ভারতের নদীসংযোগ-বাড়বে ‘পানিযুদ্ধের’ ঝুঁকি by এ কে এম জাকারিয়া

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে কোনো কিছুরই বাদ পড়ার কথা নয়, যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাব্যবস্থা তো নয়ই। যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কী, তা জানতে আগ্রহী ছিল ওবামা প্রশাসন। এর নানা দিক খুঁজে বের করতে গবেষণার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বিভিন্ন সংস্থাকে।


এসব গবেষণা ও সমীক্ষায় যে ফলাফল মিলেছে, তার সার-সংক্ষেপ দেশটি প্রকাশ করেছে গত ২১ মার্চ। সেখানে পানির সংকটকে সামনের দিনের এক বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের এ রিপোর্টে দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় পানির সংকট চরমে পৌঁছাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এসব অঞ্চলের খাদ্য উৎপাদন যেমন কমবে, তেমনি বিদ্যুৎ উৎপাদনও ব্যাহত হবে। রিপোর্ট বলছে, আগামী ১০ বছরের মধ্যে ‘পানিযুদ্ধের’ আশঙ্কা না থাকলেও ২০২২ সালের পর এ অঞ্চলগুলোতে পানির ব্যবহার হতে পারে যুদ্ধ ও সন্ত্রাসের হাতিয়ার হিসেবে।
কীভাবে চলবে এই ‘পানিযুদ্ধ’? রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভৌগোলিক কারণে উজানের দেশগুলো তাদের প্রতিবেশী ভাটির দেশগুলোর চেয়ে শক্তিশালী। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে উজানের দেশগুলো রাজনৈতিক কারণে পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করবে। আবার উজানের সেই দেশগুলো তাদের অভ্যন্তরীণ পানিপ্রবাহকেও নিয়ন্ত্রণ করবে নিজেদের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন ও ভিন্নমতাবলম্বী জনগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করতে। একইভাবে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও সন্ত্রাসের মদদদাতা রাষ্ট্রগুলো ড্যাম বা পানি সংরক্ষণের জলাধারগুলোকে তাদের হুমকি বা হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে পারে। এ ধরনের হামলা আংশিক সফল হলেও বড় ধরনের বন্যা ও পানি সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে, যা জনগণের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে। এমনকি এ ধরনের হামলার ঘটনা যদি কেউ ঘটাতে সক্ষম না-ও হয়, তার পরও সরকারগুলোকে পানিসংক্রান্ত স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তায় ব্যয়বহুল উদ্যোগ নিতে হবে।
মার্কিন এই গোয়েন্দা রিপোর্টের যে সার-সংক্ষেপ প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে কোন দেশগুলো সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, তা সুনির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। কিন্তু বিশেষ কয়েকটি নদী ও নদী অববাহিকার ওপর নজর দিয়েই এ সমীক্ষা করা হয়েছে। এই নদীগুলোর মধ্যে রয়েছে মিসর, সুদান ও আরও দক্ষিণের দেশগুলো দিয়ে বয়ে যাওয়া নীল নদ, ইরাক ও বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস (দজলা-ফোরাত) চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মেকং নদী। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন ভূখণ্ডকে বিভক্তকারী জর্ডান নদী, ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো দিয়ে বয়ে যাওয়া সিন্ধু ও ব্রহ্মপুত্র এবং মধ্য এশিয়ার আমু দারিয়া নদী।
দুনিয়ার যেসব অঞ্চলে বছর দশেক পর ‘পানিযুদ্ধের’ আশঙ্কা করা হচ্ছে, সেই ‘যুদ্ধক্ষেত্রের’ মধ্যেই বাংলাদেশের অবস্থান। যুক্তরাষ্ট্রের এই রিপোর্ট প্রকাশের আগে নদী ও এর পানি নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশ যেন মার্কিন রিপোর্টের আশঙ্কাকেই জোরদার করছে। সুপ্রিম কোর্ট গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে ভারতের কয়েক দশকের পুরোনো নদীসংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন। ভারতের এই নদীসংযোগ প্রকল্পটি মার্কিন রিপোর্টের সেই ‘উজানের দেশগুলোর পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের’ একটি সবচেয়ে কার্যকর উদাহরণ।
ভবিষ্যতের পানির চাহিদা মেটাতে ও খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে ভারতের ছোট-বড় ৩৮টি নদীকে ৩০টি সংযোগকারী খালের মাধ্যমে জুড়ে দেওয়ার এক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল বছর তিরিশেক আগে। প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে, বিভিন্ন নদীর বর্ষার সময়ের অতিরিক্ত বা ‘উদ্বৃত্ত’ পানি কম পানির নদীতে সরিয়ে নেওয়া ও জলাধার নির্মাণ করে সংরক্ষণ করা। শুকনো মৌসুমে সেই পানি কৃষি ও অন্যান্য কাজে লাগানো। এ প্রকল্পে সংযোগ খালের পাশাপাশি থাকবে ৭৪টি জলাধার ও ৮০টির মতো বাঁধ।
১৯৯৮ সালে বিজেপির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স ক্ষমতায় আসার পর একটি ‘জাতীয়তাবাদী’ স্বপ্ন হিসেবে তারা এ প্রকল্প এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেয়। সে সময় ২০০২ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্টও দ্রুত এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারকে তাগিদ দেন এবং ২০১৬ সালের একটি সময়সীমা ঠিক করে দেন। বিজেপি সরকার তা বাস্তবায়নে তখন টাস্কফোর্সও গঠন করেছিল। পরবর্তী সময়ে সরকার পরিবর্তনের পর এ প্রকল্প অনেকটাই চাপা পড়ে যায়। কারণ, বিজেপি সরকার যখন এ প্রকল্প এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেয়, তখন এ নিয়ে ভারতের ভেতরেই যে তর্ক-বিতর্ক হয়েছে, তাতে এটা পরিষ্কার হয়েছে যে এই নদীসংযোগ প্রকল্পের পরিবেশগত, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষতি হবে অসামান্য। আর উজানের দেশ ভারতে যৌথ নদীগুলোতে এ ধরনের প্রকল্প নিলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভাটির দেশ বাংলাদেশ। ভারত যখন এ প্রকল্প নিয়ে এগোচ্ছিল, তখন সেই ২০০৩ সালে সাউথ এশিয়া নেটওয়ার্ক অন ড্যামস, রিভার অ্যান্ড পিপল (সানড্রপ) কর্মকর্তা হিমাংশু ঠাক্কার প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের নদীগুলোতে পানিপ্রবাহ কমবে ও পরিবেশ বিপর্যয় হবে। ভূগর্ভস্থ পানি নিচে চলে যাওয়ায় আর্সেনিক সমস্যা আরও প্রকট হতে পারে’ (প্রথম আলো, ২ সেপ্টেম্বর ২০০৩)। এরপর প্রায় নয় বছর কেটে গেছে, কিন্তু এ বাস্তবতার নিশ্চয়ই কোনো পরিবর্তন হয়নি। ভারতের এই নদীসংযোগ প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য চরম বিপর্যয়কর একটি বিষয় হিসেবেই হাজির রয়েছে।
অনেকেই ধরে নিয়েছিল, এই নদীসংযোগ প্রকল্পের বুঝি মৃত্যু ঘটেছে। ভারতে পরিবেশবাদী আন্দোলনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত সুনীতা নারায়ণ সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক এই রায়ের পর ‘মহাবিপর্যয়ের নাম নদী আন্তসংযোগ’ শিরোনামে এক লেখায় লিখেছেন, নদীসংযোগ প্রকল্প কারিগরিভাবে বাস্তবায়ন অযোগ্য ও ব্যয়বহুল হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে, কিন্তু পানি নিয়ে কাজ করে যে ভারতীয় আমলাতন্ত্র, তারা বিষয়টি ছেড়ে দেয়নি। ২০০৮ সালে ন্যাশনাল কাউন্সিল অব অ্যাপলাইড ইকোনমিক রিসার্চ এ ব্যাপারে এক সমীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করে। তাদের হিসাব অনুযায়ী, এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০০৩-০৪ সালের হিসাবে ৪৪৪৩৩১.২ কোটি ভারতীয় রুপি লাগবে। কিন্তু এ বিনিয়োগ অনেক সুফল দেবে। ভারতীয় জনগণের সামগ্রিক আয়-উপার্জন বাড়বে ও সবার সমৃদ্ধি নিশ্চিত করবে। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এ রিপোর্ট বিবেচনায় নিয়েই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন (সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট, ১৬ মার্চ, ২০১২)।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ভারতের সুপ্রিম কোর্ট নদীসংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নের যে নির্দেশ দিয়েছেন, তার মূল দিকটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরছি। ভারতের সর্বোচ্চ আদালত ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যে’ নদীসংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারকে নির্দেশ দিয়ে তা কার্যকর করতে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করতে বলেছেন। এ কমিটিতে মন্ত্রী থেকে শুরু করে নদীসংযোগের সঙ্গে জড়িত অন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা থাকবেন। কমিটি কীভাবে কাজ করবে, তা-ও বলে দেওয়া হয়েছে রায়ে। ‘প্রতি দুই মাসে কমিটিকে অন্তত একবার বসতে হবে এবং কোনো সদস্যের অনুপস্থিতির কারণে বৈঠক স্থগিত করা যাবে না।’ এ কমিটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্যপদ্ধতি ঠিক করে দ্বিবার্ষিক একটি প্রতিবেদন কেন্দ্র সরকারের মন্ত্রিসভায় পেশ করবে। মন্ত্রিসভা দেশের স্বার্থে যত দ্রুত সম্ভব (সেটা ৩০ দিনের মধ্যে হওয়া ভালো) চূড়ান্ত ও যথাযথ সিদ্ধান্ত নেবে।
ভারতের সুপ্রিম কোর্টের এ রায়ের মাস খানেক পর বিবিসি সূত্রে আমরা এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রতিক্রিয়া জানতে পেরেছি। পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন গত ৩০ মার্চ বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমরা কখনোই এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নে রাজি হব না। কারণ, এই নদীগুলোর পানির ওপর আমাদের দেশের কৃষি, অর্থনীতি ও অসংখ্য মানুষের জীবন-জীবিকার প্রশ্ন জড়িত।’
নদীসংযোগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ভারতীয় গণমাধ্যমে ব্রেকিং নিউজ না হলেও সেখানকার পরিবেশবাদী ও সচেতন বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ মহল থেকে এরই মধ্যে বিরোধিতা শুরু হয়ে গেছে। সাউথ এশিয়া নেটওয়ার্ক অন ড্যাম, রিভারস অ্যান্ড পিপলের বর্তমান আহ্বায়ক হিমাংশু ঠাক্কার রিডিফ ডট কমে ‘কেন নদীগুলোর আন্তঃসংযোগ সম্ভব নয়’ শিরোনামে এক লেখা লিখেছেন। এর শুরুর বাক্যটি হচ্ছে, ‘নদীর আন্তঃসংযোগ “বাস্তবায়নের” জন্য সুপ্রিম কোর্ট গত ২৭ ফেব্রুয়ারি যে নির্দেশ দিয়েছেন তা খুবই বিরক্তিকর।’ তিনি লিখেছেন, ভারতের অনেক আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ বলেছেন, রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ কোন প্রকল্প গ্রহণ করবে বা করবে না, তা ঠিক করে দেওয়ার এখতিয়ার সুপ্রিম কোর্টের নেই। এ প্রসঙ্গে তিনি ২০০২ সালে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের একই ধরনের একটি নির্দেশের উদাহরণ তুলে ধরেন। ২০০২ সালের ৩১ অক্টোবর ভারতের সে সময়ের প্রধান বিচারপতি ভূপিন্দর নাথ কিরপাল নদীসংযোগ বাস্তবায়নের পক্ষে রায় দিয়েছিলেন। সেটা ছিল তাঁর শেষ রায়। অবসরে যাওয়ার পর তিনি এক অনুষ্ঠানে বেঙ্গালুরু ল স্কুলে গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, নির্বাহী বিভাগ কোন প্রকল্প গ্রহণ করবে বা করবে না, সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়ার কোনো এখতিয়ার বিচার বিভাগের না থাকলেও তিনি কেন সে রায় দিয়েছিলেন? তখন তিনি বলেছিলেন, এটা ছিল পরামর্শ, কোনো নির্দেশ নয়। এ উদাহরণ উল্লেখ করে ঠাক্কার মন্তব্য করেছেন, একইভাবে বিচারপতি সতন্ত্র কুমারের সাম্প্রতিক রায়ের ব্যাপারে বলতে হয়, ‘এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নির্বাহী বিভাগের। এই বাস্তবতায় এই আদেশ অপ্রয়োজনীয়, দুর্ভাগ্যজনক ও ত্রুটিপূর্ণ।’
তিনি আরও লিখেছেন, সুপ্রিম কোর্ট আদেশ দিলেও কার্যত এ ধরনের কোনো প্রকল্প এখন বাস্তবে নেই। যে ৩০টি নদীসংযোগ প্রকল্পের কথা বলা হয়েছে, সেগুলোর একটিরও ডিটেইলড প্রজেক্ট রিপোর্ট, পরিবেশগত ছাড়পত্র বা সংবিধিবদ্ধ ছাড়পত্র নেই। সম্ভাব্যতার সমীক্ষা নেই। এই নদীসংযোগ প্রকল্পের একটি আন্তর্জাতিক দিক রয়েছে। এ প্রকল্পের সম্ভাব্য প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালে। ভারতের সীমানার বাইরে সুপ্রিম কোর্টের কোনো এখতিয়ার নেই। ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট এমন প্রকল্প বাস্তবায়নের আদেশ কী করে দেন, যা দেশের সীমানার বাইরে পর্যন্ত প্রভাব ফেলতে পারে।
ভারতের বিভিন্ন সচেতন গোষ্ঠী আদালতের এ নির্দেশ নতুন করে বিবেচনা করার অনুরোধ করেছে। ভারতের অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, বন্যার পানি শুকনো অঞ্চলে সরিয়ে নেওয়ার যুক্তি ত্রুটিপূর্ণ। এতে না হবে বন্যানিয়ন্ত্রণ, না হবে খরা মোকাবিলা। আর ‘উদ্বৃত্ত পানির’ যে কথা বলা হচ্ছে, তা অগ্রহণযোগ্য। কারণ, কোনো নদীতে উদ্বৃত্ত পানি বলে কিছু নেই। এটা বলার অর্থ হচ্ছে, নদীর পুরো ব্যবস্থাটির বহুমাত্রিক দিককে অস্বীকার করা, সমুদ্রে গিয়ে মেশার আগে একটি নদীকে যে বিভিন্ন ধরনের অঞ্চল ও পরিবেশ অতিক্রম করতে হয়, সেই প্রাকৃতিক বিবেচনাকে অস্বীকার করা। ‘নদী কোনো পাইপলাইন নয়’ যে তা দিয়ে ইচ্ছামতো টেনে জাতীয় পানি গ্রিডে পানি সরবরাহ বাড়ানো যাবে। নদী হচ্ছে জীবননালি, এটা পুরো প্রতিবেশব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখে, এটা শুধু পানি বহন করে না।
মার্কিন গোয়েন্দা সমীক্ষায় আগামী ১০ বছর পর দক্ষিণ এশিয়ায় যে ‘পানিযুদ্ধের’ বিপদের কথা বলা হচ্ছে, তার সূচনা ঘটাতে পারে ভারতের এই নদীসংযোগ প্রকল্প। এই ‘যুদ্ধ’ যে শুধু দেশে দেশে হবে, এমনও কোনো কথা নেই। একই দেশের নানা অঞ্চলের মধ্যেও হতে পারে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্য এরই মধ্যে এর বিরোধিতা শুরু হয়েছে। কেরালা, অন্ধ্র প্রদেশ, আসাম ও সিকিম নদীসংযোগ প্রকল্পের বিরোধী। ওডিশা ও ছত্তিশগড় বলেছে, মহা নদী অববাহিকায় বাড়তি পানি নেই, যা থেকে ‘উদ্বৃত্ত’ পানি সরিয়ে নেওয়া যাবে। অন্ধ্র, মহারাষ্ট্র ও ছত্তিশগড় গোদাবরি নদী থেকে পানি সরাতে দিতে রাজি নয়। গঙ্গা থেকে পানি সরানোর কথা রয়েছে, কিন্তু বিহার, উত্তর প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও হরিয়ানা বলছে—গঙ্গায় বাড়তি পানি নেই।
ভারতের ভেতর থেকে নদীসংযোগ প্রকল্পের যে বিরোধিতা শুরু হয়েছে, তা কাজে দিলে আমাদের দায়িত্ব অনেকটাই কমে যাবে। আমরা মনে হয় সে আশাতেই বসে আছি। এখানে তো এ নিয়ে কোনো নড়াচড়া চোখে পড়ছে না!
এ কে এম জাকারিয়া: সাংবাদিক।
akmzakaria@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.