ক্লাস রুটিনে পরিমার্জন প্রয়োজন by শেখ শাহবাজ রিয়াদ
মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য প্রণীত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো অর্জন করতে হলে মাধ্যমিক পর্যায়ের বর্তমান ক্লাস রুটিনটিকেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীবান্ধব করতে হবে। ক্লাস রুটিন প্রণয়নের সময় বিষয় ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের যোগ্যতাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিতে হবে।
বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা বাড়াতে একজন শিক্ষককে সর্বোচ্চ দুটি বিষয়ের ক্লাসে সংশ্লিষ্ট করাতে হবে
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ স্তর হচ্ছে মাধ্যমিক শিক্ষা। এ স্তরের গুণগত ও পরিমাণগত উন্নয়নের লক্ষ্যে মাধ্যমিক পাঠ্যসূচি সংস্কার, মূল্যায়ন ব্যবস্থার পরিমার্জন, শিক্ষক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। মাধ্যমিক স্তরের সাম্প্রতিককালে যেসব পরিবর্তন এসেছে তার মধ্যে শ্রেণীকক্ষে প্রচলিত শিক্ষককেন্দ্রিক বক্তৃতানির্ভর শিক্ষাদান পদ্ধতির পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণমূলক শিক্ষণ-শিখন পদ্ধতি ও কৌশল প্রবর্তন, মূল্যায়ন ব্যবস্থার সংস্কারের অংশ হিসেবে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতির প্রয়োগ, বিদ্যালয়ভিত্তিক মূল্য যাচাই বা এসবিএ প্রচলন। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর ইউনিসেফের সহায়তায় মাধ্যমিক স্তরে জীবন দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা প্রবর্তনের যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তার সফল, সার্থক ও কার্যকর প্রয়োগ এবং লক্ষ্য অর্জন করতে গেলে বর্তমান ক্লাস রুটিনের সময়কে বাড়াতে হবে। উল্লেখ্য, জীবন দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষায় যে ১০টি দক্ষতাকে চিহ্নিত করা হয়েছে তার প্রতিটি অর্জনের জন্য শ্রেণী কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হবে। শিক্ষকের একতরফা বক্তৃতা ও তথ্য পরিবেশনের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। প্রতিটি ক্লাসরুম হতে হবে শিক্ষার্থীদের কর্মতৎপরতা ও সক্রিয়তায় জীবন্ত। অংশগ্রহণমূলক শিক্ষণ-শিখন পদ্ধতি ও সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি প্রকৃতপক্ষে সে লক্ষ্য অর্জনের ইতিবাচক সূচনামাত্র। কিন্তু পাঠ্যসূচির পরিবর্তন ছাড়া এর কার্যকর ফলাফল দৃষ্টিগোচর হবে না। মাধ্যমিক স্তরের সব বিষয়ের পাঠ্যসূচিকে জীবনমুখী ও শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে সম্পর্কিত করে প্রণয়ন করা হলে জীবন দক্ষতা অর্জন সম্ভব। জীবন দক্ষতা একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিচ্ছিন্নভাবে তা অর্জন সম্ভব নয়। সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান ক্লাস রুটিনেরও পরিবর্তন আনতে হবে। কারণ বর্তমান ক্লাস রুটিন মাধ্যমিক শিক্ষার সাম্প্রতিক বা আশু সংস্কার এবং এসব সংস্কার ও পরিবর্তনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য সহায়ক নয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে শিক্ষক তার বক্তৃতার মাধ্যমেই ক্লাসটি শেষ করে দেন। যদি সময় পান এবং সম্ভব হয় তাহলে শিক্ষার্থীদের দু'একটি প্রশ্ন করেন কিংবা প্রশ্ন করতে সুযোগ দেন। অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে এখানে নিষ্ক্রিয় ও নীরব থাকতে হয়। কারণ প্রতিটি ক্লাসের ব্যাপ্তি ৩৫-৪০ মিনিট। ইচ্ছা ও আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও একজন শিক্ষক তার মনের মতো করে ক্লাসটি শেষ করতে পারেন না শুধু সময় স্বল্পতার কারণে। অথচ তাকে প্রতিদিন অতৃপ্তি নিয়ে এরকম অসম্পূর্ণ বেশ কয়েকটি ক্লাস নিতে হয়। অন্যদিকে শিক্ষকরা অধিকসংখ্যক ক্লাসের চাপে পরিকল্পনামাফিক ক্লাস নিতে ও পাঠোপযোগী উপকরণ তৈরি করতে পারেন না বা করতে উৎসাহবোধ করেন না। উল্লেখ্য, বর্তমান রুটিনে প্রতিদিন ৭-৮টি করে বরাদ্দ থাকে, যার মধ্যে টিফিনের আগের ক্লাসগুলো ৩৫-৪০ মিনিট এবং টিফিনের পরের ক্লাসগুলো ৩০ মিনিটের হয়। দেশের ডাবল শিফট বিদ্যালয়ে অবশ্য ওই সময়টুকুও পাওয়া যায় না। কিন্তু প্রতি ক্লাসের জন্য নির্ধারিত ৪০-৩৫ মিনিট সময়ও বাস্তব অবস্থায় ২৫-৩০ মিনিটে পরিণত হয়, যখন একজন শিক্ষক ক্লাস থেকে বের হয়ে অন্য একটি ক্লাসে যান। দেখা যাচ্ছে, বর্তমান ক্লাস রুটিনে একজন শিক্ষককে প্রতিদিন এ রকম নামমাত্র ক্লাস অনেকগুলোই করতে হচ্ছে, যদিও সময় স্বল্পতা ও অধিক ক্লাসের ভারে তিনি তার মনের মতো একটি ক্লাসও নিতে পারছেন না। সেক্ষেত্রে বর্তমানের ৩৫-৪০ মিনিটের ক্লাসগুলোকে ৬০ মিনিট বা এক ঘণ্টার ক্লাসে পরিণত করলে প্রতিটি ক্লাসে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিশাল সুযোগ সৃষ্টি হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষণ-শিখন কার্যক্রম হয়ে উঠবে বর্তমানের তুলনায় অধিক প্রাণবন্ত, আনন্দময় ও কার্যকর। ক্লাস ৬০ মিনিটের হলে দিনের মোট ক্লাস সংখ্যা কমে আসবে, শিক্ষক প্রতি দৈনিক ও সাপ্তাহিক ক্লাসও কমে আসবে।
উল্লেখ্য, টিকিউআই-সেফ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশের বেশ কিছু স্কুলে এক ঘণ্টার রুটিনে ক্লাস রুটিন পরিচালিত হচ্ছে যাতে শিক্ষার্থী-শিক্ষক সবাই উপকৃত হচ্ছে। তবে যেসব স্কুলে ক্লাস, শাখার তুলনায় শিক্ষক সংখ্যা কম, সেখানে সার্থকভাবে তা বাস্তবায়ন করতে কষ্ট হচ্ছে। আমাদের বর্তমান ক্লাস রুটিনে লাইব্রেরি ব্যবহার, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, খেলাধুলা ও ব্যবহারিক কাজের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ নেই। ফলে শিক্ষার্থীর সুপ্ত প্রতিভার অনুসন্ধান, বিকাশ ও তার সৃজনশীলতা চর্চার যে উদ্দেশ্য তা কখনোই অর্জিত হবে না যদি না ক্লাস রুটিনে তা অন্তর্ভুক্ত হয়। শিক্ষকদের সৃজনশীলতার প্রশ্ন তো আমরা এখনও গুরুত্বই দেইনি। যে শিক্ষককে প্রতিদিনের ৭-৮টি পিরিয়ডের মধ্যে ৫-৬টি নিতে হয় তার পাঠদানের সৃজনশীলতা আশা করাও অযৌক্তিক হবে। এছাড়াও আমাদের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস রুটিন নিয়ে আরও কিছু অপ্রিয়, অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাপার ঘটে, যা অনেকটা ওপেন সিক্রেট কিন্তু সেগুলো কখনও সমস্যা হিসেবে জোরালোভাবে চিহ্নিত হয়নি। অথচ শিক্ষার গুণগত ও পরিমাণগত উন্নয়নের পথে বড় বাধা অথচ তা বছরের পর বছর ধরে হয়ে আসছে। এর কয়েকটি হলো ক্লাস রুটিন নিয়ে একশ্রেণীর শিক্ষকের দলাদলি, লুকোচুরি, অসন্তোষ, মনোমালিন্য, ক্লাস বণ্টনকে কোনো কোনো শিক্ষকের জন্য শাস্তি এবং কারও কারও জন্য পুরস্কারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা, ক্লাস বণ্টনের অসমহার এবং ক্লাস পরিবর্তন নিয়ে অনমনীয়তা। দেখা যায়, শিক্ষকের অবসর ও বদলিজনিত কারণে বছরের মাঝামাঝি কোনো শিক্ষক চলে গেলে কিংবা সেখানে নতুন শিক্ষক এলে নতুন করে রুটিন সাজানো হয় না। নতুন শিক্ষকদের পুরনো রুটিনেই ক্লাস নিতে হয়, যদিও তা তাদের বিষয়, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার সঙ্গে অসামঞ্জস্য।
অনেক আশা নিয়ে জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন করা হয়েছে। মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য প্রণীত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো অর্জন করতে হলে মাধ্যমিক পর্যায়ের বর্তমান ক্লাস রুটিনটিকেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীবান্ধব করতে হবে। ক্লাস রুটিন প্রণয়নের সময় বিষয় ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের যোগ্যতাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিতে হবে। বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা বাড়াতে একজন শিক্ষককে সর্বোচ্চ দুটি বিষয়ের ক্লাসে সংশ্লিষ্ট করাতে হবে। যেসব বিদ্যালয়ে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে তা পূরণ করতে হবে। শিক্ষকদের ক্লাসের চাপ কমানোর উদ্যোগও গ্রহণ করতে হবে।
শেখ শাহবাজ রিয়াদ : সহকারী অধ্যাপক, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ঢাকা
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ স্তর হচ্ছে মাধ্যমিক শিক্ষা। এ স্তরের গুণগত ও পরিমাণগত উন্নয়নের লক্ষ্যে মাধ্যমিক পাঠ্যসূচি সংস্কার, মূল্যায়ন ব্যবস্থার পরিমার্জন, শিক্ষক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। মাধ্যমিক স্তরের সাম্প্রতিককালে যেসব পরিবর্তন এসেছে তার মধ্যে শ্রেণীকক্ষে প্রচলিত শিক্ষককেন্দ্রিক বক্তৃতানির্ভর শিক্ষাদান পদ্ধতির পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণমূলক শিক্ষণ-শিখন পদ্ধতি ও কৌশল প্রবর্তন, মূল্যায়ন ব্যবস্থার সংস্কারের অংশ হিসেবে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতির প্রয়োগ, বিদ্যালয়ভিত্তিক মূল্য যাচাই বা এসবিএ প্রচলন। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর ইউনিসেফের সহায়তায় মাধ্যমিক স্তরে জীবন দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা প্রবর্তনের যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তার সফল, সার্থক ও কার্যকর প্রয়োগ এবং লক্ষ্য অর্জন করতে গেলে বর্তমান ক্লাস রুটিনের সময়কে বাড়াতে হবে। উল্লেখ্য, জীবন দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষায় যে ১০টি দক্ষতাকে চিহ্নিত করা হয়েছে তার প্রতিটি অর্জনের জন্য শ্রেণী কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হবে। শিক্ষকের একতরফা বক্তৃতা ও তথ্য পরিবেশনের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। প্রতিটি ক্লাসরুম হতে হবে শিক্ষার্থীদের কর্মতৎপরতা ও সক্রিয়তায় জীবন্ত। অংশগ্রহণমূলক শিক্ষণ-শিখন পদ্ধতি ও সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি প্রকৃতপক্ষে সে লক্ষ্য অর্জনের ইতিবাচক সূচনামাত্র। কিন্তু পাঠ্যসূচির পরিবর্তন ছাড়া এর কার্যকর ফলাফল দৃষ্টিগোচর হবে না। মাধ্যমিক স্তরের সব বিষয়ের পাঠ্যসূচিকে জীবনমুখী ও শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে সম্পর্কিত করে প্রণয়ন করা হলে জীবন দক্ষতা অর্জন সম্ভব। জীবন দক্ষতা একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিচ্ছিন্নভাবে তা অর্জন সম্ভব নয়। সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান ক্লাস রুটিনেরও পরিবর্তন আনতে হবে। কারণ বর্তমান ক্লাস রুটিন মাধ্যমিক শিক্ষার সাম্প্রতিক বা আশু সংস্কার এবং এসব সংস্কার ও পরিবর্তনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য সহায়ক নয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে শিক্ষক তার বক্তৃতার মাধ্যমেই ক্লাসটি শেষ করে দেন। যদি সময় পান এবং সম্ভব হয় তাহলে শিক্ষার্থীদের দু'একটি প্রশ্ন করেন কিংবা প্রশ্ন করতে সুযোগ দেন। অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে এখানে নিষ্ক্রিয় ও নীরব থাকতে হয়। কারণ প্রতিটি ক্লাসের ব্যাপ্তি ৩৫-৪০ মিনিট। ইচ্ছা ও আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও একজন শিক্ষক তার মনের মতো করে ক্লাসটি শেষ করতে পারেন না শুধু সময় স্বল্পতার কারণে। অথচ তাকে প্রতিদিন অতৃপ্তি নিয়ে এরকম অসম্পূর্ণ বেশ কয়েকটি ক্লাস নিতে হয়। অন্যদিকে শিক্ষকরা অধিকসংখ্যক ক্লাসের চাপে পরিকল্পনামাফিক ক্লাস নিতে ও পাঠোপযোগী উপকরণ তৈরি করতে পারেন না বা করতে উৎসাহবোধ করেন না। উল্লেখ্য, বর্তমান রুটিনে প্রতিদিন ৭-৮টি করে বরাদ্দ থাকে, যার মধ্যে টিফিনের আগের ক্লাসগুলো ৩৫-৪০ মিনিট এবং টিফিনের পরের ক্লাসগুলো ৩০ মিনিটের হয়। দেশের ডাবল শিফট বিদ্যালয়ে অবশ্য ওই সময়টুকুও পাওয়া যায় না। কিন্তু প্রতি ক্লাসের জন্য নির্ধারিত ৪০-৩৫ মিনিট সময়ও বাস্তব অবস্থায় ২৫-৩০ মিনিটে পরিণত হয়, যখন একজন শিক্ষক ক্লাস থেকে বের হয়ে অন্য একটি ক্লাসে যান। দেখা যাচ্ছে, বর্তমান ক্লাস রুটিনে একজন শিক্ষককে প্রতিদিন এ রকম নামমাত্র ক্লাস অনেকগুলোই করতে হচ্ছে, যদিও সময় স্বল্পতা ও অধিক ক্লাসের ভারে তিনি তার মনের মতো একটি ক্লাসও নিতে পারছেন না। সেক্ষেত্রে বর্তমানের ৩৫-৪০ মিনিটের ক্লাসগুলোকে ৬০ মিনিট বা এক ঘণ্টার ক্লাসে পরিণত করলে প্রতিটি ক্লাসে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিশাল সুযোগ সৃষ্টি হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষণ-শিখন কার্যক্রম হয়ে উঠবে বর্তমানের তুলনায় অধিক প্রাণবন্ত, আনন্দময় ও কার্যকর। ক্লাস ৬০ মিনিটের হলে দিনের মোট ক্লাস সংখ্যা কমে আসবে, শিক্ষক প্রতি দৈনিক ও সাপ্তাহিক ক্লাসও কমে আসবে।
উল্লেখ্য, টিকিউআই-সেফ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশের বেশ কিছু স্কুলে এক ঘণ্টার রুটিনে ক্লাস রুটিন পরিচালিত হচ্ছে যাতে শিক্ষার্থী-শিক্ষক সবাই উপকৃত হচ্ছে। তবে যেসব স্কুলে ক্লাস, শাখার তুলনায় শিক্ষক সংখ্যা কম, সেখানে সার্থকভাবে তা বাস্তবায়ন করতে কষ্ট হচ্ছে। আমাদের বর্তমান ক্লাস রুটিনে লাইব্রেরি ব্যবহার, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, খেলাধুলা ও ব্যবহারিক কাজের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ নেই। ফলে শিক্ষার্থীর সুপ্ত প্রতিভার অনুসন্ধান, বিকাশ ও তার সৃজনশীলতা চর্চার যে উদ্দেশ্য তা কখনোই অর্জিত হবে না যদি না ক্লাস রুটিনে তা অন্তর্ভুক্ত হয়। শিক্ষকদের সৃজনশীলতার প্রশ্ন তো আমরা এখনও গুরুত্বই দেইনি। যে শিক্ষককে প্রতিদিনের ৭-৮টি পিরিয়ডের মধ্যে ৫-৬টি নিতে হয় তার পাঠদানের সৃজনশীলতা আশা করাও অযৌক্তিক হবে। এছাড়াও আমাদের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস রুটিন নিয়ে আরও কিছু অপ্রিয়, অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাপার ঘটে, যা অনেকটা ওপেন সিক্রেট কিন্তু সেগুলো কখনও সমস্যা হিসেবে জোরালোভাবে চিহ্নিত হয়নি। অথচ শিক্ষার গুণগত ও পরিমাণগত উন্নয়নের পথে বড় বাধা অথচ তা বছরের পর বছর ধরে হয়ে আসছে। এর কয়েকটি হলো ক্লাস রুটিন নিয়ে একশ্রেণীর শিক্ষকের দলাদলি, লুকোচুরি, অসন্তোষ, মনোমালিন্য, ক্লাস বণ্টনকে কোনো কোনো শিক্ষকের জন্য শাস্তি এবং কারও কারও জন্য পুরস্কারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা, ক্লাস বণ্টনের অসমহার এবং ক্লাস পরিবর্তন নিয়ে অনমনীয়তা। দেখা যায়, শিক্ষকের অবসর ও বদলিজনিত কারণে বছরের মাঝামাঝি কোনো শিক্ষক চলে গেলে কিংবা সেখানে নতুন শিক্ষক এলে নতুন করে রুটিন সাজানো হয় না। নতুন শিক্ষকদের পুরনো রুটিনেই ক্লাস নিতে হয়, যদিও তা তাদের বিষয়, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার সঙ্গে অসামঞ্জস্য।
অনেক আশা নিয়ে জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন করা হয়েছে। মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য প্রণীত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো অর্জন করতে হলে মাধ্যমিক পর্যায়ের বর্তমান ক্লাস রুটিনটিকেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীবান্ধব করতে হবে। ক্লাস রুটিন প্রণয়নের সময় বিষয় ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের যোগ্যতাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিতে হবে। বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা বাড়াতে একজন শিক্ষককে সর্বোচ্চ দুটি বিষয়ের ক্লাসে সংশ্লিষ্ট করাতে হবে। যেসব বিদ্যালয়ে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে তা পূরণ করতে হবে। শিক্ষকদের ক্লাসের চাপ কমানোর উদ্যোগও গ্রহণ করতে হবে।
শেখ শাহবাজ রিয়াদ : সহকারী অধ্যাপক, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ঢাকা
No comments