বাংলায় অনুবাদের নানা অনুষঙ্গ পাঠক পাঠ ও বোধের-বাস্তবতা by আহাম্মেদ কবীর
অনুবাদ মূলত একটি ধাঁধা, প্যারাডক্স কিংবা নতুন করে একটি ভাষায় বোধ সৃষ্টি করা। বিশেষ করে বিদেশী ভাষায় লেখা কোন কিছুকে বাংলায় অনুবাদ করা হয়ত বা একটি ধারণা প্রদান, হয়ত বা বাঙলায় প্রচলিত বোধের সমান্তরালে আসা, হয়ত বা ধারণাপ্রসূত বাস্তবতাকে নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া, জটিলতা, অনুভূতি, ভাব ও চেতনা সৃষ্টি করা।
এক কথায় অনুবাদ যদিও ব্যাখ্যেয় নয় নতুবও একটা রূপান্তর ভাবান্তর ভাষান্তরিত করা ইত্যাদি নানা অনুষঙ্গ সাপেক্ষে এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় পরিবর্তন করে অণূদিত ভাষার গতিময়তা, গঠনরীতি, পদবিন্যাস ও বৈশিষ্ট্যম-িত করাকেই মূলত বুঝানো হয়।
বাংলায় অনুবাদের ক্ষেত্রে সব সময়েই আক্ষরিক অনুবাদ রীতি পালনেরও সমস্যা রয়েছে। যেমনি বলা যায় ইংরেজি চৎড়াবৎন অর্থাৎ ওঃ যধং নববহ ৎধরহরহম পধঃং ধহফ ফড়মং. অথবা ঈঁঃ ুড়ঁৎ পড়ধঃ ধপপড়ৎফরহম ঃড় ুড়ঁৎ পষড়ঃয ইত্যাদিকে বিড়াল কুকুর বৃষ্টি অথবা কাপড় অনুযায়ী কোট কাটার অর্থে প্রকাশ করলে কী হবে? পাশাপাশি গু ভড়ড়ঃ, ঝযরঃ, যিধঃ’ং ঃযব যবষষ ধৎব ুড়ঁ ঃধষশরহম? ড়শধু, ও নব ৎরমযঃ নধপশ হড়,ি বিষষ, হড় সবহঃরড়হ ইত্যাদিকে আক্ষরিক অনুবাদ করলে কেমনটি হবে? ... সেজন্যই অনুবাদের সাথে যথার্থ অনুবাদ, সঠিক অনুবাদ, সার্থক অনুবাদ, প্রকৃত অনুবাদ ইত্যাদি কথাগুলো প্রচলিত আছে। তাই বলা হয় অনুবাদ একটি সৃজনশীল কর্ম। ভাষা ও সাহিত্যের পূর্বাপর উৎকর্ষ সাধনে এর প্রয়োজন এবং প্রাসঙ্গিকতা অনস্বীকার্য।
ইংরেজি থেকে আমাদের বাংলা ভাষায় অনুবাদের ক্ষেত্রে জটিলতা অনেক। এখানে দুটো দিককেই প্রাধান্য দিতে হয়। এর একটি হলো ইংরেজি ভাষার রীতিনীতি ও অন্যটি হলো বাংলা ভাষার। উভয় ক্ষেত্রেই দক্ষতা না থাকলে অনুবাদ সঠিক, প্রাসঙ্গিক ও সৃজনশীল হয়ে ওঠে না।
আমরা জানি ইংরেজি একটি আন্তর্জাতিক ভাষা। শুধু ইংরেজরাই ইংরেজি বলেÑআজ আর এমনটি নেই। সেজন্যই ইংরেজির আন্তর্জাতিকতার দিকে লক্ষ রাখার প্রয়োজন অনাবশ্যক নয় কিন্তু? মোটকথা ইংরেজি থেকে অনুবাদ করতে হলে সবক্ষেত্রেই যে যান্ত্রিক বা পরিপূর্ণ শুদ্ধতাকে প্রশ্রয় দিতে হবে তাও নয় কিন্তু? মূলত সংশ্লিষ্ট বিষয়ের (দ্বিপাক্ষিক) আর্থসামাজিক, রাজনেতিক ভৌগোলিক এবং ঐতিহাসিক তথা ধর্ম ও বিজ্ঞানের বিশেষ বিশ্বাস আর জ্ঞানকে প্রয়োগিক প্রাসঙ্গিকতায় বিবেচনা করতে হবে। ইংরেজি সাহিত্যের বিভিন্ন রূপ, প্রকরণ, বাস্তবতা, আঙ্গিককে ব্যাখ্যা সাপেক্ষে অনুবাদ না করলে পাঠক কিন্তু অনুবাদের সমান্তরালে তার বোধ ও ধারণাকে নিয়ে যেতে পারবে না। সেক্ষেত্রে পাদটীকা, ব্যাখ্যা কিংবা আলাদা ঞবীঃ আবশ্যক। এছাড়াও ইংরেজি ভাষার শব্দভা-ার (ঠড়পধনঁষধৎু) সম্পর্কে সঠিক ও প্রকৃত পরিবেশ সৃষ্টিকারী, পরিস্থিতি বাস্তবতা অনুযায়ী মার্জিত অর্থ প্রকাশক ভাব এবং বোধের সমান্তরালে অনূদিত হওয়া প্রয়োজন।
ইংরেজি প্রবাদ প্রবচন (চৎড়াবৎং-ওফরড়সং) থেকে শুরু করে গালাগাল, ঠাট্টা শব্দ (অনঁংব ড়ৎ ংষধহম) ইত্যাদিকে অনুবাদের ক্ষেত্রে হরহামেশাই জটিলতা সৃষ্টি হয়। তাই এসব ক্ষেত্রে বর্তমান বাস্তবতাকে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে বিশ্লেষণ সাপেক্ষে অনুবাদ সঠিক ও যুগোপযোগী হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে ঐড়হবু, নধনু, ঝযরঃ, এধু, খবংনরধহ, সধহ ইত্যাদিকে সব সময়েই কি একটি অর্থে প্রকাশ করা সম্ভব? কিংবা প্রবাদবাক্য যেমন ওঃ ঞধশবং ঃড়ি ঃড় সধশব ধ য়ঁধৎৎবষ-কে এক হাতে তালি বাজে নাÑ না লিখে অথবা ঃড় পড়ঁহঃ ড়হবং পযরপশবহং নবভড়ৎব ঃযবু ধৎব যধঃবযবফ কে গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল, না লিখে অন্য অর্থে অনুবাদ করা হয়ত বা রসিকতা নয়তো অজ্ঞতা। পাশাপাশি ইংরেজি ভাষার নব াবৎন (ধস, রং, ধৎব) কে অনেকেই বর্জন না করে অর্জনের মতো প্রাধান্য দিতে সচেষ্ট থাকেন। যেমন ঐব রং ধ পষবাবৎ সধহ কে অনেকেই অনুবাদ করেন ১) সে হয় একজন চালক মানব ২) সে হয় একটি চালাক মানুষ ৩) সে হয় একজন চালাক মানুষ ইতাদি বহুভাবে। বড় বড় বই অনুবাদের ক্ষেত্রে এ ধরনের অসতর্কতা কেন সেটা গবেষণার বিষয়ই বটে।
ভাষা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো ইংরেজি জটিল, যৌগিক (ঈড়সঢ়ষবীফ, ঈড়সঢ়ড়ঁহফ) বাক্যগুলোকে ভেঙে ভেঙে ছোট ছোট সরল বাক্যে (ঝরসঢ়ষব ঝবহঃবহপব) রূপান্তরই শ্রেয়। যেমন একটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। ওঃ ধিং ঃবহ ধঃ সরমযঃ যিবহ ধ সধহ ংঁফফবহষু বহঃবৎবফ সু ৎড়ড়স রিঃয ধ ফবমমবৎ রহ যধহফ এর অনুবাদ হতে পারে তখন রাত দশটা। হঠাৎ একটা লোক আমার ঘরে ঢুকলো। তার হাতে একটি ছোরা। এছাড়াও ঠবৎন এর ব্যবহার ঈড়হফরঃরড়হধষ ংবহঃবহপব রভ পষধঁংব, জিরান্ত পার্টিসিপল, গ্রুপ ভার্ব, পড়ঁৎঃবংু-ধিৎফ ইত্যাদি ক্ষেত্রে অনুবাদ রীতি সাপেক্ষে আবার বোধ ও বাস্তবতা সাপেক্ষ হতে পারে।
২.
বাংলায় অনুবাদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে ইংরেজি থেকে অনুবাদের ক্ষেত্রে প্রফেসর মোহাম্মদ হারুন উর রশিদের অভিমত হলোÑ‘প্রত্যেক ভাষার একটি নিজস্ব বাকভঙ্গি এবং রীতি থাকে। সেখানেই ভাষার অনন্যতা। এই বাকভঙ্গি বা রীতির ভাষান্তর হয় না। এই ভঙ্গি বা রীতিটিকে খুঁজতে হয়, জানতে হয়, অনুভব করতে হয় সে ভাষার নিজস্ব পরিম-লে। যে কোন ইংরেজি শিক্ষার্থীকে তাই ইংরেজি ভাষার কথা ও লিখিত রূপটিকে ক্রমাগত শ্রবণ এবং বলার মাধ্যমে আয়ত্ত করতে হয়।’ ঠিক বিপরীতভাবে বলা যেতে পারে একজন অনুবাদককে প্রাগুক্ত রীতিশৈলী বাংলা ভাষায়ও জানতে বা শিখতে হয়।
ইংরেজি উচ্চারণের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাংলায় অনুবাদ করতে হয়। একই সাথে এই বা ব্রিটিশ নিয়ম আমেরিকান নিয়ম দুটোকেই মাথায় রেখে এবং ব্যাখ্যা সাপেক্ষে বাংলায় অনুবাদ করা উচিত। ও’স ঔঁংঃ পড়সসরহম অথবা ও নব ৎরমযঃ নধপশ হড়ি কতটাÑ‘আমি এখনি আসছি’ অর্থে ব্যবহৃত হচ্ছে সেটা হৃদয়াঙ্গম করতে হবে। একজন এদেশে অবস্থান করছেনÑযেটা চৎবংবহঃ ঢ়বৎভবপঃ ঃবহংব এর বাক্য হওয়া সত্ত্বে যখন ওরা ঢ়ধংঃ ওহফবভরহফরহঃব ঃবহংব এর সাক্ষেপে উচ্চারণ করে তখন বাংলা অনুবাদ কেমন হবে? অর্থাৎ কারও প্রশ্নের উত্তরে যখন একজন বিদেশী বলেন, ও পধসব যবৎব (ড়ৎ ইধহমষধফবংয) ভড়ৎ ঃৎধাবষষরহম তখন বাংলায় ও যধাব পড়সব যবৎব জাতীয় নাকি আমি এলাম জাতীয় বাংলায় অনুবাদ করতে হবে সেটা নির্ভর করবে অবশ্যই পরিপ্রেক্ষিতের উপর। অন্য ক্ষেত্রে দুই বাংলায় বাংলা ভাষাটাও ক্ষেত্র বিশেষে কিছুটা ভিন্ন ধারার। যেমন কলকাতার একটি মেয়েকে মা যদি ডাকে, মমতা মমতা এদিকে আয়। তখন সে প্রত্যুত্তরে বলবে, যাই মা।
কিন্তু ঢাকার একজন মা যখন তার মেয়েকে ডাকবে, সালমা সালমা, এদিকে আয়। তখন সে জবাব দেবে, আসছি মা।
অর্থাৎ দুই ক্ষেত্রেই মূল ইংরেজি এক থাকলেও বাংলায় অনুবাদের ক্ষেত্রে কিছুটা পার্থক্য তো রয়েছেই। সেজন্যই এদেশের বিশেষজ্ঞগণ বলেন কলকাতার নিয়ম সব ক্ষেত্রে পালন করা উচিত নয়। ’৪৭-এর পর পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা অনুবাদ কিছুটা কলকাতা ও উর্দুধারার ছিল। কিন্তু দেশ স্বাধীনের পর সে ধারাক্রমে পূর্ব বঙ্গীয় রীতিনীতি বেশ জোরালভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে। সে ক্ষেত্রে আজগে, দুটো, তিনটো চারটে, যাচ্ছিচিলুম, খাচ্ছিলুম, করলুম, বৈকি, মাইরি, ওগো, হ্যাগো, নেবু, নেবে যাওয়া, দিদি, দাদা, ছোড়দা, বড়দা, মেজদা, জল ইত্যাদি অসংখ্য শব্দের ব্যবহার কমে গিয়ে বাস্তবে ব্যবহৃত চলতি শব্দের ব্যবহার বেড়ে গেছে। সেজন্যই অনুবাদের ক্ষেত্রে এসব পরিবর্তন অতীব জরুরী অনুষঙ্গও বটে।
অভিধান প্রণেতাগণ ইংরেজি শব্দের অনুবাদের ক্ষেত্রে নানা প্রকারের বিধিও সতর্কতার উপর গুরুত্ব প্রদান করে থাকেন। তাদের মতে শীর্ষ শব্দ (ঐবধফ ড়িৎফ), প্রত্যয়ান্ত শব্দ (ফবৎর-াধঃরাবং), যৌগশব্দ (পড়সঢ়ড়ঁহফ ড়িৎফ), বাগ্ধারা (ওফরড়স), উপসর্গ, প্রত্যয়, পদান্বয়ী অব্যয়যুক্ত ক্রিয়াপদ, (াবৎন রিঃয ধ ঢ়ধৎঃরপষব ড়ৎ ধ ঢ়ৎবঢ়ড়ংঃরড়হ) সংখ্যা নির্দেশক শব্দ, সংজ্ঞা নির্দেশক সংখ্যা (ফবভরহরঃরড়হ হঁসনবৎং), বাক্স, ঢেউ চিহ্ন ও লঘু-বন্ধনী শব্দ সংক্ষেপ (অননৎবারধঃড়ৎং), অভভরীবং (চৎবভরীবং ধহফ ংঁভভরীবং), ঘঁসবৎরপধষ ঊীঢ়ৎবংংরড়হং, ডবরমযঃ ধহফ গবধংঁৎবসবহঃং, ঈযবসরপধষ ঊষবসবহঃং, চঁহপঃঁধঃরড়হ তথা ঋঁষষ ংঃড়ঢ়, ছঁবংঃরড়হ গধৎশ ঈড়সসধ, ঊীপষধসধঃরড়হ গধৎশ, ঈড়ষড়ৎ, ঝবসরপড়ষড়হ, উবংয, ঐুঢ়যবহ, চধৎবহঃযবংবং (ব্রিটিশ ইৎধপশবঃং), ছঁড়ঃধঃরড়হং গধৎশং অথবা (এই ওহাবৎঃবফ ঈড়সসধং) ইত্যাদির ব্যবহার ও প্রয়োগ সম্পর্কে একজন অনুবাদককে পূর্ণ সজাগ এবং সচেতন থাকতে হবে। তাদের মতে ইউরোপীয় অন্যান্য ভাষার শব্দ যেমন ফরাসি, স্প্যানিশ, জার্মান, ইতালিয়ান গ্রিক, পর্তুগিজ ইত্যাদিকে হয় ইংরেজি নিয়মে নয়তো তাদের সংশ্লিষ্ট ভাষার নিয়মে অনুবাদ করলেও ইংরেজরা কী উচ্চারণ করে সে সম্পর্কে পাঠককে একটা ধারণা দেয়া উচিত। পাশাপাশি একজন অনুবাদকে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবেÑ গ্রিক বর্ণমালার সাংকেতিক অর্থাৎ সম্পর্কে ( যেমনÑ ধষঢ়যধ, নবঃধ, মধসসধ, ফবষঃধ, সঁ, ঢ়র, ড়সবমধ ইত্যাদি) এবং তার অনুবাদ বাংলায় বোধগম্য করার ক্ষেত্রে। একই সাথে গণনাসূচক সংখ্যা, পরিমাপন (জড়বস্তু) দূরত্ব, উচ্চতা, গভীরতা, আয়তন, ক্ষেত্রফল, তাপমাত্রা, ঘনমান (ঈঁনরপ) মল্লক্রীড়া, সাঁতার, টেনিস, সকার (অংংড়পরধঃরড়হ ভড়ড়ঃনধষষ), রাগবি ফুটবল, ঘোড়দৌড়, শেয়ার মার্কেট, ওজন, সময় ও তারিখ, মুদ্রা, ইন্টারনেট, ইমেইল এবং বহুল প্রচরিত তথ্য, প্রযুক্তিগত ধারণা ও বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এবং সূত্র সম্পর্কে।
মোটকথা ইংরেজি থেকে অনুবাদ একটি বিশ্ব চিন্তার সূত্রেই গ্রন্থিত। তাই এটাকে হেলাফেলা করে ভাবাটাও প্রাসঙ্গিক নয়। একই সাথে পৃথিবীর অন্যান্য ভাষা যেমন আরবি, হিন্দি, চীনা, জাপানি, উর্দু, ফারসি, সোহেলি, বার্মিজ, থাই, তুর্কি, কাজাক, উজবেগ, পোলিশ, আর্মেনিয়ান, রোমানিয়ান, রুশ, সুইডিস, নওরজিয়ান, ডেনিস, হিব্রু, সংস্কৃত, মালয়, ইন্দোনেশীয়, কোরিয়ান, ফিলিপিনো ইত্যাদির ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োগিক সত্যকে অনুধাবন করে বোধ এবং বাস্তবতার প্রেক্ষিতে বাংলায় অনুবাদ করা উচিত। এখন প্রশ্ন আসতে পারেÑইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করার ক্ষেত্রে এতগুলো ভাষার প্রসঙ্গ আসবে কেন? কোন একজন বাংলা ভাষায় অনুবাদকারীকে অন্যান্য বহুভাষা সম্পর্কে সম্যক বা সাধারণ ধারণা রাখতে হবে? ...এর সহজ উত্তর হলো ইংরেজি ভাষা, ভাষার ক্ষেত্রে (উপনিবেশগত কারণে) কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যে যেই ভাষায়ই যা কিছু লিখছে সেটা শ্রেষ্ঠত্বের সূত্র ধরে ইংরেজি ভাষায় অনূদিত হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতিটি ভাষাই ইংরেজি ভাষামুখী বা ইংরেজি ভাষার সাথে নানাভাবে সম্পর্কিত। সেজন্যই তারা একের সাথে বহুত্বের মিলন ঘটাতে পারছে। কিন্তু বাংলা ভাষার সুবিধাসমূহ তেমনটি নয় কিন্তু? এ ভাষায় অনুবাদ করতে গেলে ভাষার নিজস্ব তার সাথে সংস্কৃত ও তৎসম বা তদ্ভব ভাষা এবং শব্দের একটা জটিলতা তো আছেই সেই সাথে একেশ্বরবাদী ইসলামী চিন্তার সাপেক্ষে অনুবাদ কিছুটা জটিল বলেই সতর্কতার সাথে করা প্রয়োজন। যেমন অহমবষ কে দেবদূত অনুবাদ করা হলেও মুসলমানদের কাছে আল্লার দূত হিসেবেই সেটা পরিচিত। ওরা দেবতা বলে মধ্যবর্তী কাউকে বিশ্বাস করে না। তাই তো রুহ্কে আত্মা, দরবেশকে সাধু বা সন্ন্যাসী, বেহেস্তকে স্বর্গ (যেটা ইন্দ্রলোকে বা বিষ্ণু লোকে আছে), আল্লাহকে ভগবান, গড, ঈশ্বর, করুণাময়, গুরুদেব, ঐঁংনধহফ বা স্বামীকে পরমেশ্বর, জিনকে ভূত বা আত্মা, জবারাব কে পুনর্জন্ম ইত্যাদি বলা যেতে পারে বুঝার সুবিধার্থেÑতবে ধর্মীয় বিশ্বাস সাপেক্ষে সঠিক হবে না। সেজন্যই অনুবাদের ক্ষেত্রে ধর্মীয় ঐতিহ্য ও বিশ্বাস একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গও বটে। বিপরীতক্রমে এটা হিন্দু ধর্মের ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য। কেননা ওদের ধর্মীয় বিশ্বাসের ক্ষেত্রে চধহঃযবরংস বা ঈশ্বর সবকিছুতে আছেন এবং সবকিছুই ঈশ্বর এই বিশ্বাসই অধিক গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে একেশ্বরবাদের ভিন্ন অর্থ বিধায় অনুবাধককে সঠিকভাবে সিদ্ধান্তে আসতে হবে কারও ধর্মীয় অনুভূমিতে আঘাত দেয়া সঠিক হবে না।
৩.
বাংলাদেশের বাংলা ভাষায় অনুবাদের মূল ক্ষেত্র প্রস্তুত হয় ১৯৪৭ পরবর্তী ৫০ ও ৬০ এর দশকে। পরবর্তীতে স্বাধীন দেশে সেটা চূড়ান্ত স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্র্যে আবির্ভূত হতে থাকে। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে মুনীর চৌধুরী ও কবির চৌধুরী ভাতৃদ্বয়ের অনুবাদ কর্ম একটা বিকশিত এবং মানসম্পন্ন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে। শহীদ মনির চৌধুরী একাত্তর সালে শাহাদাৎ বরণ না করলে হয়ত তার বিশ্বজনীন ভাবনা বাংলা ভাষায় অনুবাদের মাধ্যমে একটা বিশাল ক্ষেত্র প্রস্তুত করত। তবে সে কাজটি তারই অগ্রজ প্রতিম জাতীয় অধ্যাপক কবির চৌধুরির হাতে বেশ মানসম্পন্ন পর্যায়েই বিকশিত হয়েছে। এছাড়াও অনুবাদের ক্ষেত্রে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, অধ্যাপক আবুল ফজল, ড. কুদরাত-এ খুদা, ড. মুহাম্মদ এনামুল হক, ড. কাজী মোতাহার হোসেন, ড. কাজী দীন মুহম্মদ প্রমুখের অবদান অনস্বীকার্য। প্রথম চার দশকের বিশিষ্ট অনুবাধক হিসেবে আবু রুশদ মতিন উদ্দীন, ড. মযহারুল ইসলাম, আবুল কালাম শামসুদ্দীন, আব্দুস সাত্তার, সরদার ফজলুল করিম, আব্দুল হাফিজ, মনিরউদ্দীন ইউসুফ, আবদার রশীদ, আবু শাহরিয়ার নেয়ামাল বাসির, ড. সুনীল কুমার মুখোপাধ্যায়, গাজী শামছুর রহমান, জাফর আলম, ফখরুজ্জামান চৌধুরী প্রমুখের নাম শ্রদ্ধার সাথেই স্মরণ করতে হয়। কারণ এদের হাত ধরেই এ অঞ্চলের বাংলা ভাষার গতিক্রমে বিদেশী ভাষার সাহিত্য ও অন্যান্য সৃষ্টিশীল কর্মযজ্ঞ সঠিক এবং মানসম্পন্ন ধারায় বিকশিত হয়। পাশাপাশি অনুবাদের ক্ষেত্রে বেশকিছু লেখক, কবি ও শিক্ষাবিদ কাজ করে চলেছেন। তাদের অবদান এই সীমিত পরিসরে হয়ত তুলে ধরা সম্ভব নয়। সবশেষে এটাই বলা যায়, অনুবাদের প্রয়োজন, প্রাসঙ্গিকতা ও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলেই এর প্রয়োজন কখনও ফুরিয়ে যাবে না। সেজন্যই চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে অনুবাদকগণ অনুবাদ কর্ম করে যাবেন এটাই বাস্তবতা। তবে বাঙলায় অনুবাদের ক্ষেত্রে যে নিয়ম, যে প্রেক্ষিত, যে বাস্তবতা, যে ধর্মীয় বিশ্বাস, যে ব্যাকরণ রীতিনীতি সেটা বা সেসব পালন করেই অনূদিত হলে অনুবাদের সার্থকতা আসবে। অর্থাৎ অনুবাদকের যোগ্যতা জবাবদিহিতায়ই মূল সত্য। আর সেই সত্যের সূত্রেই উচ্চারিত হয়Ñসত্যম্ শিবম সুন্দরম। আমরা সেই সত্য ও সুন্দরের প্রত্যাশায় সত্যিকারের বাঙলা অনুবাদের প্রত্যাশী। ব্যাপক ও সঠিক অনুবাদই আমাদের ভাষা ও বিকাশকে ত্বরান্বিত করবে।
বাংলায় অনুবাদের ক্ষেত্রে সব সময়েই আক্ষরিক অনুবাদ রীতি পালনেরও সমস্যা রয়েছে। যেমনি বলা যায় ইংরেজি চৎড়াবৎন অর্থাৎ ওঃ যধং নববহ ৎধরহরহম পধঃং ধহফ ফড়মং. অথবা ঈঁঃ ুড়ঁৎ পড়ধঃ ধপপড়ৎফরহম ঃড় ুড়ঁৎ পষড়ঃয ইত্যাদিকে বিড়াল কুকুর বৃষ্টি অথবা কাপড় অনুযায়ী কোট কাটার অর্থে প্রকাশ করলে কী হবে? পাশাপাশি গু ভড়ড়ঃ, ঝযরঃ, যিধঃ’ং ঃযব যবষষ ধৎব ুড়ঁ ঃধষশরহম? ড়শধু, ও নব ৎরমযঃ নধপশ হড়,ি বিষষ, হড় সবহঃরড়হ ইত্যাদিকে আক্ষরিক অনুবাদ করলে কেমনটি হবে? ... সেজন্যই অনুবাদের সাথে যথার্থ অনুবাদ, সঠিক অনুবাদ, সার্থক অনুবাদ, প্রকৃত অনুবাদ ইত্যাদি কথাগুলো প্রচলিত আছে। তাই বলা হয় অনুবাদ একটি সৃজনশীল কর্ম। ভাষা ও সাহিত্যের পূর্বাপর উৎকর্ষ সাধনে এর প্রয়োজন এবং প্রাসঙ্গিকতা অনস্বীকার্য।
ইংরেজি থেকে আমাদের বাংলা ভাষায় অনুবাদের ক্ষেত্রে জটিলতা অনেক। এখানে দুটো দিককেই প্রাধান্য দিতে হয়। এর একটি হলো ইংরেজি ভাষার রীতিনীতি ও অন্যটি হলো বাংলা ভাষার। উভয় ক্ষেত্রেই দক্ষতা না থাকলে অনুবাদ সঠিক, প্রাসঙ্গিক ও সৃজনশীল হয়ে ওঠে না।
আমরা জানি ইংরেজি একটি আন্তর্জাতিক ভাষা। শুধু ইংরেজরাই ইংরেজি বলেÑআজ আর এমনটি নেই। সেজন্যই ইংরেজির আন্তর্জাতিকতার দিকে লক্ষ রাখার প্রয়োজন অনাবশ্যক নয় কিন্তু? মোটকথা ইংরেজি থেকে অনুবাদ করতে হলে সবক্ষেত্রেই যে যান্ত্রিক বা পরিপূর্ণ শুদ্ধতাকে প্রশ্রয় দিতে হবে তাও নয় কিন্তু? মূলত সংশ্লিষ্ট বিষয়ের (দ্বিপাক্ষিক) আর্থসামাজিক, রাজনেতিক ভৌগোলিক এবং ঐতিহাসিক তথা ধর্ম ও বিজ্ঞানের বিশেষ বিশ্বাস আর জ্ঞানকে প্রয়োগিক প্রাসঙ্গিকতায় বিবেচনা করতে হবে। ইংরেজি সাহিত্যের বিভিন্ন রূপ, প্রকরণ, বাস্তবতা, আঙ্গিককে ব্যাখ্যা সাপেক্ষে অনুবাদ না করলে পাঠক কিন্তু অনুবাদের সমান্তরালে তার বোধ ও ধারণাকে নিয়ে যেতে পারবে না। সেক্ষেত্রে পাদটীকা, ব্যাখ্যা কিংবা আলাদা ঞবীঃ আবশ্যক। এছাড়াও ইংরেজি ভাষার শব্দভা-ার (ঠড়পধনঁষধৎু) সম্পর্কে সঠিক ও প্রকৃত পরিবেশ সৃষ্টিকারী, পরিস্থিতি বাস্তবতা অনুযায়ী মার্জিত অর্থ প্রকাশক ভাব এবং বোধের সমান্তরালে অনূদিত হওয়া প্রয়োজন।
ইংরেজি প্রবাদ প্রবচন (চৎড়াবৎং-ওফরড়সং) থেকে শুরু করে গালাগাল, ঠাট্টা শব্দ (অনঁংব ড়ৎ ংষধহম) ইত্যাদিকে অনুবাদের ক্ষেত্রে হরহামেশাই জটিলতা সৃষ্টি হয়। তাই এসব ক্ষেত্রে বর্তমান বাস্তবতাকে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে বিশ্লেষণ সাপেক্ষে অনুবাদ সঠিক ও যুগোপযোগী হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে ঐড়হবু, নধনু, ঝযরঃ, এধু, খবংনরধহ, সধহ ইত্যাদিকে সব সময়েই কি একটি অর্থে প্রকাশ করা সম্ভব? কিংবা প্রবাদবাক্য যেমন ওঃ ঞধশবং ঃড়ি ঃড় সধশব ধ য়ঁধৎৎবষ-কে এক হাতে তালি বাজে নাÑ না লিখে অথবা ঃড় পড়ঁহঃ ড়হবং পযরপশবহং নবভড়ৎব ঃযবু ধৎব যধঃবযবফ কে গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল, না লিখে অন্য অর্থে অনুবাদ করা হয়ত বা রসিকতা নয়তো অজ্ঞতা। পাশাপাশি ইংরেজি ভাষার নব াবৎন (ধস, রং, ধৎব) কে অনেকেই বর্জন না করে অর্জনের মতো প্রাধান্য দিতে সচেষ্ট থাকেন। যেমন ঐব রং ধ পষবাবৎ সধহ কে অনেকেই অনুবাদ করেন ১) সে হয় একজন চালক মানব ২) সে হয় একটি চালাক মানুষ ৩) সে হয় একজন চালাক মানুষ ইতাদি বহুভাবে। বড় বড় বই অনুবাদের ক্ষেত্রে এ ধরনের অসতর্কতা কেন সেটা গবেষণার বিষয়ই বটে।
ভাষা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো ইংরেজি জটিল, যৌগিক (ঈড়সঢ়ষবীফ, ঈড়সঢ়ড়ঁহফ) বাক্যগুলোকে ভেঙে ভেঙে ছোট ছোট সরল বাক্যে (ঝরসঢ়ষব ঝবহঃবহপব) রূপান্তরই শ্রেয়। যেমন একটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। ওঃ ধিং ঃবহ ধঃ সরমযঃ যিবহ ধ সধহ ংঁফফবহষু বহঃবৎবফ সু ৎড়ড়স রিঃয ধ ফবমমবৎ রহ যধহফ এর অনুবাদ হতে পারে তখন রাত দশটা। হঠাৎ একটা লোক আমার ঘরে ঢুকলো। তার হাতে একটি ছোরা। এছাড়াও ঠবৎন এর ব্যবহার ঈড়হফরঃরড়হধষ ংবহঃবহপব রভ পষধঁংব, জিরান্ত পার্টিসিপল, গ্রুপ ভার্ব, পড়ঁৎঃবংু-ধিৎফ ইত্যাদি ক্ষেত্রে অনুবাদ রীতি সাপেক্ষে আবার বোধ ও বাস্তবতা সাপেক্ষ হতে পারে।
২.
বাংলায় অনুবাদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে ইংরেজি থেকে অনুবাদের ক্ষেত্রে প্রফেসর মোহাম্মদ হারুন উর রশিদের অভিমত হলোÑ‘প্রত্যেক ভাষার একটি নিজস্ব বাকভঙ্গি এবং রীতি থাকে। সেখানেই ভাষার অনন্যতা। এই বাকভঙ্গি বা রীতির ভাষান্তর হয় না। এই ভঙ্গি বা রীতিটিকে খুঁজতে হয়, জানতে হয়, অনুভব করতে হয় সে ভাষার নিজস্ব পরিম-লে। যে কোন ইংরেজি শিক্ষার্থীকে তাই ইংরেজি ভাষার কথা ও লিখিত রূপটিকে ক্রমাগত শ্রবণ এবং বলার মাধ্যমে আয়ত্ত করতে হয়।’ ঠিক বিপরীতভাবে বলা যেতে পারে একজন অনুবাদককে প্রাগুক্ত রীতিশৈলী বাংলা ভাষায়ও জানতে বা শিখতে হয়।
ইংরেজি উচ্চারণের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাংলায় অনুবাদ করতে হয়। একই সাথে এই বা ব্রিটিশ নিয়ম আমেরিকান নিয়ম দুটোকেই মাথায় রেখে এবং ব্যাখ্যা সাপেক্ষে বাংলায় অনুবাদ করা উচিত। ও’স ঔঁংঃ পড়সসরহম অথবা ও নব ৎরমযঃ নধপশ হড়ি কতটাÑ‘আমি এখনি আসছি’ অর্থে ব্যবহৃত হচ্ছে সেটা হৃদয়াঙ্গম করতে হবে। একজন এদেশে অবস্থান করছেনÑযেটা চৎবংবহঃ ঢ়বৎভবপঃ ঃবহংব এর বাক্য হওয়া সত্ত্বে যখন ওরা ঢ়ধংঃ ওহফবভরহফরহঃব ঃবহংব এর সাক্ষেপে উচ্চারণ করে তখন বাংলা অনুবাদ কেমন হবে? অর্থাৎ কারও প্রশ্নের উত্তরে যখন একজন বিদেশী বলেন, ও পধসব যবৎব (ড়ৎ ইধহমষধফবংয) ভড়ৎ ঃৎধাবষষরহম তখন বাংলায় ও যধাব পড়সব যবৎব জাতীয় নাকি আমি এলাম জাতীয় বাংলায় অনুবাদ করতে হবে সেটা নির্ভর করবে অবশ্যই পরিপ্রেক্ষিতের উপর। অন্য ক্ষেত্রে দুই বাংলায় বাংলা ভাষাটাও ক্ষেত্র বিশেষে কিছুটা ভিন্ন ধারার। যেমন কলকাতার একটি মেয়েকে মা যদি ডাকে, মমতা মমতা এদিকে আয়। তখন সে প্রত্যুত্তরে বলবে, যাই মা।
কিন্তু ঢাকার একজন মা যখন তার মেয়েকে ডাকবে, সালমা সালমা, এদিকে আয়। তখন সে জবাব দেবে, আসছি মা।
অর্থাৎ দুই ক্ষেত্রেই মূল ইংরেজি এক থাকলেও বাংলায় অনুবাদের ক্ষেত্রে কিছুটা পার্থক্য তো রয়েছেই। সেজন্যই এদেশের বিশেষজ্ঞগণ বলেন কলকাতার নিয়ম সব ক্ষেত্রে পালন করা উচিত নয়। ’৪৭-এর পর পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা অনুবাদ কিছুটা কলকাতা ও উর্দুধারার ছিল। কিন্তু দেশ স্বাধীনের পর সে ধারাক্রমে পূর্ব বঙ্গীয় রীতিনীতি বেশ জোরালভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে। সে ক্ষেত্রে আজগে, দুটো, তিনটো চারটে, যাচ্ছিচিলুম, খাচ্ছিলুম, করলুম, বৈকি, মাইরি, ওগো, হ্যাগো, নেবু, নেবে যাওয়া, দিদি, দাদা, ছোড়দা, বড়দা, মেজদা, জল ইত্যাদি অসংখ্য শব্দের ব্যবহার কমে গিয়ে বাস্তবে ব্যবহৃত চলতি শব্দের ব্যবহার বেড়ে গেছে। সেজন্যই অনুবাদের ক্ষেত্রে এসব পরিবর্তন অতীব জরুরী অনুষঙ্গও বটে।
অভিধান প্রণেতাগণ ইংরেজি শব্দের অনুবাদের ক্ষেত্রে নানা প্রকারের বিধিও সতর্কতার উপর গুরুত্ব প্রদান করে থাকেন। তাদের মতে শীর্ষ শব্দ (ঐবধফ ড়িৎফ), প্রত্যয়ান্ত শব্দ (ফবৎর-াধঃরাবং), যৌগশব্দ (পড়সঢ়ড়ঁহফ ড়িৎফ), বাগ্ধারা (ওফরড়স), উপসর্গ, প্রত্যয়, পদান্বয়ী অব্যয়যুক্ত ক্রিয়াপদ, (াবৎন রিঃয ধ ঢ়ধৎঃরপষব ড়ৎ ধ ঢ়ৎবঢ়ড়ংঃরড়হ) সংখ্যা নির্দেশক শব্দ, সংজ্ঞা নির্দেশক সংখ্যা (ফবভরহরঃরড়হ হঁসনবৎং), বাক্স, ঢেউ চিহ্ন ও লঘু-বন্ধনী শব্দ সংক্ষেপ (অননৎবারধঃড়ৎং), অভভরীবং (চৎবভরীবং ধহফ ংঁভভরীবং), ঘঁসবৎরপধষ ঊীঢ়ৎবংংরড়হং, ডবরমযঃ ধহফ গবধংঁৎবসবহঃং, ঈযবসরপধষ ঊষবসবহঃং, চঁহপঃঁধঃরড়হ তথা ঋঁষষ ংঃড়ঢ়, ছঁবংঃরড়হ গধৎশ ঈড়সসধ, ঊীপষধসধঃরড়হ গধৎশ, ঈড়ষড়ৎ, ঝবসরপড়ষড়হ, উবংয, ঐুঢ়যবহ, চধৎবহঃযবংবং (ব্রিটিশ ইৎধপশবঃং), ছঁড়ঃধঃরড়হং গধৎশং অথবা (এই ওহাবৎঃবফ ঈড়সসধং) ইত্যাদির ব্যবহার ও প্রয়োগ সম্পর্কে একজন অনুবাদককে পূর্ণ সজাগ এবং সচেতন থাকতে হবে। তাদের মতে ইউরোপীয় অন্যান্য ভাষার শব্দ যেমন ফরাসি, স্প্যানিশ, জার্মান, ইতালিয়ান গ্রিক, পর্তুগিজ ইত্যাদিকে হয় ইংরেজি নিয়মে নয়তো তাদের সংশ্লিষ্ট ভাষার নিয়মে অনুবাদ করলেও ইংরেজরা কী উচ্চারণ করে সে সম্পর্কে পাঠককে একটা ধারণা দেয়া উচিত। পাশাপাশি একজন অনুবাদকে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবেÑ গ্রিক বর্ণমালার সাংকেতিক অর্থাৎ সম্পর্কে ( যেমনÑ ধষঢ়যধ, নবঃধ, মধসসধ, ফবষঃধ, সঁ, ঢ়র, ড়সবমধ ইত্যাদি) এবং তার অনুবাদ বাংলায় বোধগম্য করার ক্ষেত্রে। একই সাথে গণনাসূচক সংখ্যা, পরিমাপন (জড়বস্তু) দূরত্ব, উচ্চতা, গভীরতা, আয়তন, ক্ষেত্রফল, তাপমাত্রা, ঘনমান (ঈঁনরপ) মল্লক্রীড়া, সাঁতার, টেনিস, সকার (অংংড়পরধঃরড়হ ভড়ড়ঃনধষষ), রাগবি ফুটবল, ঘোড়দৌড়, শেয়ার মার্কেট, ওজন, সময় ও তারিখ, মুদ্রা, ইন্টারনেট, ইমেইল এবং বহুল প্রচরিত তথ্য, প্রযুক্তিগত ধারণা ও বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এবং সূত্র সম্পর্কে।
মোটকথা ইংরেজি থেকে অনুবাদ একটি বিশ্ব চিন্তার সূত্রেই গ্রন্থিত। তাই এটাকে হেলাফেলা করে ভাবাটাও প্রাসঙ্গিক নয়। একই সাথে পৃথিবীর অন্যান্য ভাষা যেমন আরবি, হিন্দি, চীনা, জাপানি, উর্দু, ফারসি, সোহেলি, বার্মিজ, থাই, তুর্কি, কাজাক, উজবেগ, পোলিশ, আর্মেনিয়ান, রোমানিয়ান, রুশ, সুইডিস, নওরজিয়ান, ডেনিস, হিব্রু, সংস্কৃত, মালয়, ইন্দোনেশীয়, কোরিয়ান, ফিলিপিনো ইত্যাদির ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োগিক সত্যকে অনুধাবন করে বোধ এবং বাস্তবতার প্রেক্ষিতে বাংলায় অনুবাদ করা উচিত। এখন প্রশ্ন আসতে পারেÑইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করার ক্ষেত্রে এতগুলো ভাষার প্রসঙ্গ আসবে কেন? কোন একজন বাংলা ভাষায় অনুবাদকারীকে অন্যান্য বহুভাষা সম্পর্কে সম্যক বা সাধারণ ধারণা রাখতে হবে? ...এর সহজ উত্তর হলো ইংরেজি ভাষা, ভাষার ক্ষেত্রে (উপনিবেশগত কারণে) কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যে যেই ভাষায়ই যা কিছু লিখছে সেটা শ্রেষ্ঠত্বের সূত্র ধরে ইংরেজি ভাষায় অনূদিত হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতিটি ভাষাই ইংরেজি ভাষামুখী বা ইংরেজি ভাষার সাথে নানাভাবে সম্পর্কিত। সেজন্যই তারা একের সাথে বহুত্বের মিলন ঘটাতে পারছে। কিন্তু বাংলা ভাষার সুবিধাসমূহ তেমনটি নয় কিন্তু? এ ভাষায় অনুবাদ করতে গেলে ভাষার নিজস্ব তার সাথে সংস্কৃত ও তৎসম বা তদ্ভব ভাষা এবং শব্দের একটা জটিলতা তো আছেই সেই সাথে একেশ্বরবাদী ইসলামী চিন্তার সাপেক্ষে অনুবাদ কিছুটা জটিল বলেই সতর্কতার সাথে করা প্রয়োজন। যেমন অহমবষ কে দেবদূত অনুবাদ করা হলেও মুসলমানদের কাছে আল্লার দূত হিসেবেই সেটা পরিচিত। ওরা দেবতা বলে মধ্যবর্তী কাউকে বিশ্বাস করে না। তাই তো রুহ্কে আত্মা, দরবেশকে সাধু বা সন্ন্যাসী, বেহেস্তকে স্বর্গ (যেটা ইন্দ্রলোকে বা বিষ্ণু লোকে আছে), আল্লাহকে ভগবান, গড, ঈশ্বর, করুণাময়, গুরুদেব, ঐঁংনধহফ বা স্বামীকে পরমেশ্বর, জিনকে ভূত বা আত্মা, জবারাব কে পুনর্জন্ম ইত্যাদি বলা যেতে পারে বুঝার সুবিধার্থেÑতবে ধর্মীয় বিশ্বাস সাপেক্ষে সঠিক হবে না। সেজন্যই অনুবাদের ক্ষেত্রে ধর্মীয় ঐতিহ্য ও বিশ্বাস একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গও বটে। বিপরীতক্রমে এটা হিন্দু ধর্মের ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য। কেননা ওদের ধর্মীয় বিশ্বাসের ক্ষেত্রে চধহঃযবরংস বা ঈশ্বর সবকিছুতে আছেন এবং সবকিছুই ঈশ্বর এই বিশ্বাসই অধিক গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে একেশ্বরবাদের ভিন্ন অর্থ বিধায় অনুবাধককে সঠিকভাবে সিদ্ধান্তে আসতে হবে কারও ধর্মীয় অনুভূমিতে আঘাত দেয়া সঠিক হবে না।
৩.
বাংলাদেশের বাংলা ভাষায় অনুবাদের মূল ক্ষেত্র প্রস্তুত হয় ১৯৪৭ পরবর্তী ৫০ ও ৬০ এর দশকে। পরবর্তীতে স্বাধীন দেশে সেটা চূড়ান্ত স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্র্যে আবির্ভূত হতে থাকে। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে মুনীর চৌধুরী ও কবির চৌধুরী ভাতৃদ্বয়ের অনুবাদ কর্ম একটা বিকশিত এবং মানসম্পন্ন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে। শহীদ মনির চৌধুরী একাত্তর সালে শাহাদাৎ বরণ না করলে হয়ত তার বিশ্বজনীন ভাবনা বাংলা ভাষায় অনুবাদের মাধ্যমে একটা বিশাল ক্ষেত্র প্রস্তুত করত। তবে সে কাজটি তারই অগ্রজ প্রতিম জাতীয় অধ্যাপক কবির চৌধুরির হাতে বেশ মানসম্পন্ন পর্যায়েই বিকশিত হয়েছে। এছাড়াও অনুবাদের ক্ষেত্রে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, অধ্যাপক আবুল ফজল, ড. কুদরাত-এ খুদা, ড. মুহাম্মদ এনামুল হক, ড. কাজী মোতাহার হোসেন, ড. কাজী দীন মুহম্মদ প্রমুখের অবদান অনস্বীকার্য। প্রথম চার দশকের বিশিষ্ট অনুবাধক হিসেবে আবু রুশদ মতিন উদ্দীন, ড. মযহারুল ইসলাম, আবুল কালাম শামসুদ্দীন, আব্দুস সাত্তার, সরদার ফজলুল করিম, আব্দুল হাফিজ, মনিরউদ্দীন ইউসুফ, আবদার রশীদ, আবু শাহরিয়ার নেয়ামাল বাসির, ড. সুনীল কুমার মুখোপাধ্যায়, গাজী শামছুর রহমান, জাফর আলম, ফখরুজ্জামান চৌধুরী প্রমুখের নাম শ্রদ্ধার সাথেই স্মরণ করতে হয়। কারণ এদের হাত ধরেই এ অঞ্চলের বাংলা ভাষার গতিক্রমে বিদেশী ভাষার সাহিত্য ও অন্যান্য সৃষ্টিশীল কর্মযজ্ঞ সঠিক এবং মানসম্পন্ন ধারায় বিকশিত হয়। পাশাপাশি অনুবাদের ক্ষেত্রে বেশকিছু লেখক, কবি ও শিক্ষাবিদ কাজ করে চলেছেন। তাদের অবদান এই সীমিত পরিসরে হয়ত তুলে ধরা সম্ভব নয়। সবশেষে এটাই বলা যায়, অনুবাদের প্রয়োজন, প্রাসঙ্গিকতা ও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলেই এর প্রয়োজন কখনও ফুরিয়ে যাবে না। সেজন্যই চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে অনুবাদকগণ অনুবাদ কর্ম করে যাবেন এটাই বাস্তবতা। তবে বাঙলায় অনুবাদের ক্ষেত্রে যে নিয়ম, যে প্রেক্ষিত, যে বাস্তবতা, যে ধর্মীয় বিশ্বাস, যে ব্যাকরণ রীতিনীতি সেটা বা সেসব পালন করেই অনূদিত হলে অনুবাদের সার্থকতা আসবে। অর্থাৎ অনুবাদকের যোগ্যতা জবাবদিহিতায়ই মূল সত্য। আর সেই সত্যের সূত্রেই উচ্চারিত হয়Ñসত্যম্ শিবম সুন্দরম। আমরা সেই সত্য ও সুন্দরের প্রত্যাশায় সত্যিকারের বাঙলা অনুবাদের প্রত্যাশী। ব্যাপক ও সঠিক অনুবাদই আমাদের ভাষা ও বিকাশকে ত্বরান্বিত করবে।
No comments