পাটি তৈরি করে স্বাবলম্বী

মাগুরায় পাটি তৈরি করে ৫০ পরিবার বাঁচার পথ পেয়েছে। প্রতিবছর জেলায় প্রায় ১৫ লাখ টাকা মূল্যের পাটি তৈরি হয়; যা দেশের বিভিন্ন জেলায় চালান দেয়া হচ্ছে। জানা গেছে, মাগুরা সদর উপজেলার কেচুয়াডুবি, শৈলডুবি, শালিখা উপজেলার কুয়াতপুর ও নালিয়া গ্রামে প্রায় ৫০টি পরিবার দীর্ঘদিন যাবত মেলো নামক এক প্রকার গাছ থেকে


উন্নতমানের পাটি তৈরি করছে। মেলোগাছ ফটকি নদী এবং বিলের ধারে জন্ম নেয়। জলজ এ গাছ সংগ্রহ করে রোদে শুকিয়ে পাটি শিল্পীরা দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি সান মেশিনের সাহায্যে উন্নতমানের পাটি তৈরি করেন। মেলো এক ধরনের ঘাস জাতীয় গাছ। এর উচ্চতা ৩ থেকে ৫ ফুট। প্রথমে মেলোগাছ কেটে এনে রোদে শুকিয়ে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি সান মেশিনের মধ্যে ঢুকিয়ে এ পাটি তৈরি করা হয়। সান মেশিনটি দেখতে অনেকটা তাঁতযন্ত্রের মতো। একজন পুরুষ ও মহিলা শ্রমিক সারাদিন ধরে ৮টি পাটি তৈরি করেন; যার বাজারমূল্য প্রায় ১ হাজার টাকা। ফলে তারা সমস্ত খরচ বাদে দৈনিক ৭০০-৮০০ টাকা মতো লাভ থাকে। প্রতিটি পাটি ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হয়। এই পাটি পাটি তৈরি করতে একসঙ্গে ২জন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। অন্যান্য পাটির মতোই টেকশই এবং ব্যবহার করা যায়। কেচুয়াডুবি, শৈলডুবি, কুয়াদপুর ও নালিয়া গ্রামের ৫০ পরিবার দীর্ঘ ৩০ থেকে ৪০ বছর এ পাটি তৈরি করে আসছেন। কেচুয়াডুবি গ্রামের কলেজছাত্রী পাটিশিল্পী লাবনী অধিকারী মেলো পাটি তৈরির পাশাপাশি লেখাপড়া করে মাগুরা সরকারী মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। লাবনী এবং তার পরিবারের মূল কাজই পাটি তৈরি করা। কেচুয়াডুবি গ্রামে লাবনীর মতো আরও ১০ থেকে ১৫ পরিবার রয়েছে যারা মেলো পাটি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে। বাজারে মেলো পাটির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। অন্যান্য পাটি থেকে কিছুটা দাম কম এবং টেকশই বলে এই মেলোপাটি স্থানীয়ভাবে খুবই জনপ্রিয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা মাগুরায় এসে মেলো পাটি ক্রয় করে নিয়ে যায়। প্রতিবছর এ অঞ্চলে প্রায় ১৫ লাখ টাকা মূল্যের পাটি উৎপন্ন হয়। স্থানীয়ভাবে পাটি তৈরির যে যন্ত্রটি ব্যবহৃত হয় তার নাম সার মেশিন। সার মেশিনের মধ্যে মেলোগাছ ঢুকিয়ে দিয়ে তাদের মতো পাটি বুনান হয়। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে মাগুরার মেলোপাটি আরও সম্প্রসারিত হবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করে। মাগুরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুব্রত কুমার চক্রবর্তী জানান, এই চারটি গ্রামে প্রতিমৌসুমে প্রায় ১৫ লাখ টাকা মূল্যের পাটি উৎপন্ন হয়। মেলো ঘাস এ বছর বেশি উৎপন্ন হওয়ায় পাটি উৎপাদনের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি জানান।

Ñসঞ্জয় রায় চৌধুরী, মাগুরা

No comments

Powered by Blogger.