জনসমুদ্রে বর্ষবরণ

জীর্ণ পুরনোকে পেছনে ফেলে চিরনতুনের আহ্বানে এসেছে নতুন বছর। উচ্ছ্বাসমুখর নানা বর্ণের আয়োজনে নতুন বছরকে বরণ করেছে উৎসবপ্রিয় বাঙালি। ১৪১৯ বঙ্গাব্দের প্রথম সূর্যোদয়ে নতুনের আবাহনে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে নগরীর লাখ লাখ মানুষ। রাজপথে নামে মানুষের ঢল।


নানামাত্রিক সাংস্কৃতিক আয়োজন, বাহারি পণ্যের মেলা আর বর্ণিল পোশাক পরা মানুষের উপস্থিতিতে জনসমুদ্রে রূপ নেয় গোটা রাজধানী। নানা আঙ্গিকে দেশজুড়ে এই উৎসবে শামিল হয় সবাই।
দেশজুড়ে উৎসব হলেও সাড়ে চার দশকের ধারাবাহিকতায় এবারও রমনার বটমূলে ছায়ানটের নববর্ষ আবাহন ছিল আয়োজনের কেন্দ্রবিন্দুতে। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রাও ছিল বর্ষবরণ উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ। এ দুটি আয়োজন থেকে দেশবাসীর সুখ-সমৃদ্ধি প্রত্যাশার পাশাপাশি এবার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ত্বরান্বিত করারও প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। বর্ষবরণ উৎসব রাজধানীর এ দুটি আয়োজন থেকে ছড়িয়ে প্রতিনিয়ত ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর হচ্ছে। নতুন নতুন কেন্দ্র গড়ে উঠছে। এবার ব্যাপক আয়োজন ছিল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। সুরের ধারা ও চ্যানেল আইয়ের আয়োজনে হাজার কণ্ঠে গীত হয়েছে বর্ষবরণের গান। নানামাত্রিক আয়োজনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আপন সংস্কৃতির শিকড় অন্বেষণের আহ্বানও উচ্চারিত হয়েছে সর্বত্র। শনিবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় ১৪১৯ সন বরণের পালা। নানা কারুকাজে বাঙালিয়ানার ছাপে দেশীয় পোশাক পরে ধনী-দরিদ্র, নারী-পুরুষ-শিশু, বাঙালি কিংবা আদিবাসী, ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাই যোগ দেয় বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সর্বজনীন বর্ষবরণ উৎসবে। নানা স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বর্ষবরণের
অনুষ্ঠান হওয়ায় প্রায় পুরো দিনই জনসমুদ্র ছিল রাজধানীর শাহবাগ, রমনা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ধানমণ্ডি এলাকা। ফুটপাতগুলোতে ছিল বাহারি পণ্যের মেলা। দলবেঁধে বন্ধুবান্ধব কিংবা পরিবারসমেত মানুষ ঘুরে বেড়িয়েছে এক অনুষ্ঠান থেকে আরেক অনুষ্ঠানে, করেছে কেনাকাটা। তবে উৎসবের পোশাকে প্রিয়জনের হাত ধরে বর্ষবরণে শামিল হওয়া মানুষের স্রোত চোখে পড়ছে পুরো নগরীতেই। অনুষ্ঠানস্থল, রাজপথ কিংবা উদ্যান কোথাও ছিল না তিল ধারণের ঠাঁই।
বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধারণের বিষয়টি ছোট-বড় সব অনুষ্ঠানের বাইরে সবচেয়ে বড় করে চোখে পড়েছে প্রিয়জনের সঙ্গে আড্ডা আর সময় কাটানোর দৃশ্যে। ব্যস্ত নগরজীবনে বৈশাখের এই অবসরে এ যেন আগামী বছরের স্বপ্ন বোনার সময়। নগরীর সব পার্ক ও বিনোদনকেন্দ্রগুলোসহ অলিগলির খোলা জায়গায়ও এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে। রমনা-শাহবাগ এলাকায় ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গাড়ি চলাচল ছিল নিয়ন্ত্রিত। ফলে দীর্ঘ পথ হেঁটে উৎসবের রঙে নিজেকে রাঙাতে হয়েছে ঘর ছেড়ে বেরোনো সবাইকে। আবার ঘরে ফেরার সময় গাড়ি না পাওয়ার দুর্ভোগও পোহাতে হয়েছে। নগরীর বিশেষ বিশেষ এলাকাগুলোতে ছিল ব্যাপক যানজট।
বর্ষবরণের অনুষ্ঠানমালায় বিদেশিদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। উৎসব নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ছিলেন সক্রিয়।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মঙ্গল শোভাযাত্রা, বৈশাখী মেলা ও নানা ঐতিহ্যবাহী দেশজ ক্রীড়া প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী উদ্যাপিত হয় পহেলা বৈশাখ। সরকারি এই ছুটির দিনে সবাই শামিল হয় উৎসবে।
ছায়ানটের বর্ষবরণ : সকাল সোয়া ৬টায় সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রমনার বটমূলের ঘুম ভাঙান ছায়ানটের শিল্পীরা। নগরীর বাসিন্দাদের সব পথ তখন যেন মিশে গিয়েছিল রমনায়। 'রাগ ভৈরব' পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। এরপর 'পূর্ব গগন ভাগে'- কবিগুরুর এ গান গাওয়া হয় সম্মিলিতভাবে। পহেলা বৈশাখ ও ছায়ানটের বর্ষবরণের এ আয়োজনের তাৎপর্য তুলে ধরে সূচনা বক্তব্য দেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম। তিনি বলেন, 'এটি শুধু এখন ছায়ানটের অনুষ্ঠান নয়। এটি এখন জাতীয় অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।'
মূল অনুষ্ঠানে ছায়ানটের শিল্পীরা পরিবেশন করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, অতুলপ্রসাদ সেন, রজনীকান্ত সেন, বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর, শাহ আবদুল করিম, লালন শাহ, তোরাব আলী শাহ, জ্ঞান প্রকাশ ঘোষের গান। মাঝে আবৃত্তি করেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়।
সবশেষে বক্তব্য দেন ছায়ানটের সভাপতি সন্জীদা খাতুন। এর মধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে বলেন, 'রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, বিরোধ বিদ্বেষ দূর হোক; কিন্তু মন থেকে কখনো কখনো ঘৃণা অপসারণ করা দুরূহ হয়ে যায়। যারা ধর্মের নামে মনুষ্যত্বের অবমাননা করে, তাদের শাস্তি পেতেই হবে।'
কয়েকটি নিরাপত্তা স্তর পেরিয়ে রমনায় ঢুকতে হলেও তা নিয়ে অসন্তুষ্টি দেখায়নি কাউকে, ২০০১ সালে রমনায় বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে বোমা হামলার পর নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে প্রতিবছরই। এবার নিরাপত্তা বহরে যোগ হয় রোবট, যা বোমা শনাক্ত ও নিষ্ক্রিয় করতে পারে।
মঙ্গল শোভাযাত্রায় মানুষের ঢল : চারদিকে মানুষ আর মানুষ। উপচে পড়া ভিড়। হাজার ছাড়িয়ে লাখে। নানা রঙের পোশাকে সজ্জিত নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ, শিশুসহ সব বয়সী মানুষ। শিশুরা গালে এঁকেছে আলপনা। কারো হাতে একতারা, কণ্ঠে বাংলার গান। লাখো মানুষের শোভাযাত্রায় এগিয়ে চলছে কারুকার্যখচিত সাম্পান। বয়ে চলছে জনসমুদ্রের ওপর দিয়ে। সঙ্গে হাতি, বাঘ, ঘোড়া ও পাখির বিরাট বিরাট প্রতিকৃতির বহর।
এভাবেই বর্ণিল প্রতিকৃতি নিয়ে সকাল ৯টা ১৮ মিনিটের দিকে চারুকলা অনুষদ থেকে শুরু হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। 'এসো সত্য, এসো সুন্দর, এসো মুক্তি' স্লোগান নিয়ে শুরু হওয়া শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। শোভাযাত্রায় অন্যান্যের মধ্যে অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক অহিদুজ্জামান, প্রক্টর এম এ আলী প্রমুখ। এ ছাড়া শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে মিলনমেলায় পরিণত হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা।
শোভাযাত্রায় প্রতীকী অর্থে সাম্পান তৈরি করা হয় সমুদ্রজয়ের স্মারক হিসেবে। এ ছাড়াও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শোভাযাত্রায় উঠে আসে নানা ফেস্টুন, ব্যানার ও প্রতীক।
শোভাযাত্রাটি শাহবাগ থেকে রূপসী বাংলা হোটেলের মোড় এবং সেখান থেকে টিএসসি হয়ে চারুকলার সামনে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন ধরনের মুখোশ, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন বহন করে।
হাজারো কণ্ঠে সুরের ধারার বর্ষবরণ : ভোরে সূর্যের আলো মাটি স্পর্শ করার পরপরই রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার কণ্ঠে বেজে ওঠে রবীন্দ্রনাথের গান। তাঁর সঙ্গে এক হাজার শিল্পী গেয়ে ওঠেন 'স্বপন বীণা তব বাজে'। আর এর মধ্য দিয়েই শুরু হয় সুরের ধারা ও চ্যানেল আই আয়োজিত হাজারো কণ্ঠে কোটি বাঙালির বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। রবীন্দ্র, নজরুল ও লালনের গানে বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নিয়েছে সুরের ধারা ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজারো কণ্ঠশিল্পী। আর একই মঞ্চে পুরো অনুষ্ঠানে গানে গানে দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমীন, ফরিদা পারভীন, আবিদা সুলতানা, সৈয়দ আব্দুল হাদী, কনকচাঁপা, লীনা তাপসী, লিলি ইসলামের মতো প্রখ্যাত শিল্পীরা।
শনিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, অভিনেতা আফজাল হোসেন প্রমুখ।
চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর বলেন, 'আমরাই বর্ষবরণ অনুষ্ঠান সম্প্রচারের প্রথম উদ্যোগ নিই রমনার বটমূল থেকে ছায়ানটের অনুষ্ঠান সম্প্রচারের মাধ্যমে। এর পর থেকে আমরা বর্ষবরণের বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করে আসছি। একটি টিভি চ্যানেলের দায়বদ্ধতা থেকে এবং দর্শকদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে আমরা এবার ব্যাপক পরিসরে অনুষ্ঠানটি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সংগীত পরিবেশন করেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগত শিল্পীরা এবং চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ ও ক্ষুদে গানরাজের শিল্পীরা। কবিতা আবৃত্তি করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর এমপি, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, শিমুল মুস্তফা প্রমুখ। অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধান করেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। চ্যানেল আই এদিন ভোর থেকে দুপুর ১টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে। নাগরদোলাসহ হস্ত ও কুটির শিল্প এবং দেশীয় খাদ্যসামগ্রীর বিভিন্ন স্টল বৈশাখী মেলার আবহ তৈরি করে।
রবীন্দ্র সরোবরে সাংস্কৃতিক জোটের নববর্ষ আবাহন : পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সংস্কৃতির মেলা বসে ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবরে। এখানে ভোরে নানামাত্রিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ধানমণ্ডি রিক্রিয়েশন ক্লাব। এখানে বিকেলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। এই অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। তিনি বলেন, 'পুরাতনের কালিমা মুছে আমরা নতুনকে বরণ করলাম আজ। নতুন উদ্দীপনা নিয়ে নতুন করে দেশ ও জীবন গড়ার জন্য কাজ শুরু করতে হবে। আমরা বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরমত সহনশীল একটি পরিবেশ চাইব।'
আরো বক্তব্য দেন জোটের সহসভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ। সংগীত পরিবেশন করেন মিনা বড়ুয়া, রূপু খান, দিল আফরোজ রেবা, আবু বকর সিদ্দিকসহ আরো অনেকে। দলীয় সংগীত পরিবেশন করে বহ্নিশিখা, ওস্তাদ মমতাজ আলী সংগীত একাডেমী, দৃষ্টি ও সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী।
ওশান গ্রুপের বৈশাখী মেলা : শনিবার রাজধানীর গুলশানে ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্কে বৈশাখী মেলার আয়োজন করে ওশান গ্রুপ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দেশ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুজ্জামান নূর এমপি।
ওয়ান্ডারল্যান্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জি এম মুস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত সচিব সাইফুল হাসিব, সাবেক অতিরিক্ত সচিব শহিদুল হক, নাট্যব্যক্তিত্ব বাবুল আহমেদ, কণ্ঠশিল্পী জানে আলম, লায়ন্সের ঢাকা জেলার গভর্নর মির্জা খোরশেদ আলম, লায়ন্সের ঢাকা রাজধানীর প্রেসিডেন্ট ড. ইয়াসিন আলী, লায়ন্সের কেবিনেট সচিব আকরাম হোসেন, ওশান গ্রুপের ডিএমডি শহিদুল হক, ওশান মিডিয়ার চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আকরাম আলী খান সঞ্জু প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ওশান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. খন্দকার আলী আজম ও সুরাইয়া সুলতানা কলি।
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, বৈশাখ উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে বাঙালি তার শিকড় স্পর্শ করে। ধর্ম-বর্ণ, জাত-পাত সব কিছুর ঊধর্ে্ব এটা বাঙালির নিজস্ব উৎসব। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে বিশ্ব-বাঙালির মাঝে সেতুবন্ধ তৈরি হয়।
এ আয়োজনে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী জানে আলম, সুমী শবনম, নুসরাত জাহান জুঁই, খুলনার জেমস খ্যাত তামীম, সুরাইয়া সুলতানা কলি প্রমুখ। অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করেন মহানগরী সাংস্কৃতিক ফোরামের শিল্পীরা। শাহীন খান কৌতুক ও শাহীন শাহ জাদু পরিবেশন করেন। এ ছাড়া ছিল রক্তদান কর্মসূচি ও ইলিশ-পান্তার আয়োজন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দর্শক-শ্রোতার উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যায় পার্কটিতে।
আওয়ামী লীগের বর্ষবরণ শোভাযাত্রা : পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর শাখা শনিবার সকালে নগরীতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করে। শোভাযাত্রা বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে শুরু হয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে এসে শেষ হয়। এতে ঢাকঢোল বাদ্য বাজিয়ে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার গাড়ি, নৌকা প্রভৃতি বহন করা হয়। মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম প্রমুখ এতে যোগ দেন।
শোভাযাত্রা-পূর্ব সমাবেশে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, 'নববর্ষে আমাদের শপথ, বাংলাদেশকে আমরা যুদ্ধাপরাধীমুক্ত মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব।'
অন্যান্য আয়োজন : বর্ষবরণ উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান নানামাত্রিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এর মধ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী। জাতীয় জাদুঘর আয়োজন করে বৈশাখী মেলা, বাউল গানের আসর ও মঞ্চনাটক প্রদর্শনী। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতীয় প্রেসক্লাব ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পথনাটক প্রদর্শনীর আয়োজন করে বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ। পথনাটক 'উদ্বাস্তু'র প্রদর্শনী করে ইউনিভার্সেল থিয়েটার। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বৈশাখী মেলার আয়োজন করে পিলখানায়। শিশু পার্ক প্রাঙ্গণে সংগীতানুষ্ঠান করে ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী। বনানী মাঠে বৈশাখী মেলার আয়োজন করে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন।

No comments

Powered by Blogger.