বিশেষ সাক্ষাত্কার-দ্রুতগতিসম্পন্ন গণপরিবহন-ব্যবস্থার বিকল্প নেই by জামিলুর রেজা চৌধুরী

জামিলুর রেজা চৌধুরীর জন্ম সিলেটে। ১৯৬৫ সালে তিনি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (বর্তমানে বুয়েট) থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে সম্মানসহ বিএসসি পাস করে সেখানেই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগে দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করেছেন।


বাংলাদেশের ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলসমূহের মানচিত্র তৈরি ও ভূমিকম্প-প্রতিরোধী ইমারত নির্মাণের নীতিমালার রূপরেখা প্রণয়নের জন্য ১৯৯৩ সালে গঠিত স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৯৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তিনি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪—২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের দুই খ্যাতনামা প্রকৌশল পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পরিচালিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা সমীক্ষাবিষয়ক ৩৪ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন তিনি।
 সাক্ষাত্কার নিয়েছেন মশিউল আলম

প্রথম আলো  ঢাকা মহানগরের যানজট নিরসনের বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানা কথাবার্তা চলছে। বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও শোনা গেছে বিভিন্ন সরকারের সময়ে। কিন্তু কার্যত তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, যাতে করে এই সমস্যাটির একটা স্থায়ী সমাধান ঘটে। ভবিষ্যতে সমস্যাটি যেন আরও প্রকট না হয় সে লক্ষ্যেও বড় কোনো উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
জামিলুর রেজা চৌধুরী  ঢাকার যানজট সমস্যা নিরসনের জন্য করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে গত প্রায় দেড় দশক ধরে সরকারি উদ্যোগে অনেকগুলো সমীক্ষা হয়েছে। ঢাকার ইন্টিগ্রেটেড ট্রাফিক স্টাডি, আরবান ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান এবং স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান। বিশ্বব্যাংকসহ কিছু বিদেশি অর্থায়নে যে সমীক্ষাগুলো করা হয়েছিল, সেগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ২০২৫ সাল নাগাদ ঢাকার জনসংখ্যা কী পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে, বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের সংখ্যা কতটা বাড়তে পারে এগুলোর সমীক্ষা করে সুনির্দিষ্ট কতকগুলো সুপারিশ করা হয়েছিল।
প্রথম আলো  কী ধরনের সুপারিশ?
জামিলুর রেজা চৌধুরী  কিছু সুপারিশ পরিবহন-নীতিসংক্রান্ত। কী কী নীতিমালা অনুসরণ করা হবে সে ব্যাপারে সত্তরটা সুপারিশ ছিল। দ্বিতীয়ত ছিল একটি পরিকল্পনা, যেটাকে মাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) বলে, বাংলায় বলা যেতে পারে দ্রুতগতিসম্পন্ন গণপরিবহন। তৃতীয়ত ছিল, ঢাকা মহানগরের যানবাহন সমস্যার সমাধানের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন সরকারি, আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কীভাবে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করা যায়।
প্রথম আলো  পরিবহন-নীতির ব্যাপারে প্রধান সুপারিশগুলো কী ছিল, যদি সংক্ষেপে বলেন।
জামিলুর রেজা চৌধুরী  পরিবহন-নীতির ক্ষেত্রে একটি বড় বিবেচনা ছিল পথচারীদের চলাচলের বিষয়টি। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক লোক ঢাকা মহানগরের রাস্তাঘাটে চলাচল করে। এ বিষয়ে নীতিটি হচ্ছে, পথচারীদের চলাচলের উপযোগী ফুটপাত ও নিরাপদে রাস্তা পারাপারের ব্যবস্থা করতে হবে। পথচারীরা যাতে নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে রাস্তা পার হতে পারে, সেই ব্যবস্থা রাখতে হবে। জেব্রাক্রসিং, ওভারব্রিজ ও আন্ডারপাস—এই তিন ধরনের ব্যবস্থাই নেওয়া যেতে পারে। এটা এক নম্বর পলিসি ছিল। দ্বিতীয়ত, ঢাকা মহানগরের ভেতরে বিভিন্ন রুটে যে বাসগুলো চলাচল করে, সেগুলোর চলাচলের মধ্যে শৃঙ্খলা আনা। বাসগুলো ব্যক্তিমালিকানার, কোনো কোনো মালিকের বাস একাধিক রুটে চলাচল করে। বিভিন্ন মালিকের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলে। অধিক লাভের জন্য বাসগুলো যত বেশি পারে যাত্রী-পরিবহনের চেষ্টা করে। তারা রাস্তার পাশে টেবিল বসিয়ে প্রত্যেকে আলাদা আলাদাভাবে টিকিট বিক্রি করে। রোদ-বৃষ্টিতে যাত্রীরা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করে। বাসগুলোর ড্রাইভার-হেলপাররা যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্য বা নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনা করে না। এ ক্ষেত্রে সুপারিশ আছে, একটা রুটে একটি কোম্পানির বাসই শুধু চলবে। সেই কোম্পানি গঠিত হতে পারে যৌথভাবে, সমবায় সমিতি হতে পারে। যা আয় হবে মালিকেরা ভাগ করে নেবে। একটা রুটে এক কোম্পানির এক রঙের বাস চলবে। এর ফলে এ ক্ষেত্রে যাত্রী-পরিবহনের প্রতিযোগিতা থাকবে না, শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। তা ছাড়া, প্রতিবার টিকিট কেনার পাশাপাশি প্রিপেইড টিকিট ব্যবস্থা থাকলে ঝামেলা কমবে। যেমনটি বিভিন্ন দেশে আছে। সপ্তাহের বা পুরো মাসের জন্য প্রিপেইড টিকিটের ব্যবস্থা থাকতে পারে।
প্রথম আলো  কিন্তু এই বাসগুলোর জন্য সুনির্দিষ্ট স্টপেজ, যাত্রীছাউনি এসব নেই, বাসগুলোতে ওঠানামা করাও বেশ কষ্টকর, নারী-শিশু ও বয়স্ক মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ...
জামিলুর রেজা চৌধুরী  হ্যাঁ, সুনির্দিষ্ট স্টপেজ থাকতে হবে, স্টপেজ ছাড়া অন্য কোথাও বাস থামতে পারবে না। আর যাত্রীরা যাতে তাড়াতাড়ি বাসে উঠতে বা নামতে পারে, সে জন্য বাসগুলোর ফ্লোর লেভেল নিচু হওয়া দরকার, দরজাগুলো চওড়া হওয়া দরকার। ঢাকায় অনেক বাস আমদানি করা হয়েছে, যেগুলো আসলে লং ডিসটেনসে চলার জন্য তৈরি। দেখবেন, কিছু কিছু বাসের নিচে মালপত্র রাখারও ব্যবস্থা আছে। এগুলোর ফ্লোর লেভেল রাস্তা থেকে দুই-আড়াই ফুট উঁচু। ফলে উঠতে-নামতে বেশি সময় লাগে, বাসগুলোকে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করতে হয়।
প্রথম আলো  ট্রাফিক নিয়মও তো বেশ ঢিলেঢালা...
জামিলুর রেজা চৌধুরী  ঢাকা মহানগরে যেসব ট্রাফিক-সংকেতব্যবস্থা বসানো হয়েছে, সেগুলো ঠিকমতো মেনে চলা হয় না। অনেক সময় লাল বাতি জ্বললেও গাড়ি চলে, সবুজ বাতি জ্বলার সময় থেমে থাকে। এই যে একটা নৈরাজ্য, এটা চলতে দেওয়া যায় না। অথচ অনেক টাকা ব্যয় করে এই স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বসানো হয়েছে, যেটা কেন্দ্রীয়ভাবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যানচলাচল নিয়ন্ত্রণ করার কথা। কিন্তু এটা সেভাবে ব্যবহার হচ্ছে না। তার মানে এই বিনিয়োগটা অপচয় হচ্ছে। এখানে পরিচালনা-ব্যবস্থাপনার দিকটি গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথম আলো  এবার পরিকল্পনার অংশটি নিয়ে কিছু বলুন।
জামিলুর রেজা চৌধুরী  ঢাকা মহানগরের একটা বড় দুর্বলতা, এর প্রধান সড়কগুলো উত্তর-দক্ষিণমুখী। মিরপুর রোড, বিমানবন্দর সড়ক ও বিশ্বরোড বা প্রগতি সরণি—এই তিনটা ধমনি উত্তর-দক্ষিণমুখী। এগুলোর মধ্যে পূর্ব-পশ্চিম-সংযোগ খুব কম, প্রায় নেই বললেই চলে। এটা একটা বড় সীমাবদ্ধতা। র্যাংগস ভবন ভেঙে বিজয় সরণি থেকে একটা সংযোগ সড়ক তৈরি হচ্ছে, এটা হলে কিছু সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু এটা তেজগাঁও পর্যন্ত নিয়ে শেষ করে দেওয়া হচ্ছে। এটাকে যদি আরও পূর্ব দিকে রামপুরা পর্যন্ত নেওয়া যায়, তাহলে আরও ভালো হবে। আমি যেটা বলতে চাচ্ছি, ঢাকা মহানগরের ভেতরে পূর্ব-পশ্চিমে আরও অনেক রাস্তা প্রয়োজন। পরিকল্পনায় ৫৪টি নতুন রাস্তার কথা বলা হয়েছে। এগুলো তো একবারে তৈরি করা যাবে না, তবে পর্যায়ক্রমে যদি এর বাস্তবায়ন হয়, তাহলে যানচলাচল সমস্যার কিছুটা সমাধান হবে। দ্বিতীয়ত, কিছু এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করতে হবে।
প্রথম আলো  কিন্তু এটা নিয়ে তো নানা রকমের ভিন্নমতের কথা শোনা যায়?
জামিলুর রেজা চৌধুরী  হ্যাঁ, এর সমালোচনা করে বলা হয় যে এতে গাড়ির মালিকদেরই বেশি সুবিধা হবে, জনপরিবহনের উপকার হবে কম। তবে তার পরও আমাদের ধারণা, এতে করে রাস্তাঘাটের ওপর চাপ অনেকটা কমে যাবে, ফলে যানজট সমস্যা আংশিকভাবে লাঘব হবে। পরিকল্পনার আরেকটা অংশ হলো বিআরটি বা বাস র্যাপিড ট্রানজিট। বিআরটি হলো রাস্তার ওপর দিয়েই চলে, এমন একটা ব্যবস্থা। এর জন্য নির্দিষ্ট আলাদা লেন থাকে, নির্দিষ্ট স্টপেজ থাকে। বাসগুলোও বিশেষ ধরনের; গ্যাস দিয়ে চালানো যায়। এগুলো বেশ দ্রুত চলে। দক্ষিণ আমেরিকার কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোতা শহরে বিআরটি সবচেয়ে সফল হয়েছে। ঢাকায় বিআরটি করতে পারলে ভালো হবে, কারণ এর খরচ এমআরটির (মাস র্যাপিড ট্রানজিট) তুলনায় অনেক কম। নতুন রাস্তা তৈরি করতে হয় না, বিদ্যমান রাস্তার ওপর দিয়েই বাসগুলো চলতে পারবে।
প্রথম আলো  এমআরটির বিষয়ে আপনাদের সুপারিশ কী ছিল?
জামিলুর রেজা চৌধুরী  এমআরটির বিষয়ে আমাদের সুপারিশ ছিল আন্ডারগ্রাউন্ড আর ওভারগ্রাউন্ড। কোনো কোনো জায়গায় আন্ডারগ্রাউন্ড অর্থাত্ পাতালরেল-ব্যবস্থায় যেতেই হবে। আর কিছু জায়গা ওভারগ্রাউন্ড, এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে করা যাবে।
প্রথম আলো  কিন্তু পাতালরেলের ব্যাপারে একটা মত আছে, এটা অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে না। অনেক দেশে ভর্তুকি দিয়ে চালানো হচ্ছে...।
জামিলুর রেজা চৌধুরী  দিল্লিতে পাতালরেল-ব্যবস্থা প্রথম থেকেই লাভজনক হয়েছে। সেখানে পরিচালন-ব্যয় যা হয়, তার চেয়ে বেশি আয় হয় টিকিট বিক্রি থেকে। এটা এখন আরও বাড়ছে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এমআরটি ব্যবসায়িকভাবে সফল করা যাবে না। এটার জন্য দরকার—যেটাকে বলে সফট লোন বা দীর্ঘ মেয়াদে স্বল্প সুদে ঋণ। দিল্লিতে পাতালরেল নির্মাণে জাপানিরা সফট লোন দিয়েছে, ষাট শতাংশ বিনিয়োগ হয়েছে তাদের এই ঋণের অর্থে, এক শতাংশ সুদে। এ রকম না হলে সাত বা আট শতাংশ সুদে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পাতালরেল নির্মাণ করলে তাকে ব্যবসায়িকভাবে সফল করা সম্ভব নয়।
প্রথম আলো  এমআরটি কোন কোন রুটে হবে?
জামিলুর রেজা চৌধুরী  আমাদের পরিকল্পনায়, একটা সায়েদাবাদ থেকে মহাখালী হয়ে উত্তরা, টঙ্গী; টঙ্গীর সঙ্গে গাজীপুর পর্যন্ত নেওয়া যাবে। আর এ দিকে সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী থেকে নারায়ণগঞ্জ।
প্রথম আলো  পাতালরেল?
জামিলুর রেজা চৌধুরী  পাতালরেল, কিন্তু পুরোটা নয়। যেখানে ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙা প্রায় অসম্ভব, সেখানে ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ করতেই হবে, বাকিটা হবে মাটির ওপর দিয়ে, এলিভেটেড। যেমন করা হয়েছে দিল্লিতে। সেখানে ৩২১ কিলোমিটার এমআরটির মাত্র দশ ভাগ হচ্ছে ভূগর্ভস্থ অর্থাত্ পাতালরেল, বাকি নব্বই ভাগই এলিভেটেড । দ্বিতীয় লাইনটি হবে সায়েদাবাদ থেকে ধানমন্ডি হয়ে মিরপুর-পল্লবী এবং শেষ পর্যন্ত উত্তরা তৃতীয় পর্যায়। তৃতীয়টি হবে সার্কেল লাইন, বাড্ডা থেকে শুরু করে গুলশান, এদিকে ক্যান্টনমেন্টের ভেতর দিয়ে এসে ধানমন্ডি হয়ে আবার ঘুরে সোনারগাঁও হোটেল হয়ে রামপুরা-বাড্ডা হয়ে গুলশান। এটা হবে একটা বৃত্তাকার পথ। উত্তর-দক্ষিণ দুটো প্রধান পথের সঙ্গে সংযোগ ঘটবে এই সার্কেল-লাইনের মাধ্যমে। আমরা ২০০৫ সালে বলেছিলাম যে যত দ্রুত সম্ভব এটার একটা বিশদ কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হোক। তার পরের ধাপ হবে সম্ভাব্যতা যাচাই, কোথায় কোথায় স্টেশন হবে তা চিহ্নিত করা, তারপর প্রকৌশলগত দিকগুলো কী হবে—এসব করতে করতে অনেকগুলো বছর চলে গেছে। সম্প্রতি জাপানিরা একটা সমীক্ষা করেছে। পল্লবী থেকে সায়েদাবাদ পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটারের মূলত এলিভেটেড রেল নির্মাণে আগ্রহী তারা। এটা করতে গেলে নকশা তৈরিতে ছয় মাস, আর নির্মাণ সম্পন্ন করতে লাগবে চার-পাঁচ বছর। অর্থাত্ ২০১৪-১৫ সালের মধ্যে আমরা প্রথম এলিভেটেড রেলব্যবস্থা পেতে পারি। এর অধিকাংশই হবে এলিভেটেড, তবে কিছু অংশ আন্ডারগ্রাউন্ডও হবে। গত সপ্তাহেই জাপানিদের সেই সমীক্ষার উপস্থাপনা হয়েছে। এরপর তারা নকশা তৈরি করে সরকারকে দেবে, সরকার সেটা গ্রহণ করে তাহলে তারা বিশদ কাজে যাবে।
প্রথম আলো  চার-পাঁচ বছর পর দেখা যাবে ঢাকার লোকসংখ্যা ও যানবাহনের সংখ্যা এতটাই বেড়েছে যে নতুন রাস্তাঘাট হওয়ার পরও যানজট সমস্যা কমছে না। ঢাকার জনসংখ্যা কি নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়বেই?
জামিলুর রেজা চৌধুরী  বিভিন্ন পরিকল্পনা কয়েক বছর পর পর হালনাগাদ করতে হয়। উন্নত অনেক দেশে এমন সিদ্ধান্ত হয় যে কোনো শহরের জনসংখ্যা তারা একটা নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি হতে দেবে না। আমাদের দেশে এটা সম্ভব নয়। আমাদের প্রয়োজন জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন। একটা পরিকল্পনা আছে মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, ওদিকে নারায়ণগঞ্জ ইত্যাদি নিয়ে সাত হাজার বর্গকিলোমিটার জুড়ে বৃহত্তর ঢাকাকে নিয়ে। বলা হচ্ছে, ২০২৫ সালে এই বৃহত্তর ঢাকার লোকসংখ্যা হবে সোয়া তিন কোটি। স্বাভাবিকভাবে জনসংখ্যা বাড়ে কিছু নির্দিষ্ট জায়গায়, যেখানে মানুষের কর্মসংস্থান ও যোগাযোগের সুবিধা বেশি। যেমন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই পাশে যদি পরিকল্পিতভাবে শিল্পনগরী গড়া হয়, যাঁরা ওখানে শিল্প গড়ে তুলবেন তাঁদের যদি কর-প্রণোদনা দেওয়া হয়, তাহলে উদ্যোক্তারা সেদিকে যাবেন। একইভাবে সাভার অঞ্চলেও এটা করা হলে সেদিকে শ্রমিকেরা চলে যাবেন, সেখানেই বসবাস করবেন। তাতে ঢাকার ওপর জনসংখ্যার চাপ কমবে।
প্রথম আলো  কিন্তু মানুষের চলাচলের সুবিধাটা তো সংকুচিতই হয়ে আসছে। গণপরিবহনের অগ্রগতি বা কার্যকারিতা বাড়ানো হলে কি মানুষ ঢাকার বাইরে থেকে এসেও অফিস-আদালত করতে পারত না?
জামিলুর রেজা চৌধুরী  নিশ্চয়ই। ঢাকার সঙ্গে বাইরের শহরগুলোর দ্রুত রেলসার্ভিস করা হলে ওদিকে কুমিল্লা, এ দিকে টাঙ্গাইলসহ আশপাশের শহরগুলো থেকে মানুষ ঢাকায় এসে অফিস করে ফিরে যেতে পারে, ঢাকাতেই বাস করতে হবে না। পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে রেলের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে, এটা হলে বিক্রমপুর এলাকার মানুষ খুব সহজেই রেলে করে ঢাকায় আসা-যাওয়া করতে পারবে। পৃথিবীর অনেক বড় বড় শহরে বিপুলসংখ্যক মানুষ ট্রেনে করে আশপাশের শহরগুলো থেকে অফিস করে চলে যায়। আমরা যদি পাশের পশ্চিমবঙ্গের দিকেই তাকাই, প্রতিদিন প্রায় ২০ লাখ লোক কম্যুটার রেলে করে কলকাতায় কাজে আসে, সন্ধ্যায় কাজ শেষে ফিরে যায়।
প্রথম আলো  এমন কথা অনেক দিন ধরেই শোনা যায়। কিন্তু রেলের অবস্থা বেশ শোচনীয়। এটা কেন?
জামিলুর রেজা চৌধুরী  রেলের পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যায়, সম্পূর্ণ অবহেলা, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ইত্যাদি কারণে রেলব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়ার মতো। আমার মনে হয়, প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে হলেও কম্যুটার রেলকে প্রমোট করা দরকার। অর্থাত্, একদিকে দ্রুতগতিসম্পন্ন গণপরিবহন, লাইট র্যাপিড ট্রান্সপোর্ট ও বাস র্যাপিড ট্রান্সপোর্ট-ব্যবস্থার মাধ্যমে ঢাকা মহানগরের ভেতর এবং উপকণ্ঠে, অন্যদিকে কম্যুটার রেলব্যবস্থাকে বিকশিত ও উন্নত করে ঢাকার সঙ্গে বাইরের যোগাযোগ দ্রুততর ও সহজতর করা প্রয়োজন। এ দুটো উদ্যোগ সমান্তরালভাবেই চালাতে হবে। শুধু পরিকল্পনা নয়, বাস্তবায়নও করতে হবে। বেশি সময়ক্ষেপণের সুযোগ নেই।
প্রথম আলো  আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
জামিলুর রেজা চৌধুরী  আপনাকেও ধন্যবাদ।

No comments

Powered by Blogger.