বয়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি by মোরসালিন মিজান

শুরু হচ্ছে রমজান। পবিত্র এ মাসের প্রথম দিন থেকে রোজা আর ইবাদত বন্দেগিতে কাটাবেন মুমিন মুসলমানরা। সংযমের পরীক্ষা দেবেন। বর্তমানে চলছে মানসিক প্রস্তুতি। সারা দেশের মতো ঢাকার মুসলমানরাও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে সরকারী বেসরকারী অফিস ব্যাংক বীমার পরিবর্তিত সময়সূচী জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে রমজান শুরু


হতেই বদলে যাবে ঢাকার নিত্যদিনের চেহারা। আগেভাগে ঘরে ফিরবেন নগরের মানুষ। পরিবারের সকলের সঙ্গে ইফতার করবেন। রাতে ঘুম থেকে উঠে সেহ্রি খাবেন। এভাবে চলবে পুরো একটি মাস। অবশ্য উপোস থাকা বা সিয়াম সাধনার এ মাসে অধিক পানাহারের একটি সংস্কৃতিও চালু আছে। তাই বাজার সদাই একদম কমে না। বেড়ে যায় কয়েকগুণ। ঘরে ঘরে চলে বাহারি ইফতার তৈরির কাজ। সেহরির সময়ও ভরপুর ডাইনিং টেবিল চাই অনেকের। এভাবেই অভ্যস্ত তাঁরা। ফলে দারুণ সুবিধা হয়েছে ব্যবসায়ীদের। সুযোগ বুঝে প্রতিবছরই রমজানে পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দেন তাঁরা। বহু বছর ধরে এমনটি চলে আসছে। সন্দেহ নেই, এবারও তাই হবে। কিন্তু কতটা হবে সেটি এখন দেখার বিষয়। অবশ্য এটা বলতেই হবে, দাম সহনীয় রাখতে সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে। ব্যবসায়ী, এমনকি অসাধু বাটপার ধরনের ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও শুদ্ধ বাংলায় কথা বলছে। সচিবালয়ে আমন্ত্রণ জানিয়ে কখনও মিনতি করছে। কখনও ধমক দিচ্ছেÑ দাম কমাও। সহনীয় পর্যায়ে রাখ। বুধবার এ ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলন করেছেন শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়–য়া। তিনি জানিয়েছেন, এবার রমজানে চিনির পাইকারি মূল্য ৫০ টাকা এবং খুচরা মূল্য ৫৫ টাকা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। কোন ব্যবসায়ী দাম বাড়ালে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মন্ত্রী। একই দিন রমজানে ভোজ্যতেলের মূল্য কমানোর জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে পণ্য বিপণন ও পরিবেশক নিয়োগ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে এ আহ্বান জানান বাণিজ্য সচিব মোহাম্মদ গোলাম হোসেন। দাম কমানোর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য কমছে। তাই দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে ভোজ্যতেলের মূল্য কমানোর সুযোগ রয়েছে। টিসিবির সরবরাহ করা দৈনন্দিন পণ্যমূল্য তালিকা দেখিয়ে সচিব বলেন, অথচ তেলের মূল্য প্রতিদিন লিটারপ্রতি ১ টাকা করে বাড়ছে। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের দাম কমানোর আহ্বান জানান তিনি। ব্যবসায়ীরা যুক্তি মেনেছেন। কিন্তু তালগাছটি তাঁদের চাই। বলেছেন, দাম কমানো সম্ভব নয়। তবে বর্তমানে দেশে ভোজ্যতেল ও চিনির পর্যাপ্ত মজুদ থাকার কথা স্বীকার করে বলেছেন, রমজানেও সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে। ফলে এ সময় দুই পণ্যের মূল্য বাড়বে না। কিন্তু নাছোড়বান্দা সচিব। অবশেষে অনেকটা বিপদে পড়ে তেলের মূল্য লিটারপ্রতি ১ টাকা কমানোর আশ্বাস দিয়েছেন সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান। এভাবে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ রমজানে পণ্যের দাম সহনীয় রাখার ব্যাপারে কাজ করছেন। খুব ভাল আর একটি খবর হচ্ছে, এবার যখন রমজান শুরু হচ্ছে তখন লোডশেডিং অনেক কম। ফলে ইফতার সেহরির সময় মোম নিয়ে বসতে হবে না। অন্য অনেক ঝামেলাও চুকে যাবে।
তবে রাজধানীবাসীকে ভাল ভোগাবে কাটাচেরা রাস্তা। এই ভরা বর্ষায় শহরের বহু এলাকার সড়ক খাল বিলের চেহারা পেয়েছে। সরকারের এই বিভাগ ওই বিভাগ মনের মতো করে এগুলো কেটেছে। বর্ষার আগে কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু এর কিছুই হয়নি। বরং এখনও চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। এর আসলে সুফল কি, কবে সেই সুফল পাওয়া যাবে, কেউ জানে না। তবে বিশৃঙ্খল অবস্থাটি খুব চোখে পড়ছে। সামান্য বৃষ্টি হলে স্থলপথ জলপথের মধ্যে কোন পার্থক্য করা যাচ্ছে না। সন্দেহ নেই, রমজান শুরু হলে অবস্থাটি আরও বেগতিক হবে। এ অবস্থায় দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভুগীরা।

No comments

Powered by Blogger.