অভিমত ভিন্নমত

মেয়েদের যারা উত্ত্যক্ত করে ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোর খবরে দেখলাম, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা বা ইভ টিজিং বন্ধ করার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযানে নামছেন। রাস্তার ধারে বখাটে ছেলেদের উৎপাত থেকে মেয়েদের রক্ষার উদ্দেশ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে নামছেন।


নারীদের বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন থেকে রক্ষার জন্য যত ধরনের আইন করা হয়েছে, তা থেকে নারীরা কতটা সুফল পাচ্ছে—আজকাল নতুন করে এ বিষয়টি আলোচনায় আসতে শুরু করেছে।
ইভ টিজিং বিষয়টিকে সাধারণভাবে অপরাধের আওতায় কখনো ফেলা হয়নি। যদিও এটিকে ঘিরে অনেক বড় দুর্ঘটনার উদাহরণ রয়েছে। বরাবরই সমাজ এটিকে খুব স্বাভাবিক একটি ঘটনা হিসেবে দেখেছে। শুধু যখন কেউ কোনো কিশোর বয়সী মেয়ের মা-বাবা বা অভিভাবক হয়েছেন, তখনই তাঁরা কেবল এর মর্মবেদনা বুঝেছেন। প্রতিকার হিসেবে নির্যাতিত মেয়েটিকেই উল্টো কঠোর থেকে কঠোরতর শাসনে বেঁধে ফেলা হয়েছে। আজ পর্যন্ত কত মেয়ে স্কুল-কলেজে যাওয়ার পথে অশ্লীল বাক্য শুনে লজ্জায় মরমে মরে গিয়েছে, চোখের পানি ফেলেছে, কতজন মা-বাবা রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা বখাটে ছেলেদের ভয়ে মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়েছেন—এর কোনো পরিসংখ্যান নেই। ইভ টিজিংয়ের অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে—এমন মেয়ের সংখ্যাও কম নয়। এ অপরাধটি সবার চোখের সামনে ঘটে চলেছে। কিন্তু কোনো প্রতিকার নেই। শুধু ভুক্তভোগী পরিবারটি প্রতিবাদ করার চেষ্টা করে, কিন্তু তার পাশে এসে কেউ দাঁড়ায় না। বিচারের জায়গাটিতে অতি ‘ক্ষুদ্র’ এই অপরাধের আর্জি নিয়ে যাওয়াও যেন এক ধৃষ্টতা—যেখানে কি না খুন, ধর্ষণ বা এসিড মারার মতো বড় অপরাধেরই সুষ্ঠু বিচার হয় না।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাঠে নামাটা নিশ্চয়ই আশার সঞ্চার করে। অন্তত এত দিনে বিষয়টি কিছুটা হলেও গুরুত্ব পেয়েছে; তবে আশঙ্কাও রয়েছে। শুধু ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বা আইন করে দিলেই এর প্রতিকার করা যাবে বলে মনে হয় না। যারা মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে, সেই কিশোর-তরুণদের মধ্যেও এ বোধ জাগা দরকার যে এসব করা ঠিক নয়। তাদের বিবেক জাগিয়ে তুলতে হবে আমাদের।
রাস্তার মোড়ে, স্কুল-কলেজের গেটে, মেলা বা মার্কেটে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে ‘বখাটে ছেলে’ হিসেবে যে তরুণ, সে আসলে কে? কোথা থেকে এসেছে? সে আমাদেরই সন্তান বা ভাই। সে এসেছে আমাদেরই পরিবার থেকে। তাই পরিবারকেই নিতে হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। শিশু বয়স থেকেই তাদের মধ্যে তৈরি করে দিতে হবে সুস্থ মানসিকতা—জাগিয়ে দিতে হবে নারীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ। বুঝতে হবে, জীবনের এ সন্ধিক্ষণটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সতর্কতার সঙ্গে সঠিক ও সুস্থ পথ দেখিয়ে দিতে হবে।
স্কুলগুলোকেও যথাযথ দায়িত্ব নিতে হবে। লেখাপড়ার পাশাপাশি সমান গুরুত্ব দিয়ে তাদের মধ্যে নৈতিকবোধ এবং সহপাঠীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করে দিতে হবে। সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য তার যে দায়িত্ব বা ভূমিকা, তা তাকে বোঝাতে হবে। সামাজিক সংগঠনগুলোর দায়িত্বও কম নয়। তাদেরও ইভ টিজিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। শুধু রাষ্ট্র বা আইন-আদালতের ওপরই সবকিছু ছেড়ে দিলে চলবে না। আমাদের সচেতনতা, আন্তরিক যত্ন এবং প্রয়োজনীয় অনুশাসনই দিতে পারে একটি সুস্থ তরুণসমাজ। সুস্থ তরুণসমাজ দিতে পারে একটি সমৃদ্ধ দেশ, জাতি ও ভবিষ্যৎ। নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সুস্থ মূল্যবোধসম্পন্ন একটি সুন্দর সমাজ তৈরি হবে—এটাই এবারের আন্তর্জাতিক নারী দিবসে আমাদের প্রত্যাশা।
সাবরিনা শারমিন
উন্নয়নকর্মী, ঢাকা।

মন্ত্রী-সাংসদদের বেতন-ভাতা
রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রী-সাংসদের বেতন-ভাতা বাড়িয়ে প্রায় দ্বিগুণ করা হলো। বিরোধী দল এ নিয়ে কোনো আপত্তি তোলেনি। অন্য সব ব্যাপারে বিরোধী দল সরকারের বিরোধিতা করলেও সাংসদদের সুযোগ-সুবিধার প্রসঙ্গে তাঁরা সবাই সব সময়ই এককাট্টা।
বিরোধী দলগুলো মাসের পর মাস সংসদ অধিবেশনে যোগ না দিলেও সংসদ থেকে প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিতে মোটেও কার্পণ্য
করেন না।
সরকারি ও বিরোধী দলগুলোর প্রতি সবিনয় নিবেদন, নিজেদের অর্থকড়ি ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি জনগণের দুঃখ-দুর্দশার কথাও একটু ভাবুন। বেতন-ভাতা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনাদের দায়বদ্ধতাও অনেক বেড়ে গেল।
মো. রাইসুল ইসলাম, ঢাকা।

জাতীয় বৃক্ষ বট
৪ মার্চ প্রথম আলোয় ‘জাতীয় বৃক্ষ, পুষ্প উত্সব ও অন্যান্য’ শিরোনামে মোকারম হোসেনের লেখাটি ভালো লাগল। আমরা জাতীয় ফুল, জাতীয় ফল, জাতীয় মাছ ইত্যাদি জানি, কিন্তু জাতীয় বৃক্ষের কথা অনেকেরই জানা ছিল না। বন ও পরিবেশ অধিদপ্তর বটগাছকে জাতীয় বৃক্ষের মর্যাদা দিয়েছে জেনে আনন্দিত হলাম। তবে এ বিষয়ে প্রচার কম, এমনকি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকেও নেই আমাদের জাতীয় বৃক্ষ কী। আমরা আশা করব, ভবিষ্যতে এ তথ্যটি শিশুদের পাঠ্যবই, শিক্ষার্থীদের সাধারণ জ্ঞানের বিভিন্ন বইসহ প্রাসঙ্গিক নানা প্রকাশনায় বটবৃক্ষের জাতীয় বৃক্ষের পরিচয়টি উল্লেখ করা হবে।
বিকাশ রায়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

থানাহাজতে বন্দী শিশুরা
প্রথম আলোয় সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন থানা ও আদালতের হাজতে শিশুদের জন্য আলাদা ঘরের ব্যবস্থা নেই। এ কারণে অভিযুক্ত শিশুদের রাখা হয় নারীদের জন্য নির্ধারিত কক্ষে। ১৯৭৪ সালের শিশু আইনে এমন শিশুদের ব্যাপারে নির্দিষ্ট করণীয় উল্লেখ থাকলেও তা মানা হয় না। বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগজনক।
১৯৭৪ সালের শিশু আইনের ৪৮ ধারার বিধান অনুসারে, কোনো শিশুকে যদি জামিন-অযোগ্য কোনো অপরাধে গ্রেফতার করা হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে তাকে যদি কোনো আদালতের সামনে হাজির করার সুযোগ না থাকে, তাহলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিজেই উপযুক্ত মুচলেকায় তাকে জামিন দিতে পারবেন। এ জন্য তাকে আদালতে হাজির করারও প্রয়োজন নেই। তবে একান্তই যদি জামিন দেওয়া না হয়, তাহলে হাজতে বা থানায় না রেখে কোনো রিমান্ড হোম বা অন্য কোনো নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠাতে হবে। কোনো শিশু যদি এমন কোনো কাজ করে, যা কোনো সাবালক ব্যক্তি করলে মারাত্মক শাস্তিযোগ্য অপরাধ হতো—তাহলে সেই শিশুকে জেলখানায় নয়, বরং সংশোধনকেন্দ্রে পাঠানোই হলো আইনের বিধান। এমনকি কোনো সাধারণ ফৌজদারি আদালতেও শিশুটির বিচার করা যাবে না। তাদের বিচার হবে কিশোর আদালতে, যাতে তারা সংশোধিত হয়ে সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে পারে।
শিশু আইনের এ সব বিধান পালিত না হওয়ার কারণে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ এর আগে একাধিকবার সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। ২০০৭ সালের ৪ মার্চ হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ শিশুদের কারাগারে আটক রাখাকে অবৈধ ঘোষণা করেন। ২০০৬ সালের ৯ জুলাই হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চও শিশুদের কারাগারে আটক না রাখা এবং সাধারণ আইনে বিচার না করার জন্য সরকারকে নির্দেশ দেন।
আইনের স্পষ্ট বিধান এবং উচ্চ আদালতের এরূপ সিদ্ধান্ত থাকা সত্ত্বেও শিশু-কিশোরদের সাধারণ অপরাধীর মতো জেলখানায় বা থানাহাজতে আটক রাখা হচ্ছে এবং সাধারণ আইনে, সাধারণ আদালতে বিচার অব্যাহত আছে। এর ফলে শিশু-কিশোরদের সংশোধন করার যে ব্যবস্থা শিশু আইনের মাধ্যমে করা হয়েছে, তা যেমন ভীষণভাবে ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি ভুল আদালতে বিচার হওয়ার কারণে কোনো রকম সংশোধিত হওয়ার সুযোগ ছাড়াই কিশোর অপরাধীরা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে এ কারণে।
এ টি এম মোরশেদ আলম
আইনজীবী ও মানবাধিকার-কর্মী, ঢাকা।

বাঙালি-পাহাড়ি দূরালাপ
গত ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে এক বন্ধুর কাছে ক্ষমা চেয়েছি একজন বাঙালি হিসেবে। তাকে বলেছি, ‘সব বাঙালির পক্ষ থেকে আমি তোমার, তোমাদের কাছে লজ্জিত।’
বন্ধুটি একজন পাহাড়ি আদিবাসী। সে এখন ভয়ে জবুথবু। সুনসান পাহাড়ে তিন দিন গৃহবন্দী। খাওয়া নেই, দাওয়া নেই। যখন-তখন গ্রেপ্তারের ভয়। ঘরবাড়ি আগুনে পোড়ার ভয়। গুলি খাওয়ার ভয়। প্রহূত হওয়ার ভয়।
ঘরের শেষ ধানটুকুও আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বিদেশি বন্ধুদেরও খবর নেই। তাদের উচ্চ কণ্ঠস্বর আর শোনা যাচ্ছে না। হয়তো ঢাকায় বসে জরুরি মিটিং করছে তারা; এই মুহূর্তে তাদের জন্য কী দরকার, খাবার না নিরাপত্তা—এসব বিষয়ে।
আসলে আমি তার কাছে ক্ষমা চাইতে গিয়েছিলাম, যে ক্ষমা আমি বাঙালি হয়ে প্রত্যাশা করি বখতিয়ার খলিজর ভাই-বেরাদরদের কাছে, ভাস্কো দা গামার বংশধরদের কাছে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নীল রক্তধারীদের কাছে, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর নাতি-নাতনিদের কাছে, ইয়াহিয়া খানদের কাছে...।
আমি যখন দূরালাপনীর এ প্রান্ত থেকে ভারাক্রান্ত কণ্ঠে ওর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি, তখন ও-প্রান্তে অদ্ভুত এক নৈঃশব্দ্য। আমি কানের কাছে মুঠোফোনের শীতলতাকে উষ্ণ করি। কান ডুবিয়ে শোনার চেষ্টা করি ওর প্রতিধ্বনি। চুপ, একদম চুপ! কেমন ভাঁড়ের মতো লাগে নিজেকে। আমার বলা কথাগুলো মুহূর্তে ফেরত নিতে ইচ্ছে করে।
আমার ক্ষমা চাওয়া না-চাওয়ায় ওর কী যায় আসে! শুধু শুধু কেন এ পরিহাস! যখন ওরই দেশে ওর কণ্ঠ বাজেয়াপ্ত হয়ে যায়; ওর অসংখ্য না ঘুমানো রাত, না খেয়ে থাকার বেদনা, নিজ-ভূমে পরবাসী জীবনের প্রতিটি পল-অনুপল—যা আমরা যাপন করিনি, যা আমরা যাপন করি না। তার ঠিক কোন খেসারত হয় তা আমার জানা নেই। শুধু বুঝি, যার দেওয়ার সেই দিয়েছে, যার হওয়ার তারই হয়েছে। তবু আমি কান পেতে থাকি। ওর কাটানো সেই মুহূর্তগুলো ছুঁয়ে দেখতে চাই। সেই মুহূর্তগুলোতে ওর ক্ষীণ বুকে যে ঢিপ ঢিপ শব্দ হয়েছিল তা শোনার চেষ্টা করি; যদি সেই ঢিপ ঢিপ শব্দ পাহাড়ের স্তব্ধতাকে ছাপিয়ে হয়ে ওঠে দ্রিম, দ্রিম, দ্রিম।
শবনম ফেরদৌসী, গণমাধ্যমকর্মী, ঢাকা।

শিবিরে গণপদত্যাগ নিয়ে আশঙ্কা
আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। ১৯৯০ সালে পড়াশোনা শেষ করেছি। একবার ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা উপাচার্যের বাসার সামনে বিক্ষোভ করছিলেন। আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। উপাচার্য পুলিশ তলব করলেন। গাড়িভর্তি পুলিশ উপাচার্যের বাসার সামনে আসতেই শিবিরের তত্কালীন সভাপতিসহ একদল কর্মী প্রাচীর টপকে বিশ্ববিদ্যালয়-চত্বর ত্যাগ করলেন। শিবিরের সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে আরেক দল কর্মী ঠায় বসে রইলেন উপাচার্যের বাসার সামনে। আমরা সাধারণ ছাত্ররা খুবই অবাক হয়ে ভাবছিলাম, সভাপতিকে দৌড়ে পালাতে দেখেও অন্য কর্মীরা নড়ছে না কেন! অদ্ভুত লেগেছিল সে দিন। পরে জেনেছিলাম, শিবির সিদ্ধান্তের বাইরে কিছু করে না। তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সভাপতিসহ একদল কর্মী থাকবেন বাইরে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য, আর সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে একদল কর্মী গ্রেপ্তার হয়ে যাবেন জেলে। ওঁদের জেল থেকে বের করে আনার আন্দোলনের ঝান্ডা তুলে সংগঠনের কার্যক্রম আরও বেগবান করে তুলবেন।
সম্প্রতি ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সাধারণ সম্পাদকসহ ২৬ জন নেতার একযোগে পদত্যাগের ঘটনায় মনে সংশয় জাগে। এটা তাঁদের আরেক নতুন রণকৌশল নয় তো? তাঁরা তাঁদের সংগঠনের প্রতি ভীষণ অনুগত। খুব সহজে বা আকস্মিকভাবে সে আনুগত্য যায় না।
পদত্যাগী শিবিরের নেতাদের অনেকেই বলেছেন ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছেন। ২৬ জন নেতার প্রত্যেকের ব্যক্তিগত কারণ একই সময় দেখা দিল কী করে? অবশ্য কয়েকজন বলেছেন, ছাত্রশিবিরের বর্তমান সভাপতির স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদে তাঁরা পদত্যাগ করেছেন। তাঁরা কার্যকরী পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য হয়েও তলবি সভা ডেকে সভাপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেননি কেন? কী কারণ থাকতে পারে এর পেছনে? ইসলামী ছাত্রশিবির খুবই সুশৃঙ্খল ও নিয়মতান্ত্রিক একটি সংগঠন। সাংগঠনিক প্রক্রিয়াকে পাশ কাটিয়ে গণমাধ্যমে ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করলেন, তাঁরা পদত্যাগ করেছেন। কার্যকরী পরিষদের ২৬ জন ছাড়াও সারা দেশে আরও ১৯৪ জন পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।
ছাত্রশিবিরের এই পদত্যাগ-নাটক জামায়াত-শিবিরের বিশেষ কোনো দুরভিসন্ধির অংশ হতে পারে কি? পদত্যাগকারী নেতা-কর্মীরা কি এখন অন্য কোনো ইসলামী ছাত্রসংগঠনে যোগদান করবেন, যাতে তাঁরা পুলিশের চলমান চিরুনি অভিযানের বাইরে থাকতে পারেন? শিবিরের কার্যকরী পরিষদের ৪১ জন সদস্যের মধ্যে ২৬ জনই পদত্যাগ করলেন কি এ উদ্দেশ্যে যে পুলিশ যদি সংগঠনটির কার্যকরী পরিষদের সভাপতিসহ সব নেতাকেই গ্রেপ্তার করে, তাহলে এই ২৬ জন থেকে যাবেন কারাগারের বাইরে—যেহেতু তাঁরা এখন আর শিবিরের সঙ্গে নেই? বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া ব্যাহত করতে এঁরা আবার ভিন্ন নামে ভিন্ন চেহারায় দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলায় তত্পর হয়ে উঠবেন না তো?
দীপু মাহমুদ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।

জাকাত দেওয়া প্রসঙ্গে
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোয় ‘ধর্মভিত্তিক রাজনীতি—এবার একাত্তরের চেয়ে আমার আশঙ্কা বেশি’ শিরোনামে শাহদীন মালিকের লেখাটির প্রতি আমার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। এ ব্যাপারে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের বক্তব্য নিম্নরূপ।
শাহদীন মালিক সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘ইসলামী ব্যাংক তার আমানতকারী বা অ্যাকাউন্ট-হোল্ডারদের জমাকৃত অর্থ থেকে নির্ধারিত হারে টাকা কেটে নিয়ে জাকাত দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রকৃত তথ্য হচ্ছে, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড আমানতকারীদের হিসাব থেকে জাকাত বাবদ কোনো অর্থ কর্তন করে না। এমনকি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড তার শেয়ার-হোল্ডারদের কাছ থেকেও কোনো জাকাত কর্তন করে না বা দেয় না। ইসলামী ব্যাংক শুধু নিজস্ব রিজার্ভ ফান্ডের ওপর জাকাত দেয়।’
প্রসঙ্গত, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (আইডিবি) উদ্যোগে বিশ্বের ইসলামি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত অ্যাকাউন্টিং ও অডিটিং অর্গানাইজেশন ফর ইসলামিক ফিনানশিয়াল ইনস্টিটিউশন (এএওআইএফআই), মানামা, বাহরাইন দ্বারা বিশ্বের সব ইসলামিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুসরণীয় হিসাবমান অনুযায়ী জাকাত নির্ধারণ ও প্রদান করে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক জারি করা ‘গাইডলাইনস ফর ইসলামিক ব্যাংকিং’-এ ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য জাকাত দেওয়ার বিধান রয়েছে।
মো. আতাউর রহমান
সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট
ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ঢাকা।

উপজেলা পরিষদের স্বশাসন কীভাবে সম্ভব
সাধারণভাবে বলা যায়, স্থানীয়দের প্রয়োজন মেটানোর জন্য স্থানীয়দের দ্বারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানকে স্থানীয় সরকার বলে। এসব সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের মতো সার্বভৌম হয় না। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দিষ্ট কতকগুলো আইন ও বিধির মাধ্যমে স্থানীয় সরকারগুলো পরিচালিত হয়। আরেকটি অপরিহার্য শর্ত হলো, নিজস্ব আয়ের মাধ্যমে ব্যয়ের ব্যবস্থা থাকা। সে অর্থে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের ভবন কর, ব্যবসা করসহ কতকগুলো দৃশ্যমান আয় রয়েছে, যদিও তা যথেষ্ট নয়। কিন্তু উপজেলার দৃশ্যমান আয়ের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। তাই ‘উপজেলা’কে স্থানীয় সরকার বলা যায় কি না তাও একটা প্রশ্ন।
১৯৮২ সালে জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল পর্যায়ে রাষ্ট্রীয় টাকায় দলীয় সমর্থকগোষ্ঠী সৃষ্টির লক্ষ্যে ৪৬০টি থানাকে উন্নীত (আপগ্রেড) করে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে উপজেলা পরিষদ সৃষ্টি করেন। ১৯৯১ সালে উপজেলা পরিষদের বিলুপ্তি ঘটে। ১৯৯৩ সালে বিএনপি সরকার উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি গঠন করে। ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার উপজেলা পরিষদ আইন পাস করে এবং উপজেলা নির্বাচন না করেই বিদায় নেয়। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার আবার ক্ষমতায় এসে আগের মতো সমন্বয় কমিটির মাধ্যমে উপজেলা পর্যায়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা শুরু করে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ) অধ্যাদেশ, ২০০৮ জারি করে এবং ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন সম্পন্ন হয়। বর্তমান সরকার উপজেলা পরিষদ (রহিত আইন পুনঃপ্রচলন ও সংশোধন) আইন, ২০০৯ এর মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনকে বৈধতা প্রদান করে। লক্ষণীয়, নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানরা শুরু থেকেই স্বশাসিত উপজেলার দাবি করছেন। তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দামি গাড়ি, উচ্চ সম্মানী ভাতা এবং সংরক্ষিত কাজগুলো ও কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপজেলার কাছে ন্যস্ত করার দাবি জানান। উপজেলাব্যবস্থাকে কীভাবে স্বশাসিত করা যায়, কীভাবে আর্থিক সক্ষমতা অর্জন করা যায়—সে বিষয়ে কেউ কিছু বলছেন না। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রায় শত ভাগ অর্থায়নে পরিচালিত হয়ে কীভাবে তাঁরা স্বশাসিত হতে চাচ্ছেন তা বোধগম্য নয়।
উন্নত বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই শতভাগ নগরায়ণ ঘটায় সেসব দেশে তৃণমূলে স্বশাসিত নগর সরকার ব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশ দ্রুত নগরায়ণের দিকে ধাবিত হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন ও বিভাগ নামে প্রায় পাঁচ হাজার ৩৭৮টি ইউনিট রয়েছে। এই গরিব দেশে স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এতগুলো স্থানীয় ইউনিটের প্রয়োজন রয়েছে কি না সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। উপজেলা অনির্বাচিত ব্যক্তির অধীনে থাকার চেয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধির অধীনে থাকা উত্তম। বর্তমানে চার কোটি লোক নগর এলাকায় বাস করে; ২০২০ সালের মধ্যে ৮.৫ কোটি লোক নগরে বসবাস করবে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় পুরো জনগোষ্ঠী নগরবাসী হয়ে যাবে। তখন উপজেলা ও ইউনিয়নের বিলুপ্তি ঘটবে; স্থানীয় সরকারের উচ্চতম প্রতিষ্ঠান হিসেবে জেলা বা বিভাগের অধীনে নগরগুলো পরিচালিত হবে। বর্তমানে যদি উপজেলা প্রয়োজনীয় হয়, তবে আর্থিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে উপজেলার নিজস্ব আয়ের মাধ্যমে ব্যয়ের ব্যবস্থা করতে হবে; বিদ্যমান আইনের দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতাগুলো দূর করতে এর আমূল সংশোধন করতে হবে এবং একে শুধু গ্রামীণ স্থানীয় সরকার (পৌরসভাকে উপজেলা থেকে বাদ দিয়ে) হিসেবে পরিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক করতে হবে।
মোশাররফ হোসেন
উন্নয়নকর্মী, পাবনা।

লিখুন, পাঠিয়ে দিন
প্রিয় পাঠক, প্রথম আলোয় প্রকাশিত সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয়, প্রতিবেদন ইত্যাদি নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া/ভিন্নমত আমাদের লিখে পাঠান। সমসাময়িক অন্যান্য বিষয়েও আপনার অভিমত, চিন্তা, বিশ্লেষণ সর্বোচ্চ ৪০০ শব্দের মধ্যে লিখে পাঠিয়ে দিন এই ঠিকানায়:
অভিমত, সম্পাদকীয় বিভাগ
প্রথম আলো, সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা।
editorial@prothom-alo.info

No comments

Powered by Blogger.