মানবতার এই অপমান আইন কেন সইবে?-হায় রে পিতা! হায় রে সম্মান!

সম্মান হারিয়ে কেউ আদালতে যায় বিচারের আশায়, আর কোনো বাবা মেয়ে ধর্ষিত হওয়ার বিচার চাইতে গিয়ে নিজেই হারান সম্মান। কোনো আসামি জেলখানায় পায় জামাই আদর, আর কোনো ফরিয়াদিকে হাতকড়া পরিয়ে চ্যাংদোলা করে টেনেহিঁচড়ে নেওয়া হয়।


আইনের চোখে সব মানুষই সমান, কিন্তু আইন যাঁরা প্রয়োগ করেন, তাঁদের চোখে কেউ বেশি মর্যাদাবান, কেউ কম। যারা গরিব, যারা নিঃসহায়, তারা তাহলে কোথায় যাবে?
ষাট বছর বয়সী আকবর আলীকে আদালত চত্বরে টেনেহিঁচড়ে নেওয়ার ছবিটি ছেপেছে সোমবারের প্রথম আলো। বয়স মর্যাদা আশা করে, বার্ধক্য আশা করে সহানুভূতি, দুঃখী মানুষের প্রাপ্য সমবেদনা আর নিপীড়িতের দাবি সুবিচার। আকবর আলী এসবের কিছুই পাননি। কেন পাবেন না, তা জানতে চাওয়ায় অপরাধ হলো তাঁর। অশিক্ষিত এই দরিদ্র মানুষটি আদালতের কায়দা-কানুন জানতেন না। কাকে বলে আদালত অবমাননা, সেই মাত্রাজ্ঞানও তাঁর কাছে দাবি করা বৃথা। তিনি কেবল তাঁর মেয়ের ধর্ষকের আইনজীবীর কথা মিথ্যা বলে অভিযোগ করেছিলেন, বিচারকের কাছে উচ্চ স্বরে ফরিয়াদ জানিয়েছিলেন। তিনি জানতেন না, এটাকে আদালত অবমাননা বলে। আদালত জানতেন, তাই তাঁকে হাতকড়া পরিয়ে পাঁচ ঘণ্টা আটক রাখার আদেশ দেন। পুলিশ জোর করে হাতকড়া পরাতে গেলে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। তারপর তাঁর সেই লুঙ্গি পরা অজ্ঞান দেহটিকে চ্যাংদোলা করে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আদালত চত্বরের অজস্র মানুষ দেখে, একটি মানুষকে পশুর মতো করে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
বৃদ্ধ মানুষটির পরিবারের কেউ কি সেখানে ছিল? তাঁর নির্যাতিত মেয়েটি, যাঁর ওপর করা অন্যায়ের প্রতিকার চাইতে গিয়ে বাবার এই হেনস্থা, সেই মেয়েটি কি দেখেছিল বাবার এই অপমান? কিন্তু সংবাদপত্রের ছবি তো অনেকেই দেখেছেন। তাঁদের মনে কি এই দৃশ্য ব্যথা দেয়নি? পুলিশ কি জানে না যে অভিযুক্ত বা আসামির বিরুদ্ধে কেমন আচরণ করতে হয়? জানে। জানে বলেই কোনো ধনকুবের বা ক্ষমতাবান আসামিকে তারা সমাদর করে, আর গরিব বা দুস্থ হলে করে অমানবিক আচরণ।
আদালত আইনের তীর্থ, আইন মানবতার কথা বলে। সেখানে মানবতার এমন অপমান কি আইনের সহ্য করা উচিত?

No comments

Powered by Blogger.