কবিতা- স্বপ্ন বিলাস by গাজী তানভীর আহমদ
ব্যস্ততার গ্লানি গোছাতে আজ অনেক দিন পর যাচ্ছি আমার সবুজ গাঁয়ে
এভাবে প্রায়ই ছুটে যাই আমিÑকখনো নারীর টানে, কখনো প্রকৃতির
তবে তোমাকে নিয়ে ট্রেন যাত্রায় এটাই আমার প্রথম-মুখোমুখি
এভাবে চোখে চোখ রেখে।
এভাবে প্রায়ই ছুটে যাই আমিÑকখনো নারীর টানে, কখনো প্রকৃতির
তবে তোমাকে নিয়ে ট্রেন যাত্রায় এটাই আমার প্রথম-মুখোমুখি
এভাবে চোখে চোখ রেখে।
আমার ছোট্টবেলার খেলার সাথী তিতাস, সে তো আমাকে পেলেই খুশি
আমি তার বুকে অবিরাম খেলা করি, ছুটে যাই বার বার ; আর-
তাকিয়ে থাকি অপলক- মুগ্ধ নয়নে, কখনো আসে তৃপ্তির নিঃশ্বাস, কখনোবা দীর্ঘশ্বাস!
সেও আমাকে পেয়ে তার নব যৌবনের স্বাদ মিটায়
কখনো ঝাপটে ধরে, কখনো আলিঙ্গন চুম্বনে মেতে উঠে
তবে এ স্বাদটুকু ও তার স্থায়ী হয় না-
ঘুরে ঘুরে ক্ষণিকের জন্য বছরে মাত্র একবার আসে
তাই তার দুঃখ। খুব বেশি।
আমি একা আনমনে তিতাসের বুকে বিচরণে তৃপ্ত হইÑ কথা বলি অজান্তেই
কখনো ব্যথিত হই বিচ্ছেদ যাতনায়।
আবার যখন আমি জীবিকার তাগিদে ফিরে আসি শহুরে ব্যস্ততায়
তিতাস আমাকে জড়িয়ে ধরে খুব শক্ত। করে তারপর শব্দহীন কান্নায়
আমার পুরোটা অস্তিত্ব শীতল করে দেয়।
এটা আমি অনুভব করি, প্রহর গুণি আঙ্গুল টিপেÑফের দেখা না হওয়া পর্যন্ত।
জানালার মাথাটা রেখে এই মুহূর্তে খটখট শব্দ ভেদ করে এটাই ভাবছি আমি।
যেভাবে আমি; ঠিক যেন সেভাবে তুমিও বসে আছ জানালায় মাথাটা সামান্য দুলিয়ে
আর তাকিয়ে আছ অপলক ট্রেনের ধাক্কায় ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাওয়ার প্রকৃতিগুলোয়
কখনো ধানক্ষেত, খাল-বিল, কখনো বিরানভূমি; আবার কখনো শূন্য থেকে উড়ে আসা
শেষ বিকেলের প্রান্তিকতায়Ñ
কোনটার বিশ্রাম আবার কোনটার পথবিরতি; এভাবে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি-যুগলদের
Ñকৃষ্ণচূড়ায় আড্ডা।
আমি দেখতে পাচ্ছি, উপলব্ধি করছি স্পষ্ট সবকিছুÑকখনো শুধুই তোমাকে নিয়ে
ঐ যে দেখ! দেখ! কত সুন্দর কৃষ্ণচূড়া! এভাবে আঙ্গুল দিয়ে ধরে ধরে দেখিয়ে দিচ্ছিÑ
যা তোমার নজরে আসেনি।
সে কি! কৃষ্ণচূড়া দেখা মাত্রই তোমার মুখে একটা অদ্ভূত হাসির ঝিলিক !
এখনো খেলে যাচ্ছে আমার হৃদয়ে ।
তার পর এ ঝিলিক ছড়িয়ে পড়ল তোমার সমস্ত মুখাবয়বে-সাথে সূর্যের মৃদু রশ্মিটিও !
এখন আমি স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছি তোমের এ মুখাবয়ব ঘিরে অসংখ্য কৃষ্ণচূড়ার ফুল
Ñঅবিরাম নৃত্য করে যাচ্ছে
যা আমি দেখতে পাচ্ছিÑআমার ভুবনে। আমার সংযত এ দুটি দৃষ্টি দিয়ে
অনুভব করলাম; তারপর অনুসিন্ধৎসু আবিষ্কারের দুরন্ত প্রচেষ্টায়
Ñতোমার দুটি ঠোঁট, যেখান থেকে বিচ্ছুরিত হচ্ছে শহীদদের রক্তবর্ণে এক একটা কৃষ্ণচূড়া
Ñযার উৎসস্থল ঠিক গভীরতায়।
হয়তো আমারই মতো ভাবছ তুমিও। যা আমি ভাবছি এবং ভাববো
সন্ধ্যা নামার এখনো অনেকটা বাকি; আর সামান্য পথ নেমেই দেখা হবে আমারÑ
অবিরাম ছন্দে যেমন খুশি খেলার সাথী তিতাসের।
তার বুকে হাঁটবো দীর্ঘক্ষণ; এভাবে হাঁটতে হাঁটতে যখন ক্লান্ত হয়ে যাব, ঠিক তখন
এ দেহটা দুলিয়ে দেব সবুজ ঘাসে।
তারপর অনাবিল প্রাপ্তির নিঃশ্বাসে হারিয়ে যাব, তোমাকে নিয়ে আমার ভুবনে
যদি তুমি সাথী হও আমার এ হাতটি ধর।
এক সময় উঠে দাঁড়াব; তারপর ধীর কদমে চলে যাব কুরুলিয়ায় আরো শক্ত বাঁধনে
সেখানেও তাকিয়ে থাকবো আমরা দু’জন পশ্চিমাকাশে অপলক-ঠাঁই-নিস্তব্ধতায়
একান্ত আনমনেÑনা বলা কথায়Ñ
স্বপ্নাকাশের ঐ লাল সূর্যটা তিতাসের জল ভেদ করে ডুবে যাওয়ার শেষ চিহ্নটুকু পর্যন্ত।
আমি ভাবছি এবং ভাববো। যদিও সময় বলছে ভিন্ন কথা, সে নাকি বসে থাকে না।
পাখি উড়ে যাচ্ছে
শিউল মনজুর
কবিতার মতো মন নিয়ে উড়ে যাচ্ছে শীতের
পাখি। এ দেশে এসে সে জেনে গেলো
এখানে শিকারী নেই। পাখিরা প্রজন্মের
অবাধ আনন্দে, প্রগাঢ় সম্পর্কের নিবিড়
হাওয়ায় ঘর বেঁধে সুখী হয়।
ভ্রমণ শেষে শীতপাখি উড়ে যাচ্ছে ...।
হাওরে-বাঁওড়ে, খালে-বিলে নিরাপদে বাস
করে, হৃষ্ট পুষ্ট হয়ে শরীরে মায়াবি স্মৃতির
লিখন শেষে পর্যটক পাখির ডানায় ভর করে
টুপটাপ জলের বেদনা রেখে, শীতপাখি
উড়ে যাচ্ছে ...।
উড়ে যাচ্ছে শীতপাখি আর একটি
বাঁশপাতার ছাউনি ঘরে সোনালি হাঁসের
ডানায় রক্তাক্ত পঙ্ক্তির কবিতা বরফের
মতো গলে গলে পড়ছে ...।
শীতপাখি, তবু উড়ে যাচ্ছে ...।
এমন কোন রাত নেই
অজয় কুমার রায়
দিনের আলো যতোই অন্ধকারের দিকে ছুটে যায়
ভূমিকম্পের মতোই ছুটে এসে নৃত্য শুরু করো হৃদয়ে
রাত যতোই গভীর হয় ততো বেশি নৃত্যের
পায়ের শব্দে বিস্ফোরিত হয়
চোখের ঘুম কেড়ে নেয়
কোনো প্রেমিক কবির।
এমন কোনো রাত নেই
তোমার নৃত্যের পায়ের শব্দে
আমার কলমের স্তব্ধতা কাটেনি
অথচ তোমাকে এখনো ছোঁয়াই হলো না!
অপরাগতা
আনন্দ দাশ
কে কবে
পুড়িয়েছে আগুন কে,
পোড়াতে পারে কি কেউ
সূর্য রশ্মিকে,
কে কবে
বেঁধেছে মহাশূন্যকে,
নিঃশ্বাস না নিলে
বাতাসের কী যায় আসে
কী যায় আসে বিধাতার
যদি বান্দা না ডাকে।
No comments