এশিয়া এনার্জি ও বিদ্যুৎ সংকট by ড. এম শামসুল আলম

গত ২৫ এপ্রিল একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের শিরোনাম ছিল- 'আবার তৎপর এশিয়া এনার্জি'। এ খবরে বলা হয়, দেশের একটি কয়লাখনি উন্নয়ন করে সেই কয়লায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রস্তাব দিয়েছে 'কোলবাংলা'। সরকারের নীতিনির্ধারকদের সবুজ সংকেতের কারণে এ প্রস্তাব। অর্থাৎ প্রস্তাবটি কোলবাংলাকে দিয়ে করানো হয়েছে।


খবরে আরো প্রকাশ পায়, ফুলবাড়ী কয়লাখনি উন্নয়নের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এশিয়া এনার্জি প্রস্তুত হচ্ছে। এতে বোঝা যায়, ওই সবুজ সংকেত শুধু কোলবাংলাই পায়নি, এশিয়া এনার্জিও পেয়েছে। এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে। উন্মুক্ত পদ্ধতিতে এশিয়া এনার্জির দ্বারা ফুলবাড়ী এবং টাটার দ্বারা বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির উন্নয়নের জন্য ২০০৫ সালে জোট সরকারের আমলে প্রথম কয়লানীতি প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। টাটার প্রস্তাব প্রত্যাহার করায় পরীক্ষামূলকভাবে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে একটি কয়লাখনি (ফুলবাড়ী) উন্নয়নের লক্ষ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সেই উদ্যোগ অব্যাহত থাকে। বর্তমান মহাজোট সরকারের শুরুতে কয়লানীতি চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে যমুনা রিসোর্টে প্রবাসী বিশেষজ্ঞদের চার দিনের সম্মেলন হয়। ওই সম্মেলনের সুপারিশের অজুহাতে উদ্যোগটি অব্যাহত থাকে। বলা যায়, এসব উদ্যোগের মাধ্যমে এশিয়া এনার্জিকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে।
দেশে পাঁচটি কয়লাখনি রয়েছে। বড়পুকুরিয়া খনির কয়লা তোলা হচ্ছে। এই খনি এখন লাভজনক। জামালগঞ্জ খনির কয়লা তোলা এখনো ফিজিব্ল নয়। খালাসপীর ও দীঘিপাড়া খনি উন্মুক্ত পদ্ধতিতে উন্নয়ন সম্ভব নয়। ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে উন্নয়নের লক্ষ্যে এই দুটি খনি ইজারা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অগ্রগতি নেই। ফুলবাড়ী খনি এশিয়া এনার্জির কাছে ইজারাবদ্ধ। উন্মুক্ত পদ্ধতিতে এই খনি উন্নয়নের উদ্দেশ্যে এশিয়া এনার্জি সরকারের কাছে পরিকল্পনা প্রস্তাব দাখিল করে। এ প্রস্তাব প্রতিবেশ ও পরিবেশগত কারণে ২০০৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর দাখিলকৃত মূল্যায়ন প্রতিবেদনে সরকারি বিশেষজ্ঞ কমিটি নাকচ করে। এ ইজারা চুক্তি অবৈধ ও জনস্বার্থবিরোধী- এমন অভিযোগে এ চুক্তি বাতিল এবং উন্মুক্ত খনি না করার দাবিতে দীর্ঘদিন যাবৎ আন্দোলন চলছে। ওই বছর ২৬ আগস্ট ফুলবাড়ীতে এশিয়া এনার্জির অফিস ঘেরাও গণ-কর্মসূচি পালনকালে পুলিশের গুলিতে তিনজন মারা যায় এবং বেশ কিছু আহত হয়। ফলে আন্দোলন তীব্র হলে ওইসব দাবি মেনে নিয়ে সরকার ছয় দফা চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। এ চুক্তিই ফুলবাড়ী চুক্তি হিসেবে অভিহিত। এ চুক্তিতে দেশে উন্মুক্ত খনি না করা এবং এশিয়া এনার্জির চুক্তি বাতিল ও এশিয়া এনার্জিকে দেশ থেকে বহিষ্কার করার ব্যাপারে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। এই আন্দোলনে প্রকাশ্য সমর্থন দেওয়ার জন্য তখনকার বিরোধীদলীয় মহাজোট ৭ সেপ্টেম্বর ফুলবাড়ীতে এক জনসভা করে। সেই জনসভায় মহাজোট নেত্রী আজকের প্রধানমন্ত্রী ওই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে ঘোষণা দেন, 'ফুলবাড়ী চুক্তি না মানার পরিণতি হবে ভয়াবহ।' পরবর্তীকালে এই চুক্তির বেশ কিছু অংশ বাস্তবায়িত হয়। এর পরও অবৈধ ও জনস্বার্থবিরোধী ইজারা আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করার পরিবর্তে ফুলবাড়ী চুক্তি লঙ্ঘন করে বিদ্যুৎ সংকটের অজুহাত দেখিয়ে এশিয়া এনার্জি দ্বারা ফুলবাড়ী খনির কয়লা তোলার ওই সবুজ সংকেত সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।
উন্নয়নযোগ্য কোনো খনিই ইজারাবহির্ভূত নয়। যেহেতু এশিয়া এনার্জির চুক্তি এখনো বাতিল হয়নি, সেহেতু এই খনি উন্নয়নের স্বত্বাধিকার এশিয়া এনার্জির এখনো রয়েছে। যেহেতু এশিয়া এনার্জিকে দেশ থেকে বহিষ্কারের ব্যাপারে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ, সেহেতু এশিয়া এনার্জিকে দিয়ে এই খনি উন্নয়নের সুযোগ নেই। আবার এশিয়া এনার্জির এই খনি উন্নয়নের স্বত্বাধিকার বলবৎ থাকায় তাকে বাদ দিয়ে অন্য কোনো উপায়ে এই খনি উন্নয়ন অসম্ভব। অতএব বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ফুলবাড়ী কয়লাখনির উন্নয়ন সম্ভব হবে না। যে সবুজ সংকেত পেয়ে কোলবাংলার পক্ষ থেকে একটি খনি উন্নয়ন করে তার কয়লায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যদি সেই খনি ফুলবাড়ী হয় এবং সেই কয়লা ফুলবাড়ী খনির কয়লা হয়, তাহলে পোস্ট ডেটেড চেকে যেমন ব্যাংক থেকে টাকা পাওয়া যায় না, তেমনি এই প্রস্তাবে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে না। অথচ এ প্রস্তাবের সঙ্গে সঙ্গে ফুলবাড়ী খনি উন্নয়নের ব্যাপারে এশিয়া এনার্জি প্রস্তুত হচ্ছে। সরকারের নিজস্ব মালিকানায় খালাসপীর ও দীঘিপাড়া খনির কয়লায় স্বল্প মূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন সহজেই সম্ভব। অথচ জনস্বার্থ নয়, এশিয়া এনার্জির স্বার্থ রক্ষা করার দায়বদ্ধতা থাকায় তা সম্ভব হয়নি। উইকিলিকসের ফাঁস করা তথ্যে জ্বালানি উপদেষ্টার এমন দায়বদ্ধতার প্রমাণ পাওয়া যায়। আর এ কারণেই আমদানি করা কয়লায় বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনা সরকারের থাকলেও সে জন্য সমুদ্রবন্দর উন্নয়নসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন অত্যাবশ্যক হলেও কোনো উদ্যোগ নেই। ইজারাবদ্ধ হলেও দীঘিপাড়া ও খালাসপীর খনি উন্নয়নের কোনো অগ্রগতি নেই। এখানেই জনগণের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, বিদ্যুৎ সংকট সমাধানের জন্য যে কয়লা দরকার, তা ফুলবাড়ী খনি থেকে এশিয়া এনার্জির তোলা কয়লাই হতে হবে, অন্য কোনো কয়লা হলে চলবে না। নইলে ৬ শতাংশ রয়ালটির বিনিময়ে ফুলবাড়ী কয়লাখনি এশিয়া এনার্জির হাতে কি তুলে দেওয়া হতো? রপ্তানিসহ উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলার সুযোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে বছরের পর বছর ধরে কয়লানীতি প্রণয়নের চেষ্টা কি চলত? এই নীতি না হওয়ার ছুঁতায় কয়লা তোলা বা আমদানি আটকে রেখে বছরের পর বছর কি বিদ্যুৎ সংকট টিকিয়ে রাখা হতো? জনগণকে কি জীবন ও রক্ত দিতে হতো? ইংরেজ বণিকের স্বার্থ রক্ষায় দেশের স্বাধীনতা তাদের হাতে তুলে দিতে কাশিমবাজার কুঠিতে যেমন একদিন ষড়যন্ত্র হয়েছিল, যমুনা রিসোর্টেও কি দেশের কয়লাসম্পদ নিয়ে তেমন ষড়যন্ত্র হতো? ফুলবাড়ী চুক্তি বহাল থাকা অবস্থায় এশিয়া এনার্জির দ্বারা ফুলবাড়ী খনি উন্নয়নের ব্যাপারে সবুজ সংকেত কি দেওয়া হতো? বিরোধীদলীয় নেত্রী থাকাকালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ফুলবাড়ী চুক্তি বাস্তবায়নের ব্যাপারে দ্ব্যর্থহীন ঘোষণায় তাঁর অবস্থান সুস্পষ্ট করা সত্ত্বেও তাঁর সরকারের নীতিনির্ধারকরা কি ওই সবুজ সংকেত দিত?
গত ১৪ জানুয়ারি প্রকৌশলীদের এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় জানা গেছে, এখনই দেশের খনির কয়লা না তুলে আমদানি করা কয়লায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা সরকার গ্রহণ করেছে। অবশ্য বড়পুকুরিয়া খনির কয়লা ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে তোলা হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে দীঘিপাড়া ও খালাসপীর খনির কয়লা তোলায় কোনো সমস্যা নেই। তাঁর ওই ঘোষণা ২০০৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ফুলবাড়ী জনসভায় প্রদত্ত ঘোষণারই ধারাবাহিকতা ও পুনরাবৃত্তি বলে ধারণা করা যায়। এ ঘোষণার বিরুদ্ধে সরকারের নীতিনির্ধারকদের ওই সবুজ সংকেতের কারণে বিদ্যমান বিদ্যুৎ সংকটের সমাধান এখন অনিশ্চিত এবং লোডশেডিং অনিবার্য। ফলে জনগণ উদ্বিগ্ন। কারণ এশিয়া এনার্জির দ্বারা ফুলবাড়ী খনির কয়লা তোলার একদিকে ষড়যন্ত্র চলবে, অন্যদিকে কয়লা আমদানি এবং দীঘিপাড়া ও খালাসপীর খনির কয়লা তোলার ক্ষেত্রে কৌশলে আগের মতোই বিলম্ব ঘটানো হবে।
সরকারের উপদেষ্টা লাগবে বা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। বরং না লাগা বা না থাকাটাই অস্বাভাবিক। কিন্তু এই উপদেষ্টা যদি সরকারের নির্বাহী ক্ষমতাধারী হন এবং সেই ক্ষমতা প্রয়োগ ও ভোগ করেন, সে ক্ষেত্রে সাংবিধানিক শপথ না নেওয়া এমন উপদেষ্টা অসংযত হয়ে পড়েন এবং সংযম হারান। বর্তমান সরকারের উপদেষ্টাদের, বিশেষ করে জ্বালানি উপদেষ্টার ক্ষেত্রে এ কথা বিশেষভাবে প্রযোজ্য। টিভি এবং পত্র-পত্রিকায় তাঁর নানা রকম বক্তব্য-বিবৃতি দেখে ও শুনে তা-ই মনে হয়। অনেকেই মনে করেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট যে সরকার সমাধান করতে পারেনি, এর জন্য জ্বালানি উপদেষ্টা অনেকাংশে দায়ী।
গত ৯ এপ্রিল বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি 'বিদ্যুৎ সংকট ও জনস্বার্থ' শীর্ষক আলোচনা সভা করে। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন রাশেদ খান মেনন এবং প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভুঁইয়া। মূল আলোচক হিসেবে আমার লিখিত বক্তব্য সভায় উপস্থাপন করি। সভা শেষে হাত মিলিয়ে তাঁর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি আমাকে অতি বিনয়ের সঙ্গে জানালেন, সরকারের একার পক্ষে সংকট থেকে বিদ্যুৎকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। জবাবে বলেছি, 'আমি তো তা বলিনি। আমি মনে করি, বিদ্যুৎকে সংকট থেকে মুক্ত করতে হলে সবার আগে জ্বালানি উপদেষ্টার কবল থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে মুক্ত করতে হবে। এ কাজটি কেবল সরকারই করতে পারে।' সুবিদ আলী ভুঁইয়াও তাই-ই মনে করেন- আমার কথা শুনে বললেন রাশেদ খান মেনন। সরকারের ভেতর-বাইরের অনেকেই বিদ্যুৎ সংকট সমাধানের ব্যাপারে আমি যা মনে করি, তা-ই মনে করেন। কিন্তু যদি মার্কিন রাষ্ট্রদূত তা মনে না করেন, তাহলে সংকটের সমাধান হয় কিভাবে? উইকিলিকসের প্রকাশিত তথ্যে এমন ধারণা পাওয়া যায়।
শুরুতেই খুরশেদ আলমের মতো একজন বিশেষজ্ঞকে পুরো প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করায় মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধজনিত সংকট সমাধানে সরকার যেমন সফল হয়েছে, তেমনি বিদ্যুৎ সংকট সমাধানেও সরকার সফল হতো, যদি ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর পরিবর্তে তাঁর জায়গায় খুরশেদ আলমের মতো একজন বিশেষজ্ঞকে আনা হতো। খাদ্য সংকট মাথায় নিয়ে এ সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। এই সংকট সমাধানে সরকার সফল হতো না, যদি মতিয়া চৌধুরীর পরিবর্তে ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর মতো কাউকে কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্বে আনা হতো। খাদ্যের জন্য লড়াই মানব সভ্যতার একটি প্রাচীনতম ক্ষত। এই ক্ষত নিরাময়ে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেছে। কিন্তু জ্বালানির জন্য বাংলাদেশে লড়াই চলছে। এই লড়াইয়ের সফল পরিণতি লাভের এখনই সময়। কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ জ্বালানি উপদেষ্টা। স্বাধীনতার ৪০ বছর পর বিশেষ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। তাই আমার মনে হয়, এই লড়াইয়ের পরিণতি হতে পারে অচিরেই জ্বালানি অপরাধীদের বিচারের জন্যও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। সেই ট্রাইব্যুনালে এ কে এম মোশাররফ হোসেনসহ আর কে কে বিচারের সম্মুখীন হবেন, জ্বালানি অপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোন দল বা জোট রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসবে এবং এই ট্রাইব্যুনাল গঠিত হবে কি না, সেটাই কি এখন দেখার বিষয়?
২০০৬ সালে টাটার তিন বিলিয়ন ডলারের রপ্তানিমুখী জ্বালানিনির্ভর প্রকল্পের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে ওঠে। সেই সময় টাটার পক্ষ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে মতবিনিময়ের চেষ্টা চলে। তারা সেই সময় একাধিকবার আমার সঙ্গেও আলোচনায় বসে। সেই আলোচনার বিবরণী লিখিত আকারে রেকর্ড করা হয়। টাটার প্রস্তাবটি প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে এ আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিধায় টাটার পক্ষ থেকে আমাকে ধন্যবাদ জানানো হয়। আমার যে ঘনিষ্ঠ শিক্ষাবিদ বন্ধু টাটাকে আমার সঙ্গে আলোচনার পরামর্শ দেন, তিনি এখন সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন। দুই বছর আগে আক্ষেপ করে তাঁকে বলেছিলাম, 'উপকার হবে বলে আমার সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য টাটাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেই আলোচনায় শুধু টাটারই উপকার হয়নি, দেশেরও উপকার হয়েছে। আজ যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট, তা নিয়ে কি সরকারকে আমার সঙ্গে আলোচনায় বসার পরামর্শ দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না?' জবাবে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি বলেছিলেন, 'অবশ্যই মনে করি। কিন্তু সমস্যা হলো, যাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে, তাঁকে তো আপনি পছন্দ করেন না।' 'তিনি কে?'- জানতে চাইলে বলেন, 'তৌফিক-ই-ইলাহী'। এ কথা শুনে বলেছিলাম, 'সরকারের ভাগ্যে তাহলে সুনাম ও সফলতা লেখা নেই।' আমার সেদিনকার ওই কথা সঠিক ছিল কি না, আজ দুই বছর পর আলোচ্য প্রেক্ষাপটে তা বিচারের ভার পাঠকের ওপর রইল।

লেখক : জ্বালানি বিশেষজ্ঞ

No comments

Powered by Blogger.