সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক- জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি
বাংলা সাহিত্যাকাশের এক জ্যোতির্ময় নক্ষত্রের নাম সৈয়দ শামসুল হক। অসংখ্য পাঠক-ভক্ত-অনুরাগীর ভালবাসায় সিক্ত যাঁর ৭৮ বছরের লেখক জীবন। সাহিত্যপ্রেমীরা এই লেখককে সম্মান করে তাঁর নামের আগে ‘সব্যসাচী’ খেতাবটি দিয়েছেন।
তিনি একাধারে কবি, গীতিকার, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, অনুবাদক, সংলাপ লেখক ও চিত্রনাট্য রচয়িতা। সকল পরিচয়ের ভিড়ে কবি হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন সৈয়দ হক।পঞ্চাশের দশকের ঠিক আগমুহূর্তে শুরু করে নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রায় ছয় দশক ধরে লিখে চলছেন তিনি। ফজলে লোহানী সম্পাদিত ‘অগত্যা’ পত্রিকায় ১৯৫১ সালে ‘উদয়াস্ত’ শিরোনামে একটি লেখা প্রকাশের মাধ্যমে সাহিত্যে তাঁর স্ফুরণ ঘটে। ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রামে জন্মগ্রহণ করা সৈয়দ হককে এই সুদীর্ঘ পথপরিক্রমায় বিন্দুমাত্রও ছুঁতে পারেনি ক্লান্তি কিংবা কোন আলস্য। বাংলা সাহিত্যে তিনি চিরাচরিত ধারার বাইরে নিজস্ব এক ভাষাশৈলী বিনির্মাণ করেছেন। সেই পঞ্চাশের দশকে আমাদের সাহিত্য ভা-ারকে যে ক’জন কবি সাহিত্যিক লেখা দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন তাঁদের মধ্যে সৈয়দ শামসুল হক অগ্রগণ্য বলে বিবেচিত। সাহিত্যকে সুকাঠিন্য না করে সহজ-সরল ভাষায় সৃষ্টি করে তিনি পাঠককে সাহিত্যামোদি করে তুলেছেন। বইমুখী করেছেন সাধারণ মানুষকে। সৈয়দ হকের লেখা শুধু কোন একটা শ্রেণী বা গোষ্ঠীর জন্য নয়। তাঁর লেখায় যেমন ফুটে উঠেছে মধ্যবিত্ত কিংবা উচ্চবিত্তের জীবনাচরণ তেমনি ফুটে উঠেছে নিম্নমধ্যবিত্তের জীবন বোধও। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা দুই শ’ ছাড়িয়ে গেছে। এ সবের মধ্যে রয়েছে কাব্যগ্রন্থ, গল্প, উপন্যাস, কাব্যনাট্য ও প্রবন্ধ।
আধুনিক কাব্যসাহিত্যের দিকপাল কবি সৈয়দ শামসুল হকের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একদা এক রাজ্যে’ বের হয় ১৯৬১ সালে। তারপর একে একে বের হতে থাকে ‘বিরতিহীন উৎসব’, ‘বৈশাখের পঙক্তিমালা’, ‘পরাণের গহীন ভিতর’, ‘অপর পুরুষ’, ‘প্রতিধ্বিনিপণ’, ‘অগ্নি ও জলের কবিতা,’ ‘রজ্জু পথে চলছি’, ‘নিজস্ব বিষয়’, ‘কাননে কাননে তোমারই সন্ধানে’, এবং ‘ধ্বংসস্তুপে কবি নগর’। তাঁর গল্পের মধ্যে রয়েছ ‘তাস’, ‘শীতের বিকেল’, ‘প্রাচীন বংশের নিঃস্ব সন্তান’,‘আরন্দের মৃত্যু’, ‘রক্তগোলাপ’ ইত্যাদি। উপন্যাস ‘সীমানা ছাড়িয়ে’, ‘অনুপম দিন’, ‘নীল দংশন’, ‘এক মহিলার ছবি’, ‘স্মৃতিমেধ’, ‘ত্রাহি’, ‘মৃগয়ায় কালক্ষেপ’, ‘নিষিদ্ধ লোবান’, ‘তুমি সেই তরবারী’, ‘খেলারাম খেলে যা’ ইত্যাদি। কাব্যনাট্য ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘এখানে এখন’, ‘নূরাল দিনের সারা জীবন’, ‘গণনায়ক’ ইত্যাদি। সৈয়দ হকের আরেক অমর সৃষ্টি শেক্সপিয়ারের বাংলায় অনুবাদ। গত দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে শেক্সপিয়ারের বিভিন্ন নাটক বহু রঙে ঢঙে অনূূদিত হয়েছে। অনেক নামজাদা লেখক অনুবাদ করেছেন শেক্সপিয়ারের নানা লেখা। কিন্তু সৈয়দ হক যে ভাষাশৈলীতে শেক্সপিয়ারের নাটক অনুবাদ করেছেন তার কোন তুলনা হয় না। সৈয়দ হক বাংলা সাহিত্যের জন্য এক আশীর্বাদ হয়ে এসেছেন। তিনি আমাদের সম্পদ।
সৈয়দ শামসুল হকের ৭৮তম জন্মদিনে আমাদের শুভেচ্ছা। তিান দীর্ঘায়ু হন, বেঁচে থাকুন আমাদের মাঝে দীর্ঘদিন।
ইজাজ আহমেদ মিলন
No comments