ঢাবি উপাচার্য যখন উপর্যুপরি হুমকির মুখে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা গোটা দেশের পরিবেশ সুষ্ঠু ও শান্তিময় রাখার জন্য তাই আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক ড. আরেফিন সিদ্দিকের জীবনের নিরাপত্তা চাই। এ বিষয়ে সরকারের কাছে আমাদের নির্দিষ্ট দাবি জানাচ্ছি ড. আরেফিন সিদ্দিকের জন্য সার্বক্ষণিক গানম্যানের ব্যবস্থা করাসহ তার অফিস ও বাসায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হোক
এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে সার্বক্ষণিক বিশেষ নিরাপত্তা জোরদার করা হোক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আরেফিন সিদ্দিক পুনর্বার বোমা হামলার শিকার হয়েছেন। অল্পের জন্য রক্ষা পেলেও বিষয়টি অনেকের মতো আমাদের ভীষণ ভাবিয়ে তুলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নব্বইতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে ঘন বর্ষণ সত্ত্বেও শিক্ষক-শিক্ষার্থী সমাবেশ, বর্ণাঢ্য র্যালি, সেমিনার, গানের কনসার্ট ক্যাম্পাসকে জাঁকিয়ে মুখরিত করছিল। কিন্তু সেদিনেই তাকে লক্ষ্য করে ককটেল আক্রমণ আমাদের বিস্ময়ে হতবাক করেছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা প্রকাশ করছি।
অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের ওপর বিভিন্ন সময় ফোনে হুমকি, সরাসরি আক্রমণ, বাসায় বোমা পুঁতে রাখা ও বোমা ফাটানোতে আতঙ্ক ও আশঙ্কা আমাদের বিক্ষুব্ধ করেছে। প্রগতিশীল রাজনীতির এ সাহসী ধারক বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং সৎ একজন শিক্ষক। সঠিক নেতৃত্ব ও বুদ্ধিদীপ্ত কৌশলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি অসাধারণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূতিকাগার তিনি শক্ত হাতে দিকনির্দেশনা দিয়ে এগিয়ে নিচ্ছেন। ক্লিন ইমেজের জন্য সর্বসমাদৃত ড. আরেফিন নারী ও শিক্ষায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর স্পেন সরকার কর্তৃক কমান্ডার অব দি অর্ডার অব দি মেরিট পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন।
দেশের রাজনীতির দুঃসময়ে সামনের সারিতে তার অবস্থান আমাদের সাহস জুগিয়েছে। প্রয়াত অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া হত্যার পর শান্তির জন্য নীলিমায় তার সার্বক্ষণিক উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রথাবিরোধী লেখক অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদের ওপর নৃশংস হামলা, বর্বরোচিত আক্রমণের সময় মিছিলে-মিটিংয়ে সর্বাগ্রে ছিলেন এ সাহসী শিক্ষক। দেশবিরোধী ও অগণতান্ত্রিক অপশক্তির বিরুদ্ধে তার এ সাহসী উপস্থিতি ও অবস্থান প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী ভালোভাবে নেয়নি। প্রতিটি স্বৈরাচারী ও সামরিক শাসনামলে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অকুতোভয় সৈনিক আরেফিন সিদ্দিক তাই দীর্ঘদিন থেকে সাম্প্রদায়িক শক্তির চক্ষুশূল। বারবার তাই তিনি নানাভাবে আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। কিন্তু বর্তমান গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের সময়ও আক্রমণকারীরা অজ্ঞাত থেকেও যাবেন, এটা আশা করি না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানই নয় বরং দেশের গোটা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার গতিশীলতার অগ্রপথিক। এ রকম একটি শিক্ষায়তনের উপাচার্যের আসনে অলঙ্কৃত হওয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রেখে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে একে পরিচালনা করার জন্য তিনি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।
ব্যক্তিজীবনে অত্যন্ত সজ্জন ও সদালাপী এ শিক্ষক হাজার হাজার শিক্ষার্থীর জীবনের মণিকোঠায় অবস্থান করলেও দুষ্কৃতকারী তার পিছু ছাড়ছে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দীনের জীবনও নিষ্ঠুরভাবে কেড়ে নিয়েছিল খন্দকার মোশতাক বাহিনী। এ চক্র এখনও বহাল আছে, আছে তৎপর। পরপর দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করাতে নানা সময় বড় বড় জাতীয় উৎসবে এরা কড়া বোমা হামলা চালিয়েছে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা দেশের স্মরণীয় নৃশংস ঘটনা।
বর্তমানে কারা এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে? বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক ও নাগরিক সমাজের ওপর কেন তারা হামলা করছে? মুক্তবুদ্ধির চর্চাকে রুদ্ধ করতে কারা বদ্ধপরিকর? এসব প্রশ্নের সঠিক জবাব অত্যাবশ্যক। স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশে সবসময় সচেতন মানুষ জেগে উঠেছে। স্বৈরাচার, রাজাকারের বিপক্ষে এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ। দেশের প্রয়োজনে জেগে উঠতে কিংবা জীবন দিতেও এরা কুণ্ঠাবোধ করেন না। দেশের প্রয়োজনে তাই যে কোনো মূল্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অশান্তিময় পরিবেশ সৃষ্টি করতে দেওয়া কোনোভাবেই ঠিক হবে না।
দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠকে তাই বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। দক্ষ হাতে কৌশলী উপায়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করে সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন সৃষ্টিতে যিনি নিবেদিতপ্রাণ তার জীবনেরও তাই বিশেষ নিরাপত্তা প্রয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা গোটা দেশের পরিবেশ সুষ্ঠু ও শান্তিময় রাখার জন্য তাই আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক ড. আরেফিন সিদ্দিকের জীবনের নিরাপত্তা চাই। এ বিষয়ে সরকারের কাছে আমাদের নির্দিষ্ট দাবি জানাচ্ছি ড. আরেফিন সিদ্দিকের জন্য সার্বক্ষণিক গানম্যানের ব্যবস্থা করাসহ তার অফিস ও বাসায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হোক এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে সার্বক্ষণিক বিশেষ নিরাপত্তা জোরদার করা হোক।
লেখকবৃন্দ : বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মানবাধিকার কর্মী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আরেফিন সিদ্দিক পুনর্বার বোমা হামলার শিকার হয়েছেন। অল্পের জন্য রক্ষা পেলেও বিষয়টি অনেকের মতো আমাদের ভীষণ ভাবিয়ে তুলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নব্বইতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে ঘন বর্ষণ সত্ত্বেও শিক্ষক-শিক্ষার্থী সমাবেশ, বর্ণাঢ্য র্যালি, সেমিনার, গানের কনসার্ট ক্যাম্পাসকে জাঁকিয়ে মুখরিত করছিল। কিন্তু সেদিনেই তাকে লক্ষ্য করে ককটেল আক্রমণ আমাদের বিস্ময়ে হতবাক করেছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা প্রকাশ করছি।
অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের ওপর বিভিন্ন সময় ফোনে হুমকি, সরাসরি আক্রমণ, বাসায় বোমা পুঁতে রাখা ও বোমা ফাটানোতে আতঙ্ক ও আশঙ্কা আমাদের বিক্ষুব্ধ করেছে। প্রগতিশীল রাজনীতির এ সাহসী ধারক বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং সৎ একজন শিক্ষক। সঠিক নেতৃত্ব ও বুদ্ধিদীপ্ত কৌশলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি অসাধারণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূতিকাগার তিনি শক্ত হাতে দিকনির্দেশনা দিয়ে এগিয়ে নিচ্ছেন। ক্লিন ইমেজের জন্য সর্বসমাদৃত ড. আরেফিন নারী ও শিক্ষায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর স্পেন সরকার কর্তৃক কমান্ডার অব দি অর্ডার অব দি মেরিট পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন।
দেশের রাজনীতির দুঃসময়ে সামনের সারিতে তার অবস্থান আমাদের সাহস জুগিয়েছে। প্রয়াত অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া হত্যার পর শান্তির জন্য নীলিমায় তার সার্বক্ষণিক উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রথাবিরোধী লেখক অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদের ওপর নৃশংস হামলা, বর্বরোচিত আক্রমণের সময় মিছিলে-মিটিংয়ে সর্বাগ্রে ছিলেন এ সাহসী শিক্ষক। দেশবিরোধী ও অগণতান্ত্রিক অপশক্তির বিরুদ্ধে তার এ সাহসী উপস্থিতি ও অবস্থান প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী ভালোভাবে নেয়নি। প্রতিটি স্বৈরাচারী ও সামরিক শাসনামলে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অকুতোভয় সৈনিক আরেফিন সিদ্দিক তাই দীর্ঘদিন থেকে সাম্প্রদায়িক শক্তির চক্ষুশূল। বারবার তাই তিনি নানাভাবে আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। কিন্তু বর্তমান গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের সময়ও আক্রমণকারীরা অজ্ঞাত থেকেও যাবেন, এটা আশা করি না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানই নয় বরং দেশের গোটা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার গতিশীলতার অগ্রপথিক। এ রকম একটি শিক্ষায়তনের উপাচার্যের আসনে অলঙ্কৃত হওয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রেখে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে একে পরিচালনা করার জন্য তিনি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।
ব্যক্তিজীবনে অত্যন্ত সজ্জন ও সদালাপী এ শিক্ষক হাজার হাজার শিক্ষার্থীর জীবনের মণিকোঠায় অবস্থান করলেও দুষ্কৃতকারী তার পিছু ছাড়ছে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দীনের জীবনও নিষ্ঠুরভাবে কেড়ে নিয়েছিল খন্দকার মোশতাক বাহিনী। এ চক্র এখনও বহাল আছে, আছে তৎপর। পরপর দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করাতে নানা সময় বড় বড় জাতীয় উৎসবে এরা কড়া বোমা হামলা চালিয়েছে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা দেশের স্মরণীয় নৃশংস ঘটনা।
বর্তমানে কারা এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে? বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক ও নাগরিক সমাজের ওপর কেন তারা হামলা করছে? মুক্তবুদ্ধির চর্চাকে রুদ্ধ করতে কারা বদ্ধপরিকর? এসব প্রশ্নের সঠিক জবাব অত্যাবশ্যক। স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশে সবসময় সচেতন মানুষ জেগে উঠেছে। স্বৈরাচার, রাজাকারের বিপক্ষে এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ। দেশের প্রয়োজনে জেগে উঠতে কিংবা জীবন দিতেও এরা কুণ্ঠাবোধ করেন না। দেশের প্রয়োজনে তাই যে কোনো মূল্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অশান্তিময় পরিবেশ সৃষ্টি করতে দেওয়া কোনোভাবেই ঠিক হবে না।
দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠকে তাই বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। দক্ষ হাতে কৌশলী উপায়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করে সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন সৃষ্টিতে যিনি নিবেদিতপ্রাণ তার জীবনেরও তাই বিশেষ নিরাপত্তা প্রয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা গোটা দেশের পরিবেশ সুষ্ঠু ও শান্তিময় রাখার জন্য তাই আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক ড. আরেফিন সিদ্দিকের জীবনের নিরাপত্তা চাই। এ বিষয়ে সরকারের কাছে আমাদের নির্দিষ্ট দাবি জানাচ্ছি ড. আরেফিন সিদ্দিকের জন্য সার্বক্ষণিক গানম্যানের ব্যবস্থা করাসহ তার অফিস ও বাসায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হোক এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে সার্বক্ষণিক বিশেষ নিরাপত্তা জোরদার করা হোক।
লেখকবৃন্দ : বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মানবাধিকার কর্মী
No comments