রাজনীতি-নির্বাচনে যেতে পারে জামায়াত কৌশলগত কারণে আন্দোলনে by মোশতাক আহমদ
দলীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষা, দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মুক্ত করা এবং রাজনৈতিক ময়দানে টিকে থাকতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারে জামায়াতে ইসলামী। দলীয় স্বার্থে জোটের সিদ্ধান্তের বাইরে এ ধরনের অবস্থান নিতে পারে দলটি।
তবে কৌশলগত কারণে জামায়াত আপাতত বিএনপির সঙ্গে আন্দোলন চালিয়ে যাবে। দলের একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ আন্দোলন চালিয়ে গেলেও জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে গোপনে। এ লক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে দলের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির এ বছরের শুরুর দিকে বেশ বেকায়দায় ছিল। পুলিশি হয়রানি ও গ্রেপ্তারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন দলের নেতা-কর্মীরা। কিন্তু এখন তাঁরা দাওয়াতি কার্যক্রম থেকে শুরু করে দলীয় সব অনুষ্ঠানই চালিয়ে যাচ্ছেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে নেতা-কর্মীদের আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের পাশাপাশি নির্বাচনের জন্য কাজ করার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রীদের বক্তব্য থেকে জানা যায়, একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত শীর্ষস্থানীয় কয়েকজনের বিচার চলতি বছরের মধ্যে শেষ হতে পারে। জামায়াতের একটি অংশও চায়, ওই বিচার দ্রুত শেষ হোক। এটি শেষ হলে তারা নতুন আঙ্গিকে দলকে জনগণের সামনে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে। তখন জামায়াতকে 'যুদ্ধাপরাধীর দল' বলে আখ্যায়িত করার সুযোগ থাকবে না। একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা এবং আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন নেতাও এ বিষয়টি জামায়াতের বর্তমান নেতাদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন। এ নিয়ে সম্প্রতি জামায়াত নেতাদের সঙ্গে কয়েকদফা আলোচনা হয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র মতে, জামায়াতের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল হালিম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা তো নির্বাচনমুখী দল। তাই নির্বাচন তো করতেই চাই। এখন সরকার যদি সেভাবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সমান সুযোগ) তৈরি করে তাহলে তো আমরা নির্বাচনে অংশ নেবই।' এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ আছে কি না জানতে চাইলে আবদুল হালিম বলেন, 'আওয়ামী লীগও রাজনৈতিক দল, আমরাও রাজনৈতিক দল। যদি আমাদের কোনো নেতার সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতারা কথা বলেন তাহলে দোষের কিছু আছে বলে মনে করি না।'
জামায়াতের অন্য একটি সূত্র জানায়, কৌশলগত কারণে জামায়াত বিএনপির সঙ্গে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। সেই কৌশলের অংশ হিসেবে নির্বাচন পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবে দলটি। বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ না নিলেও জামায়াত কী সিদ্ধান্ত নেবে সেটি ওই সময়ের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ কালের কণ্ঠকে বলেন, গণতন্ত্র রক্ষার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনমুখী হওয়া উচিত। জামায়াতও নির্বাচনের পক্ষে। তবে নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন করার জন্য সরকারকেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দলকে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাতে সরকারের একটি অংশ কাজ করছে। এ লক্ষ্যে জামায়াত নেতাদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার গোপন বৈঠক হয়েছে। একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থাও নির্বাচনে জামায়াতের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে। চলতি বছরের শুরুর দিকে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এবং আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শেখ আবদুল্লাহ বেশ কয়েকটি ইসলামী দল ও সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এগুলোর মধ্যে জামায়াতপন্থী কয়েকটি সংগঠনও রয়েছে।
জানতে চাইলে জামায়াতের সহযোগী সংগঠন ওলামা মাশায়েখ কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, 'ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিক দল বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী কয়েক মাস আগে আমাদের ১২ দলের কয়েকটি সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। পরে আর বিস্তারিত জানা যায়নি।'
No comments