চারদিক- যুদ্ধ আবার শীতের সঙ্গে... by রাকিব কিশোর
পুরো দেশ এখন ডিপফ্রিজ। সেই ডিপফ্রিজে একটা আলো জ্বলার মতো করে সারা দিন টিমটিম করে জ্বলছে একচোখা সূর্যটা। লাল-সবুজের বাংলাদেশে সাদাটে হয়ে ধীরে ধীরে নেমে আসছে কুয়াশার ঘোলাটে চাদর, বাংলাদেশের মানচিত্রটা তিরতির করে কাঁপছে হিমেল বাতাসে, সেই বাতাসে প্রতিবারের মতো নীরবে কেঁদে যাচ্ছে নিরপরাধ, দরিদ্র, অসহায় মানুষ, একটু গরম পাওয়ার আশায়।
হু হু ঠান্ডা বাতাস ঢুকছে তাদের খড়ের চালের ছিদ্র দিয়ে। সেই বাতাসকে গরম করতে গিয়ে নিঃস্ব হতে হতে নিজেদের জীবনটাই দিয়ে দিচ্ছে অনেকে। বাতাসে কান পাতলে শোনা যায় তাদের হাড়ের ঠকঠক শব্দ, একটু কাছে গেলেই দেখা যায় তাদের চোখে মিনিট খানেক আগেই শুকিয়ে যাওয়া অশ্রুর দাগ—শীত তাদের ঘরে আঘাত হেনেছে, ঠান্ডা তাদের জীবিকায় কামড় বসিয়েছে, শৈত্যপ্রবাহ তাদের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে। প্রতিবছরই এসব অসহায় মানুষ জানে আবার আসবে সে, আবার যুদ্ধ করতে হবে সেই চিরচেনা প্রাচীন শত্রু ‘শীতের’ সঙ্গে। তবে উত্তরাঞ্চলের সেই শীতার্ত মানুষের একাংশের একটা ভরসার জায়গা হলো উজ্জীবিত তরুণের একটি দল।
গত তিন বছরের মতো এবারও সেই উজ্জীবিত দলের ফেসবুক গ্রুপ ‘আমরা খাঁটি গরীব...’ ফেসবুকের সব বন্ধুর কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে শীতবস্ত্র দিতে যাচ্ছে। ২০১০, ২০১১, ২০১২ সালে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও পঞ্চগড়ের পর এবার ৪ জানুয়ারিতে তারা যাচ্ছে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের আটটি গ্রামে। প্রচণ্ড শীতের মধ্যে কাঁপতে কাঁপতে এই গ্রুপেরই কয়েকজন সদস্য কিছুদিন আগে সেই গ্রামগুলোতে প্রায় এক হাজার টোকেন দিয়ে এসেছে। ফেসবুকের হোম পেজে একের পর এক স্ট্যাটাস ভেসে আসছে ভূমিকম্পে কাঁপা দুনিয়া নিয়ে, দুনিয়া ভেঙে পড়বে কি না সেটার জল্পনা-কল্পনা নিয়ে, রাজনীতির গলি-ঘুপচি নিয়ে, কে কোন খেলায় কাকে হারাল, তা নিয়ে। কারও ফেসবুকে বিয়ের অ্যালবামের ছবি তো কারও জন্মদিনের পার্টির ভিডিও। সবাই ব্যস্ত নিজেদের নিয়ে। এদের মধ্যে ব্যতিক্রম শুধু ওই একদল তরুণ, তাদের ভাবনা নিজেদের নিয়ে নয়, তাদের প্রোফাইল পিকচার, কভার ফটো—সব একই। তাদের স্ট্যাটাসে একটাই আলোচনা, তারা অন্যের জন্য কাজ করছে, অসহায় কিছু মানুষকে শীতের হাত থেকে বাঁচাতে আয়োজন করছে একটা যুদ্ধের, শীতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ...।
‘আমরা খাঁটি গরীব...’ গ্রুপের বর্তমান সদস্যসংখ্যা নয় হাজারের বেশি। যখনই ঘোষণা দেওয়া হলো এবার আবার শীতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে, তখন এগিয়ে এল অনেকেই। কেউ নিজের রিকশাভাড়া, কেউ এক দিনের মুঠোফোন বিলের টাকা, আবার কেউ বা তার বিকেলের ডালপুরি খাওয়ার টাকা বাঁচিয়ে জমা করে দেয় ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। তাদের সাহায্যের আবেদন ফেসবুকের মাধ্যমে পৌঁছে যায় সবার কাছে। তিল তিল করে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্থ সাহায্য আসতে থাকে। কিন্তু মাত্র কয়েক দিন আগেই রংপুর-ফেরত ওই কয়েকজন সদস্য জানে, তীব্র শীতের তুলনায় এই সাহায্য আসলেই অপ্রতুল, দরকার আরও অনেক বেশি, আরও অনেক মায়াবী মানুষের সাহায্যের হাত। তাই এবার ‘গরীব গ্রুপের’ সদস্যরা আরও অনেক বেশি পরিশ্রম করছে, বিজয় দিবসের দিনে তাদের একটা দল রংতুলি হাতে নেমে পড়েছিল রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে, সারা দিন বিজয়োল্লাসে মাতোয়ারা মানুষের মুখে লাল-সবুজের পতাকা এঁকে তারা জোগাড় করেছে শীতবস্ত্রের টাকা। উত্তরা, ফার্মগেট এলাকায় তাদের সদস্যরা শীতবস্ত্র সংগ্রহের জন্য রাস্তায় রাস্তায় দেখিয়েছে ম্যাজিক, সেটারই সূত্র ধরে ২৮ ডিসেম্বর ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবরে ‘আমরা খাঁটি গরীব...’ গ্রুপ আয়োজন করেছে এক মিলনমেলার, সেখানে সবাই যার যার সাহায্য নিয়ে আসবে, সেটা নগদ টাকা থেকে শুরু করে চাদর, সোয়েটার, কম্বল—যেকোনোটাই হতে পারে। কোনোটাই ফেলনা নয়।
ওই দিন তাদের এই শীতবস্ত্র কালেকশনে পাশে থাকবেন দেশের প্রথম সারির কিছু কার্টুনিস্ট, তাঁরা সেখানে আসা মানুষের ক্যারিকেচার করবেন, বিনিময়ে যে টাকা পাবেন, তার পুরোটাই চলে যাবে গরীব গ্রুপের শীতবস্ত্র তহবিলে। এগিয়ে এসেছেন জনপ্রিয় ছড়াকার ও উপস্থাপক অনিক খানও। তিনি তাঁর এসএমএস কাব্য প্রদর্শনীর সব এসএমএস কাব্য দিয়ে দিয়েছেন এই শীতবস্ত্র সংগ্রহের কাজে, প্রতিটি এসএমএস কাব্য বিক্রি থেকে সংগৃহীত অর্থ চলে যাবে উষ্ণ কাপড় কেনার কাজে।
২৮ ডিসেম্বরে এগিয়ে আসতে পারেন আপনিও, আপনাদের যাঁর যা সামর্থ্য আছে তা-ই নিয়ে চলে আসুন ধানমন্ডিতে, সেগুলো দিয়ে কিছুটা হলেও সাহায্য করতে পারেন প্রচণ্ড শীতের হাত থেকে মানুষকে বাঁচানোর জন্য।
‘আমরা খাঁটি গরীব...’ গ্রুপটি প্রতিবছর শীতবস্ত্র দেওয়া ছাড়াও তিন বছর ধরে দেশের চারটি বিভাগে পথশিশুদের জন্য আম উৎসব করে আসছে, অল্প কয়েকজন তরুণের উদ্যোগে গঠিত এই ফেসবুক গ্রুপ আজ অনেক দরিদ্রের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। তাদের বিশ্বাস, একদিন সারা দেশের সব তরুণ এক হয়ে এই দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।
যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। অংশ নিতে পারেন আপনিও। আপনার যেকোনো পরিমাণ আর্থিক সাহায্য পাঠাতে পারেন গ্রুপের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। অ্যাকাউন্ট নাম: রোহিত হাসান কিছলু, অ্যাকাউন্ট নম্বর: ১১০.১০১.৯৭৭৮৩, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড।
আর্থিক সাহায্য পাঠানোর শেষ তারিখ ২ জানুয়ারি, ২০১৩
অথবা বাংলাদেশের যেকোনো এলাকা থেকে শীতবস্ত্র পাঠাতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন রাকিব কিশোরের সঙ্গে ০১১৯০১৩৭২৮৩ এই নম্বরে।
গ্রুপটির ফেসবুক লিঙ্ক:
রাকিব কিশোর
গত তিন বছরের মতো এবারও সেই উজ্জীবিত দলের ফেসবুক গ্রুপ ‘আমরা খাঁটি গরীব...’ ফেসবুকের সব বন্ধুর কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে শীতবস্ত্র দিতে যাচ্ছে। ২০১০, ২০১১, ২০১২ সালে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও পঞ্চগড়ের পর এবার ৪ জানুয়ারিতে তারা যাচ্ছে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের আটটি গ্রামে। প্রচণ্ড শীতের মধ্যে কাঁপতে কাঁপতে এই গ্রুপেরই কয়েকজন সদস্য কিছুদিন আগে সেই গ্রামগুলোতে প্রায় এক হাজার টোকেন দিয়ে এসেছে। ফেসবুকের হোম পেজে একের পর এক স্ট্যাটাস ভেসে আসছে ভূমিকম্পে কাঁপা দুনিয়া নিয়ে, দুনিয়া ভেঙে পড়বে কি না সেটার জল্পনা-কল্পনা নিয়ে, রাজনীতির গলি-ঘুপচি নিয়ে, কে কোন খেলায় কাকে হারাল, তা নিয়ে। কারও ফেসবুকে বিয়ের অ্যালবামের ছবি তো কারও জন্মদিনের পার্টির ভিডিও। সবাই ব্যস্ত নিজেদের নিয়ে। এদের মধ্যে ব্যতিক্রম শুধু ওই একদল তরুণ, তাদের ভাবনা নিজেদের নিয়ে নয়, তাদের প্রোফাইল পিকচার, কভার ফটো—সব একই। তাদের স্ট্যাটাসে একটাই আলোচনা, তারা অন্যের জন্য কাজ করছে, অসহায় কিছু মানুষকে শীতের হাত থেকে বাঁচাতে আয়োজন করছে একটা যুদ্ধের, শীতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ...।
‘আমরা খাঁটি গরীব...’ গ্রুপের বর্তমান সদস্যসংখ্যা নয় হাজারের বেশি। যখনই ঘোষণা দেওয়া হলো এবার আবার শীতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে, তখন এগিয়ে এল অনেকেই। কেউ নিজের রিকশাভাড়া, কেউ এক দিনের মুঠোফোন বিলের টাকা, আবার কেউ বা তার বিকেলের ডালপুরি খাওয়ার টাকা বাঁচিয়ে জমা করে দেয় ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। তাদের সাহায্যের আবেদন ফেসবুকের মাধ্যমে পৌঁছে যায় সবার কাছে। তিল তিল করে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্থ সাহায্য আসতে থাকে। কিন্তু মাত্র কয়েক দিন আগেই রংপুর-ফেরত ওই কয়েকজন সদস্য জানে, তীব্র শীতের তুলনায় এই সাহায্য আসলেই অপ্রতুল, দরকার আরও অনেক বেশি, আরও অনেক মায়াবী মানুষের সাহায্যের হাত। তাই এবার ‘গরীব গ্রুপের’ সদস্যরা আরও অনেক বেশি পরিশ্রম করছে, বিজয় দিবসের দিনে তাদের একটা দল রংতুলি হাতে নেমে পড়েছিল রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে, সারা দিন বিজয়োল্লাসে মাতোয়ারা মানুষের মুখে লাল-সবুজের পতাকা এঁকে তারা জোগাড় করেছে শীতবস্ত্রের টাকা। উত্তরা, ফার্মগেট এলাকায় তাদের সদস্যরা শীতবস্ত্র সংগ্রহের জন্য রাস্তায় রাস্তায় দেখিয়েছে ম্যাজিক, সেটারই সূত্র ধরে ২৮ ডিসেম্বর ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবরে ‘আমরা খাঁটি গরীব...’ গ্রুপ আয়োজন করেছে এক মিলনমেলার, সেখানে সবাই যার যার সাহায্য নিয়ে আসবে, সেটা নগদ টাকা থেকে শুরু করে চাদর, সোয়েটার, কম্বল—যেকোনোটাই হতে পারে। কোনোটাই ফেলনা নয়।
ওই দিন তাদের এই শীতবস্ত্র কালেকশনে পাশে থাকবেন দেশের প্রথম সারির কিছু কার্টুনিস্ট, তাঁরা সেখানে আসা মানুষের ক্যারিকেচার করবেন, বিনিময়ে যে টাকা পাবেন, তার পুরোটাই চলে যাবে গরীব গ্রুপের শীতবস্ত্র তহবিলে। এগিয়ে এসেছেন জনপ্রিয় ছড়াকার ও উপস্থাপক অনিক খানও। তিনি তাঁর এসএমএস কাব্য প্রদর্শনীর সব এসএমএস কাব্য দিয়ে দিয়েছেন এই শীতবস্ত্র সংগ্রহের কাজে, প্রতিটি এসএমএস কাব্য বিক্রি থেকে সংগৃহীত অর্থ চলে যাবে উষ্ণ কাপড় কেনার কাজে।
২৮ ডিসেম্বরে এগিয়ে আসতে পারেন আপনিও, আপনাদের যাঁর যা সামর্থ্য আছে তা-ই নিয়ে চলে আসুন ধানমন্ডিতে, সেগুলো দিয়ে কিছুটা হলেও সাহায্য করতে পারেন প্রচণ্ড শীতের হাত থেকে মানুষকে বাঁচানোর জন্য।
‘আমরা খাঁটি গরীব...’ গ্রুপটি প্রতিবছর শীতবস্ত্র দেওয়া ছাড়াও তিন বছর ধরে দেশের চারটি বিভাগে পথশিশুদের জন্য আম উৎসব করে আসছে, অল্প কয়েকজন তরুণের উদ্যোগে গঠিত এই ফেসবুক গ্রুপ আজ অনেক দরিদ্রের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। তাদের বিশ্বাস, একদিন সারা দেশের সব তরুণ এক হয়ে এই দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।
যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। অংশ নিতে পারেন আপনিও। আপনার যেকোনো পরিমাণ আর্থিক সাহায্য পাঠাতে পারেন গ্রুপের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। অ্যাকাউন্ট নাম: রোহিত হাসান কিছলু, অ্যাকাউন্ট নম্বর: ১১০.১০১.৯৭৭৮৩, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড।
আর্থিক সাহায্য পাঠানোর শেষ তারিখ ২ জানুয়ারি, ২০১৩
অথবা বাংলাদেশের যেকোনো এলাকা থেকে শীতবস্ত্র পাঠাতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন রাকিব কিশোরের সঙ্গে ০১১৯০১৩৭২৮৩ এই নম্বরে।
গ্রুপটির ফেসবুক লিঙ্ক:
রাকিব কিশোর
No comments