একাত্তরের এই দিনে-সর্বত্র হ-য-ব-র-ল অবস্থা by আইয়ুব খান
একাত্তরের মার্চে যখন স্বাধীনতার স্বপ্নে উদ্বেলিত সমগ্র দেশ, ‘যার যা আছে তা-ই নিয়ে’ পাকিস্তানি বাহিনীর মুখোমুখি বাঙালি, তখন এক হাজার ২০০ মাইল দূরে বসে সাবেক স্বৈরশাসক আইয়ুব খান কীভাবে সেসব ঘটনা বিশ্লেষণ করেছেন, কীভাবে দেখেছেন মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক কিংবা ভুট্টোর আস্ফাালন—সেসব বিবৃত হয়েছে তাঁর
রোজনামচায়। মাত্র দুই বছর আগে গণ-অভ্যুত্থানে পদচ্যুত, প্রচণ্ড বাঙালিবিদ্বেষী এই শাসক ‘পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছেদকে অবশ্যম্ভাবী’ বলে মনে করেছিলেন। ক্রেইগ ব্যাক্সটার সম্পাদিত আইয়ুব খানের রোজনামচা ১৯৬৬-১৯৭২ বইয়ের নির্বাচিত অংশ অনুবাদ করেছেন এম এ মোমেন
২৩ মার্চ ১৯৭১, মঙ্গলবার
আজ পাকিস্তান দিবস। আজ কোনো উদ্যাপন নেই। আমার মনে হয় দেশ এখন এমনই হ-য-ব-র-ল অবস্থায় যে উদ্যাপন করার মতো মানসিক অবস্থা কারোরই নেই।
পাকিস্তান দিবসের বাণীতে ইয়াহিয়া বলেছেন, পাকিস্তানের পূর্ব ও পশ্চিম অংশকে একসঙ্গে নিয়ে উভয়ের জন্য একটি সাধারণ অভিপ্রায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে নির্বিবাদে ও ঐকমত্যের মধ্য দিয়ে কাজ করার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে এই পদ্ধতিটি কেমন হবে, তা এখনো প্রকাশ করা হয়নি। সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে ইয়াহিয়ার উপস্থিতিতে ভুট্টো ও মুজিবুর রহমানের মধ্যে সাক্ষাৎ হয়েছে; মুজিবুর রহমান প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁর আলোচনার ও সম্মতির বিষয়গুলো ভুট্টোর কাছে ব্যাখ্যা করেন।
তারপর ভুট্টো তাঁর নিজের উপদেষ্টাদের সঙ্গে সারা রাত ও দিনের একাংশ পর্যন্ত লম্বা বৈঠক করেন। তারপর তিনি জেনারেল পীরজাদার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান। মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তাঁর আর কোনো বৈঠক হয়নি কিংবা কেউ কারও আবাসস্থলে গিয়েও দেখা করেননি। সবকিছুতে এটা স্পষ্ট হয়ে এসেছে, যা নিয়ে প্রেসিডেন্ট ও মুজিবুর রহমান সম্মত হয়েছেন, তাতে ভুট্টো সন্তুষ্ট হতে পারেননি, কিংবা মুজিবুর রহমানের প্রতি তাঁর তিক্ততারও অবসান ঘটেনি। আমি অনুধাবন করতে পারি, মুজিবুর রহমান একপর্যায়ে বলেছেন, ভুট্টোকে নিয়ে কিছু করার চেয়ে বরং দেশ দুখণ্ড হয়ে যাওয়াটাই তাঁর কাছে বেশি গ্রহণীয় হবে। মুজিবুর রহমান কর্তৃক হেয়প্রতিপন্ন হওয়ায় এবং মুজিবুর রহমানের সমকক্ষ বিবেচিত না হওয়ায় ভুট্টো যদি সমস্যা সৃষ্টি করে চলেন, আমি বিস্মিত হব না। আর তা-ই যদি হয়, ভুট্টো সিন্ধি ও পাঞ্জাবিদের প্রতি অসম আচরণের ধুয়া তুলে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে থাকবেন।
আজকের জং পত্রিকা ভুট্টো ও তাঁর সহযোগীদের ছবিতে ঠাসা—স্পষ্টতই ভুট্টোকে তুষ্ট করার জন্য এটা করছে। আমার মনে হয় ভুট্টোর লোকজন জং-এর মালিককে করজোড়ে হাঁটুতে ভর করিয়ে ছেড়েছে—ভুট্টোর তোয়াজ না করায় কদিন আগে তারা জং-এর স্থাপনাসমূহে আগুন লাগাতে গিয়েছিল। এসব কাজ করিয়ে থাকেন সাবেক জেনারেল আকবর খান, যিনি পিপলস পার্টি স্বেচ্ছাসেবক দলের সংগঠক—অন্য কথায় স্থানীয় গুন্ডাপান্ডা ও মাথাগরম ছাত্রদের দিয়ে তিনি এ স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করেন। কদিন আগে মুলতান বার অ্যাসোসিয়েশনে বক্তব্য দিতে গিয়ে এয়ার মার্শাল আসগর খান এ ধরনের লোকদের হাতে লাঞ্ছিত হন। ইঙ্গিত পাওয়া গেছে তারা লাহোরে মওদুদীর বাড়িতে আগুন লাগাতে চেয়েছে। আমার মনে হয়, এ ধরনের ঘটনা এখন হামেশাই ঘটবে, বিশেষ করে পিপলস পার্টি যখন পাঞ্জাব ও সিন্ধু প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করবে। পুলিশকে লে-অফ করে গুন্ডাদের দেওয়া হবে যা ইচ্ছে তা-ই করার সুযোগ।
২৩ মার্চ ১৯৭১, মঙ্গলবার
আজ পাকিস্তান দিবস। আজ কোনো উদ্যাপন নেই। আমার মনে হয় দেশ এখন এমনই হ-য-ব-র-ল অবস্থায় যে উদ্যাপন করার মতো মানসিক অবস্থা কারোরই নেই।
পাকিস্তান দিবসের বাণীতে ইয়াহিয়া বলেছেন, পাকিস্তানের পূর্ব ও পশ্চিম অংশকে একসঙ্গে নিয়ে উভয়ের জন্য একটি সাধারণ অভিপ্রায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে নির্বিবাদে ও ঐকমত্যের মধ্য দিয়ে কাজ করার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে এই পদ্ধতিটি কেমন হবে, তা এখনো প্রকাশ করা হয়নি। সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে ইয়াহিয়ার উপস্থিতিতে ভুট্টো ও মুজিবুর রহমানের মধ্যে সাক্ষাৎ হয়েছে; মুজিবুর রহমান প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁর আলোচনার ও সম্মতির বিষয়গুলো ভুট্টোর কাছে ব্যাখ্যা করেন।
তারপর ভুট্টো তাঁর নিজের উপদেষ্টাদের সঙ্গে সারা রাত ও দিনের একাংশ পর্যন্ত লম্বা বৈঠক করেন। তারপর তিনি জেনারেল পীরজাদার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান। মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তাঁর আর কোনো বৈঠক হয়নি কিংবা কেউ কারও আবাসস্থলে গিয়েও দেখা করেননি। সবকিছুতে এটা স্পষ্ট হয়ে এসেছে, যা নিয়ে প্রেসিডেন্ট ও মুজিবুর রহমান সম্মত হয়েছেন, তাতে ভুট্টো সন্তুষ্ট হতে পারেননি, কিংবা মুজিবুর রহমানের প্রতি তাঁর তিক্ততারও অবসান ঘটেনি। আমি অনুধাবন করতে পারি, মুজিবুর রহমান একপর্যায়ে বলেছেন, ভুট্টোকে নিয়ে কিছু করার চেয়ে বরং দেশ দুখণ্ড হয়ে যাওয়াটাই তাঁর কাছে বেশি গ্রহণীয় হবে। মুজিবুর রহমান কর্তৃক হেয়প্রতিপন্ন হওয়ায় এবং মুজিবুর রহমানের সমকক্ষ বিবেচিত না হওয়ায় ভুট্টো যদি সমস্যা সৃষ্টি করে চলেন, আমি বিস্মিত হব না। আর তা-ই যদি হয়, ভুট্টো সিন্ধি ও পাঞ্জাবিদের প্রতি অসম আচরণের ধুয়া তুলে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে থাকবেন।
আজকের জং পত্রিকা ভুট্টো ও তাঁর সহযোগীদের ছবিতে ঠাসা—স্পষ্টতই ভুট্টোকে তুষ্ট করার জন্য এটা করছে। আমার মনে হয় ভুট্টোর লোকজন জং-এর মালিককে করজোড়ে হাঁটুতে ভর করিয়ে ছেড়েছে—ভুট্টোর তোয়াজ না করায় কদিন আগে তারা জং-এর স্থাপনাসমূহে আগুন লাগাতে গিয়েছিল। এসব কাজ করিয়ে থাকেন সাবেক জেনারেল আকবর খান, যিনি পিপলস পার্টি স্বেচ্ছাসেবক দলের সংগঠক—অন্য কথায় স্থানীয় গুন্ডাপান্ডা ও মাথাগরম ছাত্রদের দিয়ে তিনি এ স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করেন। কদিন আগে মুলতান বার অ্যাসোসিয়েশনে বক্তব্য দিতে গিয়ে এয়ার মার্শাল আসগর খান এ ধরনের লোকদের হাতে লাঞ্ছিত হন। ইঙ্গিত পাওয়া গেছে তারা লাহোরে মওদুদীর বাড়িতে আগুন লাগাতে চেয়েছে। আমার মনে হয়, এ ধরনের ঘটনা এখন হামেশাই ঘটবে, বিশেষ করে পিপলস পার্টি যখন পাঞ্জাব ও সিন্ধু প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করবে। পুলিশকে লে-অফ করে গুন্ডাদের দেওয়া হবে যা ইচ্ছে তা-ই করার সুযোগ।
No comments