বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষার জন্য বৈঠক সোমবার, শিক্ষক নেতাদের হুমকি

আদালতের আদেশ অনুসারে ভর্তি পরীক্ষাসহ একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নিতে বুয়েট শিক্ষক সমিতি, সাধারণ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিঠি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আদালতের আদেশের বিষয়টি উল্লেখ করে শুক্রবার নোটিস দেয়া হয়েছে। আগামী সোমবার ভর্তি পরীক্ষার জন্য একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক বসছে।


তবে আদালতের আদেশ অমান্য করেই বৈঠক ঠেকাতে মাঠে নেমেছেন কয়েক শিক্ষক নেতা। আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রকাশ্যে আন্দোলনে নামতে না পারলেও আজ-কালের মধ্যেই সমমনা কিছু শিক্ষার্থীকে মাঠে নামানোর কৌশল নিয়েছেন তাঁরা। আদালত, সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আপত্তিকর লিফলেট বিলির পর নেতারা গত দুদিন ধরে ফেসবুক ও মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঠে নামানোর আহ্বান জানাচ্ছেন। একইসঙ্গে সাধারণ শিক্ষক ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যদের হুমকি দিয়ে বলছেন, কেউ সরকার ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসলে তার সমস্যা হবে।
এদিকে শিক্ষক সমিতির এই অবস্থান ও কর্মকা-কে আদালত অবমাননা উল্লেখ করে রিট আবেদনকারী আইনজীবী ও অভিভাবক এ্যাডভোকেট ইউনুস আলী আকন্দ বলেছেন, অনেক অভিভাবক ও আইনজীবী আমার কাছে এসেছিলেন কোন পদক্ষেপ নেয়ার জন্য। সে অনুসারে আমি আবার আদালতের শরণাপন্ন হব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি হতাশা প্রকাশ করে আরও বলেন, ইতোমধ্যেই আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে নানা ধরনের আপত্তিকর লিফলেট বিলি করা হয়েছে। মহামান্য আদালতের বিরুদ্ধেও লিফলেট বিলি করা হয়েছে। এটা অন্যায়। আমি শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, ভর্তি পরীক্ষা পুরো জাতির বিষয়। এটা আপনারাও জানেন। আশা করি শিক্ষকরা শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেবেন। এর আগে অস্থিরতা নিরসন করে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর জন্য আদালতে রিট করেন এ্যাডভোকেট ইউনুস আলী আকন্দ। এরপর চলমান আন্দোলন, ধর্মঘটের ওপর অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে হাইকোর্ট। এছাড়া বুয়েটে চলমান আন্দোলন, ধর্মঘট কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা- জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছে আদালত। রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন, ধর্মঘটের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে বলে আদালতের নির্দেশে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে বুয়েট ক্যাম্পাসের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের আইজিপি ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। অবস্থা বেগতিক দেখে আন্দোলন স্থগিত করেন সমিতির নেতারা। তবে এই মুহূর্তে বুয়েটের সার্বিক ঘটনা খতিয়ে দেখতে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের দাবি তুলেছেন সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাঁরা বলছেন, কমিশন গঠন হলে সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে। আর এই কমিশনকে ২০০৮ সাল থেকে সাম্প্রতিক আন্দোলনসহ সকল কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে হবে। তবে সাবেক উপাচার্যের মেয়াদের শেষপর্যায়ে রাতারাতি সমিতির কয়েক নেতার বিতর্কিত পদোন্নতির ঘটনার কারণে ২০০৮ সাল থেকে কার্যক্রম তদন্তের বিরোধিতা করছেন সুবিধাভোগী সেই নেতারা। এদিকে ছুটির পর ক্যাম্পাস খুললেও শিক্ষক নেতারা কাজে যোগ দিচ্ছেন না। শিক্ষক সমিতির ব্যানার পাল্টিয়ে আন্দোলন করছেন ‘বুয়েট পরিবার’ এর ব্যানারে। বৃহস্পতিবার আদালতের আদেশের কপি হাতে পাওয়ার পর শুক্রবার আদেশ অনুসারেই ভর্তি পরীক্ষাসহ একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নিতে বুয়েট শিক্ষক সমিতি, সাধারণ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিঠি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। হাইকোর্ট আদেশে বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত সকল অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান, সকল শিক্ষক, রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, সকল পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রথম বর্ষের বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তির প্রক্রিয়া ও ক্লাস শুরু করতে আদেশ দিয়েছে। উপাচার্য অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম বলেন, আমি আশা করি শিক্ষক নেতারা উচ্চ আদালতের রায় মেনে ক্লাসে ফিরবেন, কাজে যোগ দিবেন। ভর্তিসংক্রান্ত কাজে আমাদের সহায়তা করবেন। তাঁর পদত্যাগ দাবির বিষয়ে শিক্ষক সমিতির অবস্থান প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, পদত্যাগ করার আগে আমার অপরাধ কী তাতো জানতে হবে। আমি তো কোন অন্যায় করিনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসির তদন্ত হয়েছে কোন অপরাধ পাওয়া যায়নি। আমি বলছি, ১৬টি অভিযোগের তালিকার প্রয়োজন নেই। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন হোক। একটি অভিযোগও যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে যে কোন শাস্তি আমি মেনে নেব।
এদিকে উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে প্রকাশ্যে শোডাউন করে চলেছেন বুয়েট শিক্ষক সমিতির নেতারা। প্রতিদিনই বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধান, ডিন ও পরিচালকদের অফিসকক্ষে গিয়ে এই বলে হুমকি দিয়েছেন যে, ভর্তি কার্যক্রম শুরুসহ কোন বিষয়ে কেউ প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে সমিতির এই হুমকি উপেক্ষা করে ইতোমধ্যেই কয়েক বিভাগীয় প্রধান এবং পরিচালক আদালতের রায় ও সিন্ডিকেটের নির্দেশ অনুযায়ী উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মজিবুর রহমান তাঁদের আন্দোলন নিয়ে কদিন যাবত সাংবাদিকদের সঙ্গে কোন কথা বলেননি। এমনকি শোডাউনের সময়ও তাঁকে দেখা যায়নি। তবে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আশরাফুল ইসলামের নেতৃৃত্বে ক্যাম্পাসে শোডাউন চলছে। অভিযোগ উঠেছে, বুয়েটের সাবেক কয়েক শিক্ষকও নেপথ্যে আন্দোলনের কলকাঠি নাড়ছেন। কেউ কেউ শিক্ষকদের টেলিফোন করে আন্দোলনে নামার জন্যও উস্কানি দিচ্ছেন।

No comments

Powered by Blogger.