বাংলাদেশে জঙ্গী অর্থায়ন

সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ক সিনেট উপকমিটি বাংলাদেশের দুটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে জঙ্গী অর্থায়নের অভিযোগ এনেছে। এই দুটি ব্যাংক হলো ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল)।


এই ব্যাংক দুটিকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে এইচএসবিসি ব্যাংকের যুক্তরাষ্ট্র শাখা। সিনেট উপকমিটির প্রতিবেদনে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, এক্ষেত্রে মুদ্রাপাচার বিরোধী নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা মানা হয়নি। জানা গেছে, বাংলাদেশসহ মেক্সিকো, সৌদি আরব, ইরান, সুদানসহ কয়েকটি দেশের কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এইচএসবিসি ব্যাংক পর্যাপ্ত নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই লেনদেন করেছে। এসব ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠান নানা ধরনের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, সৌদি আরবের আল রাজি ব্যাংক এবং বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংক ও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে আল কায়েদাসহ অন্যান্য জঙ্গী গোষ্ঠীর সম্পর্ক রয়েছে। অথচ এইচএসবিসির যুক্তরাষ্ট্র শাখা তাদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন অব্যাহত রেখেছে। উল্লেখ্য, মেক্সিকো মাদক ব্যবসার অবৈধ অর্থ বিষয়ে দীর্ঘ তদন্ত শেষে মার্কিন সিনেটের উপকমিটি সোমবার ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সিনেট উপ-কমিটির ৩৪০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনের ২২৫ থেকে ২৩৮ পৃষ্ঠা পর্যন্ত বাংলাদেশের এই দুটি সন্দেহভাজন ব্যাংক সম্পর্কে আলোচনা করা রয়েছে।
উন্নয়নশীল দেশে নানা ক্ষেত্রে অসতর্কতার সুযোগ নিয়ে এমন কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেÑযারা অনেক সময় বেআইনী তৎপরতার সঙ্গে জড়িত হয়। কিন্তু এইচএসবিসি ব্যাংকের মতো বিশ্বের অন্যতম ব্যাংক যখন জঙ্গী অর্থায়নে শত শত কোটি ডলার পাচারের সঙ্গে জড়িত হয়; তখন বিশ্বজুড়ে জনগণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা হুমকির সম্মুখীন হয়। সিনেট উপকমিটির প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নামটি যেভাবে এসেছে তা আমাদের সবার জন্য উদ্বেগের বিষয়। জঙ্গী অর্থায়নের সঙ্গে বাংলাদেশের কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জড়িত হওয়ার খবর বহু পুরনো। এ নিয়ে আগেই তদন্ত হওয়া উচিত ছিল। জঙ্গী তৎপরতা সর্বদাই একটি দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ইতোপূর্বে বাংলাদেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকের দুটি শাখার বিরুদ্ধে ‘সন্দেহজনক লেনদেনের’ অভিযোগ এনেছিল। ইসলামী ব্যাংকের ২০ কর্মীর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিষয়টি উদ্বেগজনক। ইসলামী ব্যাংক ও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক বিষয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে তদন্ত জরুরী। এক্ষেত্রে স্থবিরতা কাম্য নয়।
এদিকে বিষয়টি সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর বলেছেন, অধিকতর তদন্তে অর্থপাচারের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে দেশী ব্যাংক দুটির বিরুদ্ধে দেশের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে সদ্য পাশ হওয়া মানি লন্ডারিং আইন সন্ত্রাসী অর্থায়ন প্রতিরোধ আইনে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। ওদিকে অভিযোগের দায় স্বীকার করে এইচএসবিসি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ডেভিড ব্যাগলে পদত্যাগ করেছেন। জঙ্গী অর্থ্যায়নের এই বিষয়টি যথাযথ তদন্ত হোক এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.