কোনো বাধা মানবো না- গৃহপরিচারিকার কাজ করেও শ্যামলী পেয়েছে জিপিএ ৫
মুচি পরিবারের এতিম মেয়ে শ্যামলী রানী দাস। বাবা রামদেও দাস ও মা লক্ষ্মী রানী দাস পরলোকে গেছেন ১৩ বছর আগে। একমাত্র ভাই মুচি রাজেন্দ্র নাথের তত্ত্বাবধানে বেড়ে উঠেছে শ্যামলী। বোনের ইচ্ছায় ভর্তি করে দেন স্কুলে। লেখাপড়ায় প্রবল ঝোঁক থাকায় দারিদ্র্যের মাঝেও লেখাপড়া ছাড়েনি মেয়েটি।
সকাল বেলা অন্যের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ, তারপর স্কুল। আবার স্কুল থেকে ফিরে এসে পরের বাড়িতে ঘরদোর পরিষ্কারের কাজ শেষে রাতে লেখাপড়া। এভাবেই পড়াশোনা চালিয়ে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী শ্যামলী এবার পার্বতীপুর জ্ঞানাঙ্কুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ ৫ পেয়েছে। শ্যামলীর বাড়ি উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের পূর্ব হুগলীপাড়া গ্রামে। ৪ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট শ্যামলী। থাকেন ভাই-ভাবীর সঙ্গে একটি মাটির কুঁড়ে ঘরে।
বৃহস্পতিবার শ্যামলীর বাড়িতে গেলে দেখা মেলে তার। ছোট্ট একটা মাটির কুঁড়েঘর। চারদিকে নেই কোনো প্রাচীর। টিউবওয়েলটিও পুরনো কাপড় দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। শ্যামলী জানায়, ভাইয়ের জুতা সেলাইয়ের সামান্য টাকায় সংসার চলে না তাদের। তাই বাধ্য হয়ে পাশের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করি। সকাল থেকে ৯টা পর্যন্ত কাজ করলে ১০-২০ টাকা পাওয়া যায়। খাওয়ায় চা-নাস্তা, কখনোবা ভাত। রোজগারের টাকা দিয়ে স্কুলে যাওয়ার ভ্যান ভাড়া, টিফিন খরচ ও হারিকেনের তেল কিনতো সে। টাকা না থাকলে হেঁটে স্কুলে যেতে হতো। হারিকেনে তেল না থাকলে ওই গ্রামে তার এক বান্ধবীর বাড়িতে গিয়ে বিদ্যুতের আলোতে বই পড়ত সে। ফরম পূরণের সময় সহায়তা করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশেক উল্লাহ। বিদ্যালয়ের দু'জন শিক্ষক তাকে বিনা টাকায় প্রাইভেট পড়িয়েছেন। নিয়মিত রাত ১১টা পর্যন্ত লেখাপড়া করত সে। শ্যামলী জানায়, এসএসসি পর্যন্ত কষ্ট করে চললেও কলেজে লেখাপড়া করা তার জন্য শুধুই স্বপ্ন। অর্থাভাবে তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে। আদর্শ শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছা হয়তো আর পূরণ হবে না। তার স্বপ্ন পূরণে কোনো বিত্তবান ব্যক্তি এগিয়ে এলে তার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে বলে জানায় শ্যামলী।
শ্যামলীর ভাই রাজেন্দ্র নাথ বলেন, সে অত্যন্ত মেধাবী। অন্যের বাড়িতে কাজ করলেও লেখাপড়ার ব্যাপারে খুবই সচেতন। এর আগে বৃত্তিও পেয়েছিল শ্যামলী। আমি মুচির কাজ করে ১০০-১৫০ টাকা রোজগার করি। নিজের সংসার চালাতেই আমার কষ্ট হয়। কোনো সহযোগিতা না পেলে ওর লেখাপড়া বন্ধ করে দিতে হবে আমাকে। তাছাড়া শ্যামলী এখন বড় হয়েছে, অন্যের বাড়িতে কাজ করতে যাওয়াটা আর ভালো দেখায় না।
শ্যামলীর ভাই রাজেন্দ্র নাথ বলেন, সে অত্যন্ত মেধাবী। অন্যের বাড়িতে কাজ করলেও লেখাপড়ার ব্যাপারে খুবই সচেতন। এর আগে বৃত্তিও পেয়েছিল শ্যামলী। আমি মুচির কাজ করে ১০০-১৫০ টাকা রোজগার করি। নিজের সংসার চালাতেই আমার কষ্ট হয়। কোনো সহযোগিতা না পেলে ওর লেখাপড়া বন্ধ করে দিতে হবে আমাকে। তাছাড়া শ্যামলী এখন বড় হয়েছে, অন্যের বাড়িতে কাজ করতে যাওয়াটা আর ভালো দেখায় না।
No comments