বিশ্বব্যাংকের ফিরে আসার আভাসে সব মহলে স্বস্তি, আশাবাদ- পদ্মা সেতু নির্মাণে দক্ষিণ এশিয়ায় যোগাযোগের নতুন দ্বার খুলে যাবে by এম শাহজাহান
পদ্মা সেতুর অর্থায়নে বিশ্বব্যাংকের ফিরে আসার আভাসে দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, অর্থনীতিবিদ, সুশীল সমাজ ও সাধারণ মানুষের মনে স্বস্তি এসেছে। তাঁরা বলছেন, দেরিতে হলেও সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়েছে। সরকারের কূটনৈতিক অগ্রগতির এটি প্রথম ধাপ।
বিশ্বব্যাংককে আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব হলে তা হবে বর্তমান সরকারের জন্য বড় কূটনৈতিক সাফল্য। আর শেষপর্যন্ত বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়নে ফিরে না এলে এর দায়ভারও সরকারকে বহন করতে হবে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পদ্মা সেতু দেশের জন্যই প্রয়োজন। তাই এ সেতু যেন রাজনৈতিক বলির শিকার না হয়। পদ্মা সেতু নির্মাণে সরকারের যেমন দায় রয়েছে তেমনি বিরোধী দলও এ দায় থেকে মুক্ত নয়। বিদেশী সহায়তা পেতে বিরোধী দলেরও ভূমিকা রাখা উচিত।
এ প্রসঙ্গে তৈরি পোশাক রফতানিকারক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি মোঃ সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, বিশ্বব্যাংক ফিরে আসার আভাসে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে এক ধরনের স্বস্তি ফিরে এসেছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পদ্মা সেতু হতেই হবে। পদ্মা সেতু হলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির চেহারা পাল্টে যাবে। শিল্পায়ন হবে। মংলা পোর্ট পুরোদমে চালু হলে রফতানি বাড়বে। বাড়বে কর্মসংস্থান ও সরকারের আয়। যার সুফল ছড়িয়ে পড়বে সারাদেশে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের ফিরে আসার আভাস শুধু নয়, তাদের ফিরিয়ে আনতেই হবে। কারণ এত বড় প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নে হয়ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব কিন্তু তা অর্থনীতির অন্যান্য খাতকে শ্লথ করে দিতে পারে। এ জন্য ঝুঁকি না নিয়ে যেভাবে হোক বিশ্বব্যাংককে ফিরিয়ে এনে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করা হোক। ভিশন-২১-এর যে স্বপ্ন জাতি দেখেছে তা বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা প্রয়োজন। প্রত্যাশা করছি, শেষপর্যন্ত বিশ্বব্যাংক ফিরে এসে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় তাদের অবদান অব্যাহত রাখবে।
এদিকে অর্থনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে বার বার বলা হচ্ছে, পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে করার চেষ্টা করা হলে তা সামষ্টিক অর্থনীতিকে চাপের মুখে ফেলবে। তাই ২৩-২৪ হাজার কোটি টাকার এত বড় প্রকল্প কোনভাবেই নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণের ঝুঁকি নেয়া সঠিক হবে না। তাঁরা বলছেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হলে তা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক ধারা সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে। শুধু তাই নয়, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে অন্য যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন সেগুলোর অর্থও দ্রুত ছাড় হবে। এর ফলে যে জিডিপির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা অর্জন করা সম্ভব হবে। মোট জিডিপিতে যার অবদান হবে প্রায় ১ দশমিক ১ শতাংশ।
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বব্যাংকের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হলে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন রুট চালু হবে। বিশেষ করে ভারত, চীন, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার নতুন দ্বার খুলে যাবে। এ জন্য বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা জরুরী। বিশ্বব্যাংকের ফিরে আসার ব্যাপারে যে আশার আলো দেখা দিয়েছে তা যেন কোনভাবেই নিভে না যায়। যে কালো মেঘ জমেছিল তা যেন দূর হয়। এটাই সকলের প্রত্যাশা।
সম্প্রতি একটি সেমিনারে এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেছেন, পদ্মা সেতুর অর্থায়নে বিশ্বব্যাংকের কাছে সরকার বার বার ফিরে যাচ্ছে এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত। বিশ্বব্যাংককে ফিরিয়ে আনার আর কোন বিকল্প নেই। এত বড় প্রকল্প ইতোপূর্বে নিজস্ব অর্থায়নে করার মতো অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের নেই। তাছাড়া অর্থনীতিও চাপের মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আবেগতাড়িত না হয়ে বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সরকার সঠিক পথে এগোচ্ছে। বিশ্বব্যাংককে ফিরিয়ে আনাই হবে সরকারের বড় কৌশল ও সাফল্য।
ব্যবসায়ী ও শিল্প মালিকদের পার্লামেন্ট হিসেবেখ্যাত এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু জনকণ্ঠকে বলেন, পদ্মা সেতু হোক এটা দেশের সকল মানুষের প্রত্যাশা। কিন্তু এই প্রত্যাশা দুরাশায় পরিণত হয় যখন বিশ্বব্যাংক মুখ ফিরিয়ে নেয়। কিন্তু এখন আবার ফিরে আসার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। যে কোন মূল্যে সরকার বিশ্বের এই বৃহৎ ঋণদাতা সংস্থাকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবে এটাই প্রত্যাশা করছি। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণে পদ্মা সেতু সবচেয়ে বেশি জরুরী। তিনি বলেন, মংলা পোর্ট অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। কিন্তু পদ্মা সেতু নির্মাণ হলে এ পোর্টের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। আর এটি হলে দেশের আমদানি-রফতানিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।
এছাড়া পদ্মা সেতুর অর্থায়নে বিশ্বব্যাংকের ফিরে আসার খবরে দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যেও এক ধরনের স্বস্তি বিরাজ করছে। তাঁরা বলছেন, পদ্মা সেতু কোন রাজনৈতিক ইস্যু নয়। এটি দেশের জন্য প্রয়োজন। সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণে যেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে তাতে ব্যর্থ হওয়ার কোন সুযোগ নেই। বিশ্বব্যাংককে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। জানতে চাইলে ওয়ারীর বাসিন্দা ও কলেজ শিক্ষিকা তাসলিমা আক্তার বলেন, পদ্মা সেতু হোক এটাই চাই। এই ঝামেলার অবসান হওয়া দরকার। টেলিভিশন অন করলে ও পত্রিকা খুললে পদ্মা সেতু ছাড়া যেন আর কিছু নেই। দ্রুত বিশ্বব্যাংক ফিরে এসে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হলে এই ইস্যু থেকে আমরা বের হতে পারি।
No comments