শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন জরুরি-লিবিয়া পরিস্থিতি উদ্বেগজনক

লিবিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে দেশটির পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। বিদ্রোহীদের সঙ্গে গাদ্দাফির সরকারি বাহিনীর সশস্ত্র সংঘাতকে গৃহযুদ্ধ হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে। এই গৃহযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য স্পষ্টতই একটি পক্ষ নিয়ে লিবিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপ শুরু করল।


তারা বলছে, গাদ্দাফির বাহিনীর হাত থেকে লিবিয়ার সাধারণ নাগরিকদের রক্ষা করতেই তাদের এই সামরিক অভিযান।
আমরা জানি না, এমন সহিংস পন্থায় লিবিয়ার সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা কী করে বাড়তে পারে। এ মুহূর্তে দেশটির সাধারণ মানুষের জীবনে যে বিপর্যয় নেমে এসেছে, তা কেবল তাদের প্রাণের নিরাপত্তাকেই হুমকির মুখে ফেলেনি, জীবনযাপনের সব স্বাভাবিক উপায়কেও বাধাগ্রস্ত করেছে। আরব বিশ্বের অন্য দেশগুলো পশ্চিমা হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। রাশিয়ার নিন্দার কথা যদি না-ও ধরি, আরব লীগের তীব্র নিন্দাকে আমলে নিতেই হয়। আসলে লিবিয়ায় প্রবল জনবিক্ষোভ ও বিদ্রোহের মুখেও গাদ্দাফি যখন ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার শেষ উপায় হিসেবে নিজের বাহিনীকে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছেন, তখন তাঁর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার প্রথমত দেওয়া উচিত ছিল আরব লীগকে।
এখন যুক্তরাষ্ট্রসহ তিন প্রধান পশ্চিমা শক্তি যখন লিবিয়ায় প্রত্যক্ষ সামরিক হস্তক্ষেপ করেই ফেলল, তখন অনেকগুলো বিষয়ে তাদের ভেবে দেখতে হবে। প্রথমত, প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি ন্যূনতম হয়—এমনভাবে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, মানুষের জীবন-জীবিকায় যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তা দূর করার লক্ষ্যেও পদক্ষেপ নিতে হবে; বিশেষত বিপুলসংখ্যক যে বিদেশি নাগরিক কর্মসূত্রে বসবাস করছেন, তাঁদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া, নিরাপদে স্বদেশে পাঠানো, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। বাংলাদেশের অর্ধলাখেরও বেশি মানুষ লিবিয়ায় কর্মসূত্রে বসবাস করেন। এখন চাকরি হারিয়ে তাঁদের দেশে ফিরে আসতে হচ্ছে।
এর আগে প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় কুয়েত থেকে প্রত্যাগত অভিবাসী শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেছিল জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা। এখন লিবিয়া-প্রত্যাগতদের ক্ষেত্রেও তেমন উদ্যোগ নেওয়া উচিত, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে এত চাকরিহারা নাগরিকের ক্ষতিপূরণ বা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে না। তবে সরকার সহজ সুদে কিছু ঋণের ব্যবস্থা করতে পারে, যেমনটি ইতিমধ্যে সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে। শুধু লিবিয়া নয়, বাহরাইন ও জর্ডানেও রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই দেশ দুটিতে বসবাসরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের জীবন-জীবিকার অনিশ্চয়তা বেড়ে চলেছে। আরও বেশ কিছু প্রবাসী বাংলাদেশি চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরতে বাধ্য হলে একদিকে আমাদের রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাবে, অন্যদিকে প্রত্যাগত বাংলাদেশি নাগরিকেরা স্বদেশে ফিরে বেকার হয়ে পড়বেন। এ বিষয়ে সরকারের কী করার রয়েছে, তা আগে থেকে ভেবে দেখা প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.