ই-টেন্ডারিং
ই-টেন্ডারিং হচ্ছে অনলাইনে টেন্ডার বা দরপত্রের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদন করা। এখানে টেন্ডার আহ্বান, ফরম পূরণ, মূল্যায়ন, অনুমোদন সবই সম্পন্ন হয় অনলাইনে।
সনাতন পদ্ধতিতে অর্থাৎ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে টেন্ডার আহ্বান, বাক্সে টেন্ডার দাখিল, তালিকাভুক্ত করা ও মূল্যায়ন, অনুমোদন ও কার্যাদেশ প্রদান প্রতিটি কাজই হয়ে থাকে প্রকাশ্যভাবে ও কাগজে-কলমে। এ কারণে টেন্ডার নিয়ে তুলকালাম কা- এমনকি খুন-খারাবির ঘটনাও ঘটেছে অনেক। রাস্তা-সেতু ইত্যাদিসহ বড় নির্মাণ কাজ, মালামাল সরবরাহ, ক্রয় প্রভৃতি হরেক রকম সরকারী কাজে টেন্ডার ব্যবস্থার প্রচলন রয়েছে দীর্ঘকাল ধরে। উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যথামূল্যে, যথার্থ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বা সরবরাহকারী স্বচ্ছতার সঙ্গে বাছাই করার লক্ষ্যেই এ ব্যবস্থা। কিন্তু টেন্ডারের সঙ্গে অর্থের সম্পৃক্ততা থাকায় সেখানে অসাধু ব্যক্তি বা সুবিধাবাদীদের এক ধরনের তৎপরতা অব্যাহত ছিল সবসময়। টেন্ডারে সিন্ডিকেট ব্যবস্থা, জোরজবরদস্তি, অযোগ্য কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দেয়ার নেপথ্যের কারসাজি এবং অবৈধপথে কাজ হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে টেন্ডার আহ্বানকারী কর্তৃপক্ষের দুর্নীতি ও অসাধুতা টেন্ডার ব্যবস্থার ইতিবাচক উদ্দেশ্যকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছিল।এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে কিছু মন্ত্রণালয়, দফতর, পরিদফতর ও সংস্থায় অনলাইন কার্যক্রম চালু হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংক, এনবিআর, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতে এ ব্যবস্থা চালু হওয়ায় সেবার মান যেমন বেড়েছে, তেমনি কাজকর্ম হয়েছে অধিকতর সহজসাধ্য, স্বচ্ছ ও আধুনিক মানের। বাংলাদেশের সামনে এখন রূপকল্প ২০২১। এর মূল উদ্দেশ্য হলো ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা অর্থাৎ কম্পিউটারভিত্তিক প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ও বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকা পর্যন্ত অনলাইন সুবিধা পৌঁছে দেয়া, যাতে মানুষ ঘরে বসেই কম্পিউটারের মাধ্যমে সকল তথ্য সম্পর্কে অবহিত হতে পারে; অনলাইনেই অংশগ্রহণ করতে পারে নানা কর্মকা-ে।
অনলাইন সুবিধাকে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে সাম্প্রতিক সরকারী উদ্যোগে যোগযোগ মন্ত্রণালয়ে ই-টেন্ডার ব্যবস্থা চালু হলো। সোমবার যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এই ব্যবস্থার উদ্বোধন করেন। সরকারের এ পদক্ষেপ টেন্ডার ব্যবস্থার সনাতন ধারায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত করবে বলে আশা করা যায়। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ব্রিজ-কালভার্ট, রাস্তাঘাট ইত্যাদি সেক্টরে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার কাজ হয়। এসব কাজের টেন্ডার নিয়ে দুর্নীতি, হানাহানিসহ অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়ানোÑ সর্বোপরি স্বচ্ছতার সঙ্গে যোগ্য প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই ই-টেন্ডারিং সরকারের ভাবমূর্তিকে যেমন উজ্জ্বল করবে; তেমনি দুর্নীতির নেপথ্য শক্তিগুলো আর প্রকাশ্যে টেন্ডারের অবৈধ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ, অন্য টেন্ডারদাতাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন, খুন, টেন্ডার-বাক্স ছিনতাই ইত্যাদি অপকর্ম করার সুযোগ পাবে না। এর ফলে নিরপেক্ষভাবে উপযুক্ত দরদাতা নির্বাচনও সহজসাধ্য এবং স্বচ্ছ হবে।
তবে এখনও কিছু কিছু সরকারী দফতরে অনলাইন ব্যবস্থা চালু না হওয়ায় তাদের কাজকর্ম তথা সেবার মান তেমন সন্তোষজনক নয়। এ ক্ষেত্রে বিদ্যুত বিভাগের কথা উল্লেখ করা যায়। বিদ্যুতের বিলিং এবং বিল পরিশোধের ব্যবস্থা এখনও সেকেলে। ফলে বিদ্যুত চুরি, মিটার টেম্পারিংসহ নানা অনৈতিকতার সহজ-সুযোগ রয়েছে এখানে। এ ক্ষেত্রটিসহ অন্য সকল ক্ষেত্রে অনলাইন ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন।
No comments