সততার বিরল দৃষ্টান্ত-রিকশাচালক খোকন মিয়া
এমন ঘটনা অনেক ঘটে নাটক-চলচ্চিত্রে। বাস্তবে খুব কম। এই বাংলাদেশে উল্টো ধরনের ঘটনাই বরং বেশি ঘটে। টাকার জন্য, টাকাকে কেন্দ্র করে কত নিষ্ঠুর, কত রোমহর্ষক ঘটনাই না ঘটে চলেছে নিত্যদিন। সংবাদপত্রের পাতা খুললেই চোখে পড়বে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, নিজের হাতে বা ভাড়াটে খুনি লাগিয়ে খুন করার খবর।
পর বা দূরের মানুষ তো বটেই, খুব কাছের আত্মীয়স্বজনের মধ্যেও খুনোখুনি হয় টাকা-পয়সার কারণে।
এ রকম একটা দেশে একজন দরিদ্র রিকশাচালক যদি এক লাখ ৩০ হাজার টাকাসুদ্ধ একটা ব্যাগ পেয়ে যান তাঁর রিকশার পাটাতনে, তাহলে কী করবেন তিনি? নাটকে বা সিনেমায় নয়, বাস্তবে, এই দেশেই, যেখানে প্রতিনিয়ত রাস্তাঘাটে অনেক মানুষ ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে, জখম হচ্ছে, এমনকি মারাও যাচ্ছে। এখানে এক রিকশাচালক, ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অমানুষিক পরিশ্রম করেও যিনি এক দিনে ৫০০ টাকাও উপার্জন করতে পারেন না, না চাইতেই তিনি হাতে পেয়ে গেলেন লক্ষাধিক টাকার থলি! কী করবেন তখন তিনি?
এই প্রশ্নের উত্তর আমরা জানি: নাটক-সিনেমা দেখে দেখে উত্তরটা আমাদের মুখস্থ হয়ে গেছে। কিন্তু প্রথম আলোয় বৃহস্পতিবার খোকন মিয়া নামের যে রিকশাচালকের খবর ছাপা হয়েছে, তিনি কোনো নাটক বা সিনেমার চরিত্র নন। নারায়ণগঞ্জে রিকশা চালান তিনি। এক যাত্রী ভুল করে টাকার ব্যাগ ফেলে গিয়েছিলেন তাঁর রিকশায়। খোকন মিয়া ব্যাগটি খুলে দেখেন বিপুল পরিমাণ টাকা। তিনি টাকার মালিককে খুঁজে পেতে মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করলেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাইকে ঘোষণা দিয়ে টাকার মালিককে খুঁজে বের করে তিনি তাঁর হাতে টাকার ব্যাগটি তুলে দিয়ে তবেই স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়েছেন। টাকার মালিক খুশি হয়ে খোকন মিয়াকে পাঁচ হাজার টাকা বকশিশ দিয়েছেন।
প্রতিদিন যা ঘটে, তার উল্টোটাই ঘটিয়েছেন খোকন মিয়া। তাই তিনি প্রথম আলোয় সংবাদ শিরোনাম হয়েছেন। কোনো গর্ব নেই, আস্ফাালন নেই; স্রেফ বললেন, টাকার ব্যাগটি মালিকের হাতে ফেরত দিতে পেরে তাঁর ভালো লাগছে।
সততা, নৈতিকতা ইত্যাদি নিয়ে আমাদের বিদ্যাচর্চা ও বক্তৃতাবাজির শেষ নেই। রিকশাচালক খোকন মিয়ার দেখানো পথটা কি আমরা অনুসরণ করব?
No comments