিমার ও তরল ধাতু এমনভাবে যুক্ত করা হয় যে, সেই ইলেকট্রনিক যন্ত্র বা সরঞ্জামটি তার আসল সাইজের তুলনায় ২শ ভাগ বাঁকা হতে বা প্রসারিত হতে পারে। শুধু তাই নয়, আজকের প্রযুক্তিতে যন্ত্রটি যতটুকু বাঁকনো ও প্রসারিত করা সম্ভব তার চেয়ে চারগুণ বেশি করা যেতে পারে। গবেষণার এই ফলাফলের ওপর একটি নিবন্ধ গত ২৬ জুন নেচার কমিউনিকেশনস সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। নিবন্ধের নাম ‘থ্রি-ডাইমেনশনাল ন্যানোনেটওয়ার্কস ফর জায়েন্ট স্ট্রেচেবিলিটি ইন ডায়ালেকট্রিক্স অ্যান্ড কন্ডাক্টরস।’ বিজ্ঞানীরা বেশ আগে থেকেই এমন ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছিল যখন মেডিক্যাল মনিটরিং যন্ত্র সেলাই না করেই মানবদেহের ভিতরে স্থাপন করা যাবে। সেই যন্ত্রটি রোগীর প্রধান লক্ষণগুলোর সন্ধান বের করে তা তাঁর ডাক্তারদের কাছে জানিয়ে দিতে পারবে। কিন্তু এ জাতীয় প্রযুক্তির পথে একটা মস্ত অন্তরায় থেকে গেছে। তাহলো ইলেকট্রনিক যন্ত্র বা সরঞ্জামগুলো বড্ড বেশি শক্ত বা অনমনীয়। বর্তমানে যে প্রযুক্তি চালু আছে তাতে ইলেকট্রনিক যন্ত্র বা সরঞ্জাম সামান্য পরিমাণ প্রসারিত হতে পারে। কিন্তু এমন অনেক প্রয়োগের ক্ষেত্র আছে যেখানে যন্ত্রটির রবারব্যান্ডের মতো প্রসারিত হওয়া প্রয়োজন। সেই সম্ভাবনাটা বাস্তবসাধ্য করে তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাকবারমিক স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের গবেষকরা। এদের নেতৃত্ব দিয়েছেন অধ্যাপক ইয়ংগা গ্যুয়াং। ইলেকট্রনিক সরঞ্জামকে মূল সাইজের দু’শ’ গুণের বেশি প্রসারিত করতে পারার পর হুয়াং বলেন, এই মাত্রার প্রসারণ যোগ্যতা অর্জন করার পর আমরা মানবেদেহে এ জাতীয় মেডিক্যাল সরঞ্জাম স্থাপন করতে পারার সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি। গত বছর হুয়াং ও তাঁর ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগীরা ইলেকট্রনিক্সের প্রায় ৫০ শতাংশ প্রসারণযোগ্যতা অর্জন করেছিল। তারপরও তা অনেকগুলো প্রয়োগের ক্ষেত্রে যথেষ্ট বেশিমাত্রায় প্রসারণযোগ্য ছিল না। এই গবেষকদের সামনে একটা চ্যালেঞ্জ ছিল প্রসারণযোগ্য সরঞ্জামের পরিবাহিতা হ্রাস কাটিয়ে ওঠা বাজারে আজ নিরেট ধাতব পদার্থ দিয়ে তৈরি যেসব সার্কিট পাওয়া যায় সামান্য প্রসারনে সেগুলোর বৈদ্যুতিক পরিবাহিতার কিছু হয় না, কিন্তু বেশি প্রসারিত করবে। এর পরিবাহিতা একশ’ গুণ কমে আসে। এটা একটা মস্ত ক্রটি। এই ক্রটি কাটিয়ে উঠতে হুয়াং ও তার দল প্রথমে পলিমার সামগ্রী দিয়ে অতি রন্ধ্রযুক্ত একটি ত্রিমাত্রিক কাঠামো তৈরি করেনÑযা মূল সাইজের তিন গুণ পর্যন্ত প্রসারিত করা যায়। এরপর তারা রন্ধ্রগুলোর ভিতর তরল ধাতব পদার্থ ডেলে দেন। এই তরল ধাতব আকার ও আয়তনের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সঙ্গে খাপখাইয়ে নিতে পারে। এর ফলে ইলেকট্রনিক সরঞ্জামের সার্কিটের পরিবাহিতা লক্ষণীয়ভাবে বজায় থাকে। সরঞ্জামটি অতিমাত্রায় প্রসারিত করার পরও এর বিদ্যুত অবিচ্ছিন্নভাবে প্রবহিত হতে থাকে। অর্থাৎ সরঞ্জামটি হয়ে দাঁড়ায় অতিমাত্রায় প্রসারণযোগ্য ও অত্যন্ত পরিবাহী।

প্রকৃতি ও বিজ্ঞান ডেস্ক

No comments

Powered by Blogger.