বারমুডা ট্রায়াঙ্গল

আধুনিক যুগে এই দুনিয়ায় ‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’ নিয়ে যত অদ্ভুতুড়ে গল্প তৈরি হয়েছে, তার তুলনা মেলা ভার।
ক্যারিবীয় সাগরের এক কল্পিত ত্রিভুজ এলাকা হলো বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। ত্রিভুজের তিন বিন্দুতে আছে ফ্লোরিডা, বারমুডা আর পুয়ের্তো রিকো। অবশ্য এই বিন্দু নির্ধারণ নিয়েও বিতর্ক আছে। সে যা-ই হোক।

এ অঞ্চলটিকে মারাত্মক রহস্যময় এলাকায় পরিণত করেছে কিছু খবর। বলা হয়, এ ত্রিভুজ অঞ্চলে অদ্ভুতভাবে হারিয়ে গেছে মানুষ, জাহাজ আর প্লেন। রেখে যায়নি কোনো ধ্বংসাবশেষ। এসব ‘উড়ো’ খবর নিয়ে গবেষণা হয়েছে, ডকুমেন্টারি বানানো হয়েছে। শেষমেশ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় সব রহস্যের অসারতা প্রমাণ হয়েছে। কিন্তু রহস্যপ্রিয় মানুষ তাতে বিশেষ খুশি হতে পারেননি। তাঁরা এখনো বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে রহস্যের গন্ধ পান।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্যময় চরিত্র নিয়ে প্রথম অভিযোগ আনেন ইভিডব্লু জোনস। ১৯৫০ সালের বার্তা সংস্থা এপি প্রকাশিত একটি নিবন্ধে জোনস অভিযোগ করেন, এ এলাকায় বেশ কিছু বিমান ও জাহাজ না বলেকয়ে উধাও হয়ে গেছে যেগুলোর কোনো সন্ধান আজ পর্যন্ত মেলেনি। দুই বছর পর ফেট ম্যাগাজিনের একটি নিবন্ধে দাবি করা হয়, ১৯৪৫ সালে ফ্লাইট-১৯ নামের মার্কিন নৌবাহিনীর পাঁচটি বোমারু বিমানের একটি বহর উধাও হয়ে গেছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে। এই বহর থেকে শেষ বার্তা ছিল, ‘সবকিছুই খুব অদ্ভুত লাগছে। আমরা জানি না, কোন দিক পশ্চিম। সাগরকেও স্বাভাবিক দেখাচ্ছে না। আমাদের মনে হচ্ছে আমরা...’।
এরপর একের পর এক খবর গত শতকের শেষ পর্যন্ত তুমুল হইচই তুলেছে। যার মধ্যে আস্ত ডিসি বিমান, যাত্রীবাহী জাহাজ পর্যন্ত উধাও হয়ে যাওয়ার খবর ছিল।
তবে এসব খবরের পাশাপাশি ব্যাখ্যাও চলেছে সমানে। বিজ্ঞানীরা নানা ধরনের প্রাকৃতিক ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বলেছেন, এর সবই স্বাভাবিক ঘটনা। রং চড়িয়ে বলা হচ্ছে। আবার বলা হয়েছে, দুনিয়াজুড়ে দুর্ঘটনার যে হার, তাতে বারমুডায় মোটেও বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে না। কখনো কখনো বারমুডা-সংক্রান্ত খবর তদন্ত করতে গিয়ে দেখা গেছে, খবরটাই ভুয়া।
কিন্তু এসব ব্যাখ্যায় কি রহস্যপ্রেমীদের মন ভরে! তাঁরা চান রগরগে উত্তর। তার খোঁজে এই ২০০৯ সালেও অভিযান চলেছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে। এখনো রহস্যপ্রেমীরা চেয়ে আছেন ভিন গ্রহবাসীর দিকে। তাঁদের একটাই কথা—বারমুডার রহস্য জাগতিক নয়। এর সমাধান আছে দুনিয়ার অন্য কোথাও।
—শিখতী সানী