অমানবিক-মানুষ এত নিষ্ঠুর হয় কী করে! by মশিউল আলম
২৮ বছরের যুবক ফয়েজ সকাল সাতটার দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হলেন। দুপুর সাড়ে ১২টায় তিনি পৌঁছে গেলেন হাসপাতালের মর্গে: এখন তাঁর ঠোঁট ফোলা, দাঁত ভাঙা, ডান হাতের দুটো আঙুলের নখ ওপড়ানো, ওই হাতটির কনুই ও ডান পায়ের হাঁটু থেঁতলানো। দুই হাতে, বুকে, পেটে ও কোমরের বিরাট অংশজুড়ে উত্তপ্ত ধাতব বস্তু চেপে ধরার দগদগে চিহ্ন, মলদ্বারে পোড়া ক্ষত ও মরা রক্ত..,।
টগবগে যুবকটি এখন বিধ্বস্ত লাশ। সিলেট শহরের আম্বরখানার চন্দনটুলার যে বাড়ি থেকে তিনি সকালবেলা মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়েছিলেন, সেখানে আর কখনো ফিরবেন না। তাঁকে যেতে হবে মানিকপীর কবরস্থানে।
কী ঘটেছিল? গত বৃহস্পতিবারের প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সেই বর্ণনা খানিকটা আছে। গতকালের প্রথম আলোয় প্রকাশিত ফলো-আপ প্রতিবেদন বলছে, ফয়েজ সেদিন সকাল সাতটার দিকে বারবার মোবাইলে কল পেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। সিলেট শহরের পশ্চিম পাঠানটুলার নিকুঞ্জ-৩ আবাসিক এলাকায় ছয়তলা একটি বাড়ি ‘আল-আফরোজ টাওয়ার’-এ গিয়েছিলেন তিনি মোটরসাইকেল চালিয়ে। বাড়িটি ছাত্রদের মেস; চারতলার একটি ফ্ল্যাটে সপরিবারে বাস করেন বাড়ির মালিক আফরোজ মিয়া। বাকি ফ্ল্যাটগুলোতে ভাড়া থাকে সিলেটের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। সেখানে সকাল আটটার দিকে ফয়েজকে আটক করেন আফরোজ মিয়া। অভিযোগ, ফয়েজ ল্যাপটপ আর আইফোন চুরি করেছেন। আফরোজ মিয়া আর তিন ছাত্র ফয়েজকে ছয়তলার একটি কক্ষে নিয়ে তাঁর হাত-পা বেঁধে দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে যা করেন, শেষ পর্যন্ত তা সহ্য করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। একপর্যায়ে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন ফয়েজ।
প্রথম আলোর সিলেট প্রতিনিধি উজ্জ্বল মেহেদী খবর পেয়ে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ওই বাড়ির সামনে গিয়ে দেখতে পান, পাড়ার অনেক মানুষ বাড়িটির আশপাশে ভিড় করে আছে। ঘণ্টা খানেক পরে উজ্জ্বল মেহেদী সহকর্মী আলোকচিত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বাড়িটির ভেতরে ঢুকতে পারেন। দেখতে পান, নিচতলার মেঝেতে পড়ে আছেন মুমূর্ষু ফয়েজ। কী ঘটেছে জানতে চাইলে তিনি অস্ফুট স্বরে পানি খেতে চান। পানি খাওয়ার পরে তিনি তাঁর ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দেন। তিনি ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন একজনের সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু বাড়িওলা আফরোজ মিয়া তাঁকে আটক করে নির্যাতন করেছেন এই কথা বলে যে সে এসেছে চুরি করতে। ফয়েজ বলেন, আমি যদি চোর হই, তাহলে পুলিশে দেন, মাইরেন না! কিন্তু তাঁর কথায় কেউ নির্যাতন থামায়নি। যন্ত্রণায় ফয়েজ চিৎকার করলে তাঁর পরনের জামা খুলে মুখে গুঁজে দেওয়া হয়েছে। তিনি পানি খেতে চাইলে তাকে পানি দেওয়া হয়নি।
পশ্চিম পাঠানটুলার ওই বাড়ির সামনে জড়ো হওয়া কৌতূহলী লোকজন যেমন বলাবলি করছিল যে এক চোর ছাত্রদের ওই মেসবাড়িতে ঢুকে ধরা পড়ে গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছে, সিলেট কোতোয়ালি থানার পুলিশও প্রথমে সে রকমই ভেবেছিল। টেলিফোনে তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা যখন জোর দিয়ে বলতে থাকেন যে ফয়েজকে বাঁচানো দরকার, তখন পুলিশ তাঁকে একটি সিএনজি অটোরিকশায় তুলে সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। তখন বেলা সাড়ে ১১টা। তার প্রায় ৪৫ মিনিট পরে ওই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ফয়েজ তাঁর জখমের কাছে চূড়ান্তভাবে পরাজিত হন।
আফরোজ মিয়া ও তিন ছাত্রকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। আফরোজ মিয়া এখনো দাবি করে চলেছেন যে ফয়েজ চোর ছিল। কিন্তু পুলিশ তা বিশ্বাস করছে না। উজ্জ্বল মেহেদী বললেন, আফরোজ মিয়ার ওই বাড়ির যে জায়গাটিতে অতিথিদের গাড়ি রাখা হয়, ফয়েজের মোটরসাইকেলটি দাঁড় করা ছিল সেখানে। পুলিশ ফয়েজের ব্যবহূত মুঠোফোনের কললিস্ট পরীক্ষা করে জানতে পেরেছে, ওই দিন সকালে অল্প সময়ের মধ্যে দুটি মোবাইল নম্বর থেকে ফয়েজের নম্বরে কল এসেছিল মোট ১২ বার। ফয়েজ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে একটি কল রিসিভ করে বলেছিলেন, ‘এত কল করছিস কেন? আসছি...।’
ফয়েজকে আল-আফরোজ টাওয়ার নামের ওই বাড়িতে ডেকে নিয়ে বাড়িওলা আফরোজ মিয়া ও তিন ভাড়াটে ছাত্র তাঁর ওপর অমন নৃশংস নির্যাতন চালিয়েছেন কি না, ফয়েজ আসলেই ল্যাপটপ ও আইফোন চুরি করেছিলেন, নাকি এটি আফরোজ মিয়ার দেওয়া নিছকই এক অজুহাত, এই ঘটনার পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি না—পুলিশ এখন এসব জানার চেষ্টা করছে। ফয়েজের এক ভাইয়েরও সন্দেহ, এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে। পুলিশ তৎপরভাবে চেষ্টা করলে প্রকৃত কারণ জানা অসম্ভব হবে না।
কারণটা অবশ্যই জানা দরকার। কেন দরকার? মানুষের সহজাত কৌতূহল মেটানোর জন্য, মামলার অভিযোগপত্র তৈরি করার জন্য, অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করার জন্য। সর্বোপরি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য। আমাদের দুর্বল আইন প্রয়োগব্যবস্থায় এসব কতটা কী মাত্রায় ঘটবে কে জানে।
কিন্তু এসব ভাবনা ছাপিয়ে পুরো মনটাকে যেন গ্রাস করে ফেলে ফয়েজের ওপর নিষ্ঠুরতার ধরনটি। একটি ছেলেকে হাত-পা বেঁধে চারজন মানুষ দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে যেভাবে নির্যাতন করেছে, সেই সুপরিকল্পিত, সংঘবদ্ধ বিভীষিকার ব্যাখ্যা কী? মানুষ এত নিষ্ঠুর হয় কী করে? আইন প্রয়োগ, বিচার, কারাদণ্ড, এমনকি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার পরেও কি এই জিজ্ঞাসার উত্তর পাওয়া যায়?
দেশে হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণের পর গুম করে লাশ নদী-খাল-সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া ইত্যাদি বেড়ে গেছে, নাকি এসবের খবর ইদানীং বেশি বেশি ছাপা হচ্ছে বলে আমাদের এ রকম মনে হচ্ছে—এটা নিরূপণ করতে হলে অতীত-বর্তমানের তথ্য-উপাত্তের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করতে হবে। এটা করার উপায় আছে, অপরাধ গবেষকেরা এ কাজ করলে মন্দ হতো না। কিন্তু নিষ্ঠুরতা-নৃশংসতা দেখতে দেখতে আমাদের সংবেদনশীলতা ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে কি না, সেটা পরিমাপ করার কি কোনো উপায় আছে? ইদানীং মনে হচ্ছে, একটি বীভৎস, বিভীষিকাময় ঘটনা যেন আগেরটিকে অতিক্রম করে যাচ্ছে, কিন্তু মানুষের মধ্যে যেন বিকার নেই। যেন সবই গা-সহা হয়ে যাচ্ছে। তবে কি একটা নৃশংস অপরাধের খবর পড়ে আমরা একটু দুঃখিত বোধ করার পাশাপাশি মনে মনে এই ভেবে স্বস্তি পাই যে আমি তো ওই অবস্থায় পড়িনি? বা আমার স্বজনের তো ওই অবস্থা হয়নি? আমরা কি এই বিশ্বাসে ভর করে এই সমাজে টিকে আছি যে, যার যা হয় হোক, আমি নিরাপদ? আমার কিছু হবে না?
এ কেমন অবস্থা হলো আমাদের!
মশিউল আলম: সাংবাদিক।
mashiul.alam@gmail.com
কী ঘটেছিল? গত বৃহস্পতিবারের প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সেই বর্ণনা খানিকটা আছে। গতকালের প্রথম আলোয় প্রকাশিত ফলো-আপ প্রতিবেদন বলছে, ফয়েজ সেদিন সকাল সাতটার দিকে বারবার মোবাইলে কল পেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। সিলেট শহরের পশ্চিম পাঠানটুলার নিকুঞ্জ-৩ আবাসিক এলাকায় ছয়তলা একটি বাড়ি ‘আল-আফরোজ টাওয়ার’-এ গিয়েছিলেন তিনি মোটরসাইকেল চালিয়ে। বাড়িটি ছাত্রদের মেস; চারতলার একটি ফ্ল্যাটে সপরিবারে বাস করেন বাড়ির মালিক আফরোজ মিয়া। বাকি ফ্ল্যাটগুলোতে ভাড়া থাকে সিলেটের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। সেখানে সকাল আটটার দিকে ফয়েজকে আটক করেন আফরোজ মিয়া। অভিযোগ, ফয়েজ ল্যাপটপ আর আইফোন চুরি করেছেন। আফরোজ মিয়া আর তিন ছাত্র ফয়েজকে ছয়তলার একটি কক্ষে নিয়ে তাঁর হাত-পা বেঁধে দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে যা করেন, শেষ পর্যন্ত তা সহ্য করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। একপর্যায়ে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন ফয়েজ।
প্রথম আলোর সিলেট প্রতিনিধি উজ্জ্বল মেহেদী খবর পেয়ে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ওই বাড়ির সামনে গিয়ে দেখতে পান, পাড়ার অনেক মানুষ বাড়িটির আশপাশে ভিড় করে আছে। ঘণ্টা খানেক পরে উজ্জ্বল মেহেদী সহকর্মী আলোকচিত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বাড়িটির ভেতরে ঢুকতে পারেন। দেখতে পান, নিচতলার মেঝেতে পড়ে আছেন মুমূর্ষু ফয়েজ। কী ঘটেছে জানতে চাইলে তিনি অস্ফুট স্বরে পানি খেতে চান। পানি খাওয়ার পরে তিনি তাঁর ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দেন। তিনি ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন একজনের সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু বাড়িওলা আফরোজ মিয়া তাঁকে আটক করে নির্যাতন করেছেন এই কথা বলে যে সে এসেছে চুরি করতে। ফয়েজ বলেন, আমি যদি চোর হই, তাহলে পুলিশে দেন, মাইরেন না! কিন্তু তাঁর কথায় কেউ নির্যাতন থামায়নি। যন্ত্রণায় ফয়েজ চিৎকার করলে তাঁর পরনের জামা খুলে মুখে গুঁজে দেওয়া হয়েছে। তিনি পানি খেতে চাইলে তাকে পানি দেওয়া হয়নি।
পশ্চিম পাঠানটুলার ওই বাড়ির সামনে জড়ো হওয়া কৌতূহলী লোকজন যেমন বলাবলি করছিল যে এক চোর ছাত্রদের ওই মেসবাড়িতে ঢুকে ধরা পড়ে গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছে, সিলেট কোতোয়ালি থানার পুলিশও প্রথমে সে রকমই ভেবেছিল। টেলিফোনে তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা যখন জোর দিয়ে বলতে থাকেন যে ফয়েজকে বাঁচানো দরকার, তখন পুলিশ তাঁকে একটি সিএনজি অটোরিকশায় তুলে সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। তখন বেলা সাড়ে ১১টা। তার প্রায় ৪৫ মিনিট পরে ওই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ফয়েজ তাঁর জখমের কাছে চূড়ান্তভাবে পরাজিত হন।
আফরোজ মিয়া ও তিন ছাত্রকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। আফরোজ মিয়া এখনো দাবি করে চলেছেন যে ফয়েজ চোর ছিল। কিন্তু পুলিশ তা বিশ্বাস করছে না। উজ্জ্বল মেহেদী বললেন, আফরোজ মিয়ার ওই বাড়ির যে জায়গাটিতে অতিথিদের গাড়ি রাখা হয়, ফয়েজের মোটরসাইকেলটি দাঁড় করা ছিল সেখানে। পুলিশ ফয়েজের ব্যবহূত মুঠোফোনের কললিস্ট পরীক্ষা করে জানতে পেরেছে, ওই দিন সকালে অল্প সময়ের মধ্যে দুটি মোবাইল নম্বর থেকে ফয়েজের নম্বরে কল এসেছিল মোট ১২ বার। ফয়েজ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে একটি কল রিসিভ করে বলেছিলেন, ‘এত কল করছিস কেন? আসছি...।’
ফয়েজকে আল-আফরোজ টাওয়ার নামের ওই বাড়িতে ডেকে নিয়ে বাড়িওলা আফরোজ মিয়া ও তিন ভাড়াটে ছাত্র তাঁর ওপর অমন নৃশংস নির্যাতন চালিয়েছেন কি না, ফয়েজ আসলেই ল্যাপটপ ও আইফোন চুরি করেছিলেন, নাকি এটি আফরোজ মিয়ার দেওয়া নিছকই এক অজুহাত, এই ঘটনার পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি না—পুলিশ এখন এসব জানার চেষ্টা করছে। ফয়েজের এক ভাইয়েরও সন্দেহ, এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে। পুলিশ তৎপরভাবে চেষ্টা করলে প্রকৃত কারণ জানা অসম্ভব হবে না।
কারণটা অবশ্যই জানা দরকার। কেন দরকার? মানুষের সহজাত কৌতূহল মেটানোর জন্য, মামলার অভিযোগপত্র তৈরি করার জন্য, অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করার জন্য। সর্বোপরি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য। আমাদের দুর্বল আইন প্রয়োগব্যবস্থায় এসব কতটা কী মাত্রায় ঘটবে কে জানে।
কিন্তু এসব ভাবনা ছাপিয়ে পুরো মনটাকে যেন গ্রাস করে ফেলে ফয়েজের ওপর নিষ্ঠুরতার ধরনটি। একটি ছেলেকে হাত-পা বেঁধে চারজন মানুষ দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে যেভাবে নির্যাতন করেছে, সেই সুপরিকল্পিত, সংঘবদ্ধ বিভীষিকার ব্যাখ্যা কী? মানুষ এত নিষ্ঠুর হয় কী করে? আইন প্রয়োগ, বিচার, কারাদণ্ড, এমনকি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার পরেও কি এই জিজ্ঞাসার উত্তর পাওয়া যায়?
দেশে হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণের পর গুম করে লাশ নদী-খাল-সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া ইত্যাদি বেড়ে গেছে, নাকি এসবের খবর ইদানীং বেশি বেশি ছাপা হচ্ছে বলে আমাদের এ রকম মনে হচ্ছে—এটা নিরূপণ করতে হলে অতীত-বর্তমানের তথ্য-উপাত্তের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করতে হবে। এটা করার উপায় আছে, অপরাধ গবেষকেরা এ কাজ করলে মন্দ হতো না। কিন্তু নিষ্ঠুরতা-নৃশংসতা দেখতে দেখতে আমাদের সংবেদনশীলতা ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে কি না, সেটা পরিমাপ করার কি কোনো উপায় আছে? ইদানীং মনে হচ্ছে, একটি বীভৎস, বিভীষিকাময় ঘটনা যেন আগেরটিকে অতিক্রম করে যাচ্ছে, কিন্তু মানুষের মধ্যে যেন বিকার নেই। যেন সবই গা-সহা হয়ে যাচ্ছে। তবে কি একটা নৃশংস অপরাধের খবর পড়ে আমরা একটু দুঃখিত বোধ করার পাশাপাশি মনে মনে এই ভেবে স্বস্তি পাই যে আমি তো ওই অবস্থায় পড়িনি? বা আমার স্বজনের তো ওই অবস্থা হয়নি? আমরা কি এই বিশ্বাসে ভর করে এই সমাজে টিকে আছি যে, যার যা হয় হোক, আমি নিরাপদ? আমার কিছু হবে না?
এ কেমন অবস্থা হলো আমাদের!
মশিউল আলম: সাংবাদিক।
mashiul.alam@gmail.com
No comments