অগ্রহণযোগ্য ও শিষ্টাচারবহির্ভূত-পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর আচরণ
একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে মন্ত্রিসভার একজন সদস্যের ১৩ মার্চের আচরণ অশোভন, অনভিপ্রেত ও নিন্দনীয়। গুরুতর অসদাচরণের দায়ে প্রতিমন্ত্রীর কঠোরতম তিরস্কার প্রাপ্য। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের উচিত হবে এ ঘটনার একটি সুষ্ঠু ব্যাখ্যা অবিলম্বে জনগণের সামনে প্রকাশ করা।
কারণ সংসদীয় সরকারব্যবস্থায় জনসমক্ষে মন্ত্রীর আচার-আচরণের দায়দায়িত্ব বিচ্ছিন্নভাবে দেখার সুযোগ থাকে না। মন্ত্রিসভার একটি সমষ্টিগত জবাবদিহি থাকে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অপব্যবহারের এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার দায়দায়িত্ব নির্দিষ্ট হওয়া সংসদীয় রীতিনীতি ও রাষ্ট্রীয় শিষ্টাচারের দাবি।
সমাজ ও রাষ্ট্রে মন্ত্রীদের উচ্চমর্যাদা রয়েছে। সেই মর্যাদার সঙ্গে প্রতিমন্ত্রীর আচরণ একেবারেই বেমানান। সবচেয়ে গুরুতর বিষয় হলো, পনিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চায়ের দাওয়াত দিতে তাঁর গানম্যানকে ব্যাংকে পাঠিয়েছিলেন। রাষ্ট্র মন্ত্রীদের গানম্যান দিয়েছে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য। ব্যক্তিগত স্বার্থে কিংবা কেউ ‘দুর্ব্যবহার’ করলে তাঁকে শায়েস্তা বা ভয় দেখানোর কাজে গানম্যান ব্যবহারের সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে প্রতিমন্ত্রীর নৈতিক স্খলন মার্জনার যোগ্য নয়। সত্যি বলতে প্রতিমন্ত্রীর পুরো কর্মকাণ্ডই অগ্রহণযোগ্য। আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার ঘটনা একান্তভাবেই ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ বিষয়। উপরন্তু ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির দায়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। দলীয় নেতার ভাই পরিচয়ে তাঁকে পুনর্বহাল করার কথা বলে প্রতিমন্ত্রী কার্যত দুর্নীতি দমনে সরকারি দলের স্ববিরোধী অবস্থানই যেন নিশ্চিত করলেন। হাস্যকর হলো, ব্যাংক কর্মকর্তাকে খাটো করতে জামায়াত কিংবা জেএমবি হিসেবে সম্বোধন করা। ভিন্নমত জব্দ করতে শাসক দলের অনেকে এ ধরনের আক্রমণ করার প্রবণতা দেখান।
এ বিষয়ে মন্ত্রিসভার পক্ষ থেকে যদি প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা বা অনুশোচনা প্রকাশ না করা হয়, তাহলে জনমনে মন্ত্রিসভার ভাবমূর্তি অহেতুক ক্ষুণ্ন হতে পারে। পানিসম্পদ কিংবা অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এ বিষয়ে যথা উদ্যোগ নিতে পারে। ব্রিটেনসহ উন্নত গণতন্ত্রে মন্ত্রীদের জন্য আচরণবিধি রয়েছে। বাংলাদেশেরও এটি অপরিহার্য।
No comments