দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে চাই রাজনৈতিক স্থিতি-ঢাকা-আঙ্কারা সম্পর্ক

অধুনা বিশ্বে দুটি দেশের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে। সে পরিপ্রেক্ষিতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক তুরস্ক সফর তাৎপর্যপূর্ণ বলেই আমরা মনে করি। ২০১০ সালে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। সে বিবেচনায় এটি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ফিরতি সফরও বলা যায়।


এবার তুরস্ক সফরকালে প্রধানমন্ত্রী আঙ্কারায় বাংলাদেশ দূতাবাসের স্থায়ী ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্য উদ্বোধন করেছেন। বৈঠক করেছেন সে দেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। তাঁর তুরস্ক সফরকালে কয়েকটি সহযোগিতা চুক্তি সই হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে উভয় দেশ আন্তর্জাতিক ফোরামে একযোগে কাজ করা ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের ব্যাপারে একমত হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, শিগগিরই দুই দেশের মধ্যে অবাধ বাণিজ্য চুক্তি বা এফটিএ সই হবে। সম্প্রতি তুরস্ক রপ্তানি পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে দিলে বাংলাদেশের আমদানিকারকেরা বেকায়দায় পড়েন। মুক্তবাণিজ্য চুক্তি সই হলে বাংলাদেশ বেশি লাভবান হবে, কেননা তুরস্ক থেকে আমরা যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করি, তার চেয়ে বেশি পণ্য সেখানে রপ্তানি হয়। বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে এক বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলারের পণ্য আদান-প্রদান হয়। মুক্তবাণিজ্য চুক্তি হলে ২০১৫ সাল নাগাদ তা তিন বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা মোটেই কঠিন নয়।
তুর্কি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠককালে প্রধানমন্ত্রী জ্বালানি, যোগাযোগ, অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের যে আহ্বান জানিয়েছেন, তা যেন নিছক কথার কথা নয়। যেকোনো দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুবিধা বাংলাদেশের অনুকূলে নিয়ে আসতে হলে বিদেশি বিনিয়োগের বিকল্প নেই। তবে তাঁরা তখনই আমাদের দেশে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হবেন, যখন দেখবেন এখানে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোসুবিধা ও রাজনৈতিক স্থিতি আছে। সরকারের উচিত, দেশি বা বিদেশি বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা। বিনিয়োগ অবকাঠামোসুবিধা বাড়ানোর জন্য অর্থের প্রয়োজন হলেও রাজনৈতিক স্থিতির জন্য সেসবের দরকার হয় না। কেবল সুশাসন ও গণতান্ত্রিক পরিবেশই যথেষ্ট। আশা করি, সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাববে। অন্যথায় দেশি বা বিদেশি বিনিয়োগের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর এই উদাত্ত আহ্বান নিষ্ফল রোদনে পরিণত হতে বাধ্য।

No comments

Powered by Blogger.