দক্ষ কর্মীদের দেশত্যাগ-সার কারখানায় অশনি সংকেত

বাংলাদেশ জনশক্তি রফতানিতে আগ্রহী। কেবল অদক্ষ কর্মী নয়, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে উচ্চশিক্ষিত কর্মী এমনকি অভিজ্ঞ পেশাজীবীদের প্রেরণেও আমাদের আপত্তি নেই। এভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়, একই সঙ্গে দেশে আসে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা।


কিন্তু রোববার সমকালে 'সার কারখানার দক্ষ শ্রমিকরা অবৈধভাবে বিদেশ যাচ্ছেন : এ প্রক্রিয়া চলতে থাকলে সার উৎপাদন সংকটের মুখে পড়বে' শিরোনামের খবর মোটেই আশাবাদ সৃষ্টি করে না। বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে কয়েকটি কারখানায় ইউরিয়া সার উৎপাদন হয় এবং এসব প্রতিষ্ঠানে বিপুলসংখ্যক দক্ষ কর্মকর্তা ও শ্রমিক এতদিনে সৃষ্টি হয়েছে। তাদের গড়ে তোলার পেছনে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের বিপুল অর্থ ব্যয় হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজের মধ্য দিয়ে তারা দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। এ কারণে আলজেরিয়া, মরক্কো ও তিউনিসিয়ায় নতুন সার কারখানা প্রতিষ্ঠিত হলে তাদের জন্য চাহিদা সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। বেতন ও সুযোগ-সুবিধা বিষয়ে দরকষাকষিতে সফল হলে তারা এসব প্রতিষ্ঠানে যোগদানের কথাও ভাবতে পারেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের যেসব প্রতিষ্ঠানে তারা কাজ করেছেন, তার প্রতি দায়বদ্ধতা কোনোভাবেই উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। সমকালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইতিমধ্যে দেশের ছয়টি সার কারখানা থেকে দুই শতাধিক দক্ষ কর্মী দেশ ছেড়েছেন। অসুস্থতাজনিত ছুটি নিয়ে এক থেকে দুই বছর অবৈধভাবে বিদেশের সার কারখানায় তারা কাজ করছেন। পাশাপাশি দেশের সব সুবিধাও ভোগ করছেন। সমকালের প্রতিবেদনে আরও দুটি বিষয় গুরুতর উদ্বেগের : এক. আলজেরিয়া-ওমানে সার কারখানায় চাকরি নিশ্চিত হওয়ার পর কয়েকজন টেকনিক্যাল কর্মকর্তা মেশিনের গোলযোগের সমস্যা দেখিয়ে নিজের প্রতিষ্ঠানে সার উৎপাদন বন্ধ রাখেন। দুই. ওই কোম্পানির উৎপাদিত সারের বাজার রয়েছে বাংলাদেশে। প্রথমত, ব্যক্তিগত স্বার্থে কয়েকজন কর্মী যোগসাজশ করে কারিগরি ত্রুটি দেখিয়ে কারখানা বন্ধ করে রাখার অভিযোগ সত্য হলে সেটা গুরুতর অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। বিষয়টি পরিকল্পিত অন্তর্ঘাত হিসেবেও ধরা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, যে প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশের কর্মীরা কাজ নিয়ে যাচ্ছেন তারা যেহেতু বাংলাদেশে তাদের পণ্য রফতানি করে সে কারণে বাংলাদেশের একই প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের সংঘাত দেখা দিতে পারে। এমন প্রশ্ন সঙ্গত যে, তাদের পণ্য রফতানির স্বার্থে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ কি বিসর্জন দেওয়া হবে? শনিবার বাংলাদেশের সার কারখানার একটি কর্মী দল আলজেরিয়া যাওয়ার সময় বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। তাদের পাসপোর্ট জব্দ করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হালকাভাবে গ্রহণ করবে বলেই আমরা আশা করব। কারণ এর সঙ্গে কেবল কিছু লোকের যথাযথ নিয়ম ও আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে বিদেশে চাকরি যাওয়া নয়, আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার মতো গুরুতর বিষয়টিও জড়িত। সার কারখানায় উৎপাদন বিঘি্নত হলে কৃষি খাতে এর জোগান বিঘি্নত হবে। ফলে প্রয়োজনের সময় বাড়তি আমদানির সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরকারকে। হয়তো দেখা যাবে, যেসব প্রতিষ্ঠানে আমাদের দক্ষ কর্মীরা কাজ নিয়ে চলে গেছেন বা যেতে চান তাদের ওপরই আমাদের নির্ভরতা। এ বড়ই অশনি সংকেত! তবে সব দেশেই দক্ষ কর্মীদের ধরে রাখার জন্য ইনসেনটিভ দিতে হয়। দেশপ্রেম অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু কর্মীদের সুযোগ-সুবিধাও নিশ্চিত করা চাই। সরকারি সব প্রতিষ্ঠানকে এ বিষয়টি অবশ্যই মনে রাখতে হবে।
 

No comments

Powered by Blogger.