জেমস থারবার-বাগানে ইউনিকর্ন-অনুবাদ: জাবির হাসান
অনেক অনেক দিন আগের কথা। এক ভদ্রলোক আয়েশ করে সকালের নাশতা করতে করতে জানালা দিয়ে বাগানের দিকে তাকিয়ে দেখলেন, একটি ইউনিকর্ন (এক শিংওয়ালা জাদুকরি ঘোড়া) ইচ্ছেমতো তাঁর গোলাপ বাগানের ফুল খাচ্ছে। এই ইউনিকর্নটির শিং ছিল সোনালি রঙের।
ভদ্রলোকের চোখ তো কপালে! শেষমেশ তাঁর বাগানে ইউনিকর্ন! তাঁর বিশ্বাসই হচ্ছিল না ব্যাপারটা। উত্তেজনায় তিনি দৌড়ে তাঁর বউকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বললেন, ‘বাগানে একটা ইউনিকর্ন সব গোলাপ খেয়ে নিচ্ছে!’ আধো ঘুম থেকে ওঠা তাঁর বউ বিড়বিড় করে বললেন, ‘ইউনিকর্ন? শোনো এটা হলো একটা কাল্পনিক প্রাণী।’ এই বলে তিনি আবার ঘুম দিলেন। কথা না বাড়িয়ে ওই লোক আবার তাঁর বাগানের দিকে হাঁটা দিলেন। বাগানে গিয়ে তিনি দেখলেন, ইউনিকর্নটি তখনো আছে, এবার টিউলিপগাছ মজা করে চিবিয়ে যাচ্ছে। ওই লোক কী করবেন তা ভেবে না পেয়ে একটা লিলি ফুল ছিঁড়ে ইউনিকর্নটার দিকে এগিয়ে দিতেই ইউনিকর্ন ওটাও খেয়ে ফেলল।
ভদ্রলোক আবার দৌড়ালেন তাঁর বউয়ের কাছে, ‘বিশ্বাস করো, ইউনিকর্ন আমার হাত থেকে একটা লিলি খেয়েছে!’ এবার তাঁর বউ ঘুম থেকে উঠে বসলেন। বিরক্তিমাখা কণ্ঠে বললেন, ‘তুমি একটা পাগল-ছাগল লোক, তোমাকে পাগলাগারদে পাঠানো উচিত।’
সেই লোকের সবচেয়ে অপছন্দের গালি ছিল ছাগল। এই গালি কেউ দিলে তার মাথা ঠিক থাকে না। তবু লোকটি কোনোরকমে মাথা ঠান্ডা করলেন। এর প্রতিশোধ নিতেই হবে—এই ভাবতে ভাবতে বউকে আবার বললেন, ‘ইউনিকর্নটার মাথায় কিন্তু সোনার শিংও আছে।’ কিন্তু বউ আবার তাঁকে তাঁর সবচেয়ে অপছন্দের গালিটা দিয়ে দিতে পারেন এই ভয়ে দ্রুত বলে উঠলেন, ‘ঠিক আছে, তুমি ঘুমাও, আমি দেখি কী করা যায়।’ রাগে গজগজ করতে করতে ভদ্রলোক আবার বাগানের দিকে হাঁটা দিলেন। কিন্তু ততক্ষণে ইউনিকর্ন আর নেই। কী আর করা, ইউনিকর্নের আশায় ভদ্রলোক তাঁর গোলাপবাগানেই ঘুমিয়ে পড়লেন।
ওদিকে তাঁর বউ ততক্ষণে সজাগ! বিছানা থেকে নেমেই সোজা ফোন দিলেন পুলিশ আর পাগলের ডাক্তারকে। পুলিশ আর ডাক্তার আসার পর ভদ্রলোকের বউ সব কাহিনি ঝরঝর করে বলে ফেললেন, ‘আমার স্বামী সকালের নাশতা খেতে গিয়ে তাঁর ফুলের বাগানে একটা ইউনিকর্ন দেখেছে। তারপর নিজে নাশতা না খেয়ে ওই ইউনিকর্নকে ফুল খাইয়েছে।’ এই কথা শুনে পুলিশ আর ডাক্তার সাহেব নিজেদের মুখ চাওয়াচাওয়ি শুরু করলেন। ‘আরে, বিশ্বাস করুন! ও এটাও বলেছে যে ইউনিকর্নটার মাথায় শিংটি নাকি ছিল সোনালি রঙের!’ এই কথা শুনে ডাক্তারের আর কোনো সন্দেহই থাকল না। পুলিশকে ইশারা দিতেই পুলিশ সেই লোকের বউকে ধরেবেঁধে পাগলাগারদে নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়িতে তুলল।
এর মধ্যে হইচইয়ের কারণে বাগানে ভদ্রলোকের ঘুম ভেঙে গিয়েছে। বাসায় এসে দেখলেন, তাঁর বউকে পুলিশ গাড়িতে তুলছে। লোকটাকে দেখে পুলিশ জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি নাকি তোমার বউকে বলেছ যে সকালে তুমি বাগানে একটা ইউনিকর্ন দেখেছ?’
‘কী যে বলেন, স্যার!’ অবাক হয়ে উত্তর দিলেন ভদ্রলোক, ‘ইউনিকর্ন হলো কাল্পনিক প্রাণী।’ ‘আমার এতটুকুই জানা বাকি ছিল। এই পাগল মহিলাকে গাড়িতে তোলো।’ বিরক্তির সঙ্গে ডাক্তারের নির্দেশ।
এর পরের কাহিনি হলো, ভদ্রলোকের বউ আছেন পাগলাগারদে। আর ছাগল ডাকের প্রতিশোধ নেওয়া তৃপ্ত অন্তরে ওই ভদ্রলোক রোজ সকালে ফুলপাতা খাওয়ান সেই ইউনিকর্নটিকে।
জেমস থারবার: মার্কিন লেখক ও কার্টুনিস্ট। পুরো নাম জেমস গ্রোভার থারবার। দ্য নিউ ইয়র্কার ম্যাগাজিনে প্রকাশিত তাঁর কার্টুন ও ছোটগল্প ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায়। তাঁর জন্ম ১৮৯৪ সালের ৮ ডিসেম্বর ও মৃত্যু ১৯৬১ সালের ২ নভেম্বর।
ভদ্রলোক আবার দৌড়ালেন তাঁর বউয়ের কাছে, ‘বিশ্বাস করো, ইউনিকর্ন আমার হাত থেকে একটা লিলি খেয়েছে!’ এবার তাঁর বউ ঘুম থেকে উঠে বসলেন। বিরক্তিমাখা কণ্ঠে বললেন, ‘তুমি একটা পাগল-ছাগল লোক, তোমাকে পাগলাগারদে পাঠানো উচিত।’
সেই লোকের সবচেয়ে অপছন্দের গালি ছিল ছাগল। এই গালি কেউ দিলে তার মাথা ঠিক থাকে না। তবু লোকটি কোনোরকমে মাথা ঠান্ডা করলেন। এর প্রতিশোধ নিতেই হবে—এই ভাবতে ভাবতে বউকে আবার বললেন, ‘ইউনিকর্নটার মাথায় কিন্তু সোনার শিংও আছে।’ কিন্তু বউ আবার তাঁকে তাঁর সবচেয়ে অপছন্দের গালিটা দিয়ে দিতে পারেন এই ভয়ে দ্রুত বলে উঠলেন, ‘ঠিক আছে, তুমি ঘুমাও, আমি দেখি কী করা যায়।’ রাগে গজগজ করতে করতে ভদ্রলোক আবার বাগানের দিকে হাঁটা দিলেন। কিন্তু ততক্ষণে ইউনিকর্ন আর নেই। কী আর করা, ইউনিকর্নের আশায় ভদ্রলোক তাঁর গোলাপবাগানেই ঘুমিয়ে পড়লেন।
ওদিকে তাঁর বউ ততক্ষণে সজাগ! বিছানা থেকে নেমেই সোজা ফোন দিলেন পুলিশ আর পাগলের ডাক্তারকে। পুলিশ আর ডাক্তার আসার পর ভদ্রলোকের বউ সব কাহিনি ঝরঝর করে বলে ফেললেন, ‘আমার স্বামী সকালের নাশতা খেতে গিয়ে তাঁর ফুলের বাগানে একটা ইউনিকর্ন দেখেছে। তারপর নিজে নাশতা না খেয়ে ওই ইউনিকর্নকে ফুল খাইয়েছে।’ এই কথা শুনে পুলিশ আর ডাক্তার সাহেব নিজেদের মুখ চাওয়াচাওয়ি শুরু করলেন। ‘আরে, বিশ্বাস করুন! ও এটাও বলেছে যে ইউনিকর্নটার মাথায় শিংটি নাকি ছিল সোনালি রঙের!’ এই কথা শুনে ডাক্তারের আর কোনো সন্দেহই থাকল না। পুলিশকে ইশারা দিতেই পুলিশ সেই লোকের বউকে ধরেবেঁধে পাগলাগারদে নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়িতে তুলল।
এর মধ্যে হইচইয়ের কারণে বাগানে ভদ্রলোকের ঘুম ভেঙে গিয়েছে। বাসায় এসে দেখলেন, তাঁর বউকে পুলিশ গাড়িতে তুলছে। লোকটাকে দেখে পুলিশ জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি নাকি তোমার বউকে বলেছ যে সকালে তুমি বাগানে একটা ইউনিকর্ন দেখেছ?’
‘কী যে বলেন, স্যার!’ অবাক হয়ে উত্তর দিলেন ভদ্রলোক, ‘ইউনিকর্ন হলো কাল্পনিক প্রাণী।’ ‘আমার এতটুকুই জানা বাকি ছিল। এই পাগল মহিলাকে গাড়িতে তোলো।’ বিরক্তির সঙ্গে ডাক্তারের নির্দেশ।
এর পরের কাহিনি হলো, ভদ্রলোকের বউ আছেন পাগলাগারদে। আর ছাগল ডাকের প্রতিশোধ নেওয়া তৃপ্ত অন্তরে ওই ভদ্রলোক রোজ সকালে ফুলপাতা খাওয়ান সেই ইউনিকর্নটিকে।
জেমস থারবার: মার্কিন লেখক ও কার্টুনিস্ট। পুরো নাম জেমস গ্রোভার থারবার। দ্য নিউ ইয়র্কার ম্যাগাজিনে প্রকাশিত তাঁর কার্টুন ও ছোটগল্প ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায়। তাঁর জন্ম ১৮৯৪ সালের ৮ ডিসেম্বর ও মৃত্যু ১৯৬১ সালের ২ নভেম্বর।
No comments