দুর্নীতি দমন-ভারত কাঁপানো এক আন্না হাজারের কথা by পার্থ চট্টোপাধ্যায়
এমনকি গান্ধীবাদী সমাজকর্মী ওই আন্না হাজারের আগেও মহারাষ্ট্রে একাধিকবার প্রতিবাদ অনশনে বসেছেন। তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া হয়নি। কিন্তু এবার এমন কী হলো যার জন্য তিনি অনশনে বসার সঙ্গে সঙ্গে দিলি্লর শত শত তরুণ-তরুণী, যাদের সন্ধ্যাবেলাটা শুধু মলগুলোতেই দেখা যায়, তারা মোমবাতি নিয়ে মিছিল করবেন কেন?
মধ্যপ্রাচ্যের বিপ্লব কি ভারতের দরজায় এসে কড়া নাড়ছে? তা না হলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ৭২ বছরের এক গান্ধীবাদী বৃদ্ধের দু'দিনের অনশনেই সারা ভারতের নাগরিক সমাজ এমন একাট্টা হয়ে উঠবে কেন? অনশন তো তিনি করছিলেন দিলি্লর যন্তরমন্তরে। দিলি্লতে তো প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো অনশন, বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সভা লেগেই থাকে। এসব নিয়ে খোদ দিলি্লর লোকই মাথা ঘামায় না, তা দেশের অন্যপ্রান্তের মানুষ তো দূর ছার। এমনকি গান্ধীবাদী সমাজকর্মী ওই আন্না হাজারের আগেও মহারাষ্ট্রে একাধিকবার প্রতিবাদ অনশনে বসেছেন। তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া হয়নি। কিন্তু এবার এমন কী হলো যার জন্য তিনি অনশনে বসার সঙ্গে সঙ্গে দিলি্লর শত শত তরুণ-তরুণী, যাদের সন্ধ্যাবেলাটা শুধু মলগুলোতেই দেখা যায়, তারা মোমবাতি নিয়ে মিছিল করবেন কেন? কেনই বা সিনেমা জগতের আমির খান, শাবানা আজমি থেকে শিল্প-জগতের দিকপাল ইনফোসিসের চেয়ারম্যান নারায়ণ মূর্তি পর্যন্ত আন্না হাজারের এ অনশনকে সমর্থন করবেন? একমাত্র কলকাতার এক বিখ্যাত দৈনিক ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া ভারতের কেউই এ আন্দোলনকে নিন্দা করেননি; বরং ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের অরাজনৈতিক, নাগরিক সমাজ বিশেষ করে তরুণরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আন্না হাজারের সমর্থনে সভা-সমিতি করেছেন। মোমবাতি নিয়ে মিছিল কলকাতাতেও হয়েছে।
একটি সর্বভারতীয় দৈনিক পাঠকদের মধ্যে একটি সমীক্ষা করেছিল, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্নার যে অহিংস আন্দোলন, তা কি আপনি সমর্থন করেন? ৮৪ শতাংশ জবাব দিয়েছেন_ হ্যাঁ। কী চেয়েছিলেন আন্না? সাংসদদের দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করার জন্য ৪২ বছর আগে লোকসভায় লোকপাল বিল পাস হয়েছিল। কিন্তু বারবার এ বিলটি রাজ্যসভায় নাকচ হয়ে গিয়েছে। ভারতবর্ষে দুর্নীতি সর্বস্তরে। কিন্তু উচ্চ পর্যায়ে বিশেষ করে সাংসদ ও মন্ত্রীদের মধ্যে দুর্নীতি এখন সীমা ছাড়িয়ে গেছে। ১১ বছর আগে আন্না হাজারে এ দুর্নীতির বিরুদ্ধে একবার অনশনে বসেন। তখন ড. মনমোহন সিং তাকে প্রতিশ্রুতি দেন, দুর্নীতি দমনের জন্য লোকপাল বিল ও একটি ওমবুডসম্যান পদ সৃষ্টির জন্য আন্না যে আন্দোলন করছেন, তা তিনি সমর্থন করবেন। কিন্তু ক্ষমতায় এসে মনমোহন তার কথা রাখেননি। তার আগের প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়িও লোকপাল বিল পাসের জন্য তেমন আগ্রহ দেখাননি। নানা টালবাহানায় সেটি আজও আটকে রয়েছে।
যদিও জাতীয় সমীক্ষা অনুসারে মাত্র ২১ শতাংশ ভারতবাসী বিশ্বাস করেন, সব রাজনীতিকই দুর্নীতিপরায়ণ। তবে ৫৩ শতাংশই বিশ্বাস করেন, অধিকাংশ রাজনীতিকই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত; এবং সব নাগরিকই বিশ্বাস করেন, ভারতের এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের চেয়েও দুর্নীতিমুক্ত এক সমাজ তৈরি করা।
খুবই আশার কথা, কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী এ কথাটি বুঝেছেন। তিনি এটাও বুঝেছেন, আন্না হাজারের এ আন্দোলনের পেছনে এই যে এত মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে চলে আসছেন, তা উপেক্ষা করা হলে শাসক দলের বিরুদ্ধে জনরোষে পরিণত হতে পারে। তাই সরকার সঙ্গে সঙ্গে হাজারের দাবি মেনে নিয়েছে। খসড়া লোকপাল বিলটির অনেক ত্রুটি আছে, সে জন্য নতুন করে একটি বিল আনা হবে, যাতে সরকারের পক্ষে দুর্নীতিগ্রস্তদের শাস্তি দেওয়া সহজতর হয়। এই বিল খসড়ার জন্য যে কমিটি হয়েছে তাতে দায়িত্বশীল পদে আন্নাকেও রাখা হয়েছে। আন্নার দাবি ছিল_ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও এ খসড়া কমিটিতে থাকবেন। যা নিয়ে দ্বিমত ছিল অনেকেরই, এমনকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এ প্রস্তাবে রাজি নন। তার বক্তব্য, বিল রচনার পূর্ণ দায়িত্ব সাংসদ ও সরকারের হাতেই থাকা উচিত। নাগরিক সমাজ এর মধ্যে নাক গলাবে কেন? কিন্তু জনমতের চাপে ইউপিএর চেয়ারপারসন হিসেবে সোনিয়া গান্ধী মনে করেন, আন্নার দাবি মেনেই এখনকার মতো বিক্ষোভ ধামাচাপা দেওয়া উচিত।
স্বাধীনতার পর ভারতবর্ষে অরাজনৈতিকভাবে প্রথম গণআন্দোলন হয় কেরালায়। সেখানকার প্রথম কমিউনিস্ট সরকারকে উৎখাত করার জন্য খ্রিস্টান চার্চের যাজকদের নেতৃত্বে গণআন্দোলন হয়। সে আন্দোলনে হাজার হাজার মানুষ শামিল হয় এবং শেষ পর্যন্ত কেন্দ্র নাম্বুদ্রিপাদ সরকারকে বরখাস্ত করে। এরপর ১৯৭৬ সালে জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে গণআন্দোলন সংগঠিত করেন জয় প্রকাশ নারায়ণ। কেরালার আন্দোলন ও জয় প্রকাশের আন্দোলনের পেছনে রাজনৈতিক দলের মদদ ছিল। কিন্তু ওই আন্দোলন পরিচালিত হয় অরাজনৈতিকভাবে। জয় প্রকাশ নারায়ণ কোনো রাজনৈতিক দলে ছিলেন না। তিনি বিহারে সদাকত আশ্রম তৈরি করে গান্ধী ভাবাদর্শ অনুসারে গঠনমূলক কাজেই আত্মনিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু দিলি্লর আন্না হাজারের সাম্প্রতিক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য, এটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক নাগরিক সমাজের আন্দোলন। নাগরিকদের এ মঞ্চকে কিছু বিরোধী রাজনৈতিক নেতা ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। যেমন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের উমা ভারতী, হরিয়ানার বিরোধী নেতা ওম প্রকাশ চৌতালা, সিপিএমের এমপি ও সর্বভারতীয় নেতা সীতারাম ইয়েচুরি। এরা সবাই আলাদাভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের দুর্নীতি নিয়ে সরব। দিলি্লতে যন্তরমন্তরের সামনে আন্না হাজারের আমরণ অনশন নিয়ে ক'দিন ধরেই ভারতের সব কাগজে এবং টিভি চ্যানেলে প্রচুর কাভারেজ হচ্ছিল। সাধারণ মানুষের মধ্যে সাড়া ফেলে ওই অনশন। লোকজনও জমায়েত হয় প্রচুর। তা দেখে ফায়দা তোলার জন্য রাজনৈতিক নেতারা সমর্থন জানাতে এগিয়ে আসছিলেন; কিন্তু তাদের সেই উদ্যোগে জল ঢেলে দিয়েছেন স্বয়ং আন্না হাজারে। তিনি বলে দেন, আমার এই মঞ্চে রাজনৈতিক নেতাদের কোনো জায়গা নেই। তিনি বলার আগে জমায়েতের মানুষ নেতাদের দেখলেই তাড়া করেছে। স্লোগান দিয়েছে_ 'নেতাগিরি চলবে না, চলবে না।'
ভারতের সিভিল সোসাইটি বা নাগরিক সমাজ স্বাধীনতার সময় থেকেই বিভিন্ন জনপ্রিয় আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথই তো ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। গান্ধীজির বিভিন্ন আন্দোলনে রাজনৈতিক ক্যাডাররা ছাড়াও অরাজনৈতিক বহু মানুষ যোগ দেয়। স্বাধীনতার পরও সমাজকর্মী মেধা পাটেকর ও সুন্দর লাল বহুগুণ প্রমুখ পরিবেশ নিয়ে যেসব আন্দোলন করেছিলেন, তা এক রকম অরাজনৈতিক আন্দোলনই। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনগণকে সংগঠিত করার আন্দোলন। সেসব ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক নেতারা খুব একটা ভিড়তে পারেননি। আবার তিন বছর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামে চাষের জমি কেড়ে নিয়ে কারখানা করার বিরুদ্ধে যে ব্যাপক গণআন্দোলন করেছিলেন, সেখানেও বহু অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শামিল হন। কিন্তু এ আন্দোলনের নেতৃত্ব ছিল মুখ্যত মমতার তৃণমূল দলের হাতে। এ আন্দোলনের কড়া রাজনৈতিক চরিত্র অক্ষত রেখেছিলেন এবং আন্দোলনের সব ফায়দা মমতা ও তার দল তুলে নিয়েছিলেন। এমনকি ওই আন্দোলনে মমতা যেসব অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে টেনে এনেছিলেন, তাদের অনেককে তিনি ইতিমধ্যেই রাজনীতিতে দীক্ষিত করে নিয়েছেন। তারা এখন কেউ তৃণমূলের ক্যাডার (যেমন_ শিল্পী শুভপ্রসন্ন), কেউ রেল দফতরের মোটা বেতনের অস্থায়ী পদ ভোগকারী (যেমন_ অভিনেত্রী শাঁওলি মিত্র), কেউবা সরাসরি তৃণমূল টিকিটে নির্বাচন প্রার্থী (যেমন_ অভিনেত্রী দেবশ্রী রায় ও অভিনেতা-পরিচালক ব্রাত্য বসু, সিনেমার হিরো চিরঞ্জিৎ, সঙ্গীতশিল্পী অনুপ ঘোষাল) প্রমুখ। অবশ্য যারা মমতার কাছে তাদের অরাজনৈতিক স্বাধীন সত্তা বিসর্জন দেননি, তাদের সংখ্যাও কম নয়। তারা ইস্যুভিত্তিক নৈতিক সমর্থনে বিশ্বাসী। মমতার নির্বাচনী প্রচারে তারা নেই। তবে এ কথা ঠিক, ভারতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতি লোকে যে এত বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠছে তার বড় কারণ দুর্নীতি। সেই যে কমনওয়েলথ গেমস থেকে টুজি স্পেকট্রাম বাটন, মুম্বাইয়ের প্রতিরক্ষা দফতরের জমিতে পরিবেশ নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে বেআইনিভাবে রাজনৈতিক নেতা ও অফিসারদের মধ্যে সেগুলো বণ্টন। এমনকি দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত অফিসারকে দুর্নীতি দমনের সর্বোচ্চ অফিসার পদে নিয়োগ করা, দুর্নীতি ও কালো টাকার যে রমরমা চলছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলোতে তাতে বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠেছে দেশের তরুণ সমাজ।
দশ-বিশ বছর আগেও ভারতে যদি বিপ্লব হতো তাহলে 'ভুখা মানুষ'কে দিয়েই সে বিপ্লব শুরু হতো। কিন্তু এখন ভারতের আর সে অবস্থা নেই। প্রকৃত প্রলেতারিয়েত খুঁজতে ও তাদের বিপ্লবের স্বপ্ন দেখাতে সহিংস মাওবাদীদেরও গভীর জঙ্গলে গিয়ে উপজাতিদের মধ্য থেকে সর্বহারা খুঁজে বের করতে হচ্ছে। ভারত রাতারাতি ইউরোপ হয়ে যায়নি। যাবেও না। গরিব ও বড়লোকদের মধ্যে ফারাক যেমন ছিল, তেমন থাকবে। কিন্তু অস্বীকার করা যাবে না যে, মধ্যবিত্ত চাকরিজীবী থেকে কৃষিজীবী_ যারা কোনো উৎপাদনশীল কাজের সঙ্গে জড়িত তারা কেউই আজ না খেয়ে নেই, বরং ভারতের অন্তত ৪০ কোটি লোক আরও ভালোভাবে খেয়ে-পরে আছে। কিন্তু দুর্নীতি আর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির চাপে সবাই ব্যতিব্যস্ত, তিতিবিরক্ত ও সবাই মনে করেন রাজনৈতিক নেতৃত্বই এ জন্য দায়ী। মনমোহন সিং সৎ ও ভালো লোক, রাহুল গান্ধী একজন যোগ্য প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। নিতীশ কুমার ও নরেন্দ্র মোদী বিহারে একটি ভালো প্রশাসন এনে দিয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হলে পশ্চিমবঙ্গে নৈরাজ্যের অবসান ঘটবে। দলতন্ত্রের অবসান ঘটবে। কিন্তু সবকিছু ছাড়িয়ে যে প্রশ্নটা সবার মুখে মুখে তা হলো_ দুর্নীতিমুক্ত আইনশাসিত ভারতের অভ্যুদয় হবে কবে থেকে? একুশ শতকের যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম দেশের ৬০ কোটি তরুণ প্রজন্মকে কাজ দেওয়ার মতো একটা সরকার কবে আসবে? মনমোহন সিংয়ের মতো একজন প্রকৃত অর্থে শিক্ষিত এবং প্রকৃত অর্থে সৎ ও ভালো প্রধানমন্ত্রী যদি দুর্নীতিমুক্ত, পরিচ্ছন্ন সরকার উপহার দিতে না পারেন তাহলে আর কে পারবেন? যে ডিএমকে দলের দুর্নীতিপরায়ণ মন্ত্রী- ডি রাজার জন্য কংগ্রেসের আজ এত হেনস্তা (ডি রাজা এখন জেলে), সেই ডিএমকের সঙ্গে কংগ্রেস আগামী তামিলনাড়ূ নির্বাচনে আবার জোট করেছে। এটা কি দুর্নীতিমুক্ত শাসন উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি? তামিলনাড়ূতে এবার করুণানিধির দল ডিএমকে এবং কংগ্রেস জোটের জেতার সম্ভাবনা কম। সেখানকার মানুষ কি দুর্নীতিগ্রস্ত জোটকে বর্জন করবে? করলেও বিকল্প জয়ললিতা যদি সেখানে আবার মুখ্যমন্ত্রী হন তাহলে সেটা কি আরও করুণ হবে না? কারণ জয়ললিতা সরকারের দুর্নীতিও পর্বতপ্রমাণ ছিল।
মন্ত্রী ও সাংসদদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত করার জন্য ১৯৬৯ সালে লোকসভায় পাস হয়ে গেছে লোকপাল বিল। কিন্তু আজ ৪২ বছর ধরে রাজ্যসভায় সে বিলটি পাস হলো না। এরপরও কি ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর মানুষের আর আস্থা থাকে। আর ঠিক এখানেই শক্তি নিহিত আন্না হাজারের।
ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায় : ভারতীয় সাংবাদিক
No comments