এ যেন এক অন্যরকম পাওয়া by সালমা মাহবুব
খেলা দেখার দিন সকাল পর্যন্তও ছিলাম অনিশ্চয়তার মাঝে। ৯ এপ্রিল, শনিবার, বাংলাদেশ বনাম অস্ট্রেলিয়ার টিকিট করেছি নর্থ ক্লাব হাউসে কিন্তু আমি এ দেশের ভাগ্যবান দর্শকদের একজন নই যে, মাঠে গিয়ে সবার সঙ্গে খেলা উপভোগ করতে পারি।
তারপরও এবারের বিশ্বকাপ উপলক্ষে মিরপুর স্টেডিয়ামকে ঢেলে সাজানো হয়েছে, আইসিসি রুলস অনুযায়ী সেখানে হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ কথা জানা ছিল বলেই সাহস করে টিকিট করেছিলাম। কিন্তু এই ব্যাপারটি কোনো রকম প্রচার পায়নি বলে অধিকাংশ মানুষই তা জানেন না। এমনকি স্টেডিয়ামের দায়িত্বে যারা আছেন তারাও না। যাই হোক টিকিটে হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য আলাদা কোনো নির্দেশিকা ছিল না তাই ওখানে নর্থ ক্লাব হাউস গেটে ডিসঅ্যাবিলিটি লোগো লাগানো থাকা সত্ত্বেও এ বিশেষ বসার স্থানটির কথা কেউ জানেন না। যে রিভলভিং স্ট্যান্ড লাগানো গেট দিয়ে একজন একজন করে দর্শক ঢোকানো হয়, সেখান দিয়ে হুইলচেয়ার নিয়ে প্রবেশ করা সম্ভব নয়। তাই ওখানে যারা কর্মরত নিরাপত্তাকর্মী ও বিসিবির অফিসার ও সেবাদানকারীরা ছিলেন, তাদের শরণাপন্ন হতে হলো। সবার জ্ঞাতার্থে বলে দেই, ২৩ নম্বর গেট দিয়ে ঢুকে একদম শেষ মাথায় এই বিশেষ ব্যবস্থাটি রয়েছে। মোট পাঁচটি বিশাল বিশাল ধাপ যার প্রত্যেকটিতে পাঁচজন হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী বসতে পারবেন। প্রত্যেকটি ধাপের সঙ্গে ওঠা নামার জন্য র্যাম্প রয়েছে। কিন্তু কিছু অসঙ্গতিও চোখে পড়েছে, যেমন বাংলাদেশের হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীরা বাইরে বের হন কম, কারণ তাদের জন্য সে ধরনের সুযোগ-সুবিধা নেই, তাই এ বিশেষ স্থানটিতে কোনো রকম ছাউনির ব্যবস্থা না করাটা একটা মস্ত বড় ভুল। তা ছাড়াও একজন হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী যে চেয়ারটিতে বসেন, তা বেশিরভাগই স্টিল বা লোহার তৈরি, তাই ওই তীব্র রোদের মাঝে সেগুলো এমন গরম হয়ে ওঠে যে সেটাতে বসে থাকাই মুশকিল হয়ে যায়। হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য কোনো টয়লেট ব্যবস্থা রাখা হয়নি। টয়লেটগুলোর দরজার সর্বজনীন প্রবেশগম্যতার নিয়ম অনুযায়ী ৩০ ইঞ্চি চওড়া হওয়ার কথা কিন্তু সেটি এখানে মানা হয়নি। দরজা চাপা হওয়ার কারণে সেখানে হুইলচেয়ার নিয়ে প্রবেশ করা যায় না। হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য টিকিটে বিশেষ নির্দেশ থাকা প্রয়োজন যাতে কাউন্টারে দেখালেই তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন। তা না হলে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় বড় গেটটি খোলার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয়।
উত্তর ক্লাব হাউসের সামনে যে ডিসঅ্যাবিলিটি লোগো ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে লেখা হয়েছে ডিসঅ্যাবল স্পেক্টেটরস (উরংধনষব ঝঢ়বপঃধঃড়ৎং, বাক্যটি ভুল, আসলে হবে উরংধনষবফ ঝঢ়বপঃধঃড়ৎং ডিসঅ্যাবল্ড স্পেক্টেটরস)। এই ডিসঅ্যাবল্ড শব্দটি প্রতিবন্ধী মানুষের কাছে ভীষণ আপত্তিকর একটি শব্দ। আমরা এর বদলে স্পেক্টেটরস উইথ ডিসঅ্যাবিলিটিজ (ঝঢ়বপঃধঃড়ৎং রিঃয উরংধনরষরঃরবং) করার অনুরোধ করছি। কারণ বিশ্বব্যাপী ডিসঅ্যাবল্ড কথাটি বর্জন করা হচ্ছে। ব্যক্তির আগে তার প্রতিবন্ধিতার কথা বলা যাবে না। চবৎংড়হ ভরৎংঃ, ফরংধনরষরঃরবং ষধংঃ.বাংলাদেশে আমাদের জানামতে এই প্রথম কোনো বড় জায়গায় ডিসঅ্যাবিলিটি লোগো ব্যবহার করা হলো যা প্রশংসার দাবি রাখে। তাই এ নেতিবাচক বাক্যটি সরিয়ে তাকে সার্থক করে তোলা হোক_ সেটাই আমাদের কাম্য।
সামনে বাংলাদেশের আরও দুটি খেলা আছে, আশা করি হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীরা এ সুযোগটির সদ্ব্যবহার করবেন। ভালোমন্দ সবকিছু মিলিয়ে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে নেওয়া বিশেষ ব্যবস্থা_ এ যেন সত্যি এক অন্যরকম পাওয়া।
No comments