জাহান মণির নাবিকদের অভিবাদন-এই আনন্দাশ্রু আমাদেরও

প্রায় তিন মাস পর জাহান মণির নাবিকেরা নিরাপদে দেশে ফিরে এসেছেন—এটি সবার জন্যই আনন্দের সংবাদ। তাঁদের আনন্দাশ্রু কেবল পরিবারের সদস্যদের নয়, স্পর্শ করেছে দেশের সব মানুষকে। স্বাধীনতার মাসে তাঁদের এই মুক্তির খবর নিঃসন্দেহে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। আমরা নাবিকদের অভিবাদন জানাই।


বেসরকারি মালিকানাধীন বাংলাদেশি জাহাজ জাহান মণিকে ইন্দোনেশিয়া থেকে গ্রিসে যাওয়ার পথে গত ২৫ ডিসেম্বর ছিনতাই করে সোমালি জলদস্যুরা। সেই থেকে জাহাজের ২৬ জন নাবিক-কর্মচারী তাদের হাতে জিম্মি ছিল। এ ধরনের ছিতাইয়ের ঘটনায় জলদস্যুরা মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করে। অনেক সময় তারা মুক্তিপণের জন্য নাবিকদের হত্যা করতেও দ্বিধা করে না। বাংলাদেশি জাহাজের ক্ষেত্রে সে রকম কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। এ ক্ষেত্রে জাহাজের মালিক ও সরকারের ভূমিকাও ছিল প্রশংসনীয়। বলা যায়, তাদের চেষ্টার কারণেই আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তায় অপহূত জাহাজ উদ্ধার এবং নাবিকদের মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
জাহাজ মণি আটকের ঘটনাটি ঘটেছে দেশের বাইরে, অনেকটা আমাদের আয়ত্তের বাইরে। তার পরও সম্মিলিত চেষ্টায় সেটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু দেশের ভেতরের সমস্যা মোকাবিলায় যদি আমরা একযোগে কাজ করি, সেগুলোর সমাধানও কঠিন নয়। এই যে হাজার হাজার প্রবাসী শ্রমিক লিবিয়া থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন নিঃস্ব ও রিক্ত হয়ে, তাঁদের জন্যও আমাদের করণীয় আছে। বিমানবন্দরে ভিআইপি সুবিধা পাওয়া না-পাওয়া নিয়ে জাতীয় সংসদে আলোচনা হলেও লিবিয়াফেরত শ্রমিকদের ব্যাপারে কোনো আলোচনা হয় না। এটি দুর্ভাগ্যজনক।
জাহান মণির ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়ার আছে যে, কোনো বিপদে ধৈর্যহারা হলে চলবে না। যে নাবিকেরা বাংলাদেশের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন, তাঁদের প্রতি আমাদের কর্তব্য ছিল। সেই কর্তব্য আমরা পালন করেছি। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, সে ব্যাপারে আমাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে। তার চেয়েও যে কাজটি জরুরি, তা হলো আন্তর্জাতিক এই নৌ রুটগুলো নিরাপদ রাখা। শক্তিধর দেশগুলো বিভিন্ন মহাসাগরে সমরসজ্জায় যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে, তার একাংশ এই রুটগুলোর নিরাপত্তা বিধানে ব্যয় করলে জাহাজ ছিনতাইয়ের ঘটনা রোধ করা অসম্ভব নয়।

No comments

Powered by Blogger.