সাভার মাদকের স্বর্গরাজ্য by হাফিজ উদ্দিন
সাভারে অপরাধী চক্র তৎপর হয়ে উঠেছে আগের চেয়ে বহুগুণ। আর দিন দিন সাভার পরিণত হচ্ছে মাদকের স্বর্গরাজ্যে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এ ব্যাপারে মাঝেমধ্যে তৎপর থাকলেও পুলিশের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের সখ্যর কারণে মূল গডফাদাররা রয়ে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। আবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপের মুখে পুলিশ ২/১ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করলেও রাতের আঁধারে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাভারের প্রায় শতাধিক মাদকের স্পট রয়েছে। ইমান্দিপুর, মজিদপুর, ব্যাংক কলোনি, রাজাসন, বিরুলিয়া, আমিনবাজার, সাধাপুর, বক্তারপুর, নিরিবিলি, জোরপুল, আনন্দপুর, কর্ণপাড়া, নামাগেণ্ডা, ব্যাংক টাউন, সাভার থানা সংলগ্ন সিদ্দিকের বাড়ি, নামাবাজার, আশুলিয়া, আকরাইন, গেরুয়া, মনসুরনগর, চাঁপাইন, শিমুলিয়া, কলমা, রাজফুলবাড়িয়া, শ্যামপুর, সামাইর, বেদেপল্লী, বেগুনবাড়ি, জিরাব, ধরেন্ডা, বলিয়ারপুর, নয়ারহাট, গাজিরচট, বুড়িবাজারসহ বেশ কয়েকটি মাদকের স্পট উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া রয়েছে বাজার রোডের একটি ধানের চাতালে ও নামাবাজার ফেন্সি সুপার মাকের্টের ভিতরে মাদকের স্পট। এ সব স্পটে পাইকারি ও খুচরা মাদকদ্রব্য বিক্রি হয়। মাদকদ্রব্যের মধ্যে রয়েছে হেরোইন, ফেনসিডিল। তবে যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট ‘ইয়াবা’ সাভারে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। আবার ইয়াবা ট্যাবলেটেরও রয়েছে বিভিন্ন কোড নম্বর। কোড নম্বর ভেদে ট্যাবলেটের দাম বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী ডব্লিউ-আর ৪০০ টাকা, এক্স-ওয়াই ৩৫০ টাকা, চম্পা ৩৫০ টাকা, ডব্লিউ-আই ৩৫০ টাকা, আর ৪৫০ টাকা। এ সব স্পটে আবার হেরোইন, ফেনসিডিল, ইয়াবা ট্যাবলেটের পাশাপাশি গাঁজা ও বাংলামদের চাহিদাও রয়েছে। আবার কিছু কিছু এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীরা অভিনব কায়দায় শার্টের ভাঁজে, মানিব্যাগে, জুতার ভেতরে রেখে খুচরা ইয়াবা ট্যাবলেট ঘুরে ঘুরে বিক্রি করছে। শুধু মাদকেই শেষ নয়, এই মাদকের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে অপরাধীর অভয়ারণ্য। ছিনতাই, চুরি, দেহব্যবসা, ভূমি দখলসহ নানারকম অপরাধের ঘটনা। এলাকার লোকজন এদের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হলেও প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। কেউ কেউ প্রতিবাদ করলে হামলা মামলার স্বীকার হতে হচ্ছে। পুলিশের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের সখ্যর কারণে ভুক্তভোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এদের সিন্ডিকেট এতই শক্তিশালী যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এ সব স্পটে হানা দেয়ার আগেই তারা পুলিশের উপস্থিতি টেরে পেয়ে যাচ্ছে।
পুলিশ জানায়, মাদকের স্পটগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে মাদক ব্যবসায়ী সোসাইটি এলাকার সিদ্দিক, আব্বাস, মেজর, নিত্যানন্দ ওরফে হাতকাটা, হারুন, স্বপন, চাকমা রাজু, জাহিদ ওরফে ভাণ্ডারি। এর মাঝেই এসব এলাকায় পুলিশ ও র্যাব একাধিকবার অভিযান চালিয়ে কয়েক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে গ্রেপ্তারের কয়েক দিনের মধ্যে আবার জামিনে ছাড়া পেয়ে ফের পূর্বের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে তারা। অনেকেরই অভিযোগ- এ সব স্পট থেকে থানা পুলিশ মাসোয়ারা পেয়ে থাকেন।
No comments