বৃষ্টি ঝরা গান

বইয়ের প্রচ্ছদে যে নামটি লেখা তা দেখলে অনেক পাঠক হয়তো ভেবেই বসবেন এটা গানের একটি বই। আদতে এটা পরিপূর্ণ একটি কবিতার বই। ঝরে বৃষ্টি ঝরঝরে ঝরে মাঠ ঘাট নদী আর অরণ্য শিখরে কখনও বা নগরের পথে
পাহাড়ে পর্বতে ..


.মুহম্মদ শামসুর রহমানের লেখা এ পঙ্ক্তিগুলো আওড়ালে মনে হয়ে সত্যিই বৃষ্টির সঙ্গে যেন মিশে যাচ্ছি।
শস্য শ্যামল বাংলার আবহকে উপমা করে নিজের ভেতরের এক পরিতৃপ্তি খোঁজার চেষ্টা খুঁজেছেন তিনি। এবং তা স্পষ্টই ফুটে উঠেছে তার পঙ্ক্তিতে।

যেন কোন্্ বিরহীর নয়নের জল
ঝরে অবিরল
অথবা এ অসীমের গান

পরিতৃপ্ত হলো মোর দেহ মন প্রাণ
সব শূন্যতা ভরে ওঠার প্রয়াস নিয়েই
তার বৃষ্টি ভেজা গান।

প্রেমাঙ্গিক কিছু কবিতা রয়েছে মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো। এর মধ্যে তোমাকে বলব কথা, তোমার কবিতা মন, “তোমার প্রেমের স্মৃতি ইত্যাদি। প্রেমের কবিতাগুলোতে রয়েছে প্রিয়ার প্রতি আকুতি যা আন্দোলিত করে মন। যেমন, “তুমি তো আমাকে যাবে ভুলে, তাই, আমার কবিতা ছন্দে তোমার প্রেমের স্মৃতি গেথে রাখলাম।’ বৃষ্টি ঝরা গান কবিতার বইয়ে শুধু বৃষ্টির গান রয়েছে তা নয়, বেশকিছু উপমা দিয়ে সাজানো হয়েছে বইটি। একেকটি উপমা একেকভাব প্রকাশ করে।Ñএর মধ্যে কবি জীবন নিয়ে বেশ কিছু বিশ্লেষণধর্মী কবিতা লিখেছেন যা হয়তো তার জীবনেরই প্রতিচ্ছবি, লিখেছেন, আমাদের জীবনের কঠিন শপথ, হাঁটি নিত্য চির-চেনা পৃথিবীর পথ, এবং প্রাণের সুরে গান গাই শবের মিছিলে, ছন্দ-যতি মিলে, জীবনকে ভালবেসে খুঁজে পেতে চাই মহামারী বন্যা আর দুর্ভিক্ষের কঠিন আঘাত, নিত্য ভুলে যাই।
রয়েছে জীবনের অবসাদমাখা কিছু কবিতা, যা কবি স্পষ্টই ফুটিয়ে তুলেছেন। যেমন, জীবন মানেই ক্লান্তি, জীবন মানেই ভ্রান্তি, জীবন মানেই জোড়াতালি, জীবন মানেই শূন্য ডালি।
শুধু যে প্রেম, বর্ষা কিংবা জীবনের মধ্যে কবিতারই বই আবদ্ধ তা নয়। কবি এই একটি বইয়ের মধ্যে তার জাগতিক দর্শন তুলে ধরেছেন। যাপিত জীবনের বিভিন্ন অধ্যায় নিয়ে তিনি কবিতা রচনা করেছেন। আর হয়তো এ কারণেই লিখেছেন জনগণের কবিতা, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, আবার হবো মুক্ত স্বাধীন নিজের ঢাকসহ আরও বেশকিছু কবিতা, পুরো কবিতার বই ছুড়ে বেশ কিছু ভেরিয়েশন লক্ষ্য করা যায়, পাঠক অন্তত একটি বিষয়ে আটকে থেকে অনীহা বোধ করবেন না, একটি ব্যতিক্রমধর্মী কবিতার বই বলা চলে। মুহম্মদ শামসুর রহমান মূলত রোমান্টিক কবি। তাঁর কবিতায় হৃদয়বাহী পরিচ্ছন্ন বেদনার রূপটিই পাঠক মনে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করবে। কবিতার বইটি পড়লেই বোঝা যায় কবি সুন্দরকে ভালবাসেন। অসুন্দরের নির্বাসন কামনা করেন। সব মিলিয়ে যথেষ্ট প্রতিশ্রুতিশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। তবে বইটির নামের যথার্থতা প্রকাশে আরও বেশ কিছু বৃষ্টির কবিতা থাকলে মন্দ হতো নয়। তারপরও কবিতাগুলোর শব্দ চয়ন যে কাউকে আকৃষ্ট করবে। প্রিয়জনকে উপহার দেয়ার মত একটি কবিতার বই।
তৌফিক অপু

No comments

Powered by Blogger.