বিশ্লেষণ- তরুণদের নিয়ে দেশ বদলাতে চান ‘পারমাণবিক বোমার জনক’

গত সপ্তাহে নিজের নেতৃত্বাধীন নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দেওয়ার পর সর্বাত্মকভাবে প্রচারণায় নেমে পড়েছেন পাকিস্তানের ‘পারমাণবিক বোমার জনক’ আবদুল কাদির খান। গণমাধ্যমকে কাদির খান জানিয়েছেন, তিনি তরুণ প্রজন্মের ভোটারদের সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তানের বিদ্যমান রাজনৈতিক কাঠামোর খোলনলচে বদলে ফেলতে চান।


তিনি মনে করেন, পাকিস্তানের কোনো রাজনৈতিক দলের ওপর সে দেশের তরুণ সমাজের আস্থা নেই। তারা নতুন নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানে আমূল পরিবর্তন আনতে চায়।
গতকাল শুক্রবার রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ৭৬ বছর বয়সী পরমাণুবিজ্ঞানী কাদির খান বলেন, তরুণ প্রজন্মকে প্রতিরাতে টেলিভিশনে টক শো দেখে সময় নষ্ট করলে চলবে না। দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে তাদেরই অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের ব্যালটের মাধ্যমে বিতাড়িত করতে হবে।
কাদির বলেন, পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৪৭ শতাংশই তরুণ। আসন্ন নির্বাচনে এই তরুণেরা বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে। তরুণদের ভোট নষ্ট করা চলবে না। তাদের উচিত এমন কাউকে নির্বাচন করা, যিনি দুর্নীতিগ্রস্ত নন।
ইরান, উত্তর কোরিয়া ও লিবিয়ায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির গোপন নকশা বিক্রি করেছিলেন বলে স্বীকার করেছিলেন কাদির খান। এ জন্য তাঁকে দীর্ঘদিন গৃহবন্দীও থাকতে হয়। কিন্তু পাকিস্তানে তাঁকে এখনো জাতীয় বীরের মর্যাদা দেওয়া হয়। আগামী বছর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে তিনি ভোটারদের, বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে পারবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তান সরকারের কৌশলগত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কারণে রাজনীতিবিদদের প্রতি সে দেশের অধিকাংশ মানুষ বীতশ্রদ্ধ। পাকিস্তানের অভ্যন্তরে প্রায়ই মার্কিন ড্রোন হামলায় বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনায় সাধারণ পাকিস্তানিরা ক্ষুব্ধ।
এ ছাড়া রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগের বিষয় ও বিদ্যুৎসহ নানা সমস্যার কারণে সাধারণ নাগরিকেরা হতাশ। তাই দেশটির রাজনীতিতে নতুন কারও আবির্ভাবকে স্বাগত জানানো হতে পারে। বিশেষ করে এমন কেউ, যাঁকে বীর হিসেবে গণ্য করা হয়।
সাক্ষাৎকারে কাদির খান বলেন, পাকিস্তানে এখন ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। জনগণ বেকার। খাদ্য জুটছে না তাদের। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন দরকার। এ ক্ষেত্রে তরুণেরাই মুখ্য ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমি আমার দেশের জনগণকে সহযোগিতা করতে চাই। বদলে দিতে চাই তাদের ভাগ্য। ১৯৭৪ সালে ভারতের পারমাণবিক পরীক্ষার জবাবে আমি যেভাবে আমার দেশের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলাম, আজও আমার কাছ থেকে মাতৃভূমির সে রকম সাহায্যের প্রয়োজন।’
অনেকে মনে করছেন, কাদির খানের তেহরিক-ই-তাহাফুজ পাকিস্তান (টিটিপি) বা পাকিস্তান রক্ষার আন্দোলন দেশটির রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছে। রয়টার্স।

No comments

Powered by Blogger.