রিজভীর চমক সৃষ্টির নাটক by শংকর কুমার দে
স্বেচ্ছায় অবরুদ্ধ! রাজনীতিতে দৃষ্টি আকর্ষণের সাজানো নাটক। সরকারবিরোধী রাজনীতির নতুন চমক। পুলিশ ইচ্ছা করলেই গ্রেফতার করতে পারে। গ্রেফতারের জন্য পুলিশী তৎপরতা নেই।
তারপরও গ্রেফতারের ভয়ে স্বেচ্ছায় অবরুদ্ধ আছেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। নয়া পল্টনের বিএনপি কার্যালয়ে স্বেচ্ছায় অবরুদ্ধ আছেন তিনি। তাও দুই সপ্তাহ অতিবাহিত। এই দুই সপ্তাহ ধরে বিএনপি কার্যালয়ে খাওয়া-দাওয়া, গল্পগুজব, কর্মীদের সঙ্গে ওঠাবসা, সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি, কথা বলা থেকে শুরু করে রাজনীতির সব কিছুই করছেন। বিনা বাধায় এতসব কর্মকা- করছেন পুলিশের নাকের ডগায়, প্রকাশ্যে।নয়া পল্টনের বিএনপির কার্যালয়ে ঘুরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পুলিশের সঙ্গে আলাপ করে দুই সপ্তাহের স্বেচ্ছায় অবরুদ্ধ সাজানো নাটকের কাহিনীর চিত্র পাওয়া গেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার নেতাকর্মীর পদচারণায় মুখরিত বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়। কেউ আসছেন। কেউ যাচ্ছেন। রাজনীতির আলাপ-আলোচনা করছেন তাঁরা। এই দলীয় কার্যালয় থেকে দেয়া হচ্ছে রাজনৈতিক কর্মসূচী। রাজনৈতিক কর্মসূচী পালিত হচ্ছে। বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীও দলীয় কার্যালয়ের ভেতরে এসব কর্মসূচীতে অংশ নিচ্ছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন নির্বিঘ্নে। পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের সামনেই ঘটছে এসব রাজনীতির ঘটনার চিত্র। কোন কিছুতেই বাধা নেই। তারপরও তিনি অবরুদ্ধ কেন?
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা সংস্থার এক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা বলেছেন, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীর সঙ্গে দেখা করে গেছেন তাঁর স্ত্রী আইভি। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, দলীয় নেতাকর্মীরা তাঁর কাছে আসছেন। প্রতিদিনই দলীয় নেতাকর্মী বেষ্টিত হয়ে রাজনীতির আসর বসিয়ে গল্পগুজব করে কাটাচ্ছেন তিনি। নামী-দামী হোটেলের সুস্বাদু খাবার পাচ্ছেন। পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের সামনেই ঘটছে এসব ঘটনা। তারপরও স্বেচ্ছায় অবরুদ্ধের সাজানো নাটক কেন? তিনি রাজনীতি করেন, মামলা আছে, মামলা থাকতেই পারে। ইতোপূর্বেও তিনি গ্রেফতার হয়েছেন। জামিনে মুক্ত হয়ে বের হয়ে এসে আবার রাজনীতির মঞ্চে যোগ দিয়েছেন। তিনি বাড়িতে অবরুদ্ধ না থেকে অবরুদ্ধ হওয়ার জন্য বেছে নিয়েছেন দলীয় কার্যালয়কে। দলীয় কার্যালয়কে বেছে নেয়ার ঘটনায় মনে হচ্ছে, দেশী-বিদেশী মহল বিশেষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য চমক সৃষ্টির এক নতুন প্রয়াস।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিক রিলেশনের উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীর বিরুদ্ধে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি পোড়ানোর মাত্র একটি মামলা আছে। গত ৯ ডিসেম্বর থেকে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে নয়া পল্টনের বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে স্বেচ্ছায় অবরুদ্ধ আছেন তিনি। পুলিশ ইচ্ছা করলেই তাঁকে দলীয় কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করতে পারে। গ্রেফতারের ব্যাপারে আইনগত কোন বাধা নেই। এমনকি স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময়ে বিএনপির চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকেও হোটেল পূর্বাণীর কক্ষের দরজা ভেঙ্গে গ্রেফতার করে আনা হয়েছে। বিএনপির অন্য নেতাদেরও বাড়ির ভেতর থেকে গ্রেফতার করে আনা হয়েছে। পক্ষান্তরে বিএনপি সরকারে থাকতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে আনা হয়েছে। যেহেতু আইনগত কোন বাধা নেই তাই বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীকেও ইচ্ছ করলেই পুলিশ দলীয় কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করে আনতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সঙ্গে আলাপ হলে তাঁরা জানান, আগে শুনেছি, দেখেছি গ্রেফতারের ভয়ে রাজনীতিকরা জামিনের জন্য উচ্চ আদালতের আইনজীবীর কক্ষে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু দলীয় কার্যালয়ের ভেতরে দিনের পর দিন স্বেচ্ছায় অবরুদ্ধ হওয়ার ঘটনা সম্ভবত এটাই প্রথম। এটাও সম্ভবত রাজনীতিতে সরকারবিরোধী আন্দোলন বেগবান করার অংশের প্রক্রিয়া হতে পারে। এই ধরনের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার সংগঠনসহ দেশী-বিদেশী মহলে সহানুভূতি আদায় ও ক্ষোভের বহির্প্রকাশ ঘটানোর সুযোগ এনে দিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
No comments