প্রতিক্রিয়া-স্থানীয় উন্নয়নের দায়িত্বে কেন আইনপ্রণেতারা by মালেকা বেগম
৮ মার্চ পালনের একটি বিরল অনুষ্ঠানে ও ইউনিয়ন পরিষদের গ্রামীণ নারী প্রতিনিধিদের সক্রিয় সমাবেশে যোগ দিতে এলজিইডি ভবনে গিয়েছিলাম নারী আন্দোলনের প্রতিনিধি হিসেবে। নারী আন্দোলনের প্রতিনিধিদের মধ্যে আরো ছিলেন রাশেদা কে চৌধুরী ও সেলিনা হোসেন ।
স্থানীয় প্রশাসনের কারিগরি বা ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে স্থানীয় নারীর অংশগ্রহণ, অংশীদার ও ক্ষমতায়নের দৃশ্যমান একটি অনুষ্ঠান ও ওই সমাবেশের আয়োজনে কৃতিত্বের প্রশংসা করতেই হয়। নগর উন্নয়ন, পানি উন্নয়ন ও পল্লি উন্নয়নবিষয়ক তিনটি প্রকল্পভিত্তিক কাজের নানামুখী পরিকল্পনায় সুদক্ষ মেধার পরিচয় জানা যায় কাগজ-কলমে। যে স্বল্পসংখ্যক প্রতিনিধি স্থানীয় নারী এসেছিলেন ঢাকায় সুদূর ইউনিয়ন পরিষদের গ্রামাঞ্চল ও শহর থেকে, তাঁদের কথায়, চাল-চলনে, প্রদর্শনীর নানা কারুকাজে, দায়িত্ব পালনের গুরুত্ব উপলব্ধিতে আমরা আমন্ত্রিত অংশগ্রহণকারীরা আশাবাদী হয়েছি যে অন্দরমহল থেকে প্রকাশ্য বহির্মহলে নারীদের পদচারণ, কাজ, দৃশ্যমান হওয়ার বাস্তবতাই দ্রুত বাংলাদেশের পুরুষপ্রধান-পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের, আধিপত্যের এবং নারীর প্রতি নেতিবাচক-অসম-বৈষম্যপূর্ণ বঞ্চনা ও নির্যাতনের অবসান ঘটাবে।
স্থানীয় প্রশাসনের মন্ত্রী মহোদয় জনাব আশরাফুল ইসলাম [যিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক] বলেছিলেন আরও আশাব্যঞ্জক কথা। বলেছিলেন, উত্তরাধিকারে নারীর ন্যায্য ও সমান অধিকার দেওয়ার বিষয়ে ধর্মীয় বাধা নেই, অথচ সাংস্কৃতিক-পারিবারিক অপসংস্কারে, মন্দ চারিত্রিক দোষে পারিবারিক সহিংসতার বিরুদ্ধে তাঁর দল ও সরকারের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কথা।
স্থানীয় সরকারের উন্নয়নের বিষয়ে মন্ত্রী ও সরকারের এসব কথা ও কাজের মধ্যে অনেক ফাঁক রয়েছে, সেটা বুঝতে পারলাম ১০ মার্চ প্রকাশিত খবরে যে স্থানীয় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে প্রত্যেক নির্বাচিত সাংসদ ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পেলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। মনোনীত মহিলা সাংসদেরা ন্যূনতম অর্থ বরাদ্দ পেয়েছেন। স্থানীয় সরকারের উন্নয়নমূলক কাজে কেন আইনপ্রণয়নকারী সাংসদেরা প্রত্যেকে ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পেলেন, তা নিয়ে সমালোচনা করছেন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। বিরোধী দল এ বিষয়ে সরকারের প্রতি সন্তুষ্ট।
আমরা সন্তুষ্ট হতে পারি না। কেননা স্থানীয়ভাবে রাস্তাঘাট করা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন, সেতু ও কালভার্ট তৈরি, বাঁধ প্রশস্ত করা, হাটবাজার উন্নয়ন ও বৃক্ষরোপণের পরিকল্পনায় স্থানীয় সরকার প্রশাসন যেভাবে নারীর কাজ ও অংশীদারি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে, তা আর বাস্তবায়িত হবে না। দলীয় রাজনৈতিক নির্বাচনই এসব প্রকল্পমূলক উন্নয়নকাজে সাংসদদের মূল লক্ষ্য বলে জানা গেল। সাংসদদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও অর্থ বরাদ্দমূলক কাজে যে পুরুষ-ব্যক্তিস্বার্থ (৩০০ জন সাংসদের মধ্যে অধিকাংশ পুরুষ) জড়িত থাকে, তা নারী-পুরুষের সমমর্যাদা, সমদায়িত্ব ও সমবণ্টনের দৃষ্টিভঙ্গিকে ব্যাহত করে। তা ছাড়া স্থানীয় প্রশাসনের কাজে যাঁরা সংশ্লিষ্ট হয়েছেন, সেই নারী নেতৃত্ব প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় যাঁরা স্বাভাবিকভাবে দায়িত্ব পাওয়ার যোগ্য, তাঁরা কেন এই উন্নয়নের অর্থ বরাদ্দ পাবেন না, সেটা আমাদের বোধগম্য নয়।
সেদিনের সমাবেশে গ্রাম থেকে আসা কর্মঠ উন্নয়নকর্মী-শ্রমিক নারীরা আর্তনাদ করে বলেছিলেন, প্রকল্পের কাজ শেষ হলে, আমরা আর দায়িত্ব না পেলে আমাদের কী হবে? তাঁদের আর্তনাদ কি সরকার শোনে না?
দেশের বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের দলীয় ছাত্র সংগঠনগুলোর ‘টেন্ডারবাজি’র নিন্দায় যখন জনগণ সোচ্চার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, তখন জাতীয় সংসদের সদস্যদের মোটা অর্থ বরাদ্দ দিয়ে ‘উন্নয়ন প্রকল্পের’ দায়িত্ব দেওয়ার যে ন্যায্যতা থাকতে পারে না, তা সবাইকে ভেবে দেখতে হবে। স্থানীয় নারীদের নেতৃত্বে উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হোক, সেটাই আমাদের দাবি।
মালেকা বেগম: নারীনেত্রী; শিক্ষক, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্ট্যাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
স্থানীয় প্রশাসনের মন্ত্রী মহোদয় জনাব আশরাফুল ইসলাম [যিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক] বলেছিলেন আরও আশাব্যঞ্জক কথা। বলেছিলেন, উত্তরাধিকারে নারীর ন্যায্য ও সমান অধিকার দেওয়ার বিষয়ে ধর্মীয় বাধা নেই, অথচ সাংস্কৃতিক-পারিবারিক অপসংস্কারে, মন্দ চারিত্রিক দোষে পারিবারিক সহিংসতার বিরুদ্ধে তাঁর দল ও সরকারের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কথা।
স্থানীয় সরকারের উন্নয়নের বিষয়ে মন্ত্রী ও সরকারের এসব কথা ও কাজের মধ্যে অনেক ফাঁক রয়েছে, সেটা বুঝতে পারলাম ১০ মার্চ প্রকাশিত খবরে যে স্থানীয় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে প্রত্যেক নির্বাচিত সাংসদ ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পেলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। মনোনীত মহিলা সাংসদেরা ন্যূনতম অর্থ বরাদ্দ পেয়েছেন। স্থানীয় সরকারের উন্নয়নমূলক কাজে কেন আইনপ্রণয়নকারী সাংসদেরা প্রত্যেকে ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পেলেন, তা নিয়ে সমালোচনা করছেন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। বিরোধী দল এ বিষয়ে সরকারের প্রতি সন্তুষ্ট।
আমরা সন্তুষ্ট হতে পারি না। কেননা স্থানীয়ভাবে রাস্তাঘাট করা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন, সেতু ও কালভার্ট তৈরি, বাঁধ প্রশস্ত করা, হাটবাজার উন্নয়ন ও বৃক্ষরোপণের পরিকল্পনায় স্থানীয় সরকার প্রশাসন যেভাবে নারীর কাজ ও অংশীদারি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে, তা আর বাস্তবায়িত হবে না। দলীয় রাজনৈতিক নির্বাচনই এসব প্রকল্পমূলক উন্নয়নকাজে সাংসদদের মূল লক্ষ্য বলে জানা গেল। সাংসদদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও অর্থ বরাদ্দমূলক কাজে যে পুরুষ-ব্যক্তিস্বার্থ (৩০০ জন সাংসদের মধ্যে অধিকাংশ পুরুষ) জড়িত থাকে, তা নারী-পুরুষের সমমর্যাদা, সমদায়িত্ব ও সমবণ্টনের দৃষ্টিভঙ্গিকে ব্যাহত করে। তা ছাড়া স্থানীয় প্রশাসনের কাজে যাঁরা সংশ্লিষ্ট হয়েছেন, সেই নারী নেতৃত্ব প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় যাঁরা স্বাভাবিকভাবে দায়িত্ব পাওয়ার যোগ্য, তাঁরা কেন এই উন্নয়নের অর্থ বরাদ্দ পাবেন না, সেটা আমাদের বোধগম্য নয়।
সেদিনের সমাবেশে গ্রাম থেকে আসা কর্মঠ উন্নয়নকর্মী-শ্রমিক নারীরা আর্তনাদ করে বলেছিলেন, প্রকল্পের কাজ শেষ হলে, আমরা আর দায়িত্ব না পেলে আমাদের কী হবে? তাঁদের আর্তনাদ কি সরকার শোনে না?
দেশের বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের দলীয় ছাত্র সংগঠনগুলোর ‘টেন্ডারবাজি’র নিন্দায় যখন জনগণ সোচ্চার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, তখন জাতীয় সংসদের সদস্যদের মোটা অর্থ বরাদ্দ দিয়ে ‘উন্নয়ন প্রকল্পের’ দায়িত্ব দেওয়ার যে ন্যায্যতা থাকতে পারে না, তা সবাইকে ভেবে দেখতে হবে। স্থানীয় নারীদের নেতৃত্বে উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হোক, সেটাই আমাদের দাবি।
মালেকা বেগম: নারীনেত্রী; শিক্ষক, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্ট্যাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments