চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে রাজনীতি-স্বাভাবিক কাজকর্ম যেন ব্যাহত না হয়

বন্দরকে কেন্দ্র করে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সাড়ে ৭০০ কোটি টাকার নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের অপারেটর নিয়োগের দরপত্র নিয়ে সেখানকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠার আশঙ্কা করা হচ্ছে।


বন্দর ও ১০ হাজার শ্রমিকের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের আয়ত্তে রাখার জন্য এই দখলযুদ্ধের অবতারণা হতেও পারে। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের রাজনীতি অনেকটাই বন্দরকেন্দ্রিক হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু বন্দর যদি রাজনীতির শিকার হয়, সেটা হবে দুঃখজনক। বন্দরের স্বার্থরক্ষার আন্দোলন শেষ পর্যন্ত বন্দরের স্বার্থবিরোধী হয়ে পড়ার আশঙ্কাকেও তাই একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিশেষ করে সরকারি দলের একাধিক গ্রুপ যখন চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে পরস্পরবিরোধী অবস্থান নেয়, তখন সম্ভাব্য অচলাবস্থার আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের সিংহভাগই বন্দরকেন্দ্রিক। এখানে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় জড়িয়ে থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। বন্দর ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে বন্দর ব্যবহারসহ নানা কাজে কোথাও স্বার্থ সংরক্ষণ, কোথাও স্বার্থহানি ঘটার অনেক কিছুই অতীতে দেখা গেছে। এ কারণে কোনো দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হলে তা নিরসন করা অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ মুখোমুখি অবস্থান নেওয়া উভয় পক্ষই থাকে সরকারদলীয়। সংকটের আশঙ্কা সেখানেই।
কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সাবেক সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী বন্দর রক্ষা পরিষদ গঠন করে একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁর সঙ্গে আছেন ডক বন্দর শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশন ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্মচারী পরিষদ বা সিবিএ নেতারা। সাবেক সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে নবগঠিত বন্দর রক্ষা পরিষদের ব্যানারে প্রথম সংবাদ সম্মেলনে এনসিটিতে একটি বিশেষ প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে বন্দরের একটি মাফিয়াচক্র হরিলুটে নেমেছে বলে অভিযোগ করেন। তবে শুরুটা এখানে নয়। ঈদের পর থেকেই মহিউদ্দিন চৌধুরী বন্দর নিয়ে আন্দোলনের হুমকি দিয়ে আসছেন।
গত ৩০ আগস্ট ছিল টার্মিনালের দরপত্র জমা দেওয়ার শেষদিন। মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে এই দরপত্র-প্রক্রিয়াকে বিতর্কিত ও বেআইনি উল্লেখ করে এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী তা স্থগিত করার দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেই দাবি না মেনে বন্দর কর্তৃপক্ষ ৩০ আগস্ট মোট পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দরপত্র জমা নেয়। এর প্রতিবাদে সকালে বন্দর ভবনের সামনে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে বিকেলে আবারও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে শ্রমিকদের নিয়ে মানববন্ধন করেন সাবেক মেয়র।
চট্টগ্রামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পতেঙ্গা আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য এম এ লতিফ এ আন্দোলনের বিরোধিতা করেছেন। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সামশুল হক চৌধুরী, বন্দর ব্যবহারকারীদের সংগঠন পোর্ট ইউজার্স ফোরাম ও চট্টগ্রাম চেম্বার এম এ লতিফের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বলে প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। খবরে আরো বলা হয়েছে, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সংগঠনের অনেকেই মহিউদ্দিন চৌধুরীর আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণসহ এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
চট্টগ্রাম বন্দরকে তার মতো করে চলতে দেওয়া উচিত। বন্দর নিয়ে কোনো রাজনীতি করতে দেওয়া যাবে না। বন্দরের স্বার্থ রাষ্ট্র ও বন্দর কর্তৃপক্ষকেই রক্ষা করতে হবে। আন্দোলন তো হতেই পারে। কিন্তু বন্দরের স্বাভাবিক কাজকর্ম যাতে ব্যাহত না হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.