নির্ভেজাল চাপাবাজি এবং চাপাবাজদের স্বপ্নের পৃথিবী by তাওহিদ মিলটন
দুই বন্ধুর মধ্যে কথা হচ্ছে। : জানিস, আমার দাদা যখন সমুদ্রের পাড়ে গিয়ে হাঁচি দিতেন, তখন সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড় বইত।
: এইটুকু! আমার দাদা যদি একবার কোনো এলাকায় গিয়ে হাঁচি দিতেন, সে এলাকায় কয়েক মাস মশা থাকত না।
: কী যা তা বলছিস। এটা কী করে সম্ভব!
: এইটুকু! আমার দাদা যদি একবার কোনো এলাকায় গিয়ে হাঁচি দিতেন, সে এলাকায় কয়েক মাস মশা থাকত না।
: কী যা তা বলছিস। এটা কী করে সম্ভব!
: সম্ভব, অবশ্যই সম্ভব। আমার দাদার হাঁচির শব্দে মশারা সব হার্ট অ্যাটাকে মারা যেত।
: হা! হা!! হা!!! গুল মারছিস। মশাদের আবার হার্ট আছে নাকি!
: সেটা তো এখনকার মশাদের দেখে বলছিস। আমার দাদার হাঁচির হাত থেকে বাঁচার জন্য মশাদের মধ্যে তখন বিবর্তন শুরু হয়। এর পর থেকেই তো হার্ট ছাড়া মশা জন্মাতে শুরু করে।
অতীত নিয়ে এসব চাপাবাজের কথা ছাড়ুন। আরও কয়েকজন আছে, যারা ভবিষ্যৎ নিয়ে এর চেয়ে মজার মজার তথ্য দেবে আপনাদের।
: একসময় পৃথিবীতে ঘরে ঘরে আর এসি বলে কোনো কিছু থাকবে না।
: তা কী করে হয়?
: হয় হয়। বৈশ্বিক উষ্ণতার কথা মাথায় রেখে তখন বিজ্ঞানীরা শুধু বিশাল একটা এসি লাগাবেন পৃথিবীর ওজোনস্তরে। সেটা চলবে সোলারে। ওই বিশাল এসিটা পৃথিবীর সব টেম্পারেচার শুষে নিয়ে ছড়িয়ে দেবে মহাকাশে। ফলে পৃথিবীর উষ্ণতা আবার কমে আসবে। মেরু অঞ্চলের বরফ গলা নিয়ে মানুষ আর টেনশন করবে না। পৃথিবী আবার মানুষের বসবাসযোগ্য হয়ে উঠবে।
: আমি অবশ্য অন্য কিছু ভাবছি। আমি ভাবছি, বিবর্তনের ধারায় পৃথিবীতে ভবিষ্যতে মানুষ কীরূপ হবে, সেটা।
: কীরূপ হবে ভবিষ্যতের মানুষ?
: একদিন দেখবেন, বাচ্চা জন্ম নিচ্ছে কানে দুটো হেডফোনসহ। এরপর সঙ্গে এমপিথ্রি প্লেয়ার। তারপর ধরুন, যেভাবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন গেজেটের ব্যবহার বাড়ছে, একসময় দেখবেন মানবশিশু জন্মাচ্ছে ক্যাঙারুর মতো বুকে একটা থলে নিয়ে, গেজেট রাখার জন্য। এরপর দেখবেন, মাথায় ইউএসবি পোর্ট, এসডি কার্ড স্লটও আছে, চার্জার কেব্লও থাকতে পারে।
: ঠিক ঠিক। আমারও ওই রকম মনে হয়। বুড়ো বয়সে তখন অনেককে আমরা দেখব ডাক্তারের কাছে গিয়ে বলছে, ডাক্তার সাহেব, আমার না কিছু মনে থাকে না। আমাকে একটা একটেরা পোর্টেবল হার্ডডিস্ক দেন তো। পড়াশোনায় দুর্বল ছাত্ররা ডাক্তারের কাছে গিয়ে র্যাম বাড়িয়ে নেবে, ডিডিআর থ্রি, ফোর, ফাইভ। আর যাদের চোখের সমস্যা, তারা দেখা যাবে হয় এজিপি কার্ড আপগ্রেড করছে অথবা চোখের মেগাপিক্সেল বাড়িয়ে নিচ্ছে।
: তা না হয় বুঝলাম, কিন্তু মানুষের আকৃতির কী হবে?
: আকৃতি কমে যাবে। সেটা অতীতের হিসেবে দেখলেই সহজেই বোঝা যাবে। আমাদের দাদারা শুনেছি একবসায় আস্ত খাসি সাবাড় করতেন। টানা দু-তিন দিন পায়ে হেঁটে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় যেতেন স্রেফ থিয়েটার দেখতে। একেকজন নাকি ছিলেন আকৃতিতে ইয়া বিশাল! সে তুলনায় আমরা নিজেদের দিকে তাকালেই ভবিষ্যৎ আন্দাজ করতে পারি। কারণ, আমাদের শারীরিক পরিশ্রমের জায়গাগুলো যন্ত্র করে দিচ্ছে।
: যাক বাবা, এতক্ষণে একটা কথা ঠিক চাপাবাজির মতো শোনাল না।
:না না, এখানে শেষ নয়।
এ দেশে কোনো সন্ত্রাসী থাকবে না। আইনশৃঙ্খলা নিজের গতিতে চলবে। টিভি ও সংবাদমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করবে। দুদক সম্পূর্ণরূপে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। পুলিশ সরকারি দলের চামচামি করবে না। প্রশাসনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দেওয়া হবে। বাস-ট্রাক ড্রাইভাররা শুধু গরু-ছাগল নয়, সিগন্যালও বুঝবে। সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া হবে। ক্যাম্পাসে হত্যা-মারামারি হবে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে থাকবে। প্রতিটি অন্যায়, অপরাধের, হত্যাকাণ্ডের দ্রুত সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত হবে। ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্ট ঘুষ খেয়ে ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলার অনুমতি দিয়ে জ্যামের সৃষ্টি করবে না। সরকারি কাজে ১৮ মাসে বছর হবে না। মন্ত্রী-এমপিরা কথার চেয়ে কাজ বেশি করবেন। এ দেশের মানুষ হাসিমুখে মৃত্যুবরণের নিশ্চয়তা পাবে। আইন সবার জন্য সমান হবে। সোনার বাংলা অচিরেই তৈরি হবে। ম্যাগনেটিক ট্রেন হবে, পাতাল ট্রেন হবে। হেন হবে, তেন হবে...হবে...হবে।
: শেষের এই কথাগুলোর মতো আরও অনেক কথা স্বাধীনতার পর থেকেই বিভিন্ন মুখ দিয়ে নানা সময়ে বেরিয়ে এসেছে। এভাবে ৪০ বছর চলছে। আর ঠিক কত দিন পার হলে আমরা এগুলোকেও চাপাবাজি বলে আখ্যা দিতে পারব?
: হা! হা!! হা!!! গুল মারছিস। মশাদের আবার হার্ট আছে নাকি!
: সেটা তো এখনকার মশাদের দেখে বলছিস। আমার দাদার হাঁচির হাত থেকে বাঁচার জন্য মশাদের মধ্যে তখন বিবর্তন শুরু হয়। এর পর থেকেই তো হার্ট ছাড়া মশা জন্মাতে শুরু করে।
অতীত নিয়ে এসব চাপাবাজের কথা ছাড়ুন। আরও কয়েকজন আছে, যারা ভবিষ্যৎ নিয়ে এর চেয়ে মজার মজার তথ্য দেবে আপনাদের।
: একসময় পৃথিবীতে ঘরে ঘরে আর এসি বলে কোনো কিছু থাকবে না।
: তা কী করে হয়?
: হয় হয়। বৈশ্বিক উষ্ণতার কথা মাথায় রেখে তখন বিজ্ঞানীরা শুধু বিশাল একটা এসি লাগাবেন পৃথিবীর ওজোনস্তরে। সেটা চলবে সোলারে। ওই বিশাল এসিটা পৃথিবীর সব টেম্পারেচার শুষে নিয়ে ছড়িয়ে দেবে মহাকাশে। ফলে পৃথিবীর উষ্ণতা আবার কমে আসবে। মেরু অঞ্চলের বরফ গলা নিয়ে মানুষ আর টেনশন করবে না। পৃথিবী আবার মানুষের বসবাসযোগ্য হয়ে উঠবে।
: আমি অবশ্য অন্য কিছু ভাবছি। আমি ভাবছি, বিবর্তনের ধারায় পৃথিবীতে ভবিষ্যতে মানুষ কীরূপ হবে, সেটা।
: কীরূপ হবে ভবিষ্যতের মানুষ?
: একদিন দেখবেন, বাচ্চা জন্ম নিচ্ছে কানে দুটো হেডফোনসহ। এরপর সঙ্গে এমপিথ্রি প্লেয়ার। তারপর ধরুন, যেভাবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন গেজেটের ব্যবহার বাড়ছে, একসময় দেখবেন মানবশিশু জন্মাচ্ছে ক্যাঙারুর মতো বুকে একটা থলে নিয়ে, গেজেট রাখার জন্য। এরপর দেখবেন, মাথায় ইউএসবি পোর্ট, এসডি কার্ড স্লটও আছে, চার্জার কেব্লও থাকতে পারে।
: ঠিক ঠিক। আমারও ওই রকম মনে হয়। বুড়ো বয়সে তখন অনেককে আমরা দেখব ডাক্তারের কাছে গিয়ে বলছে, ডাক্তার সাহেব, আমার না কিছু মনে থাকে না। আমাকে একটা একটেরা পোর্টেবল হার্ডডিস্ক দেন তো। পড়াশোনায় দুর্বল ছাত্ররা ডাক্তারের কাছে গিয়ে র্যাম বাড়িয়ে নেবে, ডিডিআর থ্রি, ফোর, ফাইভ। আর যাদের চোখের সমস্যা, তারা দেখা যাবে হয় এজিপি কার্ড আপগ্রেড করছে অথবা চোখের মেগাপিক্সেল বাড়িয়ে নিচ্ছে।
: তা না হয় বুঝলাম, কিন্তু মানুষের আকৃতির কী হবে?
: আকৃতি কমে যাবে। সেটা অতীতের হিসেবে দেখলেই সহজেই বোঝা যাবে। আমাদের দাদারা শুনেছি একবসায় আস্ত খাসি সাবাড় করতেন। টানা দু-তিন দিন পায়ে হেঁটে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় যেতেন স্রেফ থিয়েটার দেখতে। একেকজন নাকি ছিলেন আকৃতিতে ইয়া বিশাল! সে তুলনায় আমরা নিজেদের দিকে তাকালেই ভবিষ্যৎ আন্দাজ করতে পারি। কারণ, আমাদের শারীরিক পরিশ্রমের জায়গাগুলো যন্ত্র করে দিচ্ছে।
: যাক বাবা, এতক্ষণে একটা কথা ঠিক চাপাবাজির মতো শোনাল না।
:না না, এখানে শেষ নয়।
এ দেশে কোনো সন্ত্রাসী থাকবে না। আইনশৃঙ্খলা নিজের গতিতে চলবে। টিভি ও সংবাদমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করবে। দুদক সম্পূর্ণরূপে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। পুলিশ সরকারি দলের চামচামি করবে না। প্রশাসনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দেওয়া হবে। বাস-ট্রাক ড্রাইভাররা শুধু গরু-ছাগল নয়, সিগন্যালও বুঝবে। সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া হবে। ক্যাম্পাসে হত্যা-মারামারি হবে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে থাকবে। প্রতিটি অন্যায়, অপরাধের, হত্যাকাণ্ডের দ্রুত সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত হবে। ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্ট ঘুষ খেয়ে ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলার অনুমতি দিয়ে জ্যামের সৃষ্টি করবে না। সরকারি কাজে ১৮ মাসে বছর হবে না। মন্ত্রী-এমপিরা কথার চেয়ে কাজ বেশি করবেন। এ দেশের মানুষ হাসিমুখে মৃত্যুবরণের নিশ্চয়তা পাবে। আইন সবার জন্য সমান হবে। সোনার বাংলা অচিরেই তৈরি হবে। ম্যাগনেটিক ট্রেন হবে, পাতাল ট্রেন হবে। হেন হবে, তেন হবে...হবে...হবে।
: শেষের এই কথাগুলোর মতো আরও অনেক কথা স্বাধীনতার পর থেকেই বিভিন্ন মুখ দিয়ে নানা সময়ে বেরিয়ে এসেছে। এভাবে ৪০ বছর চলছে। আর ঠিক কত দিন পার হলে আমরা এগুলোকেও চাপাবাজি বলে আখ্যা দিতে পারব?
No comments