যোগাযোগমন্ত্রীর উদ্যোগ-প্রত্যাশা ও বাস্তবতা
দায়িত্ব গ্রহণের পর যোগাযোগমন্ত্রীর নানামুখী তৎপরতা সকলের নজর কেড়েছে। শুরুতে মন্ত্রীর এ কর্মতৎপরতা দেখে একে সাময়িক এবং লোক দেখানো বলে মনে করা হয়েছিল। কার্যত মন্ত্রী সমস্যাজর্জরিত রেলকে টেনে তুলতে চেষ্টা করছেন। কিন্তু সময় গেলেও মন্ত্রীর তৎপরতা থামছে না, বরং সমান গতিতেই চলছে। এটি ভালো লক্ষণ নিঃসন্দেহে।
মন্ত্রী যেভাবে নানা দফতরে, রাস্তায়, স্টেশনে, টার্মিনালে ছুটে বেড়াচ্ছেন তা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রশংসনীয় ব্যাপার। ঈদের ছুটির আগে মন্ত্রীর তৎপরতায় খানিকটা সুফল মিলেছে, বাড়ি ফেরা অনেকটাই সহনীয় হয়েছে। যোগাযোগমন্ত্রী কিছুদিন আগে দায়িত্ব নিয়েছেন, সরকারের বর্তমান মেয়াদে তার হাতে সময় কম। এ সময়ের মধ্যে যোগাযোগ ও রেল ব্যবস্থায় মৌলিক কোনো পরিবর্তন আনা কঠিন। শুক্রবারের সমকালে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এ সড়কটি দুর্ঘটনাপ্রবণ আর এ দুর্ঘটনার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক। নানা মহল থেকে বাঁকগুলোর ত্রুটি দূর করার দাবি দীর্ঘদিনের। সারাইয়ের কাজ শুরু হলেও তা চলছিল ধীরগতিতে আর তাতে নানা ত্রুটিও ছিল। ফলে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে এই সড়কের কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন যোগাযোগমন্ত্রী। নির্দেশ বাস্তবায়িত না হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলেছিলেন। বাস্তবতা হলো, ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে বাঁক প্রশস্ত করার কাজ শেষ হয়নি। যেটুকু কাজ হয়েছে ত্রুটির কারণে তাও ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। অনেক স্থান ভেঙে গেছে, গর্তও সৃষ্টি হয়েছে। আর গত দেড় মাস ধরে কাজও বন্ধ। এ অবস্থায় মন্ত্রীর নির্দেশ যে বাস্তবায়িত হয়নি তা স্পষ্ট। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ঠিকাদাররা আন্তরিক হলে মন্ত্রীর নির্দেশ পালন করা কঠিন ছিল না। কার্যক্ষেত্রে তা ঘটেনি। ফলে মন্ত্রীর তৎপরতায় কোনো লাভ হয়নি। শুক্রবারের পত্রিকাতেই আরেকটি খবর এসেছে যোগাযোগমন্ত্রীর সান্তাহার সফর নিয়ে। সান্তাহারে গিয়ে কর্তব্যে অবহেলার জন্য মন্ত্রী একজনকে সাময়িক বরখাস্ত, একজনকে বদলি, অন্যজনকে সতর্ক করার নির্দেশ দিয়েছেন। নিকটবর্তী জয়পুরহাট-ধামুরহাট সড়কের বেহাল অবস্থা দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করে রাস্তা সংস্কারের নির্দেশও দেন। তিনি না গেলেও তার আসার খবরে ঈশ্বরদী স্টেশনে কিছু উচ্ছেদ ও পরিচ্ছন্নতার উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রশ্ন হলো, দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীকেই কেন এত দিক দেখতে হবে? কর্মচারীদের কর্তব্যে অবহেলা কেন ঊর্ধ্বতনদের নজরে পড়ে না। রাস্তাঘাট সংস্কারের দায়িত্ব যাদের তারা কেন হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকেন। মন্ত্রী আসার খবরেই কেন নানা তৎপরতা শুরু হয়? পরিস্থিতি বলে, মন্ত্রীর নির্দেশ, উপদেশ, পরামর্শ, আহ্বান সবসময় মেনে নেওয়া হচ্ছে না। ফলে সেগুলো শেষ পর্যন্ত কথার কথা হয়েই থাকছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে দুর্নীতি, অনিয়ম, দায়িত্বহীনতার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা অব্যাহত থাকলে কোনো ভালো উদ্যোগই সফল হবে না। গায়ের জোরে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু ভালো কাজ সম্ভব হলেও দীর্ঘমেয়াদে কোনো ভালো কাজ করা কঠিন। নির্দেশ, উপদেশ, আদেশ, পরামর্শে কাজ না হলে বিকল্প ব্যবস্থা তো নিতেই হবে।
No comments