পথের বাধাগুলো সরিয়ে ফেলুন-দুর্নীতি দমন

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের হিসাব অনুযায়ী দুর্নীতির ধারণা সূচকে এক নম্বর স্থান থেকে বাংলাদেশ কিঞ্চিত্ সরে আসায় কেউ কেউ আহ্লাদিত হলেও পরিস্থিতির যে ইতরবিশেষ পরিবর্তন হয়নি, পত্রিকার পাতা খুললেই এর প্রমাণ পাওয়া যায়। অথচ আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো, ক্ষমতায় থেকে কেউ দুর্নীতির কথা স্বীকার করতে চান না। অথচ দুর্নীতি কী ও কত প্রকার, সেবাপ্রার্থী জনগণ তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।


বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসেছিল দুর্নীতির কলঙ্ক ঘুচিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে। কিন্তু গত ১৩ মাসে সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে চোখে পড়ার মতো কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানা নেই। বরং তারা অতীতের দুর্নীতির তদন্ত ও বিচার নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ আছে। অতীতে সংঘটিত সব দুর্নীতির বিচার করার ব্যাপারে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। তবে সে ক্ষেত্রে কারও প্রতি রাগ বা অনুরাগ দেখানো যাবে না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান সফল না হলেও তারা যে রোগের উপসর্গগুলো চিহ্নিত করেছিল, তা অস্বীকারের উপায় নেই। রাজনৈতিক দুর্নীতির মূলে রয়েছে আর্থিক দুর্নীতি। এ কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন ও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর অসহযোগিতার কারণে তা সফল হয়নি।
রোববার ইকোনমিক রিপোর্টারস ফোরাম আয়োজিত সেমিনারেও বক্তারা দুর্নীতি রোধে প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন কালো টাকানির্ভর রাজনীতি ও নির্বাচন-প্রক্রিয়াকে। সেমিনারে ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকদের মধ্যে মুনাফা ভাগাভাগি, কারসাজি করে শেয়ারবাজারে দর ওঠানো-নামানো, রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীদের আয়কর ফাঁকি দেওয়া, চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারের পরিবহন-ব্যয় ইত্যাদি নিয়েও আলোচনা হয়। বক্তারা দুর্নীতি বন্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়া এবং বিচারের দীর্ঘসূত্রতা সম্পর্কে যেসব কথা বলেছেন, তাও প্রণিধানযোগ্য।
নির্বাচনে কেউ কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলে নির্বাচিত হয়ে তিনি সেটি সুদে-আসলে উশুল করে নেবেন, এটাই স্বাভাবিক। এই অনাচার রোধে নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে নির্বাচনী ব্যয় মেটানোর যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা সমর্থনযোগ্য। অন্যদিকে যখন বিভিন্ন মহল থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনকে প্রকৃত অর্থে স্বাধীন ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার তাগিদ দিচ্ছেন সবাই, তখন তার হাত-পা বাঁধার চেষ্টা দুঃখজনক। কোন সরকারের আমলে দুর্নীতি কম বা বেশি হয়েছে, ওই বিতর্কের চেয়েও জরুরি হলো দুর্নীতির ফাঁকফোকরগুলো চিরতরে বন্ধ করা; পথের বাধাগুলো সরিয়ে ফেলা। অন্যথায় টোটকা ওষুধে কিংবা কারও ব্যক্তিগত সদিচ্ছায় খুব বেশি এগোনো যাবে না, এ সরল সত্যটি সরকারের নীতিনির্ধারকদের বুঝতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.