মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার-বাচ্চু রাজাকার : রায় যেকোনো দিন
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে পলাতক আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার রায় যেকোনো দিন ঘোষণা করা হতে পারে। বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গতকাল বুধবার এ আদেশ দেন।
গতকাল দুপুরে প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী আইনগত জবাব দিয়ে বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সাজা কামনা করে রায়ের তারিখ চান। পরে রায় অপেক্ষমাণ (সিএভি) রেখে আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় গত সোমবার রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়। শুধু রাষ্ট্রপক্ষের আইনগত জবাব বাকি ছিল। মানবতাবিরোধী অপরাধে এ পর্যন্ত দুজনের বিরুদ্ধে মামলায় রায় দেওয়া ছাড়া অন্য সব বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। এর আগে ৬ ডিসেম্বর ১ নম্বর ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। সাঈদীর মামলার রায়ও যেকোনো দিন ঘোষণা করবে ট্রাইব্যুনাল।
বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে মামলায় আইনগত জবাব দিতে গিয়ে প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, এই আইনে পাকিস্তানি ১৯৫ জনের বিচার করারও সুযোগ রয়েছে। পাকিস্তানিরা বিচার করবে বলে তাদের নিয়ে গেছে।
সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, 'পৃথিবীর অনেক দেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার করা হয়েছে। সেসব জায়গায় যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন তাদের নামই প্রকাশ করা হয়নি। এঙ্ ওয়াই জেড বলা হয়েছে। কিন্তু এখানে সাক্ষীদের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। যারা এ ধরনের মামলায় সাক্ষ্য দিতে আসেন তাঁদের নিরাপত্তার অভাব থাকে। ২০০১ সালে একজন সাংবাদিক বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে রিপোর্ট লিখেছিলেন। তিনি তখন জানতেন না যে এই ট্রাইব্যুনাল হবে, বিচার হবে। তিনি নিজের তাগিদে, পরবর্তী প্রজন্মকে জানানোর জন্য এই রিপোর্ট করেছিলেন। সে কারণে তাঁর পা ভেঙে দেওয়া হয়েছিল।'
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান প্রসিকিউটরের কাছে জানতে চান, '১৯৯৬ সালে উদ্যোগ নিলেন না কেন?' জবাবে সৈয়দ হায়দার বলেন, 'অনেক দিন পর আমরা ক্ষমতায় এসেছিলাম, আরো অনেক কাজ প্রাইওরিটির ভিত্তিতে করতে হয়েছে। যার কারণে এ ইস্যুতে হাত দেওয়া হয়নি।' এরপর সৈয়দ হায়দার রায়ের তারিখ চাইলে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, 'সবাইকে জাজমেন্টের সার্টিফাইড কপি দিতে হবে। জাজমেন্ট সিএডি করছি।' এক পর্যায়ে সৈয়দ হায়দার আলী আবারও রায়ের তারিখ প্রার্থনা করলে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, 'রায় দেওয়ার দু-একদিন আগে ডেট বলে দেব।'
গত ৪ নভেম্বর বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে আটটি সুনির্দিষ্ট ঘটনায় অভিযোগ গঠন করা হয়। এর আগে ৭ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল আবুল কালাম আযাদের অনুপস্থিতিতে বিচার শুরুর আদেশ দেন। ওই সময় তাঁর পক্ষে আইনি লড়াই করতে সরকারের খরচে মো. আবদুস শুকুর খানকে আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়। গত ৯ সেপ্টেম্বর বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে গত ২৬ জুলাই তদন্ত সংস্থা বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে জমা দেয়। এর আগে গত ৩ এপ্রিল বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে চলতি বছরের ২২ মার্চ গঠিত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। আবুল কালাম আযাদের মামলাটি দিয়েই শুরু হয় ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম।
মুজাহিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য : গতকাল ২ নম্বর ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ১১তম সাক্ষী ফরিদপুরের চর হরিরামপুর গ্রামের ফায়েজ উদ্দিন আহমেদ (৮০) সাক্ষ্য দেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ডিসপেনসারিতে কম্পাউন্ডার হিসেবে কাজ করতেন। ২১ এপ্রিল ফরিদপুর শহরে পাক সেনারা আসে। তাঁর বাড়ির দক্ষিণ দিকে ভাঙ্গিডাঙ্গি, বৈদ্যডাঙ্গি, বালাডাঙ্গি, সরকারডাঙ্গি, মাঝিডাঙ্গি, বাঁশতলা প্রভৃতি গ্রাম ছিল। এগুলো ছিল হিন্দু জনপদ। সাক্ষী বলেন, 'গ্রামগুলো জ্বালিয়ে জ্বালিয়ে আসছিল ওরা। ওরা হলো বিহারি, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, হাম্মাদ মাওলানা ও আরো কিছু শান্তি কমিটির লোক। গ্রামগুলোতে ১৫-২০ জন লোককে হত্যা করা হয়। হিন্দু লোকেরা পদ্মা পার হয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় পাক বাহিনীর গুলিতে অনেকেই নিহত হয়। মৃত লোকদের মধ্যে চান বৈদ্য, প্রফুল্ল কুমার বিশ্বাসসহ বেশ কিছু মানুষের লাশ আমার তত্ত্বাবধানে মাটিচাপা দেওয়া হয়।'
একই ট্রাইব্যুনালে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মামলায় যুক্তিতর্ক চলছে। গতকাল প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী যুক্তি উপস্থাপন করেন।
বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে মামলায় আইনগত জবাব দিতে গিয়ে প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, এই আইনে পাকিস্তানি ১৯৫ জনের বিচার করারও সুযোগ রয়েছে। পাকিস্তানিরা বিচার করবে বলে তাদের নিয়ে গেছে।
সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, 'পৃথিবীর অনেক দেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার করা হয়েছে। সেসব জায়গায় যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন তাদের নামই প্রকাশ করা হয়নি। এঙ্ ওয়াই জেড বলা হয়েছে। কিন্তু এখানে সাক্ষীদের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। যারা এ ধরনের মামলায় সাক্ষ্য দিতে আসেন তাঁদের নিরাপত্তার অভাব থাকে। ২০০১ সালে একজন সাংবাদিক বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে রিপোর্ট লিখেছিলেন। তিনি তখন জানতেন না যে এই ট্রাইব্যুনাল হবে, বিচার হবে। তিনি নিজের তাগিদে, পরবর্তী প্রজন্মকে জানানোর জন্য এই রিপোর্ট করেছিলেন। সে কারণে তাঁর পা ভেঙে দেওয়া হয়েছিল।'
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান প্রসিকিউটরের কাছে জানতে চান, '১৯৯৬ সালে উদ্যোগ নিলেন না কেন?' জবাবে সৈয়দ হায়দার বলেন, 'অনেক দিন পর আমরা ক্ষমতায় এসেছিলাম, আরো অনেক কাজ প্রাইওরিটির ভিত্তিতে করতে হয়েছে। যার কারণে এ ইস্যুতে হাত দেওয়া হয়নি।' এরপর সৈয়দ হায়দার রায়ের তারিখ চাইলে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, 'সবাইকে জাজমেন্টের সার্টিফাইড কপি দিতে হবে। জাজমেন্ট সিএডি করছি।' এক পর্যায়ে সৈয়দ হায়দার আলী আবারও রায়ের তারিখ প্রার্থনা করলে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, 'রায় দেওয়ার দু-একদিন আগে ডেট বলে দেব।'
গত ৪ নভেম্বর বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে আটটি সুনির্দিষ্ট ঘটনায় অভিযোগ গঠন করা হয়। এর আগে ৭ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল আবুল কালাম আযাদের অনুপস্থিতিতে বিচার শুরুর আদেশ দেন। ওই সময় তাঁর পক্ষে আইনি লড়াই করতে সরকারের খরচে মো. আবদুস শুকুর খানকে আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়। গত ৯ সেপ্টেম্বর বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে গত ২৬ জুলাই তদন্ত সংস্থা বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে জমা দেয়। এর আগে গত ৩ এপ্রিল বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে চলতি বছরের ২২ মার্চ গঠিত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। আবুল কালাম আযাদের মামলাটি দিয়েই শুরু হয় ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম।
মুজাহিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য : গতকাল ২ নম্বর ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ১১তম সাক্ষী ফরিদপুরের চর হরিরামপুর গ্রামের ফায়েজ উদ্দিন আহমেদ (৮০) সাক্ষ্য দেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ডিসপেনসারিতে কম্পাউন্ডার হিসেবে কাজ করতেন। ২১ এপ্রিল ফরিদপুর শহরে পাক সেনারা আসে। তাঁর বাড়ির দক্ষিণ দিকে ভাঙ্গিডাঙ্গি, বৈদ্যডাঙ্গি, বালাডাঙ্গি, সরকারডাঙ্গি, মাঝিডাঙ্গি, বাঁশতলা প্রভৃতি গ্রাম ছিল। এগুলো ছিল হিন্দু জনপদ। সাক্ষী বলেন, 'গ্রামগুলো জ্বালিয়ে জ্বালিয়ে আসছিল ওরা। ওরা হলো বিহারি, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, হাম্মাদ মাওলানা ও আরো কিছু শান্তি কমিটির লোক। গ্রামগুলোতে ১৫-২০ জন লোককে হত্যা করা হয়। হিন্দু লোকেরা পদ্মা পার হয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় পাক বাহিনীর গুলিতে অনেকেই নিহত হয়। মৃত লোকদের মধ্যে চান বৈদ্য, প্রফুল্ল কুমার বিশ্বাসসহ বেশ কিছু মানুষের লাশ আমার তত্ত্বাবধানে মাটিচাপা দেওয়া হয়।'
একই ট্রাইব্যুনালে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মামলায় যুক্তিতর্ক চলছে। গতকাল প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী যুক্তি উপস্থাপন করেন।
No comments