মোসাদের হত্যাকাণ্ড এখনো অব্যাহত? by রোকেয়া রহমান
ইসরায়েলের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ অনেক দিন পর গত মাসের গোড়ার দিকে সংবাদের শিরোনামে উঠে আসে। হত্যা, অপহরণসহ বিভিন্ন অপকর্মের জন্য কুখ্যাতি কুড়ানো এ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আবার হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এবারের অভিযোগ, তারা ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের একজন নেতাকে হত্যা করেছে।
দুবাইয়ের একটি বিলাসবহুল হেটেলে গত ২০ জানুয়ারি মাহমুদ আল মাবু নামের ওই হামাস নেতাকে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডে মোসাদের সম্পৃক্ততার প্রমাণও খুঁজে পেয়েছে দুবাই পুলিশ। ব্রিটেনেরসানডে টাইমস পত্রিকার এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, আল মাবুর হত্যা মিশনে যাওয়ার আগে মোসাদের হিট স্কোয়াড সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। মিশন শেষ করে যাতে তাঁরা ‘ভালোয় ভালোয়’ দেশে ফিরতে পারেন, সে জন্য তিনি তাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে ‘আশীর্বাদ’ও করেছিলেন। এ জন্য দুবাইয়ের পুলিশ প্রধান দাহি খালফান তামিম নেতানিয়াহু ও মোসাদের প্রধান মীর দাগানের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।
তবে মোসাদ হামাস নেতা আল মাবু হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে। গোয়েন্দা সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলেছেন, এ অভিযোগ একেবারেই মিথ্যা। এই মিথ্যা অভিযোগের কারণে ব্রিটেন ও ফ্রান্সসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ক্ষুব্ধ হয়েছে। তবে খুব শিগগির তাদের এই ক্ষোভ প্রশমিত হবে।
ইসরায়েলের দাবি, আল মাবু একজন অপহরণকারী ও হত্যাকারী। অতি সম্প্রতি তিনি ইরান থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করেছেন।
তবে পশ্চিমের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে এমন একটি স্থানে হামাস নেতার হত্যাকাণ্ড ইসরায়েলি গোয়েন্দা জগতের অনেককে হতভম্ব করে দেয়। তারা এখন চাইছে, মোসাদ প্রধান মির দাগান বেছে নিন একজন উত্তরসূরি। তাঁর হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে তিনি পদত্যাগ করুন।
এই হত্যাকাণ্ড এমন সময় ঘটল, যখন মোসাদ এক দশকেরও বেশি সময় পর কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়েছে। ইরানের কারণে তাদের এই পরীক্ষার মুখে পড়তে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর প্রথম মেয়াদে (১৯৯৬—৯৯) বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মোসাদকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ইরানকে যেকোনো অর্থে দমন করতে। বিশেষ করে পরমাণু অস্ত্র যাতে কোনোভাবেই তাদের হাতে না পড়ে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, মোসাদ তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। পশ্চিমাদের দাবি, ইরান পরমাণুু কর্মসূচির মাধ্যমে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে। তবে ইরান বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। দেশটি বলছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে। তবে গত কয়েক বছরে ফাঁস হওয়া নথিপত্রে দেখা গেছে, ইসরায়েলিরা খানিকটা হলেও ইরানকে দমন করতে পেরেছে। ইসরায়েলি গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, ইরানের পরমাণু পরিকল্পনা পর্যবেক্ষণে কয়েকটি বেসামরিক পদ্ধতি এখনো কাজ করছে। তবে এই পদ্ধতি কাজ না করলেও ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে কোনো সরাসরি হামলা চালানো হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে গোয়েন্দা সূত্রগুলো।
কেন মোসাদের এই ব্যর্থতা? মোসাদের একটি সূত্র জানায়, তারা এখনো গোয়েন্দাগিরির ক্ষেত্রে পুরোনো সব জনপ্রিয় পদ্ধতি ব্যবহার করছে। নতুন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার হলেও এখনো প্রায় সবাই পুরোনো পদ্ধতিই ব্যবহার করে। এটি তাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা।
মোসাদের একজন ইসরায়েলি সমালোচক বলেছেন, গোয়েন্দা সংস্থাটির বড় ধরনের দুটি ত্রুটি আছে। একটি হচ্ছে আগ্রাসী মনোভাব এবং আরেকটি হচ্ছে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস। এ রকম মনোভাবের কারণে মোসাদ তার আগের অবস্থানেই রয়ে গেছে এবং কোনো ধরনের উন্নতি হচ্ছে না বলে ওই সমালোচক মনে করেন। তিনি বলেন, মোসাদ তার পুরোনো ধ্যান-ধারণায়ই রয়ে গেছে। তারা হত্যার নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না।
যেসব ইসরায়েলি কর্মকর্তা মাহমুদ মাবুকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন তাঁরা তা-ই করেছেন, যা ইহুদিরা সব সময় করে এসেছে। ইহুদিরা সব সময় তাদের আরব বিরোধীদের অবমূল্যায়ন করেছে। ইসরায়েলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন-গুরিয়ন আরবদের তুলনা করেছিলেন শিশুদের সঙ্গে। অন্য ইহুদিরা ফিলিস্তিনি আরবদের পশুর সঙ্গে তুলনা করেছিল। যখন ইসরায়েলিরা মনে করে, কোনো আরব তাদের জন্য হুমকিস্বরূপ, তখনই তারা তাকে হত্যা করে। উনিশ শতকের শেষ নাগাদ ইসরায়েল আরবদের বিরুদ্ধে সহিংসতা শুরু করে। না, কোনো সামরিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য নয় বরং আরবদের ভীতিগ্রস্ত করে তোলার জন্য।
ইসরায়েলের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ম্যানাচেম বেগিন তাঁর লেখা বই দ্য রিভল্ট-এ এসব কথা স্বীকার করেছেন। ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনের দেইর ইয়াসিন এলাকায় গণহত্যা চালায়। ইসরায়েল সীমান্তের কাছে ওই এলাকায় সাড়ে ৭০০ আরবের বসবাস ছিল। ইসরায়েলিদের লক্ষ্য শুধু এই আরবরা ছিল না বরং ফিলিস্তিনসহ আরব দেশগুলোকে ভীতিগ্রস্ত করাই ছিল তাদের লক্ষ্য। আর একপর্যায়ে ইসরায়েল এ কাজে মোসাদকে ব্যবহার করা শুরু করে। একসময় মোসাদ নামটি হয়ে ওঠে বেপরোয়া ও নিষ্ঠুরতার সমার্থক শব্দ। তবে আরবদের প্রতি মোসাদের এই নিষ্ঠুরতা নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো কখনোই মাথা ঘামায়নি। তবে তারা সব সময় চেষ্টা করেছে বিশ্বের কাছে মোসাদের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি তুলে ধরতে। তারা মোসাদের ব্যর্থতাকে জনগণের সামনে আসতে দেয়নি। উল্টো তাদের সাফল্যের কথা ফলাও করে প্রচার করেছে। তবে আসল কথা হচ্ছে, মোসাদের কাজ এখন আর গোয়েন্দাগিরি করা নয় বরং মানুষ হত্যা করা। প্রশ্ন উঠছে, তারা কি আসলেই ইসরায়েলি জনগণকে নিরাপদ রাখতে পারছে? এভাবে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে মোসাদ ইসরায়েলি জনগণকে নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে কি না, কে জানে।
তবে মোসাদ হামাস নেতা আল মাবু হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে। গোয়েন্দা সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলেছেন, এ অভিযোগ একেবারেই মিথ্যা। এই মিথ্যা অভিযোগের কারণে ব্রিটেন ও ফ্রান্সসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ক্ষুব্ধ হয়েছে। তবে খুব শিগগির তাদের এই ক্ষোভ প্রশমিত হবে।
ইসরায়েলের দাবি, আল মাবু একজন অপহরণকারী ও হত্যাকারী। অতি সম্প্রতি তিনি ইরান থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করেছেন।
তবে পশ্চিমের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে এমন একটি স্থানে হামাস নেতার হত্যাকাণ্ড ইসরায়েলি গোয়েন্দা জগতের অনেককে হতভম্ব করে দেয়। তারা এখন চাইছে, মোসাদ প্রধান মির দাগান বেছে নিন একজন উত্তরসূরি। তাঁর হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে তিনি পদত্যাগ করুন।
এই হত্যাকাণ্ড এমন সময় ঘটল, যখন মোসাদ এক দশকেরও বেশি সময় পর কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়েছে। ইরানের কারণে তাদের এই পরীক্ষার মুখে পড়তে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর প্রথম মেয়াদে (১৯৯৬—৯৯) বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মোসাদকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ইরানকে যেকোনো অর্থে দমন করতে। বিশেষ করে পরমাণু অস্ত্র যাতে কোনোভাবেই তাদের হাতে না পড়ে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, মোসাদ তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। পশ্চিমাদের দাবি, ইরান পরমাণুু কর্মসূচির মাধ্যমে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে। তবে ইরান বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। দেশটি বলছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে। তবে গত কয়েক বছরে ফাঁস হওয়া নথিপত্রে দেখা গেছে, ইসরায়েলিরা খানিকটা হলেও ইরানকে দমন করতে পেরেছে। ইসরায়েলি গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, ইরানের পরমাণু পরিকল্পনা পর্যবেক্ষণে কয়েকটি বেসামরিক পদ্ধতি এখনো কাজ করছে। তবে এই পদ্ধতি কাজ না করলেও ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে কোনো সরাসরি হামলা চালানো হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে গোয়েন্দা সূত্রগুলো।
কেন মোসাদের এই ব্যর্থতা? মোসাদের একটি সূত্র জানায়, তারা এখনো গোয়েন্দাগিরির ক্ষেত্রে পুরোনো সব জনপ্রিয় পদ্ধতি ব্যবহার করছে। নতুন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার হলেও এখনো প্রায় সবাই পুরোনো পদ্ধতিই ব্যবহার করে। এটি তাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা।
মোসাদের একজন ইসরায়েলি সমালোচক বলেছেন, গোয়েন্দা সংস্থাটির বড় ধরনের দুটি ত্রুটি আছে। একটি হচ্ছে আগ্রাসী মনোভাব এবং আরেকটি হচ্ছে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস। এ রকম মনোভাবের কারণে মোসাদ তার আগের অবস্থানেই রয়ে গেছে এবং কোনো ধরনের উন্নতি হচ্ছে না বলে ওই সমালোচক মনে করেন। তিনি বলেন, মোসাদ তার পুরোনো ধ্যান-ধারণায়ই রয়ে গেছে। তারা হত্যার নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না।
যেসব ইসরায়েলি কর্মকর্তা মাহমুদ মাবুকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন তাঁরা তা-ই করেছেন, যা ইহুদিরা সব সময় করে এসেছে। ইহুদিরা সব সময় তাদের আরব বিরোধীদের অবমূল্যায়ন করেছে। ইসরায়েলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন-গুরিয়ন আরবদের তুলনা করেছিলেন শিশুদের সঙ্গে। অন্য ইহুদিরা ফিলিস্তিনি আরবদের পশুর সঙ্গে তুলনা করেছিল। যখন ইসরায়েলিরা মনে করে, কোনো আরব তাদের জন্য হুমকিস্বরূপ, তখনই তারা তাকে হত্যা করে। উনিশ শতকের শেষ নাগাদ ইসরায়েল আরবদের বিরুদ্ধে সহিংসতা শুরু করে। না, কোনো সামরিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য নয় বরং আরবদের ভীতিগ্রস্ত করে তোলার জন্য।
ইসরায়েলের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ম্যানাচেম বেগিন তাঁর লেখা বই দ্য রিভল্ট-এ এসব কথা স্বীকার করেছেন। ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনের দেইর ইয়াসিন এলাকায় গণহত্যা চালায়। ইসরায়েল সীমান্তের কাছে ওই এলাকায় সাড়ে ৭০০ আরবের বসবাস ছিল। ইসরায়েলিদের লক্ষ্য শুধু এই আরবরা ছিল না বরং ফিলিস্তিনসহ আরব দেশগুলোকে ভীতিগ্রস্ত করাই ছিল তাদের লক্ষ্য। আর একপর্যায়ে ইসরায়েল এ কাজে মোসাদকে ব্যবহার করা শুরু করে। একসময় মোসাদ নামটি হয়ে ওঠে বেপরোয়া ও নিষ্ঠুরতার সমার্থক শব্দ। তবে আরবদের প্রতি মোসাদের এই নিষ্ঠুরতা নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো কখনোই মাথা ঘামায়নি। তবে তারা সব সময় চেষ্টা করেছে বিশ্বের কাছে মোসাদের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি তুলে ধরতে। তারা মোসাদের ব্যর্থতাকে জনগণের সামনে আসতে দেয়নি। উল্টো তাদের সাফল্যের কথা ফলাও করে প্রচার করেছে। তবে আসল কথা হচ্ছে, মোসাদের কাজ এখন আর গোয়েন্দাগিরি করা নয় বরং মানুষ হত্যা করা। প্রশ্ন উঠছে, তারা কি আসলেই ইসরায়েলি জনগণকে নিরাপদ রাখতে পারছে? এভাবে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে মোসাদ ইসরায়েলি জনগণকে নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে কি না, কে জানে।
No comments