নিরাপদ কর্মক্ষেত্র-শ্রমিকের মৃত্যু ও আমাদের দায়বদ্ধতা by লিয়াকত আলী সিদ্দিকীনিরাপদ কর্মক্ষেত্র-শ্রমিকের মৃত্যু ও আমাদের দায়বদ্ধতা by লিয়াকত আলী সিদ্দিকী
কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের মৃত্যু, দুর্ঘটনা, সন্তান-সন্ততি-স্বজনের কান্না—এসব যেন বাংলাদেশে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর যেন কোনো শেষ নেই, কোনো প্রতিকার নেই। যাঁদের রক্ত, ঘামে এ দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয়, বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বাড়ে, মালিকের বিত্ত-বৈভব বাড়ে, তাঁদের মৃত্যুতে কোথাও কোনো প্রতিরোধ নেই।
কিন্তু একজন শ্রমিক দেশে বা বিদেশে যেখানেই মৃত্যুবরণ করুক তার তদন্ত হওয়া এবং তা বন্ধ করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কিন্তু দেখা যায়, দায়সারা তদন্ত কমিটি গঠন করে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। সমস্যা চিহ্নিত করা হয় না, সমাধানের জন্য স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। কারণ তাঁদের মৃত্যুতে সমাজপতিদের কোনো ক্ষতি হবে না। কিন্তু বিবেকের দায়বদ্ধতাকে আমরা কীভাবে উপেক্ষা করব? সভ্যতার মাপকাঠি এটা নয় যে, সমাজের বলিষ্ঠরা কত প্রতাপশালী, বরং সভ্যতার মাপকাঠি হলো সমাজের দুর্বলেরা কতটা সুরক্ষিত।
বিশ্বের সব দেশেই ‘নিরাপদ কর্মক্ষেত্র’ আজ শ্রমিকদের একটি স্বীকৃত অধিকার। বহু আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বীকৃত এ অধিকার আজ শ্রমিকদের মানবাধিকারে পরিণত হয়েছে। জীবনের নিরাপত্তা মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে গণ্য। শিল্পোন্নত দেশগুলোয় কর্মক্ষেত্রে মৃত্যু ও দুর্ঘটনা হ্রাসের জন্য সুস্পষ্ট নীতিমালা রয়েছে। তা বাস্তবায়নে রয়েছে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা। ব্রিটেনে ষাটের দশকে প্রতি বছর কর্মক্ষেত্রে ছয় শ থেকে সাত শ শ্রমিকের মৃত্যু হতো এবং তিন লাখ শ্রমিক দুর্ঘটনার শিকার হতো। উইলসন সরকারের শ্রমমন্ত্রী বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করে পুরো আইনি কাঠামো পর্যালোচনা করার জন্য লর্ড এলফ রোবেনসের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী কমিশন গঠন করেন। ১৯৭২ সালে প্রদত্ত কমিশনের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে ১৯৬১ সালের ফ্যাক্টরি অ্যাক্ট বাতিল করে ব্রিটেনে একটি নতুন যুগোপযোগী আইনি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। মূলত কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল অ্যাপ্রোচের ওপর ভিত্তি করে ১৯৬১ সালের ফ্যাক্টরি অ্যাক্টের কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল। এর প্রধান সমস্যা এটি সম্পূর্ণভাবে সরকারকেন্দ্রিক ও সরকারনির্ভর। ফ্যাক্টরিমালিকদের কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নয়নে তেমন কোনো মাথাব্যথা ছিল না।
ব্রিটেনে রোবেনস কমিটির রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে ১৯৭৪ সালের ‘হেল্থ অ্যান্ড সেফটি অ্যাট ওয়ার্ক অ্যাক্ট’-এর মাধ্যমে পুরোনো ব্যবস্থা বাদ দিয়ে তার স্থলে একটি নতুন ব্যবস্থা চালু করা হয়। এর ভিত্তি হলো—যে প্রতিষ্ঠানই কর্মক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে বা যার প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনা ঘটবে, সব দায়-দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে। সাধারণভাবে দুর্ঘটনার দায়-দায়িত্ব মালিকদের ওপর চাপানোর সঙ্গে সঙ্গে এ ব্যবস্থায় ফ্যাক্টরিগুলোকে দুর্ঘটনা হ্রাসে নিজস্ব পদ্ধতি গ্রহণ করার ব্যাপক স্বাধীনতা দেওয়া হলো। কিন্তু তদারকি/নজরদারি ও নিয়মকানুনগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব রইল সরকারের হাতে। ১৯৯৯ সালের ম্যানেজমেন্ট অফ হেলথ অ্যান্ড সেফটি অ্যাট ওয়ার্ক রেগুলেশান্স-এর মাধ্যমে এ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করা হয়। স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে ব্যবস্থাপনার কেন্দ্রে নিয়ে আসা হলো। কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা হ্রাসের কাজে ব্যবস্থাপনার কলাকৌশলগুলো ব্যবহার করা হলো। এর নাম হলো অকুপেশনাল হেল্থ অ্যান্ড সেফটি ম্যানেজমেন্ট সিসটেম। সুর্নিদিষ্ঠভাবে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া ছাড়াও, কারখানাগুলোর স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক নীতিমালা তৈরি করার কথা বলা হলো। ঝুঁকি নিরূপণ ও তা মোকাবিলার কথা বলা হলো। স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ে শ্রমিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হলো। যদিও ব্রিটিশ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত নয়, তবুও কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা হ্রাসে এ ব্যবস্থা যথেষ্ট সফলতা অর্জন করেছে। ব্রিটেনে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকের জন্য প্রতিকার লাভের বিভিন্ন রাস্তা খোলা রয়েছে। অবহেলার জন্য মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করা ছাড়াও সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার আওতায় শ্রমিকেরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনজুরি বেনিফিটসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন।
১৯৮৪ সালে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের ভূপালে ইউনিয়ন কার্বাইড কোম্পানির কারখানায় দুর্ঘটনায় শ্রমিকসহ প্রায় আড়াই হাজার লোকের প্রাণহানি ঘটে। অন্য সূত্র মতে, প্রথম ৭২ ঘণ্টায়ই প্রায় আট থেকে ১০ হাজার লোকের মৃত্যু হয়। তারপর ভারত সরকার ১৯৪৮ সালের ফ্যাক্টরিজ অ্যাক্টে পরিবর্তন আনে। ১৯৪৮ সালের এমপ্লোয়িজ স্টেট ইনসুরেন্স অ্যাক্ট-এর আওতায় দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। আমাদের দেশে ২০০৫ সালে ঢাকার স্পেকট্রাম গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ৭০ জনেরও বেশি শ্রমিক নিহত ও শতাধিক আহত হন। বাংলাদেশে ১৯২৩ সালের ওয়ার্কসম্যানস কমপেনসেশনস অ্যাক্ট এবং ১৯৬৫ সালের ফ্যাক্টরিজ অ্যাক্টের ওপর ভিত্তি করেই মূলত ২০০৬ সালের শ্রম আইনে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা সম্পর্কিত বিধানগুলো করা হয়েছে। এটিকে এখন যুগোপযোগী করার সময় এসেছে। যুগ পাল্টেছে, কর্মক্ষেত্রে পরিবেশ পাল্টেছে, কিন্তু আমাদের মন-মানসিকতা ও আইন ব্যবস্থায় তেমন কোনো পরির্বতন আসেনি। বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। আমাদের দেশে শ্রমিক ও মালিকদের সচেতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। মালিকদের দায়বদ্ধতা বাড়াতে হবে। যদিও বর্তমান আইনে শ্রমিকদের বা তাঁদের পরিবারের প্রতিকার পাওয়ার ব্যবস্থা আছে, তবুও তা সহজলভ্য নয়। সে পথ সুগম করতে হবে। মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোয় আধুনিক কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালু করা যায় কিনা তা নিয়ে ভাবতে হবে। শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীনে কারখানা পরিদর্শকদের শক্তিশালী করতে হবে। নিরাপদ কর্মক্ষেত্র তৈরিতে শ্রমিক প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। মারাত্মক অবহেলার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। একজন শ্রমিকের মৃত্যু শুধু একটি পরিবারকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেয় না, বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থকেও মারাত্মক ক্ষুণ্ন্ন করে।
লিয়াকত আলী সিদ্দিকী: সাবেক চেয়ারম্যান, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
liaquat2009@live.com
বিশ্বের সব দেশেই ‘নিরাপদ কর্মক্ষেত্র’ আজ শ্রমিকদের একটি স্বীকৃত অধিকার। বহু আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বীকৃত এ অধিকার আজ শ্রমিকদের মানবাধিকারে পরিণত হয়েছে। জীবনের নিরাপত্তা মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে গণ্য। শিল্পোন্নত দেশগুলোয় কর্মক্ষেত্রে মৃত্যু ও দুর্ঘটনা হ্রাসের জন্য সুস্পষ্ট নীতিমালা রয়েছে। তা বাস্তবায়নে রয়েছে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা। ব্রিটেনে ষাটের দশকে প্রতি বছর কর্মক্ষেত্রে ছয় শ থেকে সাত শ শ্রমিকের মৃত্যু হতো এবং তিন লাখ শ্রমিক দুর্ঘটনার শিকার হতো। উইলসন সরকারের শ্রমমন্ত্রী বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করে পুরো আইনি কাঠামো পর্যালোচনা করার জন্য লর্ড এলফ রোবেনসের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী কমিশন গঠন করেন। ১৯৭২ সালে প্রদত্ত কমিশনের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে ১৯৬১ সালের ফ্যাক্টরি অ্যাক্ট বাতিল করে ব্রিটেনে একটি নতুন যুগোপযোগী আইনি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। মূলত কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল অ্যাপ্রোচের ওপর ভিত্তি করে ১৯৬১ সালের ফ্যাক্টরি অ্যাক্টের কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল। এর প্রধান সমস্যা এটি সম্পূর্ণভাবে সরকারকেন্দ্রিক ও সরকারনির্ভর। ফ্যাক্টরিমালিকদের কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নয়নে তেমন কোনো মাথাব্যথা ছিল না।
ব্রিটেনে রোবেনস কমিটির রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে ১৯৭৪ সালের ‘হেল্থ অ্যান্ড সেফটি অ্যাট ওয়ার্ক অ্যাক্ট’-এর মাধ্যমে পুরোনো ব্যবস্থা বাদ দিয়ে তার স্থলে একটি নতুন ব্যবস্থা চালু করা হয়। এর ভিত্তি হলো—যে প্রতিষ্ঠানই কর্মক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে বা যার প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনা ঘটবে, সব দায়-দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে। সাধারণভাবে দুর্ঘটনার দায়-দায়িত্ব মালিকদের ওপর চাপানোর সঙ্গে সঙ্গে এ ব্যবস্থায় ফ্যাক্টরিগুলোকে দুর্ঘটনা হ্রাসে নিজস্ব পদ্ধতি গ্রহণ করার ব্যাপক স্বাধীনতা দেওয়া হলো। কিন্তু তদারকি/নজরদারি ও নিয়মকানুনগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব রইল সরকারের হাতে। ১৯৯৯ সালের ম্যানেজমেন্ট অফ হেলথ অ্যান্ড সেফটি অ্যাট ওয়ার্ক রেগুলেশান্স-এর মাধ্যমে এ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করা হয়। স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে ব্যবস্থাপনার কেন্দ্রে নিয়ে আসা হলো। কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা হ্রাসের কাজে ব্যবস্থাপনার কলাকৌশলগুলো ব্যবহার করা হলো। এর নাম হলো অকুপেশনাল হেল্থ অ্যান্ড সেফটি ম্যানেজমেন্ট সিসটেম। সুর্নিদিষ্ঠভাবে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া ছাড়াও, কারখানাগুলোর স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক নীতিমালা তৈরি করার কথা বলা হলো। ঝুঁকি নিরূপণ ও তা মোকাবিলার কথা বলা হলো। স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ে শ্রমিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হলো। যদিও ব্রিটিশ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত নয়, তবুও কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা হ্রাসে এ ব্যবস্থা যথেষ্ট সফলতা অর্জন করেছে। ব্রিটেনে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকের জন্য প্রতিকার লাভের বিভিন্ন রাস্তা খোলা রয়েছে। অবহেলার জন্য মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করা ছাড়াও সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার আওতায় শ্রমিকেরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনজুরি বেনিফিটসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন।
১৯৮৪ সালে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের ভূপালে ইউনিয়ন কার্বাইড কোম্পানির কারখানায় দুর্ঘটনায় শ্রমিকসহ প্রায় আড়াই হাজার লোকের প্রাণহানি ঘটে। অন্য সূত্র মতে, প্রথম ৭২ ঘণ্টায়ই প্রায় আট থেকে ১০ হাজার লোকের মৃত্যু হয়। তারপর ভারত সরকার ১৯৪৮ সালের ফ্যাক্টরিজ অ্যাক্টে পরিবর্তন আনে। ১৯৪৮ সালের এমপ্লোয়িজ স্টেট ইনসুরেন্স অ্যাক্ট-এর আওতায় দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। আমাদের দেশে ২০০৫ সালে ঢাকার স্পেকট্রাম গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ৭০ জনেরও বেশি শ্রমিক নিহত ও শতাধিক আহত হন। বাংলাদেশে ১৯২৩ সালের ওয়ার্কসম্যানস কমপেনসেশনস অ্যাক্ট এবং ১৯৬৫ সালের ফ্যাক্টরিজ অ্যাক্টের ওপর ভিত্তি করেই মূলত ২০০৬ সালের শ্রম আইনে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা সম্পর্কিত বিধানগুলো করা হয়েছে। এটিকে এখন যুগোপযোগী করার সময় এসেছে। যুগ পাল্টেছে, কর্মক্ষেত্রে পরিবেশ পাল্টেছে, কিন্তু আমাদের মন-মানসিকতা ও আইন ব্যবস্থায় তেমন কোনো পরির্বতন আসেনি। বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। আমাদের দেশে শ্রমিক ও মালিকদের সচেতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। মালিকদের দায়বদ্ধতা বাড়াতে হবে। যদিও বর্তমান আইনে শ্রমিকদের বা তাঁদের পরিবারের প্রতিকার পাওয়ার ব্যবস্থা আছে, তবুও তা সহজলভ্য নয়। সে পথ সুগম করতে হবে। মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোয় আধুনিক কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালু করা যায় কিনা তা নিয়ে ভাবতে হবে। শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীনে কারখানা পরিদর্শকদের শক্তিশালী করতে হবে। নিরাপদ কর্মক্ষেত্র তৈরিতে শ্রমিক প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। মারাত্মক অবহেলার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। একজন শ্রমিকের মৃত্যু শুধু একটি পরিবারকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেয় না, বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থকেও মারাত্মক ক্ষুণ্ন্ন করে।
লিয়াকত আলী সিদ্দিকী: সাবেক চেয়ারম্যান, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
liaquat2009@live.com
No comments