পাল্টে যাচ্ছে বিজ্ঞান-বিশ্ব by হারুন-অর-রশীদ


স্নায়ুবিজ্ঞানী দম্পতি ইউয়াহ নাং জান ও লিলি জান ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ায় গবেষণাগার চালিয়ে আসছেন তিন দশক ধরে। বিজ্ঞান-বিশ্বের পরিবর্তন মূল্যায়নে সময়টা যথেষ্ট।
জান দম্পতি ১৯৮০ সালের দিকে প্রথমবারের মতো কর্মী নিয়োগে দেশীয় বিজ্ঞানীদের প্রাধান্য দেন। তখন ১১ জন কর্মীর মধ্যে নয়জন ছিলেন আমেরিকান। বর্তমানে গবেষণাগারটিতে বিজ্ঞানীদের মধ্যে ১৬ জন চীনা, ১২ জন আমেরিকান ও দুজন কোরিয়ান। এ ছাড়া কানাডা, ভারত, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, তুরস্ক ও জার্মানির একজন করে বিজ্ঞানী রয়েছেন।
এটি একটি খণ্ডচিত্র হলেও তা প্রতিনিধিত্ব করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়াসহ পুরো বিশ্বকে। এ বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণ ও বিশ্বব্যাপী দুই হাজার ৩০০ জন পাঠকের ওপর জরিপ চালিয়েছে বিজ্ঞান সাময়িকী নেচার। এতে বিজ্ঞানীদের দেশান্তর, নেপথ্য কারণ এবং পরিবর্তনের প্রক্রিয়া কেমন, তা শনাক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে বিজ্ঞান-বিশ্ব। কেউ এ পরিবর্তনকে দেখছেন মেধা পাচার বা মেধা অর্জন হিসেবে, আবার কেউ বলছেন মেধার বিস্তার।
উন্নত দেশে বিদেশি বিজ্ঞানী: গ্লোবাল সায়েন্সের জরিপমতে, সুইজারল্যান্ডে মোট বিজ্ঞানীর মধ্যে ৫৭ শতাংশই বিদেশি; যার মধ্যে ৩৭ শতাংশই জার্মান। কানাডায় ৪৭ শতাংশ বিদেশি বিজ্ঞানীর মধ্যে ব্রিটিশ, মার্কিন ও চীনা যথাক্রমে ১৪, ১৪ ও ১১ শতাংশ। অস্ট্রেলিয়ায় ৪৫ শতাংশ বিদেশি বিজ্ঞানীর মধ্যে ব্রিটিশ ২১ ও চীনা ১৩ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে ৩৮ শতাংশ বিদেশি বিজ্ঞানীর মধ্যে চীনা ১৭ ও ভারতীয় ১২ শতাংশ। সুইডেনের ৩৮ শতাংশ বিজ্ঞানী বিদেশি; যার মধ্যে জার্মান ১২ ও রুশ ১০ শতাংশ। যুক্তরাজ্যের ৩৩ শতাংশ বিজ্ঞানী বিদেশি; যার মধ্যে জার্মানির ১৫ ও ইতালির ১০ শতাংশ। ভারতের মতো দেশে এই হার মাত্র ১ শতাংশ। অন্য দেশগুলোর হার উল্লেখ করার মতোও নয়। মূলত এসব দেশের বিজ্ঞানীরা ক্রমবর্ধমানভাবে উন্নত দেশগুলোতে স্থানান্তরিত হচ্ছেন।
চীনাদের আধিক্য: যুক্তরাষ্ট্রে বিজ্ঞানে উচ্চতর গবেষণায় নিয়োজিত শিক্ষার্থীদের বিরাট একটা অংশ চীন থেকে আসা। ২০০৯ সালের সমীক্ষামতে, চীনা বিজ্ঞানীদের ৮৯ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন। এর বড় কারণ হতে পারে উচ্চ বেতন-ভাতা।
বিদেশে কর্মক্ষেত্র: নেচার-এর জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের কাছে বিদেশে কর্মক্ষেত্র নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে কোন বিষয়ের কতটা গুরুত্ব, তা জানতে চাওয়া হয়। উন্নত জীবনমানের বিষয়ে ৮৮ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেছেন এটা গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় অর্থায়নের বিষয়ে ৮৪ শতাংশ এবং উচ্চ বেতনের বিষয়ে ৭৭ শতাংশ গুরুত্বপূর্ণ বলেছেন। ভিনদেশি সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা লাভের প্রত্যাশার বিষয়ে ৫৬ শতাংশ বলেছেন গুরুত্বপূর্ণ।
এ ছাড়া অভিবাসনের ক্ষেত্রে কোন বিষয় প্রতিবন্ধকতা বা প্রতিবন্ধকতা নয়, তা-ও জানতে চাওয়া হয় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের কাছে। ভিন্ন ভাষায় কথা বলাকে প্রতিবন্ধকতা বলেছেন ৩৮ শতাংশ।

No comments

Powered by Blogger.