গৃহবন্দী মানুষ, অচল ঢাকা by রাজীব নূর
বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার দিনভর গণসংযোগ কর্মসূচির কারণে গতকাল বুধবার রাজধানীবাসী ঘর ছেড়ে খুব একটা বের হয়নি। এতে যে ব্যাপক জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল, তা না হলেও প্রায় অচল হয়ে পড়েছিল ঢাকা।
স্বাভাবিক কর্মদিবসগুলোতেই যানজটে নাকাল হতে হয় রাজধানীবাসীকে। তার ওপর রাজপথে রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি থাকলে ভোগান্তি হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। এর আগে গত শনিবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের গণমিছিল এবং পরদিন রোববার বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের গণবিক্ষোভ কর্মসূচির কারণেও এ রকম পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছে নগরবাসীকে।গতকাল সকালে ছিল ভিন্ন চিত্র, সকাল থেকে গণপরিবহন চলাচল করলেও ব্যক্তিগত গাড়ি খুব একটা বের হয়নি। আতঙ্কের কারণে রাস্তায় অন্য সব দিনের তুলনায় লোকজনের চলাচল ছিল অনেক কম। লোকজন ঘর ছেড়ে বের না হওয়ার কারণে যে ভয়াবহ দুর্ভোগের আশঙ্কা করা হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। তবে সন্ধ্যায় অবরুদ্ধ নগরবাসী ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলে যানজটের পুরোনো চেহারা ফিরে আসে।
আগের ঘোষণা অনুযায়ী, সকাল ১০টায় গাবতলী বাসস্ট্যান্ডের উল্টো দিকের এস এ খালেক মাঠে খালেদা জিয়ার বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল। সকাল আটটা পর্যন্ত গাবতলীর রাস্তায় তেমন একটা সমস্যা ছিল না বলে জানালেন সাভারের মহিম মিজান। একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী মহিম প্রতিদিনই সাভার থেকে ঢাকায় এসে অফিস করেন। তিনি জানান, অন্য যেকোনো দিনের তুলনায় কম সময়ে ঢাকায় পৌঁছাতে পেরেছেন তিনি। অবশ্য তিনি গাবতলী পেরিয়ে আসার সময়ই প্রচুর লোকসমাগম দেখে আসেন বলে জানান।
সকাল নয়টা থেকে ১৮ দলের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে ওই মাঠে আসতে শুরু করলে ওখানকার প্রধান সড়কে প্রচণ্ড যানজটের সৃষ্টি হয়। এ কারণে ঢাকার বাইরে থেকে আসা গাড়িগুলো গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে ঢুকতে পারছিল না। আমিনবাজার সেতু থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সৃষ্ট যানজটের কারণে ঢাকার বাইরে যাওয়ার জন্য ছেড়ে আসা যানবাহনগুলোও আটকা পড়ে যায়।
যানজটে আটকে পড়া অটোরিকশাচালক একরামুদ্দীনের সঙ্গে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আমিনবাজার এলাকায় কথা হয়। তিনি জানান, ঘণ্টা খানেক ধরে একই জায়গায় আটকে আছেন।
শুরুতে ১৮ দলীয় নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা এস এ খালেক মাঠে জড়ো হলেও একপর্যায়ে স্থানসংকুলান হচ্ছিল না বলে গাবতলী বাসস্ট্যান্ড ছাড়িয়ে টেকনিক্যাল ও বাংলা কলেজ এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েন তাঁরা। বেলা সোয়া ১১টার দিকে গাবতলীর ওই মাঠে বক্তৃতা করেন বেগম জিয়া। তিনি গাবতলী থেকে কারওয়ান বাজারে যাওয়ার পথে আশপাশের এলাকায় ব্যাপক যানজট তৈরি হয়।
দুপুর সাড়ে ১২টায় বিএনপির নেত্রী কারওয়ান বাজারে পৌঁছার আগে থেকেই ফার্মগেট-কারওয়ান বাজারে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। বেলা দেড়টার দিকে খালেদা জিয়া সভা শেষ করে চলে যাওয়ার পর এ এলাকায় আবার যান চলাচল শুরু হয়। এই দেড় ঘণ্টায় ফার্মগেট থেকে শাহবাগ পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটে পড়ে মানুষ।
কারওয়ান বাজার এলাকায় দায়িত্বরত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) রহিদুল ইসলাম বলেন, পথসভা যাতে বাধাবিঘ্নহীন হয়, সে জন্য গাড়িবহর যাওয়ার পথ খোলা রাখা হয়েছে। রাস্তায় গাড়ি কম থাকায় যানজটের আশঙ্কা কম ছিল।
কারওয়ান বাজারের সবজিবিক্রেতা কামাল হোসেনও যানজট কম থাকার কথা জানালেন। তিনি সকাল সোয়া ১০টায় মিরপুর ১০ নম্বর থেকে বিআরটিসির বাসে করে মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে কারওয়ান বাজারে পৌঁছে যান।
সকালের যানজটহীন রাজধানীর চিত্রটা বিকেলে অবিকল থাকেনি। পড়ন্ত বিকেলে ফেরার পথেই পড়তে হয় ভোগান্তিতে। সন্ধ্যায় যানজট ছড়িয়ে যায় রাজধানীর সবখানে।
a
No comments