ও মা-আম্মুউ

লোভ। আমার বড্ড লোভ। যেকোনো কিছুতেই লোভ করি। যেমন, চিংড়ি মাছের প্রতি আমার ভীষণ লোভ। আম্মু রান্না করে একটু ওদিক গেলেই আমি চুপি চুপি দুটো পেটে চালান করে দিই। অন্যদের বাড়ির ছাদে, কারও টবে লাল গোলাপ ফুটেছে। আমার লোভী চোখ পড়বে সেদিকে। যেভাবেই হোক,


ওটা চুরি করে আমার পড়ার টেবিলে সাজিয়ে রাখা চাই। কারও বাড়ির ছাদে আমের আচার শুকাতে দিয়েছে। আমি গোপনে সেটি সাবাড় করে আসি।
স্কুলের আমার বন্ধুদের নতুন ঘড়ি, কলম, শার্পনার, রাবার কিংবা বই। সুযোগ পেলেই আমি হাপিশ করে দিই।
সত্যি বলতে কি, অন্যেরটা নিতে আমার কেন যেন খুব ভালো লাগে।
এসব দেখে আম্মু খুব বকত। বলত, ‘খুব খারাপ, খুব খারাপ, তুমি নিজেকে ঠিক করো। এত লোভ করলে তুমি কোথাও জায়গা পাবে না, পছন্দ করবে না তোমাকে কেউ, ভালো মানুষ হও।’ আমি ঠিক হতাম না। এত সহজে কি নিজেকে বদলানো যায়, বলো?
আমি অহংকারী। বড্ড অহংকারী। আমাদের বাড়ির চারতলার মেয়েটির সঙ্গে (আমার সমবয়সী) আমি কথা বলি না। কেন বলব? আমি তো বাড়িওয়ালার মেয়ে, তাই না?
আমি আমার ক্লাসের পারুল নামের মেয়েটির সঙ্গে বসি না। ও দেখতে ভালো নয়, তাই।
এসব দেখে আম্মু বলত, ‘অহংকার মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। তুমি ভালো মানুষ হও। ভালো মানুষকে সবাই ভালোবাসে। তুমি ভালো হলে তুমিও শান্তি পাবে।’
আমি একদমই সুবিবেচক নই। একদিন আমাদের বসার ঘরে ছোট বোন পুষ্পিতা আর কাজের মেয়ে পারুল ক্রিকেট খেলছিল। খেলতে খেলতে বলটা হঠাৎ লাইটে গিয়ে লাগল, আর লাইটটা ভেঙে গেল। আমি সেখানে গিয়ে পারুলকে ধমক দিলাম, বললাম, তোর দোষ, তুই বসার ঘরে খেলছিস কেন? বারান্দায় খেলতে পারিস না। তোর জন্যই তো লাইটটা ভাঙল। এ কথা বলে দিলাম ওর চুলের মুঠি ধরে টান।
আম্মু বলত, ‘সেখানে তো তোমার ছোট বোনও ছিল। তারও তো দোষ ছিল, তুমি ওকে কিছু বললে না কেন? এমন করলে মনে শান্তি পাবে না।’
এই হলাম আমি।
আর আমার আম্মু।
আম্মু। আম্মুউ। অনেক বছর ডাকতে ডাকতে অভ্যাস হয়ে গেছে। তাই খালি বাসায় আমি আম্মু আম্মু বলে বেড়াই। কিন্তু আম্মু যে সামনে এসে হাজির হয় না।
খুব কষ্ট লাগে। বুকটা শূন্য লাগে। আম্মু, কথা দিচ্ছি, তোমার আদর্শে বড় হব। এত দিন যে পাগলামি করেছি, কখনো আর করব না। ভালো কাজ করব। ভালো মানুষ হয়ে থাকব।
(আমার মা মারা গেছেন গত বছরের ১৭ অক্টোবর। আপনারা কি আমার মায়ের জন্য একটু দোয়া করবেন, প্লিজ?)
কাজী রিচি ইসলাম
মিরপুর, ঢাকা

No comments

Powered by Blogger.